মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এবং ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে যাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তাদের কবরে লেখা হচ্ছে শহীদ !যদি এই কুলাঙ্গারদের শহীদ লেখা হয় তাহলে প্রকারান্তে দেশের জন্য যারা যুদ্ধ করে প্রাণ দিয়েছিল তাদের সঙ্গে তামাসা করা ছারা আর কিছু নয়। এটা যদি এখন প্রতিহত করা না যায় তাহলে আগামী প্রজন্ম এসব কুলাঙ্গারদের শহীদ হিসেবে চিনতে শুরু করেছ। অপর দিকে আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমানকে পাকিস্থানে গাদ্দার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
মতিউরকে কোন প্রকার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছারা মসরুর বিমান ঘাঁটিতে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত স্থানে তাঁর মৃতদেহ দাফন করা হয়। বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমানের কবরে লেখা হয় ”ইধার শো রাহা হ্যায় এক গাদ্দার! ” এদিকে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম মিনহাজের জন্য গর্ববোধ করে ৩০ আগস্ট, ১৯৭১ এ ‘আমরা গর্বিত’ শিরোনামের একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। পরবর্তীতে, ১ সেপ্টেম্বর ‘শহীদ মিনহাজের জীবনের শেষ কয়েকটি মূহুর্তে’ শিরোনামে পরিবেশিত সংবাদে মতিউর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক ও মিনহাজ রশীদকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করে।
দেশ যখন ১৯৭১ এ মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে যে দু’জন জামাত নেতার ফাঁসির দন্ড কার্যকর হয়েছে তাদের প্রত্যেকের কবরে লেখা হয়েছ শহীদ ! ফরিদপুরে আবদুল কাদের মোল্লার কবরে নাম ফলক লাগান হয়েছে ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা’, অপর দিকে শেরপুরে কবরেও লেখা হয়েছ ‘শহীদ কামারুজ্জামান’।
দীর্ঘ ৪৩ বছর পরে জাতি যখন কলঙ্কের কালিমা মুক্তির প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে, তখনই বাংলাদেশে শহীদের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে পিপীলিকার মতো। মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসিতে মৃত্যদণ্ড পাওয়া কসাই কাদের মোল্লার কবরের ফলকে লেখা শহীদ কাদের মোল্লা। আরেক অপরাধী কামারুজ্জামানের নামের আগেও ব্যবহার করা হয়েছে শহীদ, ছাত্র শিবিরের যারাই ঘাতে অপঘাতে মারা পড়ছে সবার আগে ব্যবহার করা হচ্ছে শহীদ। এটা ভবিষ্যৎ ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। আজ থেকে ২০/৩০ বছর পরে একটা প্রজন্ম হয়তো এদেরকে শহীদ হিসাবেই জানবে।
৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির চরম পাওয়া মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ্বে ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে চরম ফাজলামি ছারা আর কিছু নয় এটি। যাদের রক্তে হাত রঞ্জিত, সেই সব রাজাকার আলবদরদের নামের আগে শহীদ ব্যবহার করে যারা ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে এদের লাগাম টেনে ধরা জরুরি। প্রয়োজনে আইন করে বাংলাদেশে শহীদ শব্দটির যথেচ্ছা ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নতুন প্রজন্ম যেন ভুল শহীদের সঙ্গে পরিচিত না হয়। এই দায় সকল দেশপ্রেমিক নাগরিকের।
ফেসবুক জুড়ে এই কুলাঙ্গার টাকে শহীদ বানানোর চেষ্টা –
শহীদের সঙ্গা
