জানা অজানা বিলাতের গল্পঃ বর্বর ,অসভ্য,কুসংস্কারে ভরা, শিক্ষা এবং কালচার হীন সময় কাল “মধ্য যুগ”বা  মেডিভ্যাল  পিরিয়ড  (৪১০ AD-১৪৮৫ AD)
মাথা ভরা উকুন, পাকস্থলী ভরা কৃমি ,দুর্গন্ধ মুখ আর অপরিষ্কার দাঁত ,গোসল হীন শরীর তার সাথে নোংরা কাপড়চোপড় পরা মানুষ এই হল মধ্য যুগের মানুষের দৃশ্য ।
জীবন ছিল খুব কঠিন। আয়ু কম , খড়ের ছাদ দেয়া,  পায়খানা ছাড়া বাড়ি , শিশু মৃত্যুর হার খুব বেশি ,ব্যাল্য বিবাহ এবং চিকিৎসার অভাব এই ছিল মানুষের জীবন।
এই সময়টা ছিল প্রতিশোধ, গৃহযুদ্ধ , অস্থিরতা আর প্লেগ আর কলেরা মহামারীর সময় ।
রোমান পিরিয়ড শেষ হলে এই নরম্যান দখল করে ইংল্যান্ড , তারপর অ্যাংলো স্যাক্সন (৬০০-১০১৬) । ১০৬৬ সালে নরম্যান ক্ষমতায় আসে ।
নারীর অবস্থানঃ 
মেদিভ্যাল যুগে নারী পুরুষের অধীনে ছিল । একজন নারী প্রথমে বাবা পরে  স্বামীর অধীন থাকতে হতো । সমাজ ছিল পুরুষ শাসিত । নারীর সীমিত চয়েস ছিল সব ক্ষেত্রে । ব্যাবসা বাণিজ্য, কাজ , লিগ্যাল রাইট সব ক্ষেত্রে নারীর সীমিত ক্ষমতা ছিল। বিধবা নারী স্বামীর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত ছিল ,কিন্তু নরম্যান্দি পিরিয়ডে বিধবা নারী কে স্বামীর সম্পত্তির ভাগ দেয়ার আইন হয়।
নারী বিধবা হলে কিছুটা স্বাধীনতা পেলেও তেমন স্বাধীনতা ছিলনা। নারীর তিনটি প্রধান কাজ ছিল ।যেমন চাষবাস ,পশু পালন আর কাপড় বুনন ।
ধনী নারী স্বামীর সাথে ব্যাবসা করতো অথবা টাকা লগ্নির ব্যাবসা করতো । মধ্যবিত্ত নারী কাপড়ের দোকান দিত । রান্নাবান্না বাড়িঘর পরিষ্কার ছাড়াও নারীকে শস্য ভাঙ্গা, পনীর বানানো, সূতা কাটা , কাপড় বুনন করে তা  বিক্রি করা,  এই কাজ করতে হতো ।
মধ্যবিত্ত পরিবারে নারীর  একটা গুরুত্ব পুর্ন অবস্থান থাকলেও দরিদ্র পরিবারে সমাযে,  নারীর কোনও ভূমিকা ছিলনা।পুরুষ জমি চাষ করতো আর নারী বাড়িতে গবাদি পশু দেখভাল করতো । চাষবাস করা হত  ঘোড়া টানা কাঠের লাঙ্গল  দিয়ে । প্রধান ফসল বার্লি,জব আর গম ।
স্যানিটেসান  এবং পরিষ্কার পরিচ্ছনতা 
মেডিভ্যাল বা মধ্য যুগে মানুষের পরিচ্ছনতা সম্পর্কে কোনও ধারনা ছিলনা। পায়খানা ছিলনা। বাড়িয়ে পেছনে একটা মল ফেলা পিটের ব্যাবস্থা থাকতো । বাড়ির মধ্যে একটা ঘরে বড়ো পাত্রে মলত্যাগ করে তা ফেলে দিয়ে আসা হত সেই পিটে । পরে  তা পুরানো হলে সার হিসেবে ব্যাবহার করা হত । অনেক সময় পিটে না ফেলে জানালা দিয়ে বাইরে রাস্তায় মল ফেলা হতো । যার ফলে চারদিকে দুর্গন্ধ ময় একটা পরিবেশ বিরাজ করতো ।
শীত প্রধান দেশ। ঘর গরম রাখা বা পানি গরমের ব্যাবস্থা ছিলনা। তাই রেগুলার গোসল কষ্ট সাধ্য ব্যাপার ছিল। তা ছাড়া পরিধেয় কাপড় ছিল মাত্র একসেট। গোসল করে কাপড় না থাকার দরুন সেই নোংরা কাপড় পুনরায় পরিধান করতে হতো ।
ধনীরা মাসে একবার গোসল করলেও দরিদ্রদের পক্ষে গোসল একটা বিলাসিতা ।
সাধারণত ঘরের মাঝে রান্না বান্নার চুলা থাকতো কাঠের সাহায্যে । উপরে শোয়ার ব্যাবস্থা থাকতো যাতে নিচের তাপ উপরে যায় । অতিরিক্ত শীতে এইভাবেই ঘর গরম রাখা হতো ।
ছোটো ছোটো টাউন গুলোতে নোংরা পানি নিষ্কাসনের ব্যাবস্থা ছিলনা ।পরিষ্কার পানি সরবরাহের ব্যাবস্থাও ছিল না।
বিছানা ভর্তি থাকতো ছারপোকা। চারদিকে তেলেপোকা আর ইঁদুর । সেগুলো যে জীবাণু বহন করে সে ধারনা তাদের ছিলনা। প্লেগের মহামারী হলে মনে করা হতো সৃষ্টিকর্তার শাস্তি ।
ধনী হলে তাদের বাড়িতে কোনও কমফোর্ট  ছিলনা কারন  তখন কিছু আবিষ্কারও হয়নি। ঘর আলোকিত করা হতো  চর্বি এবং তেল মিশিয়ে সলতে ব্যাবহার করে প্রদীপ জ্বালিয়ে । ফার্নিচার ছিল কাঠের গুড়ি দিয়ে কাটা  তক্তা দিয়ে যা চাঁছা ছিলা ছিলনা।
খাবার ছিল পরিজ যার মধ্যে থাকতো গম ওট আর বার্লি । তার সাথে ভেজিটেবল আর রুটি । মাংস খুব কম খাওয়া হতো ,মাঝে মাঝে খাওয়া হলেও নিজেদের পোষা প্রাণী দিয়ে ।
ছেলে মেয়েদের চাইল্ড হুড খুব কম সময়েই শেষ হয়ে যেত । মেয়েদের বালিকা বয়সেই বিয়ে হতো আর ছেলে ১২ হলেই কাজে লাগিয়ে দেয়া হতো ।বেশির ভাগ ছেলে মেয়ে মানুষের বাড়ি কাজ করতো ।  মেয়েরা অনেক সময় কাজ করে অর্থ জোগাড় করে নিজ বিয়ের ডাউরি বা যৌতূক সংগ্রহ করতো হতো । এই ভাবেই একটা সন্তানের ছেলেবেলার সমাপ্তি হতো ।
শিশু মৃত্যুঃ 
বাচ্চার প্রথম বছর খুব সংশয় পুর্ন ছিল। ৫০% বাচ্চা মারা যেত এক বছর হওয়ার আগে। ২০% নারী মারা যেত বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে।
এই ছিল মধ্য যুগে ব্রিটেনের সমাজ চিত্র এবং মানুষের জীবন ধারা
তথ্য সূত্রঃ
History of London,Medieval London,Britain Express
Medieval London 1270-1300
Everyday Life in Medieval London,From AgloSaxons to the Tudors,Mount Toni
London in the Later Middle Ages Government and people ,Barron Caroline
DNA study finds London was ethnically diverse from start , BBC
Roman London “In their own words”
ছবিঃ উইকিপিডিয়া
৮৫জন ১৪জন
0 Shares

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