পৃথিবীর পথে পথেঃ নায়েগ্রা জল প্রপাত , উত্তর আমেরিকা, ভ্রমণ কাহিনী,সাল ২০১৬
“Their roar is around me. I am on the brink of the great waters-and their another voice goes up amid the rainbow and the mist”
উত্তর আমেরিকার নায়েগ্রা জলপ্রপাত দেখতে যাচ্ছি । লন্ডন থেকে সারা রাতের নন স্টপ জার্নি নিউইয়র্ক পর্যন্ত ।
নিউইয়র্কে যখন নামলাম তখন সন্ধ্যা। গিয়েছিলাম একজন আত্মীয়ের বিয়েতে। ‘রথ দেখা কলা বেচা’ দুটোই হবে এই ভেবে গিয়েছিলাম।
বিয়ের উৎসব সব শেষ হবার পর আমাদের এডভেঞ্চার শুরু। নিউইওর্ক থেকে নায়েগ্রা ৪০০ মাইল দূরে ,কারে যেতে সময় লাগবে সাত ঘণ্টা । তাই সকাল ছয় টায় আমরা বেরিয়ে পড়ি । সঙ্গে আমাদের আত্মীয় । গাড়ি চলছে দ্রুত । নিউইয়র্কের সুউচ্চ হাইরাইজ বিল্ডিঙের ভিড় ভাটটা শেষ করে আমরা প্রবেশ করলাম পেনসিলভানিয়ার লাস ফরেস্টে । মাইলের পর মাইল শুধু ফরেস্ট আর ফরেস্ট । যেতে যেতে আমরা অনেক জীবজন্তুর দেখা পেলাম । রাস্তা ক্রস করলো বেশ কয়েকটা হরিণ। তাছাড়া কাঠ বেড়ালি দেখলাম। এখানে আছে কালো ভালুক, ব্যাজার, আর শেয়াল । বাড়ি ঘর নাই । সব জঙ্গল । বাড়ি ঘর কিছু নাই ।
বেশির ভাগ আমেরিকা এই রকম জনমানব শূন্য । বড় বড় শহর ছাড়া। একেক টা স্টেট কাছাকাছি বাংলাদেশের সমান ।
নায়েগ্রা এসে পৌছালাম দুপুর ২ টার দিকে। দূর থেকে গর্জন শোনা যাচ্ছিল । আমরা নায়েগ্রা পার্কে প্রবেশ করলাম।
তিনটি জলপ্রপাতের সমন্বয়ে নায়েগ্রা জল প্রপাত । ১) হর্সসু ফলস,কানাডা ২) আমেরিকান ফলস ৩) ব্রাইডাল ভেইল ফলস
মাঝে দুটো আইল্যান্ড ফলস কে বিভক্ত করেছে । আইল্যান্ড দুটো ১) গোট আইল্যান্ড ২) লুনা আইল্যান্ড ।
‘নায়েগ্রা নদীটির’ নামে এই জলপ্রপাতের নাম। নায়েগ্রা নদী ‘লেক ইরাই’ (Lake erie) থেকে আরম্ভ হয়েছে এবং গিয়ে পড়েছে ‘লেক অন্তারিও’ তে ।
সব চেয়ে শক্তি শালি ফলস টি’ হর্স সু ফলস’। আর সব চেয়ে বড় ফলস টি ১৬০ ফিট লম্বা, এক মিনিটে পানি পড়ে ৫.৯ cu লিটার ।
আমরা একটা লিফটে উঠে একেবারে নিচে নেমে গেলাম, লেকের কিনারায় । সেখানে একটা বোটে উঠে এবং ওয়াটার প্রুফ জ্যাকেট পরে নিয়ে চললাম একেবারে ফলসের গা ঘেঁষে ঘেঁষে । সব পানি ছিটে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছিল আমাদের কে । পানির ছিটায় ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়ে মাঝে মাঝে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না । বেশ মজা লাগছিল ।
একে একে তিনটি ফলসের কাছে গিয়ে বোট নিয়ে গেল যেন আমরা ভালো করে সব দেখতে পাই ।
ভালো করে অনেক সময় নিয়ে সব দেখে আবার চলে আসলাম উপরে । এবার দেখার পালা উপর থেকে ।চার দিকে রেলিং সহ হাঁটার রাস্তা । বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখার ব্যাবস্থা করে রাখা আছে । সেখান থেকে ফলস গুলোর পানি পাওয়ার ফুল ফোর্সে ভীষণ শব্দে নিচে পড়া দেখা যাচ্ছিল। চার দিক ঘুরে ঘুরে সব গুলো পয়েন্ট থেকে দেখে নিলাম।
নদীটি দেখতে গেলাম একটু দূরে গিয়ে । নায়েগ্রা নদী বেয়ে ভেসে আসছিল বড় বড় পাইন গাছের গুঁড়ি । কিন্তু নিচে গোড়ে না গিয়ে আটকে আছে বিভিন্ন জায়গাতে অনেক অনেক গুঁড়ি । কবে থেকে যে এগুলো এভাবে আছে কে জানে।
সকালে রওনা দিতে হবে । তাই রাত টা আগে থেকে বুকিং করা একটা হোটেলে এসে উঠলাম । সারা দিনের জার্নি তে ক্লান্ত ছিলাম একটা ভালো ঘুমের দরকার ।
খুব সকালে উঠে ব্রেকফাস্টের পর যেটুকু সময় হাতে ছিল তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আবার দেখেতে গেলাম নায়েগ্রা । তখন কোন মানুষ ছিলনা। সকালের সিগ্ধ আলোতে খুব ভালো লাগছিল নায়েগ্রা ।
এবার তুলনা করার পালা ভিক্টোরিয়া জল প্রপাতের সাথে নায়েগ্রা জল প্রপাতের ।
ভিক্টোরিয়া জল প্রপাত পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে বড় । এর ভয়ঙ্কর পানি পড়ার দৃশ্য না দেখলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা । তা ছাড়া লম্বা ,পানির ঘনত্ব, পানির পরিমাণ, পানির দ্রুত গতিতে পড়ার দৃশ্য , ভয়াবহতা, ফলসের সংখ্যা সব কিছু মিলিয়ে নায়েগ্রা অনেক ছোট ।ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের একেকটা sheet দর্ঘ্যে এবং প্রস্থে নায়গ্রার চেয়ে দ্বিগুণ । পানির পরিমান এত বেশী এবং এতো গভীরে আছড়ে পড়ে এবং তাতে করে যে ছিটা দিয়ে যে ফগ বা কুয়াশার সৃষ্টি হয় তা ৪০০ মিটার উপরে উঠে এবং তা ৪৮ কি মি দূর থেকে দেখা যায় ।
নায়েগ্রায় বোটে করে কাছে যাওয়া যাচ্ছে কিন্তু ভিক্টোরিয়া জল প্রপাতের কাছে যাওয়া মানে মৃত্যু অনিবার্য । কেউ যেতে পারবেনা । যাওয়ার কল্পনাও করতে পারবেনা এতটা ভয়ঙ্কর।
এবার ফেরার পালা ।
লেখকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস , লন্ডন
একটি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
অপরুপ সৃষ্টির এক সুন্দর নির্দেশন নায়গ্রা। শুধু বইয়ের পাতায় পড়েছি। আপনার চমৎকার বর্ণনা আরো ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইলো।