এ কেমন অভিমান।”বাবা-মা তোমাদের আর বিরক্ত করব না।” আসলে কি কখনো বাবা মা বিরক্ত হন! অভিমান করে এভাবে চলে যাওয়ায় কি সকল সমস্যার সমাধান। আবেগ, অভিমান, হতাশা পরিশেষে ভয়ংকর চিন্তাভাবনা। বর্তমান প্রজন্ম কেন এ ভয়ঙ্কর পথে পা বাড়াচ্ছে।

কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা মনকে নাড়া দিয়ে গেল। যে কোন সন্তানের এভাবে চলে যাওয়া। বাবা-মার জন্য মেনে নেওয়া অনেক কষ্টকর। যারা এভাবে চলে যায় ‌ ওরা কি সত্যিই বাবা-মা, প্রিয়জনের কথা ভেবেছিল। যদি তাই হত, ওরা দেখতে পেত। কতটা কষ্টের পাহাড় বুকে ধারণ করে, বাবা-মাকে বাঁকে জীবন অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

ইদানিং আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। এ যেন এক অশনিসংকেত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজারের বেশি লোক আত্মহত্যা করছে। দেশে গত বছর গড়ে প্রতি মাসে ৩৭ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এদের বেশিরভাগের বয়স ১৩ থেকে ১৯।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়েও আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। যেমন- গেমস খেলতে বাধা দেওয়া। মুঠোফোন কিনে না দেওয়া। সাইকেল বা মোটরবাইক কিনে না দেওয়া। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া। এগুলো খুব সাধারণ বিষয়। প্রশ্ন হচ্ছে- কেন সাধারণ চাহিদার অপূর্ণতা থেকে  ভয়ঙ্কর পথ বেছে নিচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে ভাবনার এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসে গেছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মনে হয় এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে মানসিকভাবে লড়াই করার ক্ষমতা কমে গেছে। একসময় সন্তানেরা না খেয়ে দিন যাপন করলেও, বাবা-মা সহ পরিবারের সকলের সাথে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় ছিল। এখন সেই বাঁধন কি আগের মত আছে। আগে পরিবারের সদস্য বেশি ছিল। বাবা-মা সময় দিতে না পারলেও পরিবারের অন্যদের সহচার্য পেত। প্রয়োজনের তাগিদে সংসার গুলোর আকার ক্রমাগত ছোট হয়ে আসছে। বাবা- মা দুজনেই চাকরিজীবী হলে কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে সারাদিন বাইরে থাকতে হয়। এরপর আছে ভালো ফলাফলের জন্য অতিরিক্ত পড়ার চাপ। সারাদিন পড়ার চাপে মানসিক প্রশান্তির অবসর কই। লড়াইটা তো সেখানেই থেমে যায়। এতে করে সন্তানেরা ক্রমাগত হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।

এরপর আছে চাওয়া পাওয়ার ভারসাম্য। অনেক ক্ষেত্রে সন্তানেরা ছোটবেলা থেকে যা চায়, তা সহজেই পেয়ে যায়। কিন্তু মানুষের সব সময় এক রকম যায় না। হঠাৎ কোনো কারণে সন্তানের চাওয়ার সাথে পাওয়ার ব্যাঘাত ঘটতেই পারে। প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তির অমিল। তখন হতাশার সাগরে ডুব দেয়। সঠিক বাস্তবতা বুঝতে পারে না।

বর্তমান প্রজন্মের সন্তানরা খুব আবেগপ্রবণ। সন্তানের সাইকোলজি বুঝে এগিয়ে যেতে হয়। এজন্য সন্তানকে প্রচুর সময় দিতে হবে। আমাদের দেশে শারীরিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্য ভীষণভাবে উপেক্ষিত। মানসিক স্বাস্থ্য যে শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এটা আমরা অনেকেই মানতে চাই না। শারীরিকভাবে যেমন সবার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা এক রকম হয় না। মানসিক ভাবেও সবার একই রকম ধারণ ক্ষমতা থাকে না। আর তাই মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা অতি জরুরী। বিশেষ করে আমাদের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অন্তত মাসে একদিন মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যা বিষয়ক কাউন্সিলিং দেওয়া খুবই প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্যের পরিচর্যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভয়ংকর ভাবনা থেকে রক্ষা করতে পারে। মানসিক সুস্থতা মানুষকে প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়।

তথ্য সূত্র – ইন্টারনেট

১জন ১জন
0 Shares

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