জানা অজানা বিলাতের গল্পঃ “গ্রেট ফায়ার” বিলাতের ইতিহাসে “ভয়াবহ অগ্নিকান্ড “
আগুন আর আগুন !
চার  দিকে ভয়াবহ আগুনের লেলিহান । যে আগুন চলমান ছিল  রবিবার মধ্যরাত,সোমবার দিন আর রাত, মঙ্গলবার দিন আর রাত এবং বুধবার দিন আর রাত ধরে ।
যে আগুন ধ্বংস করেদায় পুরো লন্ডন শহরের বিরাট অংশ ।
কেমন করে লাগলো আগুন
সে এক ভয়াবহ ঘটনা । আগুনের লেলিহান শিখায় চোখের সামনে সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।
কারন সময় টা  ছিল মেডিভ্যাল পিরিয়ড । আগুন নেভানোর টেকনোলোজি আবিষ্কার হয় নি
সময়টা ১৬৬৬ সেপ্টেম্বরের দুই তারিখ । রাত ১টা । স্থান টি Pudding lane এর কিংস বেকারী । বেকারির দোকান চিল নিচে । পুরো পরিবার ঘুমিয়ে আছে । পোড়া গন্ধ তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায় । বুঝতে পেরেই দ্রুত তারা জানালা দিয়ে নিচে নেমে যায় । কিন্তু তখন বেকারির চুলায় আগুন আরম্ভ হয়ে গেছে ।বাতাস ছিল তীব্র । যা কিনা আগুন ছড়াতে সাহায্য করে। সময়টাতে ফায়ার ব্রিগেট ,ফায়ার ফাইটার , রাস্তার নিচে চলমান পানির ড্রেন যেখানে পাইপ লাগিয়ে পানি দেয়ার আধুনিক ব্যাবস্থা এবং বাড়িতে ফ্যায়ার স্কেপ এগুলো কিছুই ছিলনা।
বাড়িঘর ছিল কাঠের আর ছাদ ছিল খড়ের । তা  ছাড়া ন্যারো রাস্তা আর একটার সাথে আর একটা বাড়ি ঘেঁষাঘেঁষি অবস্থান। তাই রক্ষা করা সম্ভব হয়নি । পাশেই থেমস নদী। কিন্তু সেখান থেকে বালতি বালতি পানি এনে আগুনের এই ব্যাপক ভয়াবহ অবস্থাকে আয়ত্তে আনা সম্ভব ছিল না।
আগের বছরে ছিল প্লেগের মহামারী আর এবছর ভয়াবহ আগুন । প্লেগের মহামারী তখনও ছিল। তিনদিন আর রাত ধরে চলা আগুন একটার পর একটা বাড়িতে নিমিষেই চলে যাচ্ছিল ।একেক টা  বাড়ি তে আগুন যায় আর তা গান পাউডারের মত জ্বলে উঠে ।
জন এভিলিন (John Evelyn)  তার ডায়েরি তে লিখে গেছে প্রতিদিনের বর্ণনা ।
থেমস নদীতে হাজার হাজার নৌকা মানুষের বাড়িঘরের মালামাল সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছিল।
১৭থ সেন্চূরি তে লন্ডন শহরে আগুন লাগতো বেশি । কারন ইলেক্ট্রিসিটি আবিষ্কার হয়নি  ।  মানুষ মোমবাতি দিয়ে ঘর আলো জ্বালাতো ,  ওপেন ফ্যায়ারে রান্নাবান্না এবং ঘরবাড়ি গরম রাখার জন্য কাঠ দিয়ে ফ্যায়ার প্লেসে আগুন জ্বালানো এবং ওভেন ছিল কাঠের আগুনের । আর এসব  জায়গা থেকে  সহজেই আগুন ধরে যেতো  ।
সোমবারেঃ  মার্কেটে আগুন ধরে আর একটার পর আরেকটা দোকান আগুনে শেষ হয়ে যায়। তারপরে টাওয়ার অব লন্ডনে আগুন ধরে । মানুষ ভেবেছিল পাথরের দেয়াল হয়তো পুড়ে যাবেনা। সেখানে অনেকে তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে রেখে ছিল । কিন্তু মেরামতের জন্য কাঠের স্ক্যাফলডিং আর কাঠের মই লাগানো ছিল । যাতে আগুন ধরে যায় আর ভীতরে রাখা জিনিস সব পুড়ে  যায় । সারা রাত আগুনে একটার পর আর একটা বাড়ি আগুন ধরতে থাকে ।
মঙ্গলবারঃ  আরও দ্রত গতিতে আগুন ধরে সব জায়গায় । Fleet Street,warkick lane, new gate, pautes chain, ফুটপাথ, রাস্তা আগুনের তাপে এতোই তপ্ত ছিল যে মানুষ চলাচল অসম্ভব।
বুধবারে বাতাসের গতি কমাতে আগুনের গতি কমে। আগুনের তাপ এতো বেশি ছিল যে দুই মাস ধরে সেলারে রাখা কয়লায় জ্বলন্ত আগুন ছিল ।
আগুনে যা যা পুড়েছিলঃ
১৩,২০০ থেকে ১৩,৫০০ বাড়ি পুড়ে ছাই হয়। ৮৬ চার্চ , ৪৪টি কোম্পানি, রয়াল এক্সচেঞ্জ , কাস্টম হাউস, st paul’s Cathedral, Bridewell palace, জেলখানা, পোষ্ট অফিস এবং  তিন টি গেট ।
ক্ষতির পরিমাণ  ২.১৩ বিলিয়ন পাউন্ড । এই আগুন সে সময়ের ১৫% বাড়িঘর শেষ করে দায়।
১৬৭৭ সালে একটা বিরাট মনুমেন্ট বানানো হয় ” গ্রেট ফ্যায়ার অব লন্ডন ” কে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে ।
এর পরেই “ফ্যায়ার ব্রিগেড ” বা আগুন নেভানো ব্যাবস্থাপনার উদ্ভব হয় ।
হুসনুন নাহার নার্গিস,লন্ডন
তথ্য সূত্রঃ
Diary and correspondence of John Evelyn,Evelyn John
London Londoners and the Great Fore 1666 ,Disaster and Recovery
The Story of the Great Fire of London, Hanson.Neil
A social History ,Harvard ,Porter Roy
Great Fire of London,In our time at the  BBC
৪৮জন ১৮জন
0 Shares

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