তারা কয়েক ভাই। বড়জন হাসান মাসুদ ছোটখাট একটা চাকরি করেন। রাজধানীতে থাকে পরিবার নিয়ে। যা আয় হয় সেটা ব্যয় হয়ে যায়। আরো কিছু বাড়তি টাকার প্রয়োজন প্রতি মাসে পড়ে। অন্য ভাইদের একজন ঢাকায় চাকরি করে। বেশ বড় পোষ্টে। একজন ব্যবসা করে। বিচ্ছিন্নভাবে এই পরিবারটি জীবনের সাথে এক একভাবে তাল মিলিয়ে চলেছে।
……
সকালে ছোটভাই মুহসিন ফোন করেছে, হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে গেছেন। ফোন পাওয়ার পর থেকে হাসান মাসুদ অস্থির বোধ করছেন। অন্য ভাইয়েরা একজন ফ্লাইটে, অন্যজন নিজের গাড়িতে বাবার কাছে দ্রুত পৌঁছে গেছে নিজেদের বউকে সাথে করে। হাসান মাসুদ নিজের বসের কাছ থেকে ছুটি পান নি। বসেরও কিছু করার ছিল না। তার এই অধীনস্থের উপর তাঁকে বেশ নির্ভর করতে হয়। বছরে শেষের মাস। সময়ও কম। তাই তিনি আরো দু’দিন পরে ছুটি দিতে রাজী হয়েছেন।
‘দু’দিন! ‘ হাসান দু:সহ অপেক্ষার যাতনায় মনে মনে ছটফট করেন। ‘অনন্ত কাল! ‘
হৃদয়ে জ্বালা নিয়ে দু’দিনের অন্তহীন অপেক্ষা করা ছাড়া পথ নেই। বাবার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসার একটা বিন্দু ও যদি বাবাকে সে দেখাতে পারত! তার কাজ-কর্মে মন বসে না। খেতে ইচ্ছে করে না। প্রতিটা মুহুর্ত যে মানুষটি তাঁকে হাত ধরে চলতে শিখিয়েছে, জীবনের রুপ-রস-গন্ধ অকৃত্রিমভাবে নিতে শিখিয়েছে, তার কাছে ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে হয়।
কিন্তু জীবন এক গ্যাড়াকল। এ থেকে নিজেকে ছুটানো যায় না!
তার মনটা খুব খারাপ হয়ে থাকল। বাবা, মা, ভাইয়েরা কি বুঝবে তার কেমন লাগছে?
ছোট ভাইয়ের বিয়েতে গায়ে হলুদ ও মিস করেছিলেন তিনি। অনেক কথা হয়েছিল।
চেয়ারে বসে হাসান দুই হাত ঘাড়ের নিচে দিয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছু দেখছেন না। ভাবছেন। আমার জীবন,আমার অতীত, আমি -এ শুধু আমিই জানি। যারা তাদের জীবন, তাদের অবস্থায় আমার বিচার করে তারা কি সুবিচার করবে?
ছোটবেলায় পড়া একটা কবিতার লাইন এলোমেলো মনে পড়ল,
‘যতদিন ভবে না হবে না হবে
তোমার অবস্থা আমার সম
দেখে না দেখিবে বুঝে না বুঝিবে যাতনা মম…
বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে?
পৃথিবী এক, তবু সবারই জীবন ভিন্ন। কে কাকে বুঝবে?
তিনি গভীর দু:খ নিয়ে মনে মনে আত্মীয় স্বজন ভাইদের ব্যবহার নিয়ে ভাবতে লাগলেন। মনে ঝড় বইতে থাকল। ইচ্ছা হল জোরে ডেকে তাদেরকে বলতে ‘তোমরা যারা আমার বিচার করছ -তারা আমার জীবনটাকে, আমাকে কি জানো? যে জুতোজোড়া আমার পায়ে তা পরে আমার হেটে আসা পথটাতে হাটো, আমার দু:খ, আমার সুখ, আমার দ্বিধা, আমার ভয়, আমার ব্যথা আর হাসি নিয়ে বাঁচো একবার, তারপর না হয় আমার বিচার করো! … ‘
১৪টি মন্তব্য
নুসরাত মৌরিন
আসলেই জীবন এক বড্ড কঠিন গ্যাঁড়াকল।
কখনো কখনো খুব আপনজনদেরও দেখানো যায় না খুব গভীর গোপন বেদনা।
ভাল লেগেছে। 🙂
মামুন
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
শুভ সকাল।
প্রহেলিকা
ভালো লাগার অনুভুতি রেখে গেলাম, শুভকামনা।
মামুন
ভালো লাগার অনুভূতি রেখে গেলেন, অনেক ধন্যবাদ।
শুভ সকাল।
রিমি রুম্মান
সুন্দর লিখেছেন। শেষটা সুন্দর ভাবে শেষ করে এনেছেন। শুভকামনা জানবেন।
মামুন
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা আপনার জন্যও রইলো।
মিথুন
ভালো লাগলো গল্পটা———–
মামুন
অনেক ধন্যবাদ।
শুভ সকাল।
মরুভূমির জলদস্যু
জীবন সব সময় কিছু না কিছু সামনে নিয়ে আসে, কখনো খারা কখনো ভালো। এই সব নিয়েই জীবনের পথ চলা।
মামুন
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।
স্বপ্ন নীলা
ভীষণ ভীষণ ভাল লাগা রেখে গেলাম
মামুন
ভালো লাগা রেখে গেলেন, অনেক ধন্যবাদ।
অরণ্য
বহুদিন পরে আপনার গল্প পড়লাম। ভাল লাগল। এই জিজ্ঞাসাগুলো আমাকেও মাঝে মাঝে ছুঁয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো আমরা থেমে গেলেও ঘড়ির কাঁটা থামেনা।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল।
মামুন
আপনার ভালো লাগার অনুভূতি জেনে আমারও ভালো লাগলো।
আপনাকেও নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
ভালো থাকবেন।