
রবি দা’র ডেথ-বডি দেখতে ইচ্ছা করছে, অদ্ভুত ইচ্ছা ।
পাঁচ মাস আগে রবি’র মৃত্যু হয়েছে। সাধারন মৃত্যু নয় “আত্যহত্যা।”
রবি দা’র সাথে পরিচয় আমার খালাত ভাই আশিক এর সূত্রে । মশিউর রহমান আশিক’ মেধাবী ছাত্র- পি.এস.সি, জে.এস.সি, এস.এস.সি, তে এ-প্লাস প্রাপ্ত স্টুডেন্ট ।
আমার খালাতো ভাই ধোয়া তুলসি পাতা, চরিত্রে কোনো দাগ নেই, সৌন্দর্যে মাশাআল্লাহ ।
আশিক এখন রাজশাহী পুলিশলাইনে পলিটেকনিক বিষয় পরছে, মেসে থাকে, পরিবার থেকে বাড়তি কোনো খরচ নেয় না । মাসিক হাত খরচের টাকা বেঁচে গেলে আমার খালুকে টাকা ফেরত দেয়, এ বিষয়ে আমার খালা দুঃখ প্রকাশ করে আম্মাকে বলে ‘ তোর দুই ছেলে যে হারে তোদের চুষে খাচ্ছে সে তুলনায় আমার আশিক বোকা ভেবদা ছেলে ‘। যাই হোক, আমাদের আত্নীয়-স্বজনরা তেমন আমাদের বাড়ী আসে না, বিশেষ করে খালাতো ভাইরা আসে না । আশিক এবার কলেজ ছুটিতে বাড়ী এসেছে, পাশের গ্রামেই ওদের বাড়ী, আশিকদের বাড়ীর পাশেই রবি দা’র বাড়ী । গ্রামে এখন রবিই আশিকের ভ্রমণসঙ্গী, রবি পেশায় ভ্যান চালক, পারিবারিক অভাবের কারনে স্কুলের বাড়ান্দা তার দেখা হয়নি । তার পেশা দুইটা, ভ্যান চালানো আর দিনমুজুরি । কামাই ভালো, মা মরে গেছে ছোট বেলায়, বাবা বৃদ্ধ । রবির বাবা দু-চার গ্রামের মানুষের কাছে ব্যাঙমারা আকালু নামে পরিচিত । সেকালে বস্তা ভরে হোলা-ব্যাঙ ধরে বিক্রি করত । হাস্যকর ব্যাপার , তবে কথা সত্য ।
রবি’র সাথে পরিচয় : সময় মনে নেই, দুপুরের একটু পরের কথা, রোদ এখনো পড়েনি ।
আমি ঘুমাচ্ছি, ফোনের কাঁপুনিতে(ভাইব্রেশন) ঘুম ভেঙ্গে গেল, আশিক ফোন করেছে । ফোন কেটে দিয়ে ব্যাক করলাম । অতি সঞ্চয়ী ছোট ভাইকে ফোন ব্যাক করাই ভালো ।
আশিক ফোন রিসিভ করল, আমি সালাম দিলাম ( আশিক বয়সে আমার ২ বছরের সিনিয়র, ক্লাসে না। বয়সের দিক দিয়ে আমি ওকে সম্মান করি এবং ক্লাসের দিক দিয়ে ও আমাকে সম্মান করে ) ।
আশিক আমাদের বাজারে আসতে চায়, বাড়ীতে আসে না, সরম করে । আমি ওকে আসতে বললাম, ও আমাকে বলল ‘ ভাইয়া রেডি হয়ে থেকো দুই ভাই মিলে এলাকা ঘুরব ।
আমি অতি ভ্রমনপ্রিয় ছেলে, এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম ।
রেডি হয়ে বাজারে গেলাম, চিকা ভাইয়ের দোকানে বসে হাই লিকারের এক কাপ চা খেয়ে সিগারেট ধরালাম । সিগারেট শেষ করতেই ফোন কেঁপে উঠল – আশিক ।
ফোন রিসিভ না করেই ডাক দিলাম ‘ আশিক ‘ ।
আশিক ভ্যানওয়ালা ছেলেটাকে বুঝিয়ে দিলো , সে আমার কাছে এসে ভ্যান সাইড করল । আমি সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে সাদ্দাম ভাইয়ের দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে ভ্যানে বসলাম ।
আজকাল ব্যাটারি চালিত ভ্যান, পরিশ্রমের দিন শেষ । ভ্যান চলতে শুরু করল, চালক আমার দিকে মুখ ঘুড়িয়ে বলল,’ তোমার আব্বা মেম্বার ?
আমি : হ্যাঁ, আপনি কিভাবে জানলেন ?
চালক : দিনে একবার হলেও তোমার আব্বা আমার ভ্যানে উঠে । তোমার আব্বাকে আমি খুব ভয় পায় ।
আমি : কেন ? (অবাক হয়ে)
চালক : তোমার আব্বার দাড়ি দেখলে রাজাকার মনে হয় ।
আমি : হা,হা,হা (খুব হালকা শব্দ করে হাসলাম)
চালক : মেম্বার চাচা খুব ভাল মানুষ, তবে কথা বলার সময় মনে হয় ‘ কখন যেন আমাকে চড় বসিয়ে দিবে, তাই চাচার সাথে খুব কম কথা বলি।
এতক্ষণ চালকের সাথে কথা বলে বুঝলাম, সে খুব দ্রুত কথা বলে । আশিক এতক্ষণ ফেসবুকে ছিলো, তাই চুপ ছিলো ।
আশিক : ভাইয়া,শান্তিপুরের দিকে যাওয়া যায় ?
আমি : হুম ( সিগারেট ধরাতে ধরাতে )
কিন্তু, হাওয়ার বেগ বেশি, আগুন স্থায়ী হল না ।
ভ্যানওয়ালার গায়ে হাত দিয়ে বললাম
– একটু সাইড করেন, সিগারেট ধরাব ।
চালক পিছনে ফিরে আমার প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট টান দিয়ে বলল – আগুন দাও ।
এমন ব্যবহার একজন অপরিচত ভ্যানওয়ালার কাছ থেকে মোস্তাফিজুর আশা করে না ।
আমার রাগ চেহারায় প্রকাশিত হলো না ।
(মনে মনে)তোর ভাগ্য ভাল, আমার অতি ভদ্র খালাত ভাই এখানে উপস্থিত না থাকিলে তোর পশ্চাত্যের চর্ম থাকিত না ।
আমি ভ্যানওয়ালার হাতে লাইটার দিলাম সে সিগারেট ধরাল, আমিও ধরালাম ।
ভ্যান ঢুকলো শান্তিপুরের রাস্তায়, আশিক ফোন টিপছে । এই এলাকায় আমি প্রায়দিনই আসি, ভালো লাগে, বিলে বিলে বানের জ্বল । বিকেল প্রহর কানায় কানায় পূর্ণ । বানের পানি দেখলে আমার তৃষ্ণা বেড়ে যায় ।
সোহাগি বাজারে আশিক ভ্যান থামাতে বলল, ভ্যান থামল না । আশিক চালকের পিঠে মিডিয়াম সাইজের কেজি-খানিক ওজনের একটা থাবা মেরে বলল, ‘ রবি ‘ বদমাইশি করিস না।’
এবার কাজ হয়েছে, ভ্যান থামল, রবি নিজের পিঠে হাত বুলাচ্ছে ।
যারা বলে নিজের পিঠ নিজে চুলকাতে কষ্ট হয়, তারা রবি’র কাছে থেকে শিক্ষা নিতে পারেন ।
ভ্যান থামার সাথে সাথে আশিক সোহাগি বাজারে ঠুকে গেছে, কেন গেছে বুঝলাম না । আমি রবির দিকে তাকিয়ে আছি ।
আমি এই মাত্র চালকের নাম জানতে পারলাম, এর নাম তাহলে রবি । বড় নাম থাকতে পারে, ডাকনাম রবি । আমি একে জামাই বানাচ্ছি না যে, ভাল নাম জানতেই হবে ।
আশিক ফিরে এসে বলল, চল । রবি জেদ ধরল, আমি তোর সাথে যাব না, তুই মারলি কেন ?
ভ্যান চলতে শুরু করল । সরকুতিয়া কলেজের রাস্তায় এসে ভ্যান থামল । আমরা তিন জন ভ্যান থেকে নেমে রাস্তার ধারে বানের পানিতে পা ভিজিয়ে বসে পরলাম ।
আশিক আমার দিকে সিগারেট এগিয়ে দিল, আমি অবাক হলাম না ।
৯টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
গল্পের থিম ভালো লাগলো।
পরের পর্বের অপেক্ষায়। শুভ কামনা
মোস্তাফিজুর খাঁন
ধন্যবাদ আপু
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্পটা ইন্টারেস্টিং। আরও পড়ার ইচ্ছে রইলো। বানানের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা 🌹🌹
মোস্তাফিজুর খাঁন
ধন্যবাদ আপু, ভুল সংশোধনে আপনাদের সহযোগীতা আশা করছি ।
হালিমা আক্তার
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। শুভ কামনা।
মোস্তাফিজুর খাঁন
অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি ।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
গল্পের শুরুটা ভালো লেগেছে আশা করি আগামী পর্বে এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হবেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা নিরন্তর
রোকসানা খন্দকার রুকু
গল্প ভালো হবে বলে আশা করা যায়। শুভ কামনা রইলো।
উর্বশী
ভাল লাগলো , আশা করছি আগামীর লেখাও ভাল হবে।এগিয়ে চলার পথ প্রশস্ত হোক,অফুরান শুভ কামনা রইলো।