
রাজকন্যার স্বপ্নে রাজপুত্র (পর্ব-৪)
ফারিন বেঞ্চে বসে উপরের বেঞ্চে হাত রাখতে পারছিলো না। সামনে থেকে তাকে বেঞ্চে দেখা যাচ্ছিল না এত ছোট মেয়ে বলে কিনা ক্লাস ওয়ান, টু রেখে ক্লাস ফোরে পড়বে এবার সব শিক্ষক হেসে দিল।জামান সাহেব মেয়েকে নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করতেছে রাজকন্যা তুমি ছোট তাই অন্য ক্লাসে বসবে ওখানে তোমার বন্ধু হবে,খেলা করবে। কিন্তু ফারিনের জেদ ক্লাস ফোরে পড়বে কেউ তাকে মানাতে পারছে না, প্রধান শিক্ষক এসে ফারিনকে কোলে নিয়ে ক্লাসের টেবিলে দাঁড় করিয়ে দিল। চক হাতে দিয়ে বললো যা মন চায় লিখো ফারিন ভয় না পেয়ে বোর্ডে লিখতে শুরু করলো। নিজের নাম,বাবার নাম সম্পর্ক ঠিকানা বাংলা, ইংরেজীতে ঠিকানা লিখে ফেলল সবাই অবাক এটা কি করে সম্ভব!
যার নাম বললো সে নির্ভুল ভাবে সবার নাম বোর্ডে লিখে ফেলল, ১-৮পর্যন্ত নামতা বলে ফেলল অলৌকিক ক্ষমতার বালিকা ফারিনকে অফিস কক্ষে নেওয়া হলো।প্রধান শিক্ষক ক্লাস ফোর এর বাংলা,ইংলিশ বই দিলেন পড়ো ফারিন রিডিং পড়ে ফেলল। প্রধান শিক্ষক ইউ.এনও জামান সাহেবের দিকে তাকালেন স্যার আমি স্বপ্ন দেখছি না তো! জামান সাহেব হেসে বললেন আকমল সাহেব ফারিন সত্যি খুব মেধাবী আপনাদের ম্যাডাম (ফারিনের মা) তাকে এভাবেই সব শিখিয়েছে।
সব স্যার ম্যাডাম করতালি দিল স্যালুট ম্যাডামকে এমন একটা হিরে আমাদের উপহার দিবার জন্য। আব্বু আমাকে স্কুলে ভর্তি করবে না বলে অবুঝের মতো বাবার দিকে চেয়ে আছে ফারিন ইউ.এনও সাহেব মুসকি হাসলেন।স্যার তুমি আমাকে ভর্তি করাবে না ছোট্র ফারিনের প্রশ্ন প্রধান শিক্ষক হেসে বললেন ফারিন আম্মু এক দৌঁড়ে ক্লাস ফোর গিয়ে বস। আমি তোমার নাম খাতায় লিখে বই নিয়ে আসছি যাও মা..! ওটাই তোমার ক্লাস। ফারিন বাবার দিকে তাকাল আব্বু আমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়েছো.? ইউ.এনও জামান সাহেব মেয়েকে ইশারা করলেন ফারিন এক দৌঁড়ে ক্লাস ফোর গিয়ে বসে জীবনের প্রথম স্কুল,প্রথম বন্ধুবান্ধবী,প্রথম স্যারদের ভালোবাসায় ফারিন মুগ্ধ।
প্রধান শিক্ষক বললেন স্যার আপনি দেখবেন ফারিন একদিন সাইন করবে,ধন্যবাদ দিয়ে জামান সাহেব ভর্তি ফর্মে সাইন করলেন।সত্যি আকমল সাহেব “একজন পুরুষ যখন শিক্ষিত হয় তখন একটা পরিবার শিক্ষিত হয়। আর একজন মেয়ে যখন শিক্ষিত হয় তখন পুরো জাতি শিক্ষিত হয়” ফারিনকে তার মা উডযুক্ত শিক্ষা দিতে পেরেছে।সবাই মুগ্ধ হলো নারী শিক্ষিার হার বাড়ানো প্রয়োজন।স্কুলে শেষে ফারিন বাসায় ফেরল দাদুমনিকে জড়িয়ে ধরে বললো আমি স্কুলে ভর্তি হয়েছি পড়াশোনা করবো।
রাতে পড়ার শেষে নতুন বই সাথে নিয়ে ঘুমাল, দেখলে তোমার মেয়ের কান্ড বলেই হাসলো জান্নাত।তোমাকে স্যালুট না জানিয়ে পারছি না,আজ স্কুলে ফারিন ক্লাস ফোরের বই রিডিং পড়ে ফেলছে।তাই নাকি! জামান স্কুলের সব গল্প বললো।জান্নাত, জামান সবাই খুশি মেয়েটা ঠিক দিকেই এগুচ্ছে ফারিনকে সকালে রেডি করে জামান স্কুলে নিয়ে যায়। বিকালে অফিসের গাড়ি ফারিনকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যায়, স্কুলে মেধাবী ছাত্রী হিসাবে ফারিনকে সবাই চিনে।অল্প কিছুদিনের মধ্যে ছাত্র/ছাত্রী শিক্ষক সবার চোখের মনি হয়ে ওঠে ফারিন।ক্লাস ফোর শেষ করে ফাইভ নতুন শেণিতে পড়াশোনায় মনযোগ দেয় ফারিন।প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে কৃতীত্বের সাথে ফারিন বৃত্তি সহ পাশ করে।
