
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের ক্ষেত্রে
নারী কর্মকর্তাদের বেলায় আপত্তি তুলেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
কেন? কারণটা কী?
শুধুই নারী বলে?
সমাজটা যে পুরুষ দ্বারা কীভাবে শাসিত হয় এবং নারীর মাথা তোলায় পুরুষের আপত্তি কিভাবে স্থানে স্থানে খাঁড়া হয়, দেখা যাচ্ছে কী? নানা ওজর আপত্তি দাঁড় করিয়ে কোনো না কোনোভাবে দমিয়ে রাখার শত কৌশল শতভাবে প্রয়োগ করে এই পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা প্রতিনিয়ত চলতেই থাকে। কিছুদিন আগে এমনি এক আপত্তি খাঁড়া করা হয়েছিল নারীর কাজী পদের নিয়োগ আবেদন করা নিয়ে। সেখানেও অযৌক্তিক আপত্তি দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়েছিল। এবার দেখছি গার্ড অব অনার দেয়া নিয়ে খোদ সংসদীয় কমিটি থেকে আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে। কেন? গার্ড অব অনার প্রদানে নারী ডিসি বা ইউএনও থাকলে সমস্যা কী? সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁরাই তো প্রতিনিধিত্ব করবেন। কফিনে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোতে আপত্তি উঠবে কেন?
রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমি এর কারণ জানতে চাই।
সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করবেন সরকারের প্রতিনিধি, তিনি নারী না পুরুষ এ প্রসঙ্গটি আসবে কেন? পদবীটাই তো এখানে মুখ্য।
এর আগে বিয়ে নিবন্ধনে নারীরা কাজী হতে পারবে না বলে আইন মন্ত্রণালয় একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। যা আদালত অবধি গড়িয়েছে। হাই কোর্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষে রায় দিলেও সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
নারী কাজী নিয়ে রায়: আপিলের প্রস্তুতি সংক্ষুব্ধ পক্ষের
অনেকে আমাকে সময়ে সময়ে পুরুষ বিদ্বেষী হিসেবে আঁড়ে আঁড়ে চিন্তা করেন। করেন, সমস্যা নেই। চলার পথে সর্বদা আমি কৈফিয়তটা আমার নিজেকেই দিই। আর ঠিক সেকারণে কে কী ভাবলো তাতে আমি খুব একটা প্রভাবিত হই না। সাধারণত ৯৯% নারীই নিজেকে ভালো সাজাতে ব্যতিব্যস্ত থাকেন বলে অনেক অন্যায়কে দেখেও না দেখার ভাব করেন, তাতে স্রোতের অনুকূলে থেকে পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর সুবিধাটা ভোগ করা যায় সুন্দরভাবে। কিন্তু আমি যে কোনোকালেই আমার নিজের সুবিধাপ্রাপ্তি নিয়ে কখনোই চিন্তা করি নাই! হয়তো এ কারণে সুবিধাবঞ্চিত হয়ে পড়ি কি না সে চিন্তাও আমার মধ্যে কাজ করে না। সমাজের বৃহত্তর অংশের ন্যায়সঙ্গত নায্যতা চিন্তাতেই আমার নিজের অবস্থান। যা অনায্য তার বিরুদ্ধাচারণ করাই আমার ধর্ম। আবার সমাজকে অগ্রগামী দেখতে চান এমন অনেক পুরুষও সুবিধা বিবেচনায় নারী বিষয়ক এরকম বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। অথচ সমতাভিত্তিক সমাজকাঠামো গড়ে তুলতে হলে যেকোনো অনায্যতার বিরুদ্ধেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে একাট্টা হলেই কেবল এই সমতাটা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এককেন্দ্রিক চিন্তা কখনোই সমতা আনে না। আর সমতা না আসলে সভ্য সমাজের সৌন্দর্যও বিকশিত হয়না। দমন-পীড়ন, অকারণ বিরুদ্ধাচারণ এগুলো সভ্যতা বিবর্জিত। এর থেকে বের না হতে পারলে কখনোই উন্নত সমাজের চেহারা আসবে না।
যাহোক, ‘গার্ড অব অনার’ প্রদানের ক্ষেত্রে
নারী কর্মকর্তাদের বেলায় আপত্তি উত্থাপন করায় এই আপত্তি উত্থাপনকারীদের আপত্তির বিরুদ্ধে আমি আমার আপত্তি জানিয়ে গেলাম। এটা অন্যায় এবং এটা অপমানও বটে।
১১টি মন্তব্য
আরজু মুক্তা
মানসিকতার বদল নাই। এখনও মেয়ে। মানুষ না।
আমিও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ আপনাকে।
আলমগীর সরকার লিটন
এটা ঠিক নয়
যাহারা গার্ড অব অনার প্রদানের ক্ষেত্রে যোগ্য পুরুষ কিংবা নারী অবশ্যই গার্ড অব অনার প্রয়োজন বলে মনে করি
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ।
হালিম নজরুল
চরম এইসব বৈষম্য আমাদের সব প্রাপ্তিকে ম্লান করে দেয়।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
একদম। সভ্য রাষ্ট্রে যোগ্যতাই হচ্ছে পদ পদবী প্রাপ্তির একমাত্র মাপকাঠি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বৈষম্য সবসময় চলে আসছে। তবে এক্ষেত্রে ইসলামিক কোন বিধান থেকে থাকলে আলাদা কথা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
রাষ্ট্রাচার আর ধর্মাচার বুঝেন? দুটো আলাদা। ধর্মাচার নির্দিষ্ট ধর্মানুসারীদের জন্য আর রাষ্ট্রাচার রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য। রাষ্ট্রে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিক সম অধিকারের দাবীদার।
রাষ্ট্রীয় কার্যে ইসলামিক কেন, সকল প্রকারের ধর্মীয় বিধানই অপ্রাসঙ্গিক।
শিপু ভাই
কাজীর ব্যাপারটাতে ধর্মীয় একটা ইস্যু আছে।
কিন্তু একজন দায়িত্বশীল নারী কর্মকর্তা কেন গার্ড অব অনার প্রদান করতে পারবেন না তা বোধগম্য নয়।
গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যুতে আপনার এই প্রতিবাদী লেখা ভাল লাগলো। এই দাবিটা ছড়িয়ে দিতে হবে
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কাজীর ব্যাপারটায় ধর্মীয় ইস্যুটা কী?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কাজীর ব্যাপারে ধর্মীয় কোনো ইস্যু নেই। ওটা স্রেফ বিবাহ রেজিস্ট্রি করার চাকুরী। কাজী একটা পদবী মাত্র।