[সতর্কীকরণ : আপনার ধর্মানুভূতির কোনরকম পরিবর্তনে লেখক দায়ী থাকবে না]
একজন ধার্মিক ব্যক্তি মাত্রই দাবী করেন ধর্মই সকল নৈতিকতার উৎস, কারণ এই দাবীর উপরই ধর্মের ইইকালীন-পরকালীন প্রয়োজনীয়তা নির্ভর করে। নৈতিকতার উৎস যদি ধর্ম হয় তাহলে একজন ধার্মিকের জীবনে মানুষের তৈরি আইনকানুনের ন্যুনতম প্রভাব নেই, ধর্মের সুরক্ষায় তারা এতে দ্বিমতও করবে না, কারণ তাদের দাবী অনুযায়ী ধর্ম-থেকে-উদ্ভুত-নৈতিকতা ক্ষুদ্রতম জাগতিক অন্যায় থেকেও তাদের বিরত রাখছে। তারা যদি পাপ করে ফেলেন তাহলে রক্ষা নেই, পরকালে তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। ন্যায়-অন্যায় চিহ্নিত করতে ও মানুষকে অন্যায় থেকে বিরত রাখতে পরকালের বিচারের কথা বলার চেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় আছে বলে মনে হয় না।
মানুষের তৈরি আইনে কাউকে অপমান থেকে শুরু করে নৃসংশতম উপায়ে খুনের শাস্তির বিধান রেখেছে, অভিযোগ প্রমাণ হলে সাধারণত কারও রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। ধর্মগুলোর দাবীও এইরকমই, মৃত্যুর পর কড়ায়-গণ্ডায় সব বুঝে নেয়া হবে। কিন্তু এখানে বিশাল একটা ফাঁকি আছে, আব্রাহামিক ধর্মগুলো অনুযায়ী মৃত্যুর পর মানুষের পাপ-পূণ্যের হিশাব করা হবে, যদি পূণ্য বেশি হয় তাহলে রয়েছে স্বর্গ, সাতখুন মাফ। আর পাপের পরিমাণ বেশি হলে যতোদিন পাপ না কাটছে ততোদিন নরকবাস। তার মানে একজন ধার্মিক যদি জীবনের অর্ধেক সময় পাপ করে বেড়ান তাহলেও কোন শাস্তি সে পরকালে পাবে না।
ইসলাম ধর্মের কতগুলো সূরা-দূআ আছে যেগুলো কিছু নিয়মের সাথে নির্দিষ্ট সংখ্যকবার পড়লে কয়েক ধরনের গুনাহ থেকে শুরু করে সব গুনাহ পর্যন্ত মাফ হয়ে যায়। আবার সওয়াবের আশায় রোযা রাখলে ছোট ছোট গুনাহ তো বটেই, অন্যদের খাওয়ালে সব গুনাহ মাফ। বিশেষ বিশেষ রাতে গুনাহকে সওয়াবে পরিণত করার প্যাকেজও আছে। হিন্দুধর্মে গঙ্গাজলে স্নান করে, লাঙ্গলবন্দে ডুবিয়ে পাপমোচনের নিয়ম আছে। কয়েকজন ভগবানের নাম নিলেও পাপমোচন হয়। খ্রিস্টধর্মানুসারে মন্ত্রপূত পানিতে গোসল করলে পাপমোচন হয়, পোপকেও পাপমোচনের অধিকার দেয়া হয়েছে। প্রায় সবকয়টি ধর্মে এমন ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি আজীবন অন্যায় করেও মৃত্যুর আগে এসব করে পরকালে হুর-গেলমান-সুরা নিয়ে মেতে থাকতে পারবেন।
