পথে ২০ মিনিটের হোটেল বিরতি সহ প্রায় পাঁচ ঘন্টার যাত্রা।
আমি যে সময়মত আমার গন্তব্যে পৌঁছাব সে ব্যপারে আমি একেবারে নিশ্চিন্ত ছিলাম। বাসে হোক বা ট্রেনেই হোক যাত্রার সময় মাঝে মাঝে আমার ঘুম ঘুম ভাব হয়। তবে সচরাচর আমি ঘুমাই না। ঘুমোতে পছন্দও করি না। আমর বরং পাশের দৃশ্যাবলী দেখতেই ভাল লাগে। আর এ কারণে আমার সিট টা যে জানালার পাশে তা নিশ্চিত হয়েই টিকিট কিনি।
যা হোক, আমার কিছুটা ঘুম পাচ্ছিল এবং ঘুমিয়েও পড়েছিলাম।
বড় একটা ব্রেক এবং সেই ব্রেকের কারণে সম্ভবত: আমাার ঘুমটা ভেংগে গিয়েছিল। আমি জেগে উঠলাম। বাস থেমে আছে।
আমি আমার হাতের ঘড়িটার দিকে তাকালাম। ৪৫ মিনিট। অর্থাৎ মিনিট ধরে আমি বাসের মধ্যে আছি।
এ পথে আমি প্রায়ই যাওয়া – আসা করি। পথ আর বাস ব্যাপারে আমার খুব ভাল ধারণা আছে। ৪৫ মিনটের ব্যবধানে বাসটি কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে তা খুব সহজেই আমি ধারণা করতে পারি।
কিন্তু বেশ আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম বাসটি যেখান থেকে যাত্রা শুরু করেছিল প্রায় সেখানেই থেমে আছে। আর দূরত্বের কথা যদি বলতেই হয় তাহলে বলতে হবে মাত্র কয়েক হাত দূরে।
ঘটনা কি তা জানার জন্য এদিক ওদিক তাকালাম। দেখলাম শ’ শ’ নয় হাজার হাজার বিভিন্ন ধরণের যান বাহন নিশ্চল হয়ে দাঁড়িযে আছে।
আমার মনে পড়ল আমাদের ভাষায় এটাকে বলে ‘যান যট।’
এ দেশের মানুষের কাছে ‘যান যট’ এর বিষয়টি খুবই পরিচিত। কেন না প্রায় প্রায়ই তাদের এই ক্ষতিকারক যান যটের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও কষ্ট পেতে হয়।
দুশ্চিন্তা ঘনিভুত হতে থাকল, দু’ চারটে অনাহূত প্রশ্ন এসে ঘুর পাক খেতে থাকল সমস্ত মন জুরে-গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব তো নাকি . . .?
আমি যখন ভাবছিলাম তখন বাসটি আবার চলতে শুরু করে। আমি আশার আলো দেখতে পেলাম। কিন্তু বুঝতে পারি নি সেই আশার আলোটি ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য। বাসটি আবার থেমে গেল মাত্র পাঁচ মিনিটের মাথায়।
বিরক্তিকর ৩০ মিনিটেরও বেশি সময় পর বাসটি আবার চলতে শুরু করল। দ্রুত গতিতে বেশ ভালই চলছিল। সময়মত গন্তব্যে পৌঁছানোর যে আশা তা আবার ফিরে পেলাম। অল্প সময়ের মধ্যেই আমার মেয়ের মিষ্টি মুখটা দেখতে পাব ভেবে ভিষন ভাল লাগছিল আমার।
কিন্তু ভাগ্য আমার পক্ষে ছিল না।
চালক হঠাৎ করেই চালানো বন্ধ করে দিলেন। আর আমরা সবাই লক্ষ্য করলাম – চালক, হেল্পার, কন্ডাক্টর সবাই বাসটির পিছনের দিকে ছুটছেন।
কারণ? একটু পরে জানলাম পিছনের একটি চাকা হাওয়া শূণ্য হয়ে পড়েছে।
তারা তখনই কাজে লেগে গেল এবং যতটা দ্রুত সম্ভব হাওয়া শূণ্য চাকাটি সড়িয়ে ফেলে আরেকটি চাকা লাগানো যায় সে জন্য প্রাণপন চেষ্টা করতেও লক্ষ্য করলাম। তবুও চল্রিশ মিনিটের আগে পারল না।
অশেষে বাসটি এই দীর্ঘ ও কষ্টদায়ক যাত্রা শেষ করল। আমরাও সাড়ে চার ঘন্টার স্থলে দশ বা প্রায় দশ ঘন্ট পর নিজের নিজের গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম।
কিছু সময়ের জন্য হলেও সব কিছু ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু অনেক কষ্টের এই বাস যাত্রাটি আমাকে ছাড়ল না। ফিরে এলা আবার।
বেশ কিছুটা সময় ধরে বিষয়টা নিয়ে আমি ভাবলাম। ভাবনার ফল স্বরুপ যা পেয়েছিলাম তা আমাকে আনন্দিতই করেছিল।
অবশ্য তেমন কিছু পাইওনি। যা পেয়েছিলাম তা শুধু ধৈর্য্য।
আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই যে এতটা পথ আমি ধৈর্য্য ধারণ করেছি। এবং এটাই সত্য যে শুধুমাত্র ধৈর্য্য’র কারণেই শেষ পর্যন্ত আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছি। ধৈর্য্য সত্যিই ফল দায়ক।
এখান থেকে যে ভাল শিক্ষাটি আমি শিখেছি আর যা সবাই শিখতে পারে তা হচ্ছে আমরা যে পথ ধরে আমাদের আরাধ্য গন্তব্যে পৌঁছাতে চাই সহজ-সরল, ছোট-খাট পথ নয়। সেটি বন্ধুর, আঁকা-বাঁকা, সমস্যা সংকুল, কাঁটা ছড়ানো পথ। এ পথে চলতে হলে ধৈর্য্য’র প্রয়োজন। সর্ব্বচ্চো ধৈর্য্য ধারণ করেই আমাদের এ পথে এগুতে হবে। আর ধৈর্য্যই একদিন আমাদেরকে আমাদের আরাধ্য গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।
শেষ বিকেলে বেড় হলাম। হাঁটতে হাঁটতে শহরের কেন্দ্রস্থল বলে পরিচিত যে জায়গাটি সেখানে যেয়ে পৌঁছালাম। প্রথমে যে জিনিসটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তা ছিল একটি মিছিল। কয়েকটি নারীবাদী সংগঠন সম্মিলিতভাবে মিছিলটি বের করেছে। তাদের বহনকৃত কয়েকটি ব্যানারে লেখা পড়ে বুঝলাম জেলার কোন এক জায়গায় এক নববধুকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। তারই প্রতিবাদে এই মিছিল।
এক সাংবাদিক বন্ধুর কাছ থেকে আরও কিছু তথ্য জানলাম এবং স্পষ্টভাবে বুঝলাম এই নারীবাদী সংগঠনগুলো একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকেই মিছিলটি বের করেছে। উদ্দেশ্য একটিই সরকার তথা সর্ব স্তরের জনগণকে জানানো-হত্যা, ধর্ষণসহ সব ধরণের নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
মহৎ উদ্দেশ্য।
কিন্তু …সকালের পথ, পথ পাড়ি দেওয়ার যে কষ্টকর অভিজ্ঞতা তা মনে পড়ল আর মনে হল নারীদের এই পথটাও কোন সহজ-সরল, ছোট-খাট পথ নয়। এটি বন্ধুর, আঁকা-বাঁকা, সমস্যা সংকুল, কাঁটা ছড়ানো পথ। তাদের প্রয়েজন ধৈর্য্য ধারণ করা এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে চলতে থাকা।
আমি জানি আজকের মেয়েরা আগেকার মত নয়। অনেক আলাদা। তারা আজ উচ্চ শিক্ষিতা, আধুনিক, সচেতন ও সুবুদ্ধি সম্পন্না।
আমার বিশ্বাস করতে একটুও দ্বিধা হয় না যে এই নারীরা একদিন তাদের গন্তব্যে পৌঁছাবেই পৌঁছাবে।
আপনার লেখাটি পড়লাম,
আপনার উপস্থাপনা অত্যন্ত সাবলীল, একনাগারে পড়ে ফেলার মত।
বাস যাত্রা থেকে আপনি আপনার লেখার মূল পয়েন্টে এসেছেন,
হ্যাঁ আজকালকার মেয়েরা বেশ আলাদা, একদিন তারা তাঁদের সঠিক গন্তব্যে পৌছাবেই।
ধৈর্য্য ধারন করতে হবে এজন্য, অস্থিরতায় কোন ফল বয়ে আনে না।
অঃকঃ
আপনি নিজের লেখায় জবাব দিতে কি কোন সমস্যায় পরছেন? সমস্যা হলে জানাবেন।
এই ব্লগের কেউ না কেউ আপনার যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবেন।
এমন লেখা লেখুন, এবং অন্যের লেখাও পড়ুন।
শুভ কামনা।
ভালোই লিখেছেন।
জিসান নানার মন্তব্য কোট করে দিচ্ছি—— “আপনি নিজের লেখায় জবাব দিতে কি কোন সমস্যায় পড়েছেন? সমস্যা হলে জানাবেন।
এই ব্লগের কেউ না কেউ আপনার যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবেন।
এমন লেখা লেখুন, এবং অন্যের লেখাও পড়ুন।
শুভ কামনা।”
আশাবাদী হতে তো আর সমস্যা নেই । সময়ের পরিক্রমায় সভ্যতা এগোয়। নারীরাও আজ অনেক দূর এগিয়েছে। সামাজিক বিবর্তনের ফলে নারীরাও হয়তো একসময় পৃথিবীর সর্ব ক্ষেত্রে সমান অধিকার অর্জন করবে, হয়তো আর কোন নারী কখনো নির্যাতনের স্বীকার হবে না…
ভাল লাগলো পোস্ট।
চমৎকার বললেন, ধৈর্য্যই আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌছে দিছে। আসলে আমরা এই বিষয়গুলোতে খুবই ধৈর্য্যের পরিচয় দেই।
সভ্যতার দিকে যেতে হলে নারিকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। শুধু মিছিলে নয়, সর্বক্ষেত্রে অধিকার আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।
পোষ্টে ভাললাগা রইল।
৭টি মন্তব্য
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
যান যট যেন নতুনভাবে অবলোকন কর্লাম! ;?
তবে ভাইয়া আমাদের এসব সয়ে গেছে।
কি আর বলবো!
জিসান শা ইকরাম
আপনার লেখাটি পড়লাম,
আপনার উপস্থাপনা অত্যন্ত সাবলীল, একনাগারে পড়ে ফেলার মত।
বাস যাত্রা থেকে আপনি আপনার লেখার মূল পয়েন্টে এসেছেন,
হ্যাঁ আজকালকার মেয়েরা বেশ আলাদা, একদিন তারা তাঁদের সঠিক গন্তব্যে পৌছাবেই।
ধৈর্য্য ধারন করতে হবে এজন্য, অস্থিরতায় কোন ফল বয়ে আনে না।
অঃকঃ
আপনি নিজের লেখায় জবাব দিতে কি কোন সমস্যায় পরছেন? সমস্যা হলে জানাবেন।
এই ব্লগের কেউ না কেউ আপনার যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবেন।
এমন লেখা লেখুন, এবং অন্যের লেখাও পড়ুন।
শুভ কামনা।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালোই লিখেছেন।
জিসান নানার মন্তব্য কোট করে দিচ্ছি—— “আপনি নিজের লেখায় জবাব দিতে কি কোন সমস্যায় পড়েছেন? সমস্যা হলে জানাবেন।
এই ব্লগের কেউ না কেউ আপনার যে কোন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবেন।
এমন লেখা লেখুন, এবং অন্যের লেখাও পড়ুন।
শুভ কামনা।”
শুন্য শুন্যালয়
ছবি আর লেখা দেখে ভেবেছিলাম, মিছিলের কারনে যানজট হয়েছে এমন বলতে চেয়েছেন, কিন্তু যেভাবে শেষ করেছেন, খুবই ভালো লেগেছে। চমৎকার গোছানো পোস্ট।
অপার্থিব
আশাবাদী হতে তো আর সমস্যা নেই । সময়ের পরিক্রমায় সভ্যতা এগোয়। নারীরাও আজ অনেক দূর এগিয়েছে। সামাজিক বিবর্তনের ফলে নারীরাও হয়তো একসময় পৃথিবীর সর্ব ক্ষেত্রে সমান অধিকার অর্জন করবে, হয়তো আর কোন নারী কখনো নির্যাতনের স্বীকার হবে না…
ভাল লাগলো পোস্ট।
আবু খায়ের আনিছ
লেখা টেনে নিয়ে গিয়েছে পরের লাইন পড়তে। ভালো লেগেছে। শুভেচ্ছা।
মৌনতা রিতু
চমৎকার বললেন, ধৈর্য্যই আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌছে দিছে। আসলে আমরা এই বিষয়গুলোতে খুবই ধৈর্য্যের পরিচয় দেই।
সভ্যতার দিকে যেতে হলে নারিকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। শুধু মিছিলে নয়, সর্বক্ষেত্রে অধিকার আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।
পোষ্টে ভাললাগা রইল।