আমার পরিচিত দুই কুলাঙ্গার সন্তান যারা আমার কাছে এখন খুবই ঘৃনীত পশুসম —।  শহরে তাদের ব্যবসা আর নিজস্ব বাড়ি আছে, তাছাড়াও গ্রামের বাড়িতে অসংখ্য জমি — যার বাবা থাকতেন আমেরিকা — বৃদ্ধ বয়সে বাবা বাংলাদেশে চলে আসার কয়েক বছর পরেই মারা যান — দুই ছেলেই হজ্জ করেছেন, চিল্লায় যান মাসের পর মাস — কিন্তু তার মায়ের খবরই রাখেন না — তিন তলা বাড়ির কোন ঘরেই তার মায়ের স্থান হয় না — খুবই কান্নাকাটি করে নীচতলার একটা অন্ধকার ভেজা স্যাতসেতে ঘরে মাকে থাকতে দেয়া হয় যে ঘরে কোন বাথরুম নেই । তার সন্তান আর বউ মাঝে মাঝেই বলে যে মা তুমি এই ঘরটিও ছেড়ে দাও, আমারা ভাড়া দিব — কোন কোন দিন তাকে খেতেও দেয়া হতো না —

একদিন আমার বাসায় সেই কুলাঙ্গার ছোট ছেলে আর তার বউ:
গত বছর আমার বাসায় সন্ধার পর তারা আসলো, সঙ্গে তাদের একমাত্র সন্তান। বলে শুনেন আপনিতো জেন্ডার নিয়ে কাজ করেন তো আপনার কাছে একটা বুদ্ধির জন্য আসছি, তারাতারি বুদ্ধি দেন, আমিতো থ বনে যাই –সুন্নত আদায়ের জন্য দুজন একই চায়ের কাপে চা খেল,  চা নাস্তার এক ফাঁকে তার বউ বলে যে আমার শাশুড়ীকে কিভাবে তাড়ানো যায় বুদ্ধি দেন, সে কোনমতেই বাসা ছাড়ছে না — আমরা রুমটা ভাড়া দিব, ঘর দখল করে বসে আছে, আর আমার দুই ননদ শশুর বাড়ি হতে এসে অনেক দিন করে থাকবে — আমি প্রথমে বুঝতেই পারি নাই — পরে সেই কুলাঙ্গার সন্তান বলে যে হ্যা আমার মা আমার রুম ছেড়ে দিক এটাই আমারও চাওয়া —। আমি উঠে গেলাম রান্নাঘরে ! মাকে বললাম, মা অলরেডি নাস্তা খাওয়ানো তো হয়ে গেল ! উনারা এসেছেন তার মাকে তাড়ানোর বুদ্ধি নিতে — এখন কি করি বলতো !!!’ মা বললেন, আমিতো ভাবছিলাম যেহেতু তারা পরিচিত তাই রাতের খাবারটা খেয়ে যাবে, তুই এখনই ওদের বিদায় কর —”। আমি তাদের কাছে চলে এলাম — তাদের ১০ বছরের সন্তানকে  জিজ্ঞাসা করলাম বলতো বাবা তোমার দাদু তোমাকে কেমন ভালবাসে !! তাদের সন্তান বললো, আমার দাদী আমাকে খুবই ভালবাসে কিন্তু আমার মা আর বাবা আমার দাদীকে দেখতেই পারে না’ —। এবার আমি তাদেরকে  বললাম যে আচ্ছা আপনার সন্তান যদি আপনাদের সাথে এমন ব্যবহার করতো তাহলে আপনারা কি করতেন ! বউ বললেন, আমার সন্তান কখনোই এমন হবে না — আমরা তাকে সেইভাবে মানুষই করবো না —এবার বললাম, আচ্ছা আপনার মা কি বউ হিসেবে আপনার সাথে খারাপ আচরণ করেন ! ইনিয়ে  বিনিয়ে বললো যে হ্যা করে — কথার ভাঁজে বুঝতে পারলাম মিথ্যা বলছে!! সেই কুলাঙ্গারকে বললাম, যতদূর জানি আপনার জন্য আপনার মা পাগল — সেই আপনি কেন আপনার মাকে দূরে ঠেলে দিতে চাইছেন, আপনারা তাবলীগ করেন, ইসলাম কি বুঝে করেন নাকি না বুঝে করেন !! তিন বার বলা হয়েছে যে মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত আর মা যদি কোন রাগও করেন তবে কোন অবস্থাতেই কোন টু শব্দটি করা যাবে না যাতে মা কষ্ট পান —তারা এবার নীরব। আমি আরও বললাম, আপনারা কী করে ভাবলেন আমি মাকে তাড়ানোর বুদ্ধি দিব ! আপনাদের এতগুলো রুম !! আর তার থাকার জায়গা হচ্ছে না, তার মেয়েরা এসে থাকতে পারে না, তার মানে আপনার বোনের সাথেও সম্পর্ক ভালভাবে রাখছেন না, যতদূর জানি হাদিসে আত্মীয়তার সম্পর্ক কঠিণভাবে বজায় রাখতে বলা হয়েছে — আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী কোন দিনও জান্নাতে যাবে না ‘’—এবারও তারা নিরব — অনুরোধ করবো চিল্লায় যান ঠিক আছে কিন্তু আগে মায়ের হক আদায় করুন আর আপনি শাশুড়ীর সাথে ভাল ব্যবহার করুন — আমার কথা যে তাদের পছন্দ হলো না তা বুঝতে পারলাম —। এক সময় বললো ঠিকআছে এবার আসি ——

আমার মায়ের অনুরোধে গোপনে আমি সেই দুখিনী মাকে তিন দিন কিছু শুকনা খাবার কিনে দিয়েছি  -সেই সব খাবার পেয়ে সে যে কী খুশি তা বলে বোঝাতে পারবো না —  মাঝখানে অনেকদিন দেখা হয় নাই- কোন এক দিন শুনতে পেলাম তার মা আর সেই বাসায় থাকে না, তার মেয়ের বাসায় থাকে — এক বছর পর কোন এক দিনে শুনলাম তার মা অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে অথচ তার দুই সন্তান কোনই টাকা পয়সা দিবে না — মেয়ের জামাই সমস্ত ব্যয়ভার বহন করেছে — হয়তো মনে অনেক কষ্ট নিয়ে তার প্রিয় সন্তানদের জন্য দোয়া করে এই পৃথিবী হতে চলে  গিয়েছে যেখান হতে আর তার সন্তানদের বলবে না ওরে খোকা ! তোর বোনেরা এসেছে ! একটু বাজার করে নিয়ে আয়, আর বলবে না কোনদিন, আয়রে খোকা আয়  আমার বুকে আয় ! তোদের একটু বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করি ——–
সেই কুলাঙ্গারদের একজনের সাথে দুইমাস আগে দেখা ! কুশলাদি জিজ্ঞাসা করার এক মূহুর্তেই আমার সামনে হতে চলে গেল, বউ আমাকে দেখেই দৌড়ে পাললো !! হায়রে সন্তান !! এমন কুলাঙ্গার সন্তান যেন কারো না হয় !!!!!!!!!!!!

নোট: সবার মা ভাল থাক, সুস্থ্য থাক, দীর্ঘ জীবন লাভ করুক — মা বাবা, সন্তান আর আত্মীয় স্বজনেরা আত্মার কাছাকাছি থাকুক — মা বাবা কখনোই বৃদ্ধ বয়সে বোঝা হয় না, বরং তারা অদৃশ্য দোয়া দিয়ে সন্তানদের আগলে রাখেন যেখানে শক্রুর ভয়ংকর মরনাস্রও মায়ের দোয়ায় ফিরে যায়  — মা আর সন্তানে হোক আদরে মাখামাখি, সন্তান দখল করে নিক মায়ের শ্রদ্ধা আর ভালবাসা —-

৮১২জন ৮১২জন
0 Shares

২২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