
পশ্চিমবাংলার বর্ধমানের একটা নিউজের ভিডিও দেখছিলাম ১৫ বছরের এক মেয়েরে বিয়ে করতে না পেরে ভিডিও কল করে আত্মহত্যা করেছে এক ছেলে। এরপর সেই ছেলের পায়ে সিঁদুর ঢেলে মেয়ের কপালে জোর করে ঘষা দিয়ে মৃত ছেলের সাথে বিয়ে দিয়েছে ছেলের পরিবার আর প্রতিবেশিরা। ছেলের নাম মো: মান্না, আর মেয়ের নাম বলে নাই তবে টাইটেল দাস। ছেলে মুসলিম হলেও যেহেতু হিন্দু মেয়ে তাই তারা ভাবছে জোর করে সিঁদুর পরালে মেয়েরে বেশ শাস্তি দেওয়া যাবে। তাদের দুজনের নাকি প্রেম ছিলো কমাসের। এরপর ছেলেরা গেছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মেয়ের মা বলেছে মেয়ে নাবালিকা! দুই বছর পরে বিয়ে দিবে, অপেক্ষা করতে। কিন্তু ছেলের দেরী সহ্য হবে না, পালাতে বলেছে, মেয়ে রাজী না হলে অভিমানে সুইসাইড করেছে। বিষয়টা নিশ্চয়ই কষ্টের কিন্তু তা বলে এরপর সেই ১৫ বছর বয়সী মেয়ের উপরে যে আক্রোশ তারা দেখালো! ওই বয়সী মেয়ে প্রেম করে বিয়ে করলো না বলে তার শোধ নিতে হবে! সবচে বেশি তেজী কন্ঠ আরেক কাকীমার, তিনি নিজেই বলছে যে “মেয়েটার জন্য ছেলেটা মারা গেলো তাই জোর করে ছেলের পায়ে সিঁদুর দিয়ে মাথায় দিয়ে দিলাম যাতে মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে যায়, যাতে তার আর বিয়ে না হয়”- যে কাকীমা বলল তার নিজের কপালেই কিন্তু সিঁদুর দেওয়া। কিন্তু তিনি নেমে গেছেন ১৫ বছরের মেয়েরে সাজা দিতে। তিনি মান্নার প্রতিবেশি।
যাই হোক সবই বুঝেছি কিন্তু নিউজে বারবার জোর করে সিঁদুর দিয়ে বিয়ে দিয়ে দিছে বলছে কেন বুঝলাম না! মারধোর করেছে এইটা না বলে বলছে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে! কেউ জোর করে সিঁদুর দিলেই বিয়ে হয়ে গেলো? মৃত মো: মান্নার পায়ের ঘষা দিয়ে কেউ সিঁদুর দিলেই সে স্বামী হয়ে গেলো? নিউজ করে যারা ওদের ঘিলু কম না ইচ্ছে করে এইসব বলে? কেউ যদি মনে করে সিঁদুর তার এয়োস্ত্রী হবার চিহ্ন, সে তেমন করে মনে করে মাথায় দেয় তাইলে সেইটা এক কথা, নইলে ওইটা স্রেফ একটা রং ওরফে red lead।
কেউ জোর করে সিঁদুরের রং দিয়ে দিলেই বিয়েও হয়না, জীবনও শেষ হয়না। ভাল করে স্নান করে বরং মারধোর যারা করলো আর ওইযে কাকীমার মতো যারা হম্বি তম্বি করলো তাদের বলতে হবে যে ওতে কিছু হয়না। আরে ছোটবেলা মুভিতে দেখতাম গুন্ডা টাইপের নায়ক জোর করে নায়িকার কপালে সিঁদুর দিলো আর জীবন শেষ হয়ে গেছে মনে করে নায়িকা তার সংসার করতে লাগলো, অবশ্য মুভিতে নায়কেরা সব ভাল হয়ে যায় পরে। কিন্তু জীবনতো আর মুভি না, সেই ছোটকালে যা দেখেছি তাই এখনও আছে জানতাম না! ও কাকীরা তোমরা বড় হবা না?
=============
পুস্পিতা আনন্দিতা
নিউইয়র্ক।
৭টি মন্তব্য
স্বপ্নীল মেঘ
হিন্দুদের কিছু কিছু সংস্কৃতি বেশ ভয়ানক। উনাদের সমাজে মেয়ে মানুষ আজও বেশ অভিশপ্ত।
কেনো জানিনা, মেয়ে মানুষ কে নিয়ে এতো সমস্যা!
আমাদের সমাজে এখনো, এক পরিবারে ছেলে সন্তানের আশায় নির্যাতন চলতেই থাকে নিরীহ পোয়াতির উপর। বারবার কনে সন্তানের আসাকে আমরা পোয়াতির দোষ দেই কিন্তু এটা যে আল্লাহ-প্রদত্ত
সেটা আমরা বুঝেও রাগের ঝাঁজ তাদের উপরেই থ্রো করি। কারন তারা পরাধীন থাকে স্বামীর কবলে।
এই কাকীমার মতোন মানুষ গুলো সমাজে বিষের মতোন। এদের মরন হয়না। এদের জন্মই হয়েছে অশান্তি আর নির্যাতন করার জন্য।
ভালো লিখেছেন। আরো লিখুন। শুভকামনা
আলমগীর সরকার লিটন
ভাল লেখেছেন দিদি
আরজু মুক্তা
মেয়েরাই মেয়েদের প্রধন শত্রু। আর আইন বরাবরি দূরে। মেয়েদের বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হাস্যকর বটে! আপনাদের হিন্দু সংস্কৃতি শুধু নয় মুসলমানদের মধ্যেও এখন নানারকম কুসংস্কার জড়িত।
হালিমা আক্তার
এ কেমন আচরণ। জোর করে কী বিয়ে করা যায়। অদ্ভুত সংস্কৃতি অদ্ভুত মানুষ। সমাজে আইন কানুন কি কিছুই নাই।
জিসান শা ইকরাম
বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম ঘটনা সম্পর্কে জেনে।
এই উপমহাদেশে মানুষের মাঝে বিরাজমান এই অন্ধকার দূর হবে না আর কখনো।
এভাবেই উপেক্ষিত হবে নারীদের চাওয়া, তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে নিষ্ঠুর ক্রোধ, প্রথা।
মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়েছে বললেই হলো? সে বিয়ে করেছে কিনা, তা দেখা হবে না।
শুভ কামনা আপনার জন্য।
হালিম নজরুল
সমাজের এই অচলায়তন কবে ভাঙবে কে জানে!