মেয়েকে নিয়ে জামান,জান্নাতের গর্বের শেষ নেই, ফারিন বায়না ধরে তার একজন খেলার সাথী চাই।দাদুমনির, ফারিন,জামান সবাই চায় পরিবারে আরেকজন নতুন মেহমান আসুক।ফারিনের প্রার্থনা আল্লাহ্ কবুল করেন বাসায় নতুন অতিথি আসে ফারিন তার নাম রাখে নওরীন।ফারিনের সারাদিন কাটে ছোট্র বোনের সাথে আনন্দ করে, নওরীনকে কোলে রাখে আদর করে।এভাবে কেটে যায় বেশ কিছুদিন ফারিন ক্লাস সিক্সে ভর্তি ফর্ম কিনে পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করেছে বাবার সাথে ফারিন হাই স্কুলে গেল।জামান সাহেব ফারিনকে অফিস কক্ষে বসিয়ে একটা দরকারে বাইরে গেলেন।
ফিরে এসে দেখলেন ফারিন নেই পুরো স্কুলে হৈ চৈ পড়ে গেল একটা মেয়েকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।গেইটের দারোয়ান এসে জানাল একটা বাচ্চা মেয়ে গেটে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। জামান সাহেব অস্তির হয়ে খোঁজতে গেলেন গেইটে দাঁড়িয়ে কান্না করা মেয়েটাই ফারিন।বাবা প্রশ্ন করলেন তোমাকে তো অফিস কক্ষে রেখে গিয়েছিলাম গেইটে গেলে কেন?ছোট্র ফারিন জবাব দিল জানো আব্বু স্কুলের পিয়ন বললো আমি তো ছোট তাই প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হতে। এখানে আমাক ভর্তি করবে না তাই তোমাকে খোঁজে পাইনি পরে গেইটে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমাকে খোঁজতে তো তুমি গেটে আসবে, জামান সাহেব মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন পাগলি।
প্রধান শিক্ষক সহ সবাই এসে হাজির স্যার ভিতরে চলুন, চা নাস্ততা খেলেন জামান সাহেবকে পদবীর জন্য সবাই চিনেন।পিয়নকে ডাকা হলো সে হেসে বললো স্যার মেয়ের তো বয়স কম তাকে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করবেন। এটা তো হাই স্কুল আমি সেটাই আপনার মেয়েকে বুঝিয়ে বললাম এবার প্রধান শিক্ষক হেসে বললেন…
……চলবে।
৭টি মন্তব্য
জাহাঙ্গীর আলম অপূর্ব
হুম মনোমুগ্ধকর কথা লিখেছেন
শুভকামনা রইল সদা
সুরাইয়া নার্গিস
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুন্দর মন্তব্যে আপ্লুত হলাম, দোয়া রাখবেন আমার জন্য।
ভালো থাকবেন, শুভ কামনা রইল।
রেজওয়ানা কবির
খুব ভালো লাগল, কিন্তু আগের পর্বগুলো ব্যস্ততার কারনে পড়া হয় নি, সময় করে পড়ে নিব। ভালো থাকবেন, ভালোবাসা অনেক💙
জিসান শা ইকরাম
স্কুল জীবন আরম্ভই হলো ক্লাস ফোর থেকে!
আমিও অবাক হলাম খুব।
ফারিন তার জীবনের অভিস্ট লক্ষ্যে পৌছাক।
ফারিন এর আম্মুকে শ্রদ্ধা।
শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব মেধাবী ফারিন,বিস্ময়কর বালিকা। তার উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করছি। মেয়ে শিক্ষিত হলে পুরো জাতি শিক্ষিত হয় এটা খুব ভালো বলেছেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা অবিরাম
আরজু মুক্তা
চমৎকার উপস্থাপন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
চলুক দেখি সামনে কি হয়।
শুভ কামনা রইলো।🌹🌹