
Favorite বা প্রিয় শব্দটা খুবই মধুর। এই শব্দটা উচ্চারনের সঙ্গে সঙ্গে মনের ভিতর একটা সতেজ অনুভুতির জানান দেয়। সবাই সব মানুুষের প্রিয় হতে পারে না। তবে একজন সৃজনশীল ব্যাক্তি কবি, সাহিত্যক, চিত্রকর, গায়ক বা গায়িকা, নায়ক বা নায়িকা, খেলোয়াড, রাজনৈতিক নেতা, ফুল বা ফল, প্রানী যাই হোক না কেন এরা প্রত্যেকেই অনন্তকাল কারো না কারো প্রিয় হয়ে থাকে। কিন্তু একজন মানুষ একজন মানুষের কাছে কতটা প্রিয় বা কতক্ষন প্রিয় থাকে সেটাই বিষয়।
প্রিয় ও প্রিয়জনের মধ্যে বিস্তর ফারাক। প্রিয়জন তিনিই হয়ে থাকেন যিনি তার প্রিয়জনের সুখ-দুঃখ,সময়-অসময়, ভালো-মন্দ সব কিছুর মাঝে প্রিয় মানুষটাকে নিঃস্বার্থ ভাবে জড়িয়ে রাখতে পারেন। আদৌ কি তা হয়? বাস্তবে এর মিল কতটুকু?
পিতা-পুত্র, মা-মেয়ে, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রীর চেয়ে প্রিয়জন বলতে দ্বিতীয় আর কেউ হতে পারে না। তারপরও এই প্রিয়জনদের মাঝে বিস্তর ফারাক থেকেই যায়। সমাজে এমন বহু ঘটনার জন্ম দিয়েছে যে, ছেলে নিজের বাবা-মাকে ,স্বামী নিজ স্ত্রীকে এবং ভাই নিজের বোনকে স্বার্থের কারনে প্রিয়জন থেকে অপ্রিয়জনে পরিণত করেছে। এই প্রিয়জনদের বাইরে অন্য মানুষদের কথা নাই বা বললাম।
আপনার প্রিয় বস্তু বা প্রাণীটিকে আমৃত্যু আপনি বুকে ধারন করে লালন করছেন। ধরুন, আপনার কোন প্রিয় গল্পের বই পড়া শেষ হবার পরও যত্ন করে বুকসেলফে সাঁজিয়ে রেখেছেন। মাঝে মাঝে আপনার দৃষ্টি চলে যায় প্রিয় সেই বইটির উপর। তার সাথে বইটির লেখকও আপনার জীবনে প্রিয় হয়ে রয়ে আছেন। সময় পেলেই আপনার প্রিয় গানটি এখনও গুন গুন করে গেয়ে থাকেন বা শুনেন। মাঝে মাঝে আপনার প্রিয় ফুলটিকেও সযত্নে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখেতে ভুল করেন না। আপনার প্রিয় বস্তুটি যেন সবসময় আপনার মাঝে থাকে এই মনোবাসনাই আপনাকে তাড়া করিয়ে বেড়ায়। তার একটি মাত্র কারন এরা কখনোই আপনার কাছ থেকে বিনিময় চাইবে না। যেখানে বিনিময় নেই সেখানে প্রিয় কখনোই অপ্রিয় হবে না।
আজ ফেসবুকে একটি পোষ্ট দেখলাম। যাতে লেখা ছিলো,
“কখনো কারো priyo মানুষ হতে পেরেছেন!”
বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মন্তব্য মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। এরই মাঝে একজনের মন্তব্য ছিলো এমন-
“হ্যাঁ।
তবে সাময়িক।
আমাকে জানা শেষ হওয়ার পরে আর প্রিয় থাকিনা,
সস্তা হয়ে যাই”
যিনি মন্তব্যটি করেছেন তার রেশ টেনেই বলছি-
আপনি কতক্ষন একজন মানুষের প্রিয় হয়ে থাকতে পারবেন?
কতক্ষন পর্যন্ত আপনাকে প্রিয় হিসেবে মূল্যায়ন করবে?
রক্তের সম্পর্কের বাহিরে কেনই বা আপনাকে প্রিয় ভাববে?
এই প্রশ্নগুলির উত্তর কি কখনো পেয়েছেন বা জানতে চেষ্টা করেছেন?
প্রশ্নগুলির উত্তর খুবই সহজ।
যতক্ষন পর্যন্ত বসুন্ধরার টিস্যু পেপার আপনার প্রয়োজন, ততোক্ষণ পর্যন্ত আপনার ভ্যানিটি ব্যাগ বা বুক পকেটে প্রিয় হয়ে থাকবে।
প্রয়োজন শেষ হলেই কমোডে ফ্ল্যাশ করে দিবেন বা ছুঁড়ে ফেলে দিবেন।
তাই প্রিয় বস্তু পাওয়া যায় প্রিয়জন নয়।
সবাই ভালো থাকুন।
৫টি মন্তব্য
খাদিজাতুল কুবরা
হয়তো এটাই বাস্তবতা। আবার হতে পারে জীবনের প্রয়োজনে প্রেক্ষাপট বদলে যায়, জীবনের সাথে জড়িয়ে যায় বিকল্প নতুন সবকিছু। মনের আকাশ এত বিশাল সেখানে স্মতিতে উজ্জ্বল থাকে প্রতিটি তারা।
বন্যা লিপি
প্রিয় আর প্রয়োজন নিয়ে বিশ্লেষনে আমি বরাবরই মিশ্র অনুভূতি ধারন করি। আমার কাছে কখনোই প্রয়োজন আর প্রিয়জনের ব্যাখ্যা মনপুত হয়না। কেন জানিনা,,, কারন আমার নিজেই হয়ত তেমন কোনো প্রিয় থেকে প্রয়োজনের ফারাকটুকু বোঝার মত সময় হয়নি।
হালিমা আক্তার
প্রয়োজন থেকে হয়তো প্রিয়জন হয়। একসময় প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়। তবু প্রিয়জনের রেশ থেকে যায়। হয়তো সময়ের প্রয়োজনে দুরত্বের বিচ্ছেদ ঘটে। মনের বিচ্ছেদ কি আর ঘটানো যায়।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রিয় বস্তু আর প্রিয়জন শব্দ দুটো একই রকমের শোনালেও পার্থক্য দুই মেরুর! অনেক চমৎকার করে বিশ্লেষণ দিলেন। সবচেয়ে অর্থবহ লেগেছে এই লাইনটি ❝যেখানে বিনিময় নেই সেখানে প্রিয় কখনোই অপ্রিয় হবে না।❞
আসলেই ভাই, কথাটা শতভাগ সত্যি।
লেখাটা প্রিয়তে নিলাম।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা অবিরাম 🌹
নিতাই বাবু
আমি লেখার গভীরে না গিয়ে বলতে চাই, “দাদা, বসুন্ধরা টিস্যু পেপার’র অ্যাডভারটাইজিং নাকি?”
চমৎকার লিখেছেন।