(১)
সম্প্রতি বাংলাদেশের লোকজনের মধ্যে ‘রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’ নামের ব্যাপারটি বেশ আলোড়ন তুলেছে। এএলএস রোগে আক্রান্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ‘আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’- শুরু হয়েছিল আমেরিকায় । এর সাথে মিল রেখে তৈরি ‘রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’ প্রক্রিয়াটি সর্বপ্রথম ভারতে শুরু হয়। বাংলাদেশে, যতটুকু জানা যায়, আরিফ আর হোসেইন নামে এক ফেসবুক সেলেব্রিটি এটাকে দেশের মানুষের সামনে ইন্ট্রডিউস করান।

তারপর এটা বেশ ভালভাবেই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। অনেক মানুষ, এমনকি তাহসান, সাকিব আল হাসান, মুস্তফা সরওয়ার ফারুকী প্রমুখ মিডিয়া জগতের সেলিব্রিটিরাও নিজে এই কাজ করেন এবং অন্যকে একই জিনিস করে দেখানোর আহবান জানান।

কিন্তু, কথা হল এই ব্যাপারটা শেষ পযন্ত একটা উপযোগিতাহীন কাজ ও শো আপ ছাড়া আর কিছুই হয়ে থাকছেনা। এইরকম সমাজসেবামূলক কাজের না আছে ফলপ্রসূতা, না আছে দীর্ঘমেয়াদের ও সত্যিকারের কোন উপযোগিতা।

আর এসবের সমালোচনা করে আপনি কিছু বলতে যান, তাহলে দেখা যাবে অনেকেই এটা পছন্দ করবেনা বা একমত হবেনা — যেটা স্বয়ং আরিফ আর হোসেইনও করেন নাই। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফেসবুকার, যার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ২০,০০ -৫০,০০০ পর্যন্ত লাইক পড়ে, সেই আরিফ আর হোসেইন, আপনাকে হয়তো ব্লক মেরে তার মহান ফেসবুক একাউন্টের পদধূলি নেয়া থেকে বঞ্চিত করে দিবেন, আপনি যদি তার একাউন্টে গিয়ে এই ব্যাপারে সমালোচনা করেন; যেমনটা উনি আমাকে করিয়াছেন, তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে ব্লক মারিয়া।

তারপরও চলুন, এই ব্যাপারে একটু বিস্তারিত আলোচনা করি। স্পষ্ট করেই বলতে চাই, আমার আলোচনার উদ্দেশ্য কিছু প্রথাগত হুজুগে কাজের অন্তসারশূন্যতা ধরিয়ে দেয়া; কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠীকে ছোট করা নয়।

(২)

সবাই হয়তো অবগত আছেন যে, রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জে কেউ একজন চালভর্তি প্যাকেট বা কৌটা কোন একজন অভাবী মানুষকে দান করছেন এবং সেটার ছবি ফেসবুকে আপলোড করে আরও ৭ জনকে সেই একই কাজ করার জন্য মনোনীত করেন।

এটা আরিফ আর হোসেইনের নিজের কোন আইডিয়া নয়, এই আইডিয়াটার বাস্তবায়ন ভারতে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই চলে আসছিল। যদিও, আরিফ সাহেব সেটা স্বীকার করেন নাই।

মাস দেড়েক আগে ফেসবুক ‘সুপারম্যান’ অথবা সেলিব্রিটি আরিফ আর হোসেইন স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলেন,

“” “Ice Bucket Challenge চ্যালেঞ্জ শুরু করেছে সেই দেশেরই একজন… উদ্যোগটা নিঃসন্দেহে চমৎকার; একটা ভালো কজ’এ ফান্ড রেইজ করা হচ্ছে

হোমপেইজে দেখলাম, আমাদের অনেকেই এটা করছে… তাদেরকেও সাধুবাদ

কিন্তু ওই যে বললাম; যে দেশের যে নিয়ম… তাই আমি একটু অন্যভাবে শুরু করতে চাচ্ছি

Ice এর আগে, একটা R লাগাতে চাচ্ছি

…আসুন শুরু করি #RiceBucketChallenge

আমি যাদেরকে নমিনেট করবো; তারা, রাস্তায় সুবিধাবঞ্চিত যে কাউকে আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী এক বাকেট/প্যাকেট চাল দিয়ে আসবেন… এসে, সেই ছবি আপলোড দিবেন এবং তারপর আপনি নমিনেট করবেন আপনার পছন্দ মতো ৭ জন কে

… আমি, নমিনেট করছি যাদের;

– ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান
– চলচিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
– লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক আনিসুল হক
– অর্থহীন ব্যান্ডের সুমন ভাই
– সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা তাহসান খান
– মজা লস পেইজের এডমিন চৌধুরী সাহেব
– বিডি সাইক্লিস্ট গ্রুপের মডারেটর ফুয়াদ ভাই

… শুরুটাতো হোক

এই ৭ জন যদি আরও ৭ জনকে নমিনেট করে… আর প্রত্যেকে যদি শুধু ১ কেজি চালও দেয়… আর এভাবে যদি মাত্র ১০টা স্টেইজও পার হয়… তাহলে বিতরনকৃত চালের পরিমান কতো দাঁড়াবে জানেন?????

কয়েক হাজার কেজি না… কয়েক লক্ষ কেজিও না

২৮ কোটি কেজির বেশী

… আই রিপিট, ২৮২৪৭৫২৪৯ কেজি

একটা ফ্যামিলিকে দেয়া ১ কেজি চাল দিয়ে যদি ৪ জন লোকও পেট্টা ভরে খায়, তাহলে মানুষের পরিমান হয় ১০০ কোটি

এতো পরিমান লোক তো আমাদের দেশেই নেই… মুসিবত

‘আমি … আপনি … সে’ মিলে যখন “আমরা” হই, তখন তার ক্ষমতা আসলে যে কত বিশাল, তা আমার নিজেরও আগে ধারনা ছিলো না।” “”

এখন, আরিফ রেজা সাহেবের কথামত ১০টা স্টেজ এই চ্যালেঞ্জ যদি পার করে (যেটা আদৌ সম্ভব নয় প্রাকটিক্যালী, সম্ভব শুধু থিওরেটিক্যালী), কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো, ২৮ কোটি কেজি চাল দিয়ে দেশের দরিদ্র ও হতদরিদ্র ৮ কোটি মানুষের কয় বেলার খাবার হবে???

২৮ কোটি কেজি চাল দিয়ে দেশের দরিদ্র আর হতদরিদ্র ৮ কোটি মানুষের বেশি হলে ১২ বেলার খাবার হবে, অর্থাৎ শুধু দিন চারেকের মতই চলতে পারে, তার বেশি নয়, যার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দীর্ঘকালীন কোন উপকারই হচ্ছেনা। যে দরিদ্র, সে দরিদ্রই থেকে যাচ্ছে। দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের, এমনকি তাদের একজনেরও, এভাবে অবস্থার পরিবর্তন কোনভাবেই হচ্ছেনা।

দেশগ্রামে আর মফস্বলে তো ভিক্ষা হিসাবে একপট চাল দেয়া হয়ই। আরিফ হোসেইন আর হুজুগে বাঙ্গালীরা মিলে এটাকেই চকমকে প্যাকেটে উপস্থাপন করিয়ে দিলো। কিন্তু, এটাও মনে রাখা কি উচিত নয় যে, ভিক্ষা দেওয়া আর সমাজসেবা বা কমিউনিটি সার্ভিসের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে?

(৩)

এদিকে, কিছুদিন আগে ‘পথশিশুদের আম উৎসব’ নামে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ‘আমরা খাটি গরীব’ নামে একটা ফেসবুক গ্রুপ। সেখানে তারা ৩,৯০০ কেজির মত আম সংগ্রহ করে বা কিনে সেটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘সুবিধাবঞ্চিত’ শিশুদের মধ্যে বিলি করেছে। এখানে প্রতিটি শিশু ২ টি করে আম পেয়েছে।
এখানেও কিন্তু সেই একই ব্যাপার, সত্যিকার অর্থে যেখানে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আসলে কিছুই করা হয়না। অনেকে বলতে পারে, “তারা তো কিছু পথশিশুর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছে”। এখানে আমার প্রশ্ন হল, সে হাসিটার স্থায়িত্ব আসলে কতটুকু। আম খাওয়া শেষ, তো হাসিও শেষ, দায়িত্বও শেষ, তাই নয় কি? এতে করেও, সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক মানুষের অবস্থার উন্নয়ন আসলে কিছুই হয়না।

এই আম উৎসব কি এক ধরণের কাঙ্গালি ভোজ টাইপের ব্যাপার নয়, যেখানে একবেলা গরীবদের ভোজ করিয়েই বিরাট কিছু করে ফেলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে? আম উৎসব সমাজসেবা হলে, অসাধারণ কিছু হলে রাজনৈতিক দলের একবেলার কাঙ্গালি ভোজও তাই।

সোজা কথা, দুইটা কইরা আম খেতে দিয়ে কোন সমাজসেবা হয়না। এটা রাজনৈতিক দলগুলোর একবেলার কাঙ্গালি ভোজের চেয়ে বেশি কিছু না। কিন্তু, যখন দেখি এই ধরণের কাজকে সমাজসেবা হিসেবে, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য করা একটা বিরাট কাজ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, এবং আম-জনতা যখন সেটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়, তখন মেজাজ খারাপ না হয়ে যায়না। এইরকম আম উৎসবের মাধ্যমে, এই রকম হালকা চালের, অযৌতিক, অত্যন্ত স্বল্প মেয়াদি,এবং কাঙ্গালি ভোজ মার্কা উৎসবের মাধ্যমে সমাজের তরুণদের মধ্যে এই ভুল বার্তাই ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, এই ধরণের কাজই বুঝি সোশ্যাল ওয়ার্ক !
ফেসবুক গ্রুপের নাম ‘আমরা খাটি গরীব’ বলে আইডিয়ার দিক থেকেও বা চিন্তাভাবনার দিক থেকেও মানুষকে গরীব হতে হবে – এমনতো কোন কথা নেই…।

(৪)

আসলে, আরিফ আর হোসেইন সাহেবের মত মানুষদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভাল কিছু আশা করাই হয়তো বৃথা। যারা কিনা আরাম-আয়েশের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন এবং এখনো আছেন, যারা কিনা অত্যাধুনিক স্মার্টস্ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ব্যাবহার করেন, নিজস্ব ওয়েব সাইট চালান, প্রাইভেট গাড়িতে চড়েন, তারা বঞ্চিত মানুষের আসল প্রয়োজনটাই বুঝতে পারেন না। তারা জানেন না বাংলাদেশের কিছু মানুষ টাকার অভাবে একটা ৪-৫ বছর আগের একটা ক্ষয়ে যাওয়া, পুরনো মোবাইল সেট নিয়ে চলাফেরা করেন, অনেকেই আছেন যারা কিনা ১৫০০ টাকা দামের বেশি দামের মোবাইল সেট কেনার সামর্থ্য রাখেনা। তারা কখনো এটা ফিল করতে পারবেন না যে, দেশের অনেক মানুষ শিক্ষিত হয়েও শুধুমাত্র টাকার অভাবে নিজস্ব পিসিই কিনতে পারেনা। দারিদ্রতা তাদের কাছে রাস্তার পাশে, বস্তিতে শুয়ে থাকা মানুষ, রিকশাচালকের মধ্যেই যেন সীমাবদ্ধ। তারা জানেন না, যে বস্তির লোকটির ঘরেও রঙ্গিন টিভি আছে। তারা জানেন না যে, একজন রিকশাচালকের মাসিক আয় ১৮,০০০ -২১,০০০ টাকা, যেটা কিনা একজন অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একজন গ্র্যাজুয়েট ছেলেও প্রথম প্রথম আয় করতে পারেন না।

দারিদ্রের সংজ্ঞাটা যেহেতু তাদের কাছে একেবারেই ক্লিয়ার না, নিজেদের জীবনে যেহেতু তাদের দারিদ্র কখনো আসেনি বললেই চলে, তাই মাসে ১৮,০০০-২১,০০০ টাকা আয় করা রিকশাচালককে একপট চাল ভিক্ষা দেওয়ার মত ‘এক বাকেট চাল’ দান করাই তাদের কাছে সমাজসেবার নাম।

অপরদিকে, ‘আমরা খাটি গরীব’ গ্রুপে রোহিত হাসান কিছলু ও রাকিব কিশোরের মত পারসন আছেন, যাদের নেতৃত্বে আম উৎসব করা হয়। রাকিব কিশোর ভাই একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। তিনি গাটের টাকা খরচ করে বাংলাদেশের এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান। তার ফেসবুক ওয়ালে একজন মন্তব্য করেছিলেন, “ বাংলালিঙ্কের নতুন বিজ্ঞাপনটা (দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নাম ও ছবি নিয়ে বানানো বিজ্ঞাপনটা) মনে হয় আপনার কথা মাঠায় রেখেই বানানো হয়েছে”।

তারা কি জানেন, “তাদের মত দেশের অনেক সুশিক্ষিত ছেলে শুধু মাত্র টাকার অভাবে ঢাকার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, এমনকি ফর এক্সাম্পল, পল্টন থেকে মিরপুর, বা মহাখালি থেকে খিলক্ষেত, মাঝে মাঝেই হেটে যাতায়াত করে। কখনো কখনো যাত্রাপথে পথের পাশে চায়ের দোকান থেকে এক টাকা দিয়ে পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নেওয়ার সামর্থ্যও তাদের থাকেনা”।

রাকিব কিশোর প্রথম আলোর রসালোতে লেখালেখি করেন, নিজের ফেসবুক ওয়ালে মজার মজার সব ফানী স্ট্যাটাস দেন মাঝে মাঝেই। রোহিত হাসান কিসলু ‘মজা লস’ গ্রুপের একজন এডমিন বলেই জানি। তাই বলে কি সমাজসেবার মত ব্যাপারকে তারা এত হাল্কাভাবে দেখে একটা ফানি ব্যাপারে পরিণত করবেন?

