নিউবিয়ার পিরামিড
পিরামিড বলতে আমরা মিশরের পিরামিড কেই বুঝি।
কিন্তু নিউবিয়াতেও যে পিরামিড আছে তা খুব একটা আলোচনায় আসেনা। কেন সেখানে পিরামিড কালচার গেলো সেটাই আমরা দেখব ।
নিউবিয়াতে ২৫৫ টি পিরামিড আছে যা মিশরের চেয়েও দ্বিগুণ । ১০৭০ BC – ৩৫০ AD তারা ক্ষমতাবান হয়ে উঠে। মিশরে যখন দ্বিতীয় ইন্টারমিডিয়েট তখন কুশ কিংডম তাদের ক্ষমতার উচ্চ শিখরে চলে আসে সময়টা ১৬৫০-১৫৫৬ BC)। কুসেটি রাজা মিশরের সীমানার দুর্গ এবং সোনার খনি দখল করে।
অবশ্য তার আগে ১৫০০ B.C.কাছাকাছি, তাতমোসে ১ (Thutmose 1) , নিউবিয়া দখল করেছিল এবং তা চারশত বছর ধরে দখলকৃত ছিল। সে সময় মিশরীয় কালচার ,ধর্ম সেখানে প্রভাবিত হয়।
১০৫০ BC তে প্রাচীন মিশরের নিউ কিংডম ধ্বসে পড়ে। ৮৫০ BC তে শক্তিশালী কুশেটি শাসকের উত্থান হয় । ৭২৭ BC তে কুশেটি রাজা ‘পিয়ে বা পিনাখি (Piankki)’ মিশর দখল করে। তার রাজত্ব মেডিটেরিয়ান বা ভূমধ্যসাগরের তীর থেকে নীল নদের পঞ্চম বাঁক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তার শাসন কাল ছিল ৭৪৩-৭১২ BC পর্যন্ত ।
সে সময়ে আসেরিয়ান সম্রাট মিশরে ক্ষমতা বিস্তার করতে থাকে এবং কুশেটি সাম্রাজ্য আসিরিয়ান সম্রাট কতৃক পিছুহাটা শুরু করে । সময়টা ৬৫৭ BC। কুশেটি মেরোয়ে তে চলে আসে পরবর্তি হাজার বছর ধরে সেখানে তারা রাজত্ব করে।
25th ডাইনেসটি তে তারা নিজেরাও পিরামিড প্রথা চালু করে। মিশরীয় কালচারকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করে গর্ব অনুভব করতে থাকে। আলখুরু নামক স্থানে ৭৫১ BCতে সম্রাট পিয়ের জন্য এক বিরাট পিরামিড বানানো হয় এবং পরে নুরি নামক স্থানে পরবর্তি রাজপরিবার এবং নোবেল ম্যান দের জন্য পিরামিড স্থাপন হয়। এভাবেই তারা ফ্যারো দের পিরামিডের মতো কবর বানানোর ট্রাডিসান এবং তাদের দেবদেবীর উপাসনা গ্রহন এবং তাদের মতো করে লেখার পদ্ধতি চালু করে।
কেরামা নেক্রপলিসঃ
George A Reisner নামক একজন আরকেওলজিস্ট ১৯১৩ সালে প্রথম এখানে খনন কাজ এবং গবেষণা শুরু করেন। কেরমা নামক স্থানে শহর থেকে ২.৫ মাইল পূর্বে ১৭০ একর স্থানে এই কবর স্থান অবস্থিত । সেখানে তিনি ৪০,০০০ কবর খুঁজে পান । কুসিটা কিংডমের রাজত্বকালে এগুলো তৈরী হয়।
নিউবিয়ানদের রাজত্বের সীমা এক সময় আসোয়ানের দক্ষিণ,মিশর এবং বর্তমানের খারতুম পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । এখানেই একদিন ‘ব্ল্যাক ফ্যারো’ দের প্রতিপত্তি গোড়ে উঠে।
তাদের মৃতদেহ প্রাচীন মিশরীয়দের মতোকরে পিরামিডের নিচে মাটির গভীরে কুঠরি বানিয়ে রাখা হতো এবং তার কাছে একটি করে মন্দির থাকতো । কবরের দেয়ালে আঁকা থাকতো পরবর্তি জীবনে যাওয়ার গাইড বুক।
সবচেয়ে বিখ্যাত পিরামিডটি রাজা তাহারকুয়া (Taharqa) এবং তিনিই সেই বিখ্যাত ‘ব্ল্যাক ফ্যারো’ যিনি মিশর দখল করেছিলেন। ফ্যারো তানুতামুনর (Tanutamun) কবরে মিশরীয় দের মতো পরবর্তী জীবনে যাওয়ার আগে ধাপে ধাপে যা করতে হয় যেমন হার্ট পালক দিয়ে মাপা,তাকে আবার জীবন দেয়া যাকে বলা হয় ‘বুক অব ডেড’ অনুসরণ করা তা আঁকা ছিল ।সেখানে রাজা নাসতাসেনের ( Nastasen) পিরামিডও আছে।
‘কুশ রাজ্যের’ প্রথম রাজধানী ‘নাপাতা’ । তার পাশেই নুরি নামক রয়্যাল পিরামিডের আর একটি বিরাট কবরখানা । দুটো সিমেট্রি নীল নদের ধারে ‘জাবেল বারকেল’ এর কাছে বালু দিয়ে ঢাকা আছে অনেক অংশ । দুই শতর বেশী পিরামিড এখানে আছে । প্রত্যেকটির বেস গ্র্যানাইট এবং স্যানড স্টোন দিয়ে তৈরি। নিউবিয়ান্দের পিরামিড গুলোর বেস চওড়া নয় এবং সুচালো ।
সাইট আর্কেওলজিস্ট মুহাম্মদ সুলাইমানের বলেন ‘এটাই পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী একসঙ্গে থাকা পিরামিডের সমন্বয়’।
২০১৯ এর সুদানের রেভিলিউসানের সময় প্রতিটি রাস্তায় শোভা পাচ্ছিলো এই পিরামিড এবং তাদের ফ্যারো দের ছবি। যা পুরো সুদানিদের একতাবদ্ধ করেছিলো । যা ছিল তাদের অতীতের শৌর্জ বীর্যের পরিচয়ের বাহক । যা তারাকে উৎসাহিত এবং নিজেদের পরিচয় বহন করতে সাহায্য করে।
সুদানের একজন আর্টিস্ট ‘আয়া আলান’ ( Aya Allan) বলেন ‘এরা আমরাকে স্মরণ করিয়ে দায় যে আমরা একসময় শক্তিশালী মহান জাতী ছিলাম এবং আমরা পুনরায় মহান জাতী হতে পারি ।
তথ্য সূত্রঃ
Wondar at the Meroe Pyramids,Forgotten Relics of the Ancient World Atlas Obseura
Nubian Pyramids, Rappaport Nora
Dive beneath the Pyramids of Egypt’s black pharaohs
National Geographic
Photo credit, Wikipediya
লেখক ও গবেষকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস ,লন্ডন
একটি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
পিরামিডের দেশ বলতে আমরা মিশরকে বুঝে থাকি। কোন এক তথ্যে জেনেছিলাম দক্ষিণ আমেরিকার কোথায় যেন পিরামিড আছে। তবে মিশরের পিরামিড বহুল পরিচিত। ধন্যবাদ ও শুভকামনা।