ওল্ডহোম কিংবা বৃদ্ধাশ্রম শহরের বাইরে সত্যি বলতে সমাজের বাইরে থাকা এই ওল্ড হোমের লাল টালির ছাতে রোজ বিকেলে সূর্যের আলো ঝিকমিক করে ঠিকই, কিন্তু তারপরই নেমে আসে গাঢ় অন্ধকার।প্রকৃতির সেই অন্ধকার আর আর একা থাকার আঁধার মিলে মিশে পথ চলার অপেক্ষা করতে হয়,জীবনের খাতায় জমা থাকা সামনের দিনগুলোর।কিভাবে সমাজের বুকে এলো এই ওল্ডহোম প্রথমে সেই গল্পটা বলা যাক।
জাপানের অর্থনীতি তখন আজকের মত ছিলো না।প্রাচীন জাপানের দরিদ্র মানুষের পক্ষে তাদের মা-বাবা কে লালন পালন করার মত সামর্থ্য তাদের ছিলো না। তাইবাবা-মা বৃদ্ধ হবার এক পর্যায়ে তারা পিঠে করে বাবা মাকে এক পর্যায়ে তারা পিঠে করে বাবা মাকে পাহাড়ের খাদে ফেলে দিয়ে আসতো এটাই ছিলো তাদের কাছে স্বাভাবিক।পিঠে চড়া পিতা মাতার কাছে থাকতো গাছের ডাল যেটা দিয়ে তারা সন্তানের গায়ে আস্তে আস্তে বাড়ি দিত, একাজটি তারা করত যাতে পুত্র যাতে ভালো করে পথ চিনতে পারে যাবার পথ ভুলে না যায়।
তারপর ঘুরে দাড়ালো জাপানের অর্থনীতি,এখন পিতা মাতা কে লালন করার সামর্থ্য তাদের আছে কিন্তু সময় নেই। তাই প্রাচীন রীতির রেশ ধরেই তারা আবিষ্কার করলো নতুন পথ যা এখন সারা দুনিয়ার প্রচলিত ওল্ডহোম ব্যবস্থা।
তারপর পুজিবাদী সমাজ খুঁজে পেলো এক নতুন ব্যবসা ওল্ডহোম ব্যবসা।আস্তে পৃথিবীর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলো এই ওল্ডহোম।আজ পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলোতে গলিতে ওল্ডহোমের ব্যবসা নিজকে নিয়ে ব্যস্ততার কারণে নিজকে গড়ে তোলা মা-বাবাকে সময় দেয়ার সময় কারো নেই ওল্ড হোম ব্যবসা এখন বেশ জমজমাট। প্রায় প্রতি পাড়ায় দুএকটা পাওয়া যাবে। খরচেরও রকমফের আছে। বিশেষ করে শহর থেকে একটু দূরে হলে খরচ কম। কোনো কোনো গ্রাম তো এখন ওল্ড হোম গ্রাম নামেই পরিচিত হচ্ছে। রিয়েল এস্টেটওয়ালারাও এখন এদিকে মনযোগ দিয়েছে। লাভ খারাপ নয়। সবচেয়ে বড় কথা, কোনোটাই ফাঁকা থাকছে না। আগে থেকে বুকিং না দিলে এখন তো সিট-ই পাওয়া যায় না।
মেল ফিমেল আলাদা পাওয়া যায়। আবার কনজুগালও। কনজুগালগুলো খুবই কস্টলি। যেহেতু ওখানে এক রুমে মাত্র দুজন। তাই এরকম ওল্ড হোম বানানোর দিকে ইন্টারেস্ট কম। এত খরচ করে খুব কম লোকই থাকতে আসেন। কেবল যারা আগে থেকে ইন্সুরেন্স করিয়ে রেখেছে, তারাই পারেন থাকতে। সিঙ্গেলগুলোই বেশি ভালো চলছে। আরেকরকম বেরিয়েছে, সেমি কনজুগাল, পাশাপাশি দুটো ওল্ড হোম, মেল আর ফিমেল। ফলে সারাদিন দেখা-সাক্ষাৎ হয়।আরেকটা গল্প বলে শেষ করি –
জাপানের ওল্ডহোমের এক বৃদ্ধা তার তিন পুত্রের কাছে খবর পাঠালো“বাবারা আমার খুব শখ আমার মৃত্যু ওল্ডহোমে হবে না,তাই আমি চাই আমার শেষ দিনগুলা তোমাদের কাছে কাটুক।আমার কাছে পাঁচ কোটি টাকা(বাংলাদেশী হিসাবে) আছে তোমাদের মাঝে এ আমার এই ইচ্ছা পূরণ করবে আমি তাকে এই টাকাগুলো দিয়ে যাবো।”“প্রতি উত্তরে ছেলেরা জালানো “সম্ভব না মা,বাসা ছোট আর তোমার সেবা করার মত সময় দিতে পারবো না”।
অর্থনীতির উপরের স্তরে বাস করা মানুষ গুলো থেকে আমরা অনেক ভালো আছি আমাদের রিক্সাওয়ালার রিক্সার পিছনেও লেখা থাকে “মায়ের দোয়া” হতে পারি আমরা অর্থনীতি তে অনেক পিছিয়ে কিন্তু আমাদের মায়ের দোয়াতে সবার উপরে।
একটি মন্তব্য
মিথুন
বাবা-মা বৃদ্ধাশ্রমে যাবেন, এটা ভাবনার চতুর্সীমানায় নেই। ভালো পোস্ট……………