তাহলে দেখা যাচ্ছে ধর্মই অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছে, যেহেতু ঘোরতর অন্যায় করেও কেবলমাত্র মন্ত্রপাঠ করে (মন্ত্রগুলোর প্রায় সবই স্রষ্টার গুণগান, বিশেষ কোন ঘটনা পাঠ অথবা যুদ্ধক্ষেত্রের বর্ণনা!), নদীতে গোসল করে (নির্দিষ্ট তিথিতে পানির গুণগত পরিবর্তন হয় না) শাস্তি থেকে ক্ষমা পাওয়া যায়। মানুষের তৈরি আইনে এভাবে মৌখিক কর্মসাধনে শাস্তি থেকে ক্ষমা পাওয়ার সুযোগ নেই, শাস্তির ধরন অথবা মেয়াদের পরিবর্তন হতে পারে মাত্র। সব’চে বড়ো কথা শাস্তি হোক আর না হোক, ধর্ম নির্বিশেষে একজন অপরাধী মৃত্যুর আগেও য্যামন অপরাধী হিশেবে গণ্য হচ্ছেন, মৃত্যুর পরেও যদি কোন কাল থাকে সেখানেও অপরাধী হিশেবে গন্য হচ্ছেন।
দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য যদিও ধর্মীয় কিছু আইন-কানুন আছে, যাতে অপরাধীর চেয়ে ভুক্তভোগী বেশি শাস্তি ভোগ করে। অবশ্য মানুষের তৈরি আইনকানুনেরও সীমাবদ্ধতা আছে, অপরাধীকে ধরা পড়তে হবে, অপরাধ প্রমাণিত হতে হবে, কার্যকর করতে হবে- এসব ধর্মীয় আইনেরও ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নিধার্মিকের ক্ষেত্রে মানুষের তৈরি আইন ব্যর্থ হলেও (একইসাথে ধর্মীয় আইনও ব্যর্থ হবে) পরবর্তীতে সেটা সবখানেই অপরাধই থাকছে, কিন্তু ধার্মিকের ক্ষেত্রে এইরকম ভাবার সুযোগ নেই, কারণ মন্ত্রপাঠে সে নিজ ধর্মের সাপেক্ষে রীতিমতো নিষ্পাপ, ইহকালে-পরকালে উভয় স্থানেই!
৭টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
যুক্তিপূর্ণ লেখা ভালো লেগেছে । আসলেই কিছু ছুরা পরলেই যদি সব গুনা মাফ হয়ে যায় , তবে গুনা করতে বাধা নাই ।
কাফি রশিদ
হ্যাঁ সেটাই, অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে। ধন্যবাদ।
কৃন্তনিকা
আপনার লেখার সাথে পুরোপুরি সহমত হতে না পারলেও দ্বিমতও হতে পারছি না। তবে একটি ভুল তথ্য আপনার জানা। অনেক হিন্দু ধর্মানুসারীও ব্যাপারটা জানে না, সুতরাং আপনার না জানাটাও স্বাভাবিক। গঙ্গাস্নানে কখনোই পাপমুক্তি হয় না। হিন্দুধর্মের অষ্টম বা নবম-দশম শ্রেণীর(আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত নই কোন শ্রেণী) পাঠ্যবই ঘাঁটলে জানতে পারবেন। এরউপর একটা গল্পও আছে। আমি সেটা সংক্ষেপে বলছি- শিব ও পার্বতী কৈলাস যাচ্ছিলেন গঙ্গার উপর দিয়ে। তখন লোকজন গঙ্গায় স্নান সারছিল। পার্বতী তখন শিবকে জিজ্ঞেস করেন যে, এতে কি সত্যি পাপমুক্তি হয় কিনা। তখন শিব বলেন- না হয় না, মানুষের বিশ্বাসমাত্র। পাপমুক্তির কোন জায়গা না, মনটা আসল। কেউ যদি সত্যিকারভাবে অনুশোচিত হয়, তবে যে কোন স্থানেই পাপমুক্তি সম্ভব, সেটা নিজগৃহেও সম্ভব। পরশুরাম গঙ্গাস্নানের সময় পাপমুক্ত হয়েছিলেন বলেই লোকজনের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মেছে। 🙂
কাফি রশিদ
ব্যাপারটা আমি ভালো করে জানতাম না। ধন্যবাদ।
শিশির কনা
হুম
মিসু
আমাদের মত সাধারনরা , সাধারন ভাবেই এসব পালন করতে চাই ভাই।
আদিব আদ্নান
ভাল জানাশোনা নেই বিধায় মন্তব্য দিচ্ছি না ।