শহীদ একটি আরবী শব্দ। শহীদ ( شَهيد) তাঁদের বলা হয়, যাঁরা ধর্ম যুদ্ধ অথবা দেশ রক্ষার কাজে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেন এবং জীবন ত্যাগ করেন। এ ব্যাপারে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন,’ ইসলামের দৃষ্টিতে যারা ইসলামের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে মারা যার তাঁরা শহীদ। আর যে মুসলমান সঠিক নিয়তে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেন তাঁরাও শহীদ।’
কাদের মোল্লা এবং কামারুজ্জামান প্রসঙ্গে তিনি বলেন,’ তাঁদের ফাঁসি হয়েছে একাত্তরে গণহত্যাসহ আরো অনেক মানবতা বিরোধী অপরাধে। তারাতো ইসলামের জন্য প্রাণ দেনিন বা মারা যাননি।
কিছু কথা না বললেই নয়
পৃথিবীর বুকে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যেখানে দেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীরা সম্মানের সহিত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে এদের জামাই আদরে বরণ করেছিলেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৩ সালের ১৮ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরকার দালালী এবং স্বাধীনতাবিরোধী ক্রিয়াকর্মের অভিযোগে যে ৩৯ জন ঘাতকের নাগরীকত্ব বাতিল করেন। জিয়াউর রহমান তাদের অনেককেই পুনর্বাসিত করেন, তাদের মধ্যে জুলমত আলী খান (উকিল) প্রাক্তন জিয়া সরকারের মন্ত্রী হয়েছিল। গোলম আযম, প্রাক্তন জেনারেল সেক্রেটারি, ডিইউসিএসইউ, জামাতে ইসলামীর আমীর এবং দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত শাহ আজিজুর রহমানকে নিয়ে বিএনপি গঠনের পূর্বে ১৯৭৮ সালে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট নামক একটি দল গঠিত হয়। এই দলে তৎকালীন মুসলিম লীগের একটি অংশ নিয়ে শাহ আজিজুর রহমান যোগদান করেন। এই জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে জিয়াউর রহমান ৩ জুন , ১৯৭৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন। পরে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট এবং আরো কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন মিলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠিত হলে তিনি এই দলে বেশ প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়। শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশে বিএনপি সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী। জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার প্রেসিডেন্ট হলে শাহ আজিজুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর পদে অসীন থাকেন।
৭৫ এর ২৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাধ্য করেন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব হস্তান্তর করার জন্য এবং সেই শর্তে তিনি খুনিদের বিদেশে পাঠিয়ে পুরস্কৃত করেন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধা কতজন সেনা অফিসারকে তিনি কোট মার্শাল করে ফাঁসি দিয়েছেন তার হিসাব নেই! কারন তাকে ক্ষমতায় থাকতে হবে। এক দিনেই প্রায় ৬ শত বিমান বাহিনীর সদস্য/কর্মকর্তাদের কোর্ট মার্শাল করে ফাঁসি দেন। তার প্রথম টার্গেট ছিলো মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার। তিনি জাতীর জীবনে যা ক্ষতি করে গেছে তার মাশুল আজও দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ৭১’র ঘাতকদের বিরদ্ধে আমরা যেই যুদ্ধ করছি, সেই ঘাতকদের বিষবৃক্ষ খুনী জিয়া বপন করেছিলেন বহুদলীয় গনতন্ত্রের নামে। বাকী কাজটা সম্পন্ন করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। গোলাম আজমের নাগরিকত্ব থেকে শুরু করে নিজামী মুজাহিদকে মন্ত্রী বানানো পর্যন্ত।
তাই বলতে হয়, জিয়াউর রহমান শহীদ হিসাবে জাতির ঘাড়ে চেপে না বসলে বাংলাদেশে ইতিহাস অন্যরকম হতো। জাতিস্বত্তার স্রোতধারাকে ভুল ভাবে প্রবাহিত করেছিল জিয়াউর রহমান। সেই ভ্রান্ত ভুল ইতিহাসের খেসারত দিচ্ছে প্রজন্ম। ধর্ম ব্যবাসায়ীদের প্রতিস্থাপন করে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত করে দিয়ে গেছে এই শহীদ শব্দের অপব্যবহার করে। এখনই সময় ইতিহাস থেকে ভ্রাইন্ত মুছে ফেলা। একই সাথে ইতিহাসে নতুন কোন অপঘাত না আসে সেটা লক্ষ্য রাখা। ইতিহাসের অপঘাত প্রতিহত করতে হবে আমাদেরই।
###
জাতির কুলাঙ্গারের জন্য একটি ঘৃণাস্তম্ভের দাবি https://www.amarblog.com/aronnojewel/posts/181932
১৪টি মন্তব্য
মারজানা ফেরদৌস রুবা
অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরেছেন।
‘শহীদ’ শব্দের প্রথম অপব্যবহার শুরু হয় জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর নামের পাশে ব্যবহার করে।
এরপর দীর্ঘ ৪৩ বছর পরে এখন যখন জাতি কলঙ্কের কালিমা মুক্তির প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে, তখনই বাংলাদেশে পিপীলিকার মতো শহীদের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে । তাও আবার মানবতা বিরুধী অপরাধীদের নামের পাশে বসিয়ে, যাদের রাজাকারী মদদের কারনে বাঙলা মায়ের দামাল ছেলেরা হাজারে হাজারে সেদিন যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।
কাজেই সেই সব রাজাকার আলবদরদের নামের আগে ‘শহীদ’ ব্যবহার করে যারা ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে এদের লাগাম টেনে ধরা খুব জরুরি। প্রয়োজনে আইন করে বাংলাদেশে ‘শহীদ’ শব্দটির যতেচ্ছা ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।
সুতরাং আরো একটি বড় ধরনের ইতিহাসের অপঘাত প্রতিহত করতে হবে আমাদেরই।
সবাই সজাগ হউন।
অরণ্য জুয়েল
পোস্টটি পড়া এবং মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ
আমার বক্তব্য-
যুদ্ধাপরাধিদের নামের আগে যুদ্ধাপরাধি লেখার বাধ্যবাদকতার জন্য আইন করা জরুরি
সীমান্ত উন্মাদ
এটা আমাদের জন্য কতটা লজ্জার তা ভাষায় প্রকাশ করার মত ভাষা আমার জানা নেই।
আজো এরা সচকিত সরব আছে আমাদের এই স্বাধীন বাংলাদেশে। তবে আমি আশাহীন নই। একদিন এদের হাত থেকে মুক্তি আমাদের ঘটবেই।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রেখে গেলাম।
অরণ্য জুয়েল
আপনাকেও ধন্যবাদ
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত লেখা
কোন মতেই একজন প্রমানিত যুদ্ধাপরাধীর কবরে শহীদ লেখা সমর্থন যোগ্য নয়।
জনতা এবং সরকারকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেই হবে।
ভালো লিখেছেন।
অরণ্য জুয়েল
আমি বরাবরই দাবি করে আসছি, এসব কুলাঙ্গার জন্য ঘৃনাস্তম্ভ তৈরি করা হোক
সঞ্জয় কুমার
ওরা যদি শহীদ হয় তবে আমাদের বীর মুক্তিযুদ্ধারা কি ছিলেন ? এটা অবশ্যই শহীদ শব্দের অবমাননা । একটা পশু কখনোই শহীদের মর্যাদা পেতে পারে না
অরণ্য জুয়েল
সুতরাং প্রতিবাদ করা জরুরি। আসুন কন্ঠ ছাড়ি জোরে….
শুন্য শুন্যালয়
কি আশ্চর্য্য দেশ এটা। আমি বলতে চেয়েছিলাম ওদের কবরে রাজাকার লেখে দেয়া হোক, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা আসলে। লজ্জা হচ্ছে, ঘেন্না হচ্ছে। শুনলাম কোকোর নামের আগেও শহীদ লেখা হয়েছে। এভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের অশ্রদ্ধা করার সাহস কিভাবে পায় ওরা? দেখতে চাচ্ছি কি হয়।
মেহেরী তাজ
আমি এই প্রথম আপনার পোষ্ট পড়ছি। অনেক গুরুত্ব পূর্ণ একটা লেখা।
আসