
জোসেফ ( ছদ্মনাম) একমাত্র ছেলে বাবা মায়ের। খুব আদরে বেড়ে উঠেছে। আদর* শব্দটাতে বেশ একটু জোড় দিয়ে পড়ুন। কি মনে হচ্ছে? একটু চিন্তা চলে আসছে না মগজে? আসা উচিৎ ।
খুব* এবং আদর* এই শব্দ দুটোকে নিয়ে কয়েক মিনিট নিজের নিজের মত করে কিছুক্ষণ ভাবলেই অনেক গুলো কথা মগজে কিলবিল করতে শুরু করবে। ওই কিলবিলানি টুকু আপাতত এক পাশে সরিয়ে রেখে আসুন, পুরো লেখাটা ধৈর্য্য নিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। পড়তে খারাপ লাগবে না আশা করি।
এখন তো কেউ পড়া পড়ি করতে চায়না মোটে!
জানা সত্যেও গত দুদিন ধরে মনের ভেতরে ভীষণ ছটফট করছি কিছু একটা লেখার জন্য। গোছালো বা অগোছালো যাই হোক ভাবছি লিখেই ফেলি। লেখা দীর্ঘ হলেও পড়ুন। এ কারনেই পড়ুন, অন্তত কিছুটা সময় লেখার প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে ভাবনা চলে আসে যদি মনে,,,, তবেই বুঝবেন… ভাবা উচিত যার যার মত করে।
************************************************
ছোট্ট জোসেফ একটু বেশিই আদর পায় মায়ের কাছ থেকে, বাবার কাছ থেকে। এমনিতে শান্ত ছেলেটা মোটেই গাঁইগুঁই করেনা কোনো কারন বা অকারনে। বাবা মায়ের বিলাসিতার ছাপছায়ে বরং জোসেফ বেড়ে উঠছে আলাদা রকম করে। পাড়ার ছেলেদের সাথে মেলামেশা করার সময় যখন হয়ে আসে! তখন থেকে কেউ দেখেনি বা শোনেনি মা কিংবা বাবার কোনোরকম বাছ বিচারের কড়া শাসন পেয়েছে কিনা! স্কুলে ভালো না খারাপ ছাত্র! সে বিষয়েও কখনো কারো অভিযোগ শোনা যায়নি। মাঝে মাঝে যখন আমি বাবার বাড়ি যেতাম! জানতে চাইতাম জোসেফ কোন ক্লাশে পড়ে! শেষবার বোধহয় শুনেছিলাম এইট বা সেভেনে পড়ার কথা। তারপর আর আমি বলতে পারব না সঠিক কোন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে জোসেফ!
কোনো গৃহশিক্ষক ওকে এক মাসের বেশি পড়াতে পারতেন না। শিক্ষক পড়া আদায়ের জন্য শিক্ষক সুলভ আচরন কখনো ভুল করে, করে ফেললেও জোসেফের সামনেই শিক্ষককে অপদস্ত হতে হত জোসেফের মা কতৃক। -‘ আমার ছেলের মাথা এমনিতেই ভালো আছে, আপনি কেমন টিচার যে ও আপনার পড়ানো বোঝে না আর পড়া রেডি করতে পারে না!’ অথবা- ‘ ওর শরীর খারাপ ছিল এ জন্য পড়তে পারে নাই, সে জন্য আপনি ওরে গালি গালাজ করার সাহস করেন কি করে?’
নতুন শিক্ষক নিয়োগ হয়, একই কান্ড ঘুরে ফিরে নানান বাহানায় চলতে থাকে। স্কুলে শ্রেনী বদলানো কেমন করে হয় আমার ততটা জানা নেই। ধীরে ধীরে জোসেফ দূর থেকে দূরে সরে যেতে থাকে পড়াশুনা থেকে। ক্রমান্বয়ে প্রকাশ হতে থাকে যাবতীয় * খুব আদরে*র পরিনতি। প্রশ্রয় গুলো বাছ বিচার হয়নি কখনো জোসেফের পিতা মাতার কাছে। চাচাদের চোখের সামনে জোসেফের পরিনতি খুল্লাম খুল্লা প্রকট। কারো কিছু বলা বা করার নেই। জোসেফ এমনিতে পরিবারের অন্য চাচা চাচি কারো সাথে কোনোদিন অভদ্র আচরন করে না। বেয়াদবি করে না। কিন্ত বাইরে যা করে তা সবাই জানে।
অগোচরে নানা রকম অন্যায় কাজে জড়িয়ে গেছে। জড়িয়ে গেছে নেশা আসক্তিতে। প্যাথেড্রিন থেকে আরো কিছু নেশা দ্রব্য। অনেক গোপন খবর কখনো কখনো রহস্যের মত ছড়িয়ে পড়ে। জোসেফের মা এবং একমাত্র বোন যতটুকু পারত খুব গোপনে শাসন করার ব্যর্থ চেষ্টা করত। এক সময় জোসেফের বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ল। জোসেফ নিজে বাবার সেবা যত্ন করত। বাবার সাথেই ঘুমাত অত বড় যুবক ছেলে। বাথরুমে নেয়া আনা, গোসল করানো, ঔষধ খাওয়ানো। মাঝে মাঝে ঘুমঘোরে পাশবালিশ নিয়ে বাবার সাথে খিটিমিটিও করত।
