পৃথিবীর পথে পথেঃ হেলেন অব ট্রয়, তুরস্ক (দ্বিতীয় পর্ব) 

তুরস্ক যাবো আর ‘হেলেন অব ট্রয়’ দেখবো না তা কি হয়।

প্রায় ৩০০০ হাজার বছর পূর্বে বিখ্যাত গ্রীক কবি ‘হোমার’ তার গ্রীক সিটির উপরে লেখায় এই    ঘটনা  ‘ট্রয় অব হেলেন’ লিখে গেছেন।

গল্প টি হল এক সুন্দরি গ্রীক নারীকে নিয়ে। যে ছিল স্পারটা রাজা মেনেলান্সের  রানী । তার রূপে মুগ্ধ হয়ে ট্রয় এর রাজা প্যারিক তাকে অপহরণ করে নিজ দেশে নিয়ে যায়। স্পারটার রাজা বিরাট একটি কাঠের ঘোড়া তাকে উপহার হিসেবে দিয়ে পাঠান। এটা ছিল একটা ট্রিক । এর মধ্যে ছিল শত শত সৈনিক । তারা আতর্কিত আক্রমণ চালায়।এটাকে বলা হয় ট্রোজান ওয়ার । মেনেলান্স   রানীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

এটা যদিও একটা লোককাহিনী  যা কতখানি ঐতিহাসিক সত্য তা জানা যায় না । তবে এই গল্পের রেস ধরে শত শত টুরিস্ট যেমন এখানে আসে তেমন আসে আরকেওলজিসস্ট এর সত্যতা খুঁজতে। যেমন আমরা টুরিস্ট হিসেবে এসেছি ।

বর্তমানে এই স্থান টি ‘troad’বলে পরিচিত। মনে হয় তা ‘ট্রয়’  এর অপভংস । এখানে যে একসময় সিটি ছিল তা দেখা যায়। অনেক অনেক উঁচু ঢিবি যেমন আছে তেমন আছে গ্রীক আর রোমান যুগের দুর্গ আর প্যালেস । যে যখন ক্ষমতায় ছিল তখন একটার উপরে আর একটা স্থাপনা করে।

১৯থ সেন্চুরি তে তিনজন আরকেওলজিসস্ট স্যুটস ম্যান, Charles Maclaren এবং ইংলিশ আরকেওলজিসস্ট Frank Calvert এখানে কাজ আরম্ভ করেন।খোঁড়া খুঁড়ি করে গ্রীক আমলের মন্দিরের সন্ধান পান ।

১৮৭০ সালে একজন জার্মান আরকেওলজিস্ট Heinrich Schliemana এখানে থাকা একটা উঁচু মাটির ঢিবি সরাসরি আধা আধি করে অনেক গভীর পর্যন্ত কেটে সত্যি পান ট্রয় আমলের লুকিয়ে রাখা  অনেক জুয়েলারি । কার্বন টেস্ট এনালিস্ট করে দেখা যায় সেগুলো ১০০০ bc পুরানো এবং তিন হাজার বছর আগে তখন এই রকম জুয়েলারি মেয়েরা পরতো ।

‘ট্রোজান ওয়ার’এর এই গল্প টি শত শত বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে আছে পৃথিবী জুড়ে। মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন এই গল্পটিও বেঁচে থাকবে।

ইস্তাম্বুল থেকে পাঁচ ঘণ্টায় যাওয়া যায় ড্রাইভ করে। ৪৭৮ কিমি দূরে ইস্তাম্বুল থেকে। তুরস্কের Hisarlik প্রদেশে এর অবস্থান। আমরা চলেছি তা দেখতে। দুই ধারের কৃষি ক্ষেত্র, ছোটো ছোটো লোকালয় পার হয়ে গাড়ি যাচ্ছে। বসপরাস এক স্থানে ন্যারো হয়ে গেছে ।এটাকে বলা হয় ডারডানেলেস ।ফেরি দিয়ে পার হয়ে ওপারে গেলাম । এই স্থান টির নাম ক্যানাক্কালে ।

