
বুদ্ধদেব গুহ রচিত ” মাধুকরী ” একটি উপন্যাস নয় ; একটি বইয়ের গল্পও। যেখানে আছে, প্রেম, বন্ধুত্ব, ঘৃণা, জয় পরাজয়। আছে নাড়ীর টানে ছুটে চলা এক রহস্যময় জীবন।
মাধুকরীর শাব্দিক অর্থ বহু স্থান হতে অল্প পরিমাণে সংগ্রহ বা দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা। আসলেই তাই। জীবন নামের গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে বহুজনের কাছ থেকে, বহু স্থান থেকে অল্প অল্প সংগ্রহেই আমরা নিয়োজিত থাকি সারাটা জীবন। প্রাপ্তির খাতায় কার যে কী জোটে তার হদীস মেলা দায়।
বই জুড়ে জঙ্গলের বর্ণনা, জঙ্গল আর মানুষের বন্ধুত্ব। বই এর পাতায় পাতায় অনেক চরিত্রের আনাগোনা। শামীম , সাবির মিঞা , দিঘা পাঁড়ে , ঠুঁঠা বাইগা। পৃথু, একজন ইঞ্জিনিয়র। তার সুন্দরি স্ত্রী রুষা। ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, আত্মসম্মানী, ভাবাবেগ বর্জিতা আধুনিক এক নারী। যিনি ভুল হলেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। উদাসীন মন কখনো পৃথুকে টানে ; কখনো দূরে ঠেলে দেয়। তবুও সে একজন আদর্শ মা।
আছে কুর্চি, পৃথুর আজন্ম প্রেমিকা। কিছু সুন্দর চিঠি তাদের ভালোবাসার সাক্ষী। সমাজ ও পরিবারের চাপে এক না হওয়া যুগল। অথচ দুজনে তীব্র আবেগ পুষে রাখে।
আছে মোটর মেকানিক ভুচু, পৃথুর চেলা। যে ভুল মানুষের প্রেমে পরে অদ্ভুত টানাপোড়নে জড়িয়ে যায়।
পৃথু বাঘের মতো বাঁচতে চায়। প্রচণ্ড আত্মসম্মান তার। সে নারী, গৃহ, সংসার, সমাজ কারও উপর নির্ভরশীল হতে চায় না। আবার জীবনের থেকে তার কাছে বন্ধুত্বের মূল্য বেশি। তাইতো হারায় জীবনের একটা অংশ।
ইচ্ছে করলে ফেরা যায় ভালোবাসার মানুষের কাছে। কিন্তু ভালোবাসার মানুষের কাছে সাহায্য নিলে ভালোবাসাটা নোংরা হয়ে যায়। আজীবন ভালোবাসার যাচনা করা পৃথু ভাবে, ” জন্ম থেকে আমৃত্যু কাল অগণিত নারী পুরুষ শিশুর হৃদয়ের শরীরের দোরে দোরে হাত পেতে ঘুরে ঘুরে বেঁচে থাকাই মানুষের নিয়তি। এটারি অন্য নাম মাধুকরী। ” স্বনির্ভর হয়ে বাঁচা সব মানুষের ভাগ্যে জোটে না। ঘৃণা, ক্রোধ, বৈরিতা, শ্রদ্ধা, প্রেম সব প্রদীপের কম্পমান শিখার মতো। তাকে আলতো করে ছুঁয়ে ছুঁয়ে জীবন পার করতে হয়।
জীবনের প্রতি আসক্তি ও আসক্তির মধ্যে লুকিয়ে থাকা বিতৃষ্ণাকে লেখক যে চমকপ্রদ ভঙ্গিতে ছড়িয়ে দিয়েছেন ; যে নৈপূণ্য বর্ণনায় এনেছেন সুক্ষতা ; যে কুশলতায় ছোট বড় প্রতিটি চরিত্রকে দেখিয়েছেন চিরে চিরে, যে দক্ষতায় দেশি বিদেশি অজস্র কবিতার ব্যবহার করেছেন —– সে সবই এক ভিন্নতর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় পাঠককে।
মাধুকরী হজম করার মতো বই না। আত্মসাৎ করার মতো বই।
Italo Calvino এর বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করছি ” A classic is a book that has never finished, saying what it has to say. ”
★★উপন্যাস : মাধুকরী
পৃষ্ঠা : ৫৪২
লেখক : বুদ্ধদেব গুহ
প্রথম প্রকাশ :১৯৮৬
অনলাইন প্রাপ্তি স্থান : রকমারি ডট কম।
আশা করছি, পাঠক রিভিউ পড়ে ; বইটি পড়ায় আগ্রহী হবেন। আর তাহলেই আমার লিখা সার্থক।
১৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
বইটি ছাত্র জিবনে পড়েছিলাম খুব মনে নেই আবার ঝালাই হলো আপনার কল্যাণে। আসলেই জীবনটা ভিক্ষুকের ন্যায় এখান থেকে অখানে চেয়ে চেয়ে এর ওর উপর দিয়ে চলে যায়। সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আরজু মুক্তা
বই পড়ে জীবনের অনেক কিছু শেখা যায়।
শুভ কামনা ভাই। নিরাপদে থাকুন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বুদ্ধদেব গুহের মাধুকরি বইটা অসাধারণ।
যদিও বইটা পুরোপুরিভাবে পড়া হয় নি নিজের আলসেমির জন্য।
গল্পে যেখানে সমস্ত সংগৃহীত সারকে একত্রিত করা হয়েছে।
আজীবন ভালোবাসার যাচনা করা পৃথু ভাবে, ” জন্ম থেকে আমৃত্যু কাল অগণিত নারী পুরুষ শিশুর হৃদয়ের শরীরের দোরে দোরে হাত পেতে ঘুরে ঘুরে বেঁচে থাকাই মানুষের নিয়তি। এটারি অন্য নাম মাধুকরী।
.
খুবি ভালো লাগলো, দিদি।
সুন্দরভাবে একসাথে তুলে ধরার জন্য।
আরজু মুক্তা
আপনাকে ধন্যবাদ অশেষ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অসাধারন একটি বই। বেশ কঠিন লাগে আমার কাছে চরিত্র গুলি। তবে বাস্তবতায় ভরপুর বইটি আপনার বদৌলতে আরও একবার পড়ার ইচ্ছা জাগলো। অবশ্যই পডবো।
অসাধারন বুক রিভিউ। আপনার তুলনা আপনিই । ভালোবাসা ও শুভকামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
এই যে আপনি বইটি পড়তে চাইলেন। তাতে মার লেখাও সার্থক হলো।
দোয়া করবেন।
তৌহিদুল ইসলাম
আপনার চমৎকার রিভিউ পড়ে বইটি সংগ্রহের ইচ্ছে প্রবল হচ্ছে। ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্ট লেখার জন্য।
আরজু মুক্তা
আপনাকেও ধন্যবাদ। নিরাপদে থাকুন
জিসান শা ইকরাম
উপন্যাসটি পড়েছি আমি,
এতবড় বিস্তৃত উপন্যাসকে এত সংক্ষেপে প্রকাশ করা খুবই কঠিন,
তারপরেও সফল ভাবে এই কাজটি করেছো তুমি।
মাঝে মাঝে এমন বই রিভিউ দিলে ভালো হয়।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ অশেষ।
বুক রিভিউ তো দেই মাঝে মাঝে।
শুভ কামনা সবমসময়
ছাইরাছ হেলাল
সেই যে কবে পড়েছি মনে নেই একদম-ই,
তবে একটি উক্তি মনে থেকে গেছে, কোথাও কোথাও বলেছিও;
খণ্ডে হার বাতাদি, ইমারত বুলন্দ থা!!
স্মৃতি থেকে বলা, ভুল শুদ্ধ জানি না।
রিভিউ চালু থাকুক।
আরজু মুক্তা
রিভিউ তো মাঝে মাঝে দেই।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
শুভ কামনা সবসময়
রেজওয়ানা কবির
আমার পছন্দের বইয়ের মধ্যে মাধুকরী, বইটি অনেক বড় হলেও দুবার পড়েছিলাম, এত সুন্দর শর্টলি গল্পটিকে উপস্থাপন করলেন যারা পড়েননি তারাও আগ্রহ পেল বইটি পড়ার। শুভকামনা আপু।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা সবসময়
হালিমা আক্তার
কবে পড়েছি বইটি এর কাহিনী তেমন মনে নেই। আপনার রিভিউ পড়ে আবার মনে হলে বইটির কথা। শুভ কামনা অবিরাম। ভালো থাকবেন।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকেন। নিরাপদে থাকেন