জ্বলছে গাজা, নরক হয়ে গেছে একেবারে। নারী-শিশুর হত্যাযজ্ঞে কারো কিছু এসে যাচ্ছেনা। বিশ্বের মোড়ল জাতিসংঘ মোটামুটিভাবে নিশ্চুপ। আর আমেরিকাসহ পুরো পাশ্চাত্য স্বার্থের কারনে একেবারেই নিশ্চুপ। শুধু পাশ্চাত্যই বা বলি কেন, আরব দেশগুলির দিকে তাকালেও কী আমরা তা-ই দেখতে পাইনা! আরব দেশগুলির চেয়েও কাছের ফিলিন্তিনেরই যে আরেক অংশ সহোদরের মতো দাঁড়িয়ে আছে ‘পশ্চিম তীর’, তারাও অক্ষমতা আর স্বার্থের কারনেই চুপ।মাত্র প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে এই যে আটশতের উপরে নারী ও শিশুর প্রানহানি হলো গাজায় এবং তাবত বিশ্ব তারপরও নীরব, এটার কারন ভাবতে গিয়ে আশ্চর্য-ই হতে হয় বৈকি!
শত শত বছর আগে ছোট্ট একটা অথবা দু’ তিনটা উপজাতি গোত্র হিসেবে বাস করত ইহুদিরা উক্ত এলাকায়। তারপর জীবিকারই কারনে সারা বিশ্বময় তারা ছড়িয়ে পড়ে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানীর হিটলার যখন ব্যপকভাবে ইহুদি-নিধন শুরু করে, বৃটেন তখন বেলফোরের চুক্তির আওতায় সারা বিশ্বের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইহুদিদেরকে এ এলাকায় একত্রিত করে পূনর্বাসিত করতে শুরু করে। ফিলিস্তিনের সাথে ইসরাইলের দ্বন্দের আসল শুরুটা আসলে তখন থেকেই, আজও যা অব্যহত। পৃথিবীতে অনেক জায়গা থাকা সত্ত্বেও বৃটেন তাদেরকে এই এলাকায় পূনর্বাসিত করে সম্ভবতঃ একটা গন্ডগোল জিইয়ে রাখারই উদ্দেশ্যে।
ইসরাইল আজ উন্নতির এমন শিখরে পৌঁচেছে যে, আমেরিকার মত বিশ্বের প্রথম পরাশক্তি এর কাছে কাবু অবস্থায় রয়েছে। ইসরায়েলের জন্যই আমেরিকার অর্থনীতি এ-অবস্থায়। এটা এত সুদৃঢ় যে, আমেরিকার ইসরায়েল-সমর্থক-গোষ্টি যদি হাত গুটিয়ে নেয়, তবে এর অর্থনীতিতে বিরাট ধ্বস নেমে পড়বে। আর আমেরিকাকে চটাতে চায়না যেসমস্ত বড় দেশ, তারাও ফিলিস্তিনের উপর এই অন্যায় আক্রমনের বিরুদ্ধে কিছুই বলছেনা।
আরব দেশগুলিরও অনেক স্বার্থ বিদ্যমান ইসরায়েলের আক্রমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করার পেছনে। আমেরিকার সাথে এদের তেলের ব্যবসায়িক স্বার্থ ছাড়াও সৌদি আরব, জর্ডানসহ আরো কিছু দেশ তাদের রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার স্বার্থে কিছু বলছেনা। আমেরিকা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে আর ফিলিস্তিন ইস্রায়েলের সাথে পেরে গেলে অথবা কিছুটা সম্মানজনক অবস্থানে গেলে সেই ধাক্কায় তাদের নিজ দেশেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম এগিয়ে যাবে এবং তাতে আবর দেশগুলির রাজতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে। আর বড় কথা হচ্ছে আরাম-আয়েসের কর্ণধারগন গাজার হামাসের মত প্রতিবাদী শক্তিকে সহ্য করতে না পারার কারনে এবং এই সংগঠন সফল হলে তাদের রাজতন্ত্র-বিলুপ্তির সম্ভাব্য কারনে প্রতিবাদ না করার মাধ্যমে ইসরায়েলকে একরকম সমর্থন দিয়েই যাচ্ছে। আবার পাশের মিশর, এর বর্তমান শাসক মনে করে যে, পুর্ববর্তী সরকারের প্রধান মুসরী, যাকে অপসারন করা হয়েছে, তার সাথে হামাসের সম্পর্ক ছিল খুব ভাল, তাই হামাসকে সমর্থন করা যাবেনা। এ-ই হচ্ছে বিশ্বের মুসলিম সমাজ।
এ অবস্থায় গাজার নারী-শিশুরা কী অকাতরে প্রান দিতে এবং আহত হতেই থাকবে? নরক কী সেখানে অব্যহতই থাকবে প্রিয় পাঠক! আমার মত অতি ক্ষুদ্র মানুষ আরতো কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিনা। তবে আমরা যদি যাদের ফেসবুক, টুইটার একাউন্ট আছে এবং যাদের নাই তারাও যদি একাউন্ট খুলে প্রতিবাদের ঝড় তুলে দেন এবং তা অব্যহত রাখেন বিশ্বব্যপী, তবে কিছু হোক বা না হোক প্রতিবাদের একটা ঝড় তো চালু থাকলো। কিছু না হওয়ার থেকে এটা খারাপ হয় কি!
সামনে ঈদ। প্রতিবারের মতোই এবারেও দরিদ্র মানুষের সমাগম হচ্ছে ঢাকায়। তবে এবার একটু বেশীই মনে হচ্ছে। চাঁদাবাজীও বেশী, অফিস-আদালতে বকশিস নেয়ার চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে দেখা যাচ্ছে। যারা কোনদিন বকশিস চাইতেননা তারাও এবার যে কারনেই হোক চাইছেন।জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়াই এর মূল কারন মনে হয়। ঘুষ-দুর্নীতিও চলছে লাগামহীনভাবে, কোথাও কোন বিচার তো নেই-ই, নেই সে সম্ভাবনাও। আশ্চর্য এক উটের পিঠে চড়ে চলছে দেশ।
পরম করূনাময় আল্লাহ তা’লা খুশীর প্রতীক হিসেবে ঈদ আমাদের দান করেছন। কিন্তু দশ/বিশ ভাগ মানুষ, যারা অবৈধ পথে আয় করে, তারা ছাড়া খুশী আর কার আছে! প্রতি ঈদেই মনে হয় কেন যে আসে ঈদগুলো? এবারও তা-ই। তবুও কামনা করি কষ্টের মাঝেও যেন আমরা একটু হলেও শান্তি পাই। পরম করূনাময়ের কাছে এ-ই প্রার্থনা করি।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
২টি মন্তব্য
লীলাবতী
শান্ত হোক এই বিশ্ব । এত হানাহানি আর ভালো লাগেনা। আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা ।
শুন্য শুন্যালয়
স্বার্থ সবার উপরে, যতোক্ষণ না নিজে মরছি। ভালো লিখেছেন।
আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা -{@