(৫)

অনেকেই বলতে পারেন, “আপনিতো খুব এদের সমালোচনা করছেন। তা এসবের বিকল্প কি আপনিই বলুনন না?”
“আপনি নিজে ভাল কিছু করে দেখান না?”

ওয়েল, সাপোস, ১০০০ জন দরিদ্র ১০০০ ব্যাগ ৩ কেজির চাউলের প্যাকেট ধরাইয়া দেয়া হল। কিন্তু, এতে তার সত্যিকার কোন উন্নয়ন কিন্তু ঘটবেনা। তার চেয়ে যদি দুইজন পথশিশুর আগামী পাচ বছরের পাড়াশুনার ও খাবার খরচ বহন করা হয়, তাহলে দুইজনের জন্য অন্তত সত্যিকার অর্থে, সাসটেইনেবলভাবে ভাল কিছু করা হবে। ১০০০ জনকে সাপোর্ট দিতে গিয়ে ০ – ১০০০ গোলে হারার চেয়ে কি দুইজনকে সাপোর্ট করে ২-০ তে জেতা ভাল নয়?

‘রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’ বা পথশিশুদের আম উৎসব তাই, সত্যিকার অর্থে, একটা অপ্রয়জনীয় জিনিস। কিন্তু, আরিফ আর হোসেইনের মত ফেমাস পাবলিকরা ডাক দিলে ২০-৩০ লাখ টাকা জমায়েত করা কোন ব্যাপার না। সেটা দিয়ে অন্তত ২০ জন পথশিশুকে ৫ বছর চালানো যাবে। অথবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল, যেমন, সীমান্তবর্তী, দ্বীপাঞ্চল বা পারবত্য অঞ্চলে ৫০ টি স্কুল স্থাপন করা যাবে!

অপরপক্ষে, এই বছরের ‘পথশিশুদের আম উৎসব’-এ ফেসবুক গ্রুপ ‘আমরা খাটি গরীব’ ৩,৯০০ কেজি আম বিতরণ করেছে। (সুত্রঃ http://www.prothom-alo.com/we-are/article/19090/%E0%A6%AA%E0%A6%A5%E0%A6…) ৩,৯০০ কেজি আমের প্রতি কেজি কমপক্ষে ৫০ টাকা করে ধরলেও তার খরচ লেগেছে ১,৯৫,০০০ টাকা। আর অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ মিলে তাদের খরচ যদি আরও ১,০০,০০০ টাকা হয়ে থাকে, তাহলে খরচ লেগেছে ২,৯৫,০০০ টাকা। সেই টাকা দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কয়টা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল তৈরি করা যায়, অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কতজন দরিদ্র ছেলে-মেয়ের ১ বছরের পড়ালেখার খরচ বহন করা যায়, তা কি আপনারা আনুমান করতে পারেন?
এরকম কিছু না করে তারা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হাতে দুটো করে আম ধরিয়ে দিচ্ছে, সেটা খেয়ে তারা ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে হজম করে ফেলছে।

প্রকৃতপক্ষে, ২,৯৫,০০০ টাকা দিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুদের জন্য কমপক্ষে ৬ টি জন্য স্কুল স্থাপন করা যায় এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়া ১২ জন দরিদ্র ছাত্রের ১ বছরের পড়ালেখার খরচ চালানো যায়।

এইরকম ‘রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’ বা ‘আম উৎসব’ আসলে স্রেফ ‘কোয়ানটিটি’র দিকে নজর দেয়, ‘কোয়ালিটি’র দিকে নয়। রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জে যেমন আরিফ আর হোসেইন সাহেব, থিউরেটিক্যালী ১০০ কোটি মানুষের খোরাক জোগানোর কথা বলেছেন, কোয়ানটিটির বা সংখ্যার দিক দিয়ে এটা অনেক বড় সন্দেহ নেই; কিন্তু পরিহাস ও পরিতাপের বিষয় এটাই যে, এর মাধ্যমে কোন দরিদ্র মানুষের সত্যিকার কোন উপকারই হয়না বা অবস্থা পরিবরতন হয়না। কারণ এই ১০০ কোটি মানুষের মাত্র একবেলার খাবারই এতে হবে। কিন্তু, মানুষের জীবন তো একবেলার আহারেই সীমাবদ্ধ নয়।

একইভাবে, আম উৎসবও ৩৯০০ কেজি আমের মাধ্যমে বিশাল একটা সখ্যক পথশিশু/দরিদ্র শিশুকে (সম্ভবত ৫৫০০+) শিশুকে আম খাইয়েছে। কিন্তু, এর মাধ্যমে ৫৫০০ পথশিশু কিন্তু ‘পথশিশু’ই রয়ে গেল।

(৬)

আপনি যখন কোন সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর মানুষদের জন্য কিছু করতে চান, তখন আপনাকে যত বেশি সম্ভব দায়িত্ব নিতে হবে। কোন পথশিশুকে বা দরিদ্র মানুষকে ৫০ টাকা দান করাকে ভিক্ষাই বলে, সমাজসেবা বা কমিউনিটি সার্ভিস বলেনা। এটার সাথে ৫০ টাকা দামের দুটো আম ধরিয়ে দেয়ার কি আদৌ কোন পার্থক্য আছে?

২১ শে জুন রোমে আম উৎসবের খবর ছাপা হয়েছিল খাসখবর প্রবাসপত্রে। সেখানে বলা হয়েছে,

“দেশের বিভিন্ন জায়গার সাথে ইতালীর রোমেও ফান্ডরেইজিং ইভেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে পথশিশুদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পথশিশুদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে সেই ২১ জুন সারা বাংলায় খুশির বন্যায় ভাসাতে বাংলাদেশের একমাত্র ফেসবুক ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবীদের গ্রুপ “আমরা খাঁটি গরিব” এর সাথে এগিয়ে এসেছে ইতালী প্রবাসীরা।

“আমরা খাঁটি গরিব” ইতালীর কো-অর্ডিনেটর অপু হায়দার এবং স্থানীয় অভিবাসীরা রাজধানী রোমের একটি পার্কে “পথশিশুদের আম উৎসবে রঙ্গিন করি মন” ইভেন্ট আয়োজন করে। আর এর মাধ্যমে আমের রসে মাখা সেই পথ শিশুদের আনন্দে ভরা অনুভূতির কিছুটা অংশীদারী হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

এসময় খাঁটি গরীবের সহযোগীরা বলেন, দেশের অনেক মহলের লোক এই শিশুদের বিভিন্ন অপকর্ম চুরি, ডাকাতি, নেশায় দ্রব্যসেবন এমনকি হরতালে বোমা ফাটানো থেকে শুরু করে আরও অনেক খারাপ কাজে ব্যবহার করছে। কিন্তু দেশের একমাত্র অনলাইন ভিত্তিক স্বেচ্চাসেবক গ্রুপ “আমরা খাঁটি গরিব” তাদের পাশে এসে দাড়িয়েছে নিঃস্বার্থভাবে। আর আমরা চাই এই ‘পথশিশু’ শব্দটির সাথে ‘পথ’ শব্দটি সরিয়ে দিয়ে একটি সুন্দর স্বাভবিক একটি শিশু’র মর্যাদা দিতে”।

( http://www.khaskhabor.com/details.php?id=13886#.VB6dq1dIjIU )

তো, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে যে, “দুটো করে আম খাইয়ে আপনি কোন পথশিশুকে কিভাবে চুরি, ডাকাতি বা নেশাদ্রব্য থেকে দূরে সরাতে পারবেন?”

প্রশ্ন আরও জাগে যে, “আপনারা আগামী ১০ বছরেও যদি বছরে একদিন এভাবে আম খাওয়া চালিয়ে যান সবার হাতে দুটো করে আম ধরিয়ে দিয়ে, এর মাধ্যমে কি আদৌ পথশিশুদের একজনকেও স্বাভাবিক শিশুর মর্যাদা দিতে পারবেন?”

আসলে, যারা দারিদ্র্যকে তাদের জীবনে সেভাবে দেখেনি, তাদের কাছে একবেলা মানুষকে খাওয়ানোটা বা একদিন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সাথে সময় কাটানোটাই অনেক কিছু। এসব, স্বল্পমেয়াদী কাজের জন্যই দেশের মানুষ দরিদ্রই থেকে যায়, তাদের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হয়না।