কে জানত!!! এই ছেলেটা শেষ পর্যন্ত প্রশ্রয়ের মাত্রা আন্দাজ করতে ব্যর্থ হবে? ২৬ বছর বয়সী জোসেফ এক অসম প্রেমে পড়ল। অসম বলতে- অন্য ধর্মাবলম্বী গোত্রের এক মেয়ে। যে মেয়ে কখনোই কোনোরূপে গ্রহনযোগ্য হবার কথাই নয়,, তেমন মেয়ে। মেয়েটা সুন্দরী ছিলো নাকি প্রচুর! মেয়েটার আরো কিছু বদনামও ছিল। সবকিছু জেনেও জোসেফ অসহিষ্ণু হয়ে গিয়েছিল। মেয়ের বাবা ও নিষেধ করেছিলেন- তুমি আর আমার মেয়ের কাছে এসো না,,, তোমার পুরো পরিবার কখনো এটা মেনে নেবে না, আর এটা সম্ভব ও না। উল্টো জোসেফ হুমকি ধমকি দিয়ে এলো।
২০০৮ সালের নভেম্বরের এক রাতে বাইরে থেকে ফিরে বাবার গলা ধরে বাবাকে আদর করল কিছুক্ষণ। বলল- আব্বা, আর তোমার কোল বালিশ টাইনা নিয়া তোমারে বিরক্ত করব না।’ মাঝের রুমে মা বোন টেলিভিশন দেখছিলো একাগ্রচিত্তে। পাশের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল জোসেফ। বোন চেঁচিয়ে বলেছিল- তুই দরজা লাগাইতেছিস ক্যান? বাথরুমে যেতে হবে তো! ওই রুম হয়েই বাথরুমে যেতে হত। জোসেফ বলছিলো– একটু কাজ আছে, একটু পরে খুলছি।
একটু পর* সময়টা বয়ে গেছে ৩০ মিনিট/ এক ঘন্টা…. দরজা ধাক্কা ধাক্কি হল খুব সাবধানে। বাইরে যেন আওয়াজ না যায়, সেভাবে। আতংকিত হতে লাগল মা মেয়ে দুজনেই। ঘড়ির কাঁটা রাত ২টা। মোবাইলে পরিচিত কাঠ মিস্তিরি ডেকে আনা হলো, তাকে বলা হলো যতটা সম্ভব আওয়াজ না করে দরজার ছিটকিনি কেটে দিতে। আধ ভাঙা ঘুম চোখে মিস্তিরি বলল, হাতুড়ি – বাটালি চালাইতে হইলে আওয়াজ চাপা দিমু কেমনে?
পাশের ঘরে জোসেফের চাচার ঘুম ভেঙে যায় খুব কাছ থেকে টাকা টাকির শব্দে। শব্দের উৎস খুঁজে না পেয়ে আবারো ঘুমিয়ে যায়। শেষাবধি দরজা খোলে…… কাঠ মিস্তিরি এক অল্প বয়সী ছেলে। দরজা খুলেই চোখ চলে গেল ঝুলে থাকা পায়ের দিকে। চোখ জোড়া আরেকটু উপরে উঠতেই…. ছেলেটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ওখানেই অজ্ঞান হয়ে গেল। জোসোফের বোন দৌড়ে তখন বড় চাচার ছোট ছেলেকে ঘুম ভাঙিয়ে ডাকতে পাশের ঘরের দরজায় কড়াঘাত করতে লাগল….. ভাইয়া জোসেফ…..
চাচাত ভাই শফি এক ঝটকায় ছুটে আসতে আসতে চোখে পড়ে সামনের ঘর থেকে রক্তের দাগ এসে শেষ হয়েছে জুলন্ত জোসেফের পায়ের নীচে। জোসেফ হাতের কব্জি কেটেছিলো ওই মেয়েটার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হবার পর পরই। মেয়েটার বাসায় গিয়েছিলো মেয়েটাকে শেষবার বিয়েতে রাজি করাতে। মেয়েটার সামনেই পকেটে লুকিয়ে রাখা নতুন ব্লেড দিয়ে কব্জিতে টান মেরে রগ ছিঁড়ে নামিয়ে দিলো,,, ওই অবস্থাতে রাস্তা দিয়ে যতটকু পথ নিজ বাসা পর্যন্ত এসেছে,,,, রক্ত দাগ রেখে রেখে এসে ঝুলে গেছে সিলিং ফ্যানের সাথে—–
ক্রমশঃ
৪টি মন্তব্য
খাদিজাতুল কুবরা
গল্পটা পড়েছি,
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে অতিরিক্ত স্নেহের ফল এমন ভয়ংকর।
খুব সুন্দর লিখেছেন আপু।
জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য এমন লেখার প্রয়োজন আছে।
বন্যা লিপি
বাস্তবতা চোখের সামনে ঘটে,,,অথচ আমরা শিক্ষা নিইনা এসব থেকে।
হালিমা আক্তার
বাবা মার অতিরিক্ত আদর সন্তানের জন্য ক্ষতিকর অনেকেই সেটা বুঝতে চায় না। অপেক্ষায় রইলাম।
বন্যা লিপি
আমি ছোটখাটো বিষয়ও কখনো সন্তানদের ছাড় দেইনি,,, আমি কি খুবই খারাপ করেছি আমার সন্তানদের লালনে পালনে? আজও আমি সঠিকটা জানি না।