অতি সম্প্রতি একটি ডায়াগোনেস্টিক সেন্টারে লিফটের গোঁড়ায় দাড়ালাম লিফটের অপেক্ষায়। সেখানে একজন ভদ্রমহিলা দাঁড়ানো। ছিলেন সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে লিফটে উঠতে গেলে লিফট ম্যান হাত দিয়ে বেরিকেড দিয়ে আগে উক্ত মহিলাকে ঢোকালেন। তারপর আমি আমার মেয়ে সহ বেশ কয়েকজন নারী পুরুষ উঠলেন। তখন বুঝলাম উনি একজন ডাক্তার হবেন। উনি তাঁর পাশের একজন গ্রাম্য মহিলাকে হঠাৎ ধমক দিয়ে উঠলেন গায়ে ধাক্কা দেবেন না। পরক্ষণেই আবার বেশ রাগত স্বরেই চেঁচিয়ে উঠলেন আপনাকে বলছি না গায়ে ধাক্কা না দিতে। বার বার গায়ে ধাক্কা দিচ্ছেন কেন। গ্রাম্য মহিলাটা বিনয়ের সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বুঝাতে চাচ্ছিলেন যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিচ্ছেন না বরং তিনিই ধাক্কা খাচ্ছেন তাই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে চলেছে। কিন্তু ডাক্তার কোনকিছু মানতেই নারাজ। আমি এই মহিলাকে ডাক্তারের কাছ থেকে একটু সামনের দিকে এগিয়ে আসতে বলায় উনি এগিয়ে আসেন। কিন্তু মহিলা ডাক্তার যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর ঠিক পাশে একজনের জায়গা খালি ছিল তিনি চাইলে সেখানে সহজেই গিয়ে দাঁড়াতে পারতেন। তিনি তাঁর পাশের জায়গা খালি রেখে কেন এমন রুদ্রমূর্তি ধারণ করলেন বা দাপুটে আচরণ করলেন তা কিছুতেই বুঝলাম না। লম্বা এবং শ্যামলা বর্ণের ঐ ডাক্তারের চেহারটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল। আমার মেয়ে ঐ খালি জায়গায় যেতে চাইলে আমি এক প্রকার জোর করে সেদিকে যাওয়া থেকে তাকে বিরত করি ডাক্তারের ভয়ংকর রাগী চেহারা দেখে। গ্রাম্য মহিলারা ৪ তলায় নেমে গেলেন আর আমরা ৫ তলায় নেমে পড়লাম ৫১৬ নম্বর রুম তালাশের উদ্দেশ্যে আর লিফট চলে গেল উপরের দিকে। মিনিট পাঁচেক পর ঐ ডাক্তার যখন ৫ তলায় আসেন তখন ডায়োগোনেস্টিক সেন্টারের কর্মচারীরা দেখি তাঁকে কেউ সালাম দিচ্ছেন আবার কেউবা পথ করে দিতে বেশ ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। বুঝলাম অনেক ডাঁট মহিলা উনি, সবাই তাঁকে খুব সমীহ করে।
লিফটে উঠলে একটু আগে পিছে গিয়ে নিজেদের মধ্যে জায়গাটা এডজাস্ট বা সমন্বয় করে নিতে হয় কারণ কয়েক মুহূর্তের জন্যে অল্প জায়গায় উপরে উঠা বা নিচে নামার জন্যে লিফট ব্যবহার করা হয়। এখন কথা হল আম জনতার সাথে যখন একজন বিশেষ মানুষ চলবেন তাঁকেও আম জনতার মতো উক্ত স্থানের পরিবেশ, পরিস্থিতি মেনে চলতে হবে। কিন্তু যদি তিনি খুব বিশেষ ব্যক্তি হন তাহলে তাঁর জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা থাকাটা খুব জরুরী বিশেষ করে হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর জায়গায়। যদি লিফটে কোন বিশেষ ব্যক্তি উঠেন তাহলে তাঁর চলা ফেরার সময় উক্ত লিফটে আর কাউকে উঠানো উচিৎ নয়। আর লিফটে উঠে আপনি সেই প্রতিষ্ঠানের যেই হোন না কেন বা যতো বড় ডাক্তার হোন না কেন তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানে আসা রোগী বা তাঁর স্বজনদের সাথে মুনিব চাকরের মতো ব্যবহার বা দুর্ব্যবহার করতে পারেন না। ঐ মহিলা যদি গ্রামের না হয়ে শুহুরে বা আপনার থেকে স্মার্ট কোন মহিল হত তাহলে তাঁর সাথে কি এমন বিরূপ, দৃষ্টিকটু আচরণ করতে পারতেন? না, তা কক্ষনোই সম্ভব হতো না। আপনার দম্ভ অহংকার সেই গ্রামের দরিদ্র মহিলা বলে সহজে হজম করে গেছেন, নাহলে তা হিতে বিপরীত হতে পারতো বা বদহজম হয়ে যেতো ।