তারপর কিছু দূরে এসে আমরা এসে পড়লাম ট্রয় সিটি দেখতে। আমাদের গাইড গ্রীক অরিজিন একজন অভিজ্ঞ মানুষ। বিরাট সিটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালো  ।প্যালেস আর দুর্গর ভেঙ্গে পড়া স্থাপনা দেখলাম । ডিজাইন দেখে বোঝা যাচ্ছে কোনটা গ্রীক আমলের আর কোনটা রোমান দের।কত গুলো উঁচু মাটির ঢিপি দেখা যাচ্ছে যেগুলো তিন হাজার বছর আগের গ্রীক সিটির। কারন সেখানে গ্রীক টেম্পেল পাওয়া গেছে।

সেখানে বিরাট একটি কাঠের ঘোড়া রাখা হয়েছে। এটি ব্যাবহার হয়েছিল ‘ট্রোজান ওয়ার’ ফিল্ম করার সময়। আমরা একটা মই দিয়ে উঠলাম এবং এর মধ্যে প্রবেশ করে বেশ কিছু ফটো নিলাম।

তারপর ফেরার পালা। বর্তমানে এই সাইট টি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে পড়েছে।

প্রিন্সেস আইল্যান্ড

পরের দিন আমরা বসপরাস প্রণালী দিয়ে ফেরি দিয়ে প্রিন্সেস আইল্যান্ড ভিজিট করতে গেলাম ।বাইজেনটাইন এরা তে প্রিন্স এবং প্রিন্সেস দের এখানে শাস্তি স্বরূপ দেশান্তর করা হতো। ১৪৫৩ সালে অটোম্যান ইম্পেরার ক্ষমতায় আসলে এটা তাদের দখলে নিয়ে নায়।

পাইনফরেস্ট দিয়ে ঢাকা ,কোনো কার নাই, ঘোড়ায় টানা গাড়ি আছে অনেক। আমরা একটাতে বসে সারা আইল্যান্ড দেখে নিলাম। চারদিকে সমুদ্র কিছু কাঠের বাড়ি আছে। ভালোই লাগলো ।

দল্মাবাহি (Dolmabahee )প্যালেস

১৮৪৩-৫৬ সালে,৩১ তম সুলতান আব্দুল মিসিদ  ১.৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে সুলতানদের জন্য আধুনিক প্যালেস বানান ।তার মতে ইউরোপের রাজাদের তুলনায় আগের প্যালেস মডার্ন নয়,  মেডিভ্যাল  পিরিয়ডের মতো ।

সুলাইম্যান কোয়াটার,  বাজার ,  ব্লু মস্ক আর বাইজেনটান আমলের করা শহর রক্ষা কারী উঁচু দেয়াল ভিজিট করলাম।

বাইজেনটাইন আমলের শেষ এবং  অটোম্যান ইম্পারার এর শুরু অর্থাৎ মেডিভ্যাল পিরিয়ডের শেষ এবং আধুনিক আমল আরম্ভের প্রথম দিক।

যাই হোক তুরস্ক ভিজিট শেষ করে এবার ফেরার পালা। ফেরার পথে কামাল আতার্কুক এর উক্তি টি মনে হচ্ছিল ।সেটা হলঃ

“তুরস্ক একটি ইউরোপিয়ান কান্ট্রি, একটি এশিয়ান কান্ট্রি, একটি মিডিল ইস্টার্ন কান্ট্রি, একটি বল্ক্যান কান্ট্রি, একটি ককেসিয়ান কান্ট্রি এবং তার সাথে  তুরস্ক  আফ্রিকা,  কৃষ্ণ সাগর এবং  ক্যাপ্সিয়ান সমুদ্রের   প্রতিবেশী ” ।

লেখকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস ,লন্ডন

ট্রয় সিটির ভগ্নাবশেষ

২৩২জন ২৩২জন
0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