শুধু আরিফ আর হোসেইন বা খাটি গরীব গ্রুপই নয়, আরও অনেকেই এরকম শো আপের মাধ্যমে তথাকথিত সমাজসেবার কাজ করে চলেছেন, যেখানে একটা কমিউনিটির দায়িত্ব নেয়ার প্রবণতা নেই, শো আপের প্রবণতাটাই যেন মূখ্য। ইউনাইটেড ন্যাশন ইয়ুথ এন্ড স্টুডেন্ট আয়াসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউনিস্যাব) নামে একটি সঙ্গগঠন আছে, যারা কিনা একদিন মাত্র পথশিশুদের ইফতার করিয়েই এবং কিছু বিনোদন দিয়েই ‘একদিনের সমাজসেবা’ করে আসছে। সমকাল পত্রিকায় এটা নিয়ে ফিচারও ছাপা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছে, “এদিকে গত ১৭ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউনিস্যাবের রংপুর শাখা ৬০ পথশিশুর ঈদকে আনন্দের রঙে রাঙিয়ে তুলতে পোশাক বিতরণ কর্মসূচি, ইফতার এবং বাচ্চাদের বিনোদনের ব্যবস্থা করে। ইউনিস্যাবের বর্তমান সভাপতি মামুন মিয়া বলেন, ঈদ আনন্দ ওইসব পথশিশুকে নিয়ে করা হয়েছে, যারা পবিত্র রমজান মাসে ইফতার থেকে বঞ্চিত।“

একটু খেয়াল করলেই দেখবেন, এখানে একদিন ইফতার করিয়েই যেন ২৯ দিন ইফতার বঞ্চনার অভাব পূরন করিয়ে দেয়ার কথা যেন বলা হচ্ছে! একদিন না হয় ইফতার করানো হল, বাকি ২৯ দিনের কোন খবর নেই ওখানে…!

এই হল বাংলাদেশের বেশিরভাগ তরুণ স্বেচ্ছাসেবী সমাজসেবামূলক সংগঠনের অবস্থা।

(৭)

তবে, সবাই যে এরকম দায়সারাভাবে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উপকারের চেস্টা করছে তা নয়; কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভাল কাজও করছে যেগুলো দীর্ঘমেয়াদী, যেগুলোর মধ্যে দায়িত্ব নেয়ার প্রবণতা আছে এবং সত্যিকার অর্থে যেগুলোর মাধ্যমে দরিদ্র বা সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সত্যিকারভাবে উপকার হচ্ছে।

যেমন, মজার স্কুল (https://www.facebook.com/mojarschool2013) প্রজেক্টটি এরকম একটি কাজ, যেখানে তারা ২০১৩ সাল থেকে ঢাকার ৪টি পয়েন্টের – আগাওগাও, শাহবাগ, কমলাপুর, সদরঘাট – পথশিশুদের শিক্ষা, খাবার, পোশাক, বিনোদন –সবই নিয়মিত প্রাদানের কাজ করে যাচ্ছে। কাজগুলো তারা প্রতি সপ্তাহে নিয়মিতভাবে করে, যেখানে এর আয়োজকদের দায়িত্ববোধটাই ফুটে উঠে, এবং নিশ্চিতভাবেই এসব আম উতসব বা আইস বাকেট চ্যালেঞ্জের মত একবারের বা একদিনের প্রোগ্রাম নয়।
কমিউনিটি একশন নামে একটি সংগঠন কিছুদিন আগে কয়েকটি দরিদ্র মানুষকে কয়েকটি রিকশা প্রদান করেছিল, যা নিশ্চিতভাবেই সেই দরিদ্র মানুষটির জন্য স্বপরিবারে অনেকদিনের খেয়ে পড়ে বেচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করেছিল।

বস্তুত, সমাজসেবার প্রকৃতি এমনই হওয়া উচিত; সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য কিছু করতে চাইলে এভাবেই তা করা উচিত।

(৮)

আমি এতক্ষণ যে বিষয়াবলী নিয়ে আলাপ করলাম, সেখানে সবকিছুই আমি ডিটেইলস ব্যাখ্যা করেছি। তারপরও, আমার বক্তব্যের সাথে মনে হয় সিংহভাগ পাঠকই একমত হবেন না। সেটা আমি আশা করতেও চাইনা। যে দেশের মানুষ বেশিরভাগ সময়ই হুজুগে, যে দেশে যুক্তির চাইতে আবেগ বড় হয়ে দেখা দেয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সেখানে আমার কথাগুলো মানুষের মন ও মগজে ঢুকতে সময় লাগারই কথা। বাঙালি যদি সবকিছু ঠিকমত সহজেই বুঝতো, তাহলে স্বাধীনতার পরই আমাদের ভুল পথে যাত্রা শুরু হতনা। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হতনা বা মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান দেশে রাজাকারদের পুনর্বাসন করাতেন না। আমরা বাঙ্গালীরা আসলেই যেন ভুলের মধ্যেই থাকতে পছন্দ করি।

আমি আরিফ আর হোসেইনের সেই স্ট্যাটাসে শুধু এই কমেন্টটি করেছিলাম, “রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জ, পথশিশুদের আম উৎসব, এবং সমাজ সেবার নামে কিছু উপযোগিতাহীন স্থুলতার প্রদর্শনী !” আর তাতেই তার একাউন্ট থেকে আমাকে ব্লক মেরে দিয়েছেন। ৪০-৫০ হাজার মানুষের সমর্থনও তার কাছে অপ্রতুল মনে হয়, যখন তিনি দেখেন একজন শেহজাদ আমান তার একটি ‘বিখ্যাত কাজ’-এর তির্যক সমালোচনা করছেন। সত্য কথা, উচিত কথার কি এতই শক্তি? এতে কি প্রমাণিত হয়না , স্ট্যাটাসপ্রতি ৪০,০০০ -৫০,০০০০ লাইকও একজন মানুষকে পুরুষ মানুষ বানাতে পারে না?

(৯)

যাই হোক, আমার এই লেখাটির মূল উদ্দেশ্য হল, সমাজসেবার নামে কিছু মানুষ যে চেস্টাগুলো করছেন, সেগুলো যাতে আরও ফলপ্রসূ, সাসটেইনেবল এবং সত্যিকার অর্থে কার্যকর হয়ে উঠে সেই জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া। আমি আশা করি, আমার এই লেখাটি তাদের দৃষ্টিগোচর হবে এবং তাদের নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করে দেখার অবকাশ দেবে।

যদিও আমি মনে করিনা যে, আম উৎসবের আয়োজকেরা আমার লেখা পড়েই আগামী বছর আম উৎসব বন্ধ করে দেবেন, যদিও আমি মনে করিনা আরিফ আর হোসেইনের মত মানুষরা খুব সহজে আমার সমালোচনাকে গ্রহণ করবেন, তারপরও আমি এটাই বিশ্বাস করি যে, আরিফ হোসেইন বা রাকিব কিশোরের মত যারা কিনা অনেক পপুলার, যারা কিনা অনেক ভাল কিছু করার যোগ্যতা রাখেন সত্যিকার অর্থেই, তারা ভবিষ্যতে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য সত্যিকার অর্থে উপযোগিতামূলক, দীর্ঘমেয়াদী কিছু কাজের উদাহরণ সৃষ্টি করে তাদের কাজকর্ম এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আশা করছি, কোয়ানটিটি নয়, কোয়ালিটির দিকেই তারা নজর দেবেন

শুভ কামনা রইলো সবার প্রতি।

৪৯৩জন ৪৮৮জন
0 Shares

৬টি মন্তব্য

  • প্রজন্ম ৭১

    আপনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে  বলদরপী স্বৈরাচার হিসেবে লিখেছেন। আপনার স্পর্ধা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। এমন শব্দ এই ব্লগে অচল। এই শব্দ চয়নের জন্য এই মুহুর্তে ক্ষমা চেয়ে পোষ্ট সংশোধন করুন। না হলে আপনার পোষ্ট মুছে দেয়া সহ আপনাকে ব্যান করার আবেদন জানানো হবে।

     

  • অলিভার

    প্রথমেই এই কথাটা না বলে পারলাম না। আপনি একেবারে ভুল একটা পথ অবলম্বন করে সুন্দর একটা যৌক্তিক জিনিষকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। কেন কথাটা বললাম সেটা পরে বলছি।

    আপনার পুরো লেখাটাতে আপনি ব্যক্তি “আরিফ আর হোসাইন” এবং “আমরা খাটি গরিব” গ্রুপের বিভিন্ন নেগেটিভ সাইট তুলে ধরে তাদের ছোট দেখানোর চেষ্টা করেছেন। আর এইটাই আপনার সবচেয়ে বড় ভুল। হ্যাঁ, আপনি যে বিষয়টি পরে বলেছেন সেটা যুক্তিগত ভাবে অনেকটা সমর্থনযোগ্য। কিন্তু আপনি ভেবে দেখুন যেখানে একটা রক্তের প্রয়োজনে সেই ২০ থেক ৫০ হাজার লাইক (অর্থাৎ ২০ থেকে ৫০ হাজার লোক এই টপিকটি দেখেছে) পাওয়া আরিফ আর হোসাইনও মাঝে মাঝে যোগাড় করতে হিমসিম খায় সেখানে শুধুমাত্র একটা নির্দিষ্ট করে একটা স্কুল কিংবা ১২ জন ছেলের অভিভাবক হবার কথা বললে কেউ এভাবে এগিয়ে আসবে না।

    আপনি রাইস বাকেট চ্যালেঞ্জটাকে ভিক্ষা দেবার একটু উপরের পর্যায়ে তুলনা করেছেন। এ ব্যাপারেও দ্বিমত করছি। হ্যাঁ, এমন অনেক রিকশাওয়ালা আছে যারা মাসে বেশ ভালো ইনকাম করে। কিন্তু ভেবে দেখুন সেই রিক্সার প্রতিদিনের হাজিরা দিতেই তার উপার্জনের সিংহভাগ চলে যায়। সেখানে একবেলার জন্যেই যদি কেউ তাকে সহায়তা করে তাহলে ব্যক্তি পর্যায়ে তার সত্যিকারেরই উপকার হবে। সেটাকে যদি ভিক্ষাবৃত্তির সাথে তুলনা করেন তাহলে কিন্তু হচ্ছে না।

    আবার আপনি যদি হুট করে টাকা চেয়ে পোষ্ট দিয়ে বলা শুরু করেন বিশেষ কাজে আপনি এটাকে ব্যয় করবেন। একজনকে রিক্সা কিনে দিবেন কিংবা স্কুলে উন্নয়নের জন্যে দান করবেন তখনও মানুষ হয়তো আসবে, কিন্তু কিছুদিন বাদেই দেখবেন সবার আগ্রহ চলে যাবে। উল্টো তারা যে টাকা দিয়েছিল সেটার ব্যবহার সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তার প্রমাণ চাইবে। আর সেই প্রমাণ চাওয়ার ভিত্তিতে আপনিও একটা সময় মেজাজ কিছুটা খারাপ হয়ে “ব্লক” অপশনের দিকেই যেতে চাইবেন।

    বাংলাদেশে যেখানে মানুষ একটা প্লাটফর্মে দাড়িয়েও ভিন্ন মতবাদ নিয়ে চলাফেরা করে সেখানে তারা এতগুলি মানুষকে জড়ো করতে পারছে সেটাকে আপনার পজিটিভ ভাবে দেখার প্রয়োজন আছে। আর আপনি যেভাবে বলছেন এভাবেও হবে একটা সময়। কিন্তু হুট করে এভাবেই হবে না সেটা। সময় দিতে হবে। ধীরে ধীরে সেই ধাপেও তারা পৌছতে পারবে।

    আর আপনি কোথায় ভুল করেছেন সেটা এখন বলছি। আপনি ভুল করেছেন উপস্থাপনায়। আপনার এই দৃষ্টিভঙ্গিটা যদি আক্রমণাত্মক না হয়ে বুঝিয়ে আদায় করার মত হতো তাহলে আমি নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারি “আরিফ আর হোসাইন” কিংবা যাকেই ধরে কথা বলুন না কেন তারা এগিয়ে আসতো।

    আক্রমণ করে কখনোই ভালো কিছু হাসিল হয়নি। তাই আক্রমণাত্মক মনোভাব ছেড়ে সমঝোতা এবং আলোচনা করে সমস্যা গুলি সমাধানের চেষ্টার আহবান জানালাম। জানিনা মন্তব্য আপনার কতটুকু ভালো লাগবে। তবুও পোষ্ট সরিয়ে নেবার অনুরোধ থাকবে।

    • শেহজাদ আমান

      @ অলিভারঃ আপনি বলেছেনঃহ্যাঁ, এমন অনেক রিকশাওয়ালা আছে যারা মাসে বেশ ভালো ইনকাম করে। কিন্তু ভেবে দেখুন সেই রিক্সার প্রতিদিনের হাজিরা দিতেই তার উপার্জনের সিংহভাগ চলে যায়।

      — আসলে আপনার ঢাকা শহরের রিক্সাওয়ালাদের সম্মন্ধে কোন ধারনাই নেই। তারা মাসে ১৫,০০০-২৪,০০০ টাকা ইনকাম করে। আর হাজিরা দিতে তাদের বেশি হলে (১২০ * ৩০ বা ) ৩৬০০ টাকা চলে যায়। তো ভাই, আপনার নলেজ যে এই ব্যাপারে অনেক স্বল্প সেটা তো বুঝতেই পারতেছেন।

      আর, আমি সামাজিক সেবামূলক কাজের সাথে অনেকদিন ধরেই জড়িত আছি। আমরা জানি এবং বুঝি যে গরীব মানুষদের সত্যিকার অর্থে কি প্রয়োজন। কিন্তু, মনে হয়না সেটা আরিফ আর হোসেইন বা খাটি গরীব গ্রুপ ভালভাবে বোঝেন। তারা তাই সমাজ সেবার মধ্যেও ফান খোঁজেন !

      আর আমি মোটেও এই লেখায় আক্রমাণাত্মক ভাষা ব্যবহার করিনি। তাদের যা প্রাপ্য, সেভাবেই তাদের ট্রিট করা হয়েছে ।

      শেষে একটা কথাই বলবো, আমার এই লেখাটা গাড়িতে চড়া, আর দামি ইলেকত্রনিক গ্যাজেট ব্যাবহার করা সমাজসেবককেরা বুঝতে সক্ষম হবেন না । কারণ, দারিদ্র তাদের নিজের জীবনেই কখনো আসে নাই ।

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