কিছু মানুষ ক্ষমতার, রাজনৈতিক প্রভাবের, অর্থের বিত্তবের, উচ্চ পদের,জনপ্রতিনিধি হওয়ার, বিভিন্ন সামাজিক, পাড়া মহ্ললার, সরকারী বা বেসরকারি পদ ও পদবীর অধিকারী হওয়ার, বাহু বলের, অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানুষের সাথে অন্যায় অভদ্রজনোচিত এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন। কিছু মানুষ আবার মিছে দম্ভ আর অহংকার করে থাকেন। অনেকে আবার পারিবারিকভাবেই মানুষের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ করে থাকে সঠিক শিক্ষা এবং আদব কায়দার অভাবে। বলা হয়ে থাকে — ব্যবহারে বংশের পরিচয়। আপনার ব্যবহার যেমন আপনার বংশের পরিচয় বহন করে তেমনি আপনার আচরণে যদি ভদ্রতা, সৌজন্যতা, কোমলতা, স্নেহ শদ্ধা না থাকে তাহলে আপনার সব ডিগ্রী, পদবী অর্জন বৃথা। আপনাকে খুশী করার জন্যে বা বাধ্য হয়েই সামনে আপনাকে সালাম দেবে, কুর্নিশ করবে ঠিকই কিন্তু আপনার পিটপিছে গালমন্দ করবে। আমাদের আচরণে আমাদের শিক্ষা দীক্ষা, ব্যক্তিত্ব, আদব কায়দা, পারিবারিক মর্যাদার বহিঃপ্রকাশ যেন ঘটে সেভাবেই আমাদের সমাজে চলা উচিৎ। কেননা ধমক দিয়ে মহান হওয়া যায় না ! বরং তাঁর প্রতি মানুষের মনে শুধু ক্ষোভ ঘৃণা আর ধিক্কার জন্মায় মাত্র।
১০টি মন্তব্য
হালিমা আক্তার
পাবলিক প্লেসে পাবলিকের মত চলাফেরা করা উচিত। আর লিফটে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার। সেখানে যদি এডজাস্ট করে না চলতে পারি তাহলে আমাদের মনুষত্ববোধ কোথায় থাকে। শুভ কামনা রইলো।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আসলেই আপা, সামান্য সময়ের জন্য যদি এডজাস্ট করে চলতে না পারি তাহলে আমাদের মনুষ্যত্ববোধ কোথায় থাকে। শুভ কামনা রইলো আপা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ক্ষমতার অপব্যবহার আমাদের রক্তে মিশে গেছে। যার যতটুকু ক্ষমতা আছে ততটুকুই বা তার চাইতে কয়েকধাপ বেশি দেখাতে পারলেই সবাই শান্তি পায়।
আপনার লেখাগুলো আমার ভালো লাগে। সামাজিক অনিয়মের বিরুদ্ধে আপনার প্রতিবাদী কলম এমন করেই স্বোচ্চার থাকুক। ভালো থাকুন ভাইজান।
শুভ কামনা 🌹🌹
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
হ্যাঁ আপু ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দাপটে সাধারণ মানুষের অবস্থা খুবই শোচনীয়। আপনাদের ভালো লাগা আমার অনুপ্রেরণা। কিছু তো করতে পারছি না সমাজের জন্য। ভালো থাকবেন আপু।
ছাইরাছ হেলাল
ক্ষমতা থাকলে তা একটু জায়গা বুঝে দেখিয়ে দেয়াটাই এখন রেয়াজ-রসম!
এটি চালু আছে, থাকবে ও!!
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দুঃখজনক বিষয় হলেও সাধারণ এবং নিরীহ মানুষ এদের দাপটের কাছে বড্ড অসহায়। ধন্যবাদ।
আলমগীর সরকার লিটন
সুন্দর মনে ভাব প্রকাশ করেছেন আলম দা এটাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে কিছু করার নাই
ভাল থাকবেন——–
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
হ্যাঁ ভাইয়া দাপট দেখানো এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ডাক্তাররা বরাবর ক্ষমতা অপব্যবহারকারী। আমরা সাধারনরা নিরুপায় ও বোকার মতো তাদের সমীহ করি। তারা আমাদের লুটেপুটে খায় কিন্তু কিছুই করার নেই, জীবন আগে।
অথচ অন্যদেশের ডাক্তার এমন নয়। অন্যরাও ক্ষমতার এতোটা অপব্যবহার করে না, কতোটা বাঙ্গালীরা করে।
শুভ কামনা ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপু ডাক্তারদের সময়টুকু কিন্তু টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছি। ওনারা কিন্তু দয়া দেখাচ্ছেন । না তারপরেও সমাজে উনারা অনেক ক্ষমতাবান। ভালো থাকবেন আপু।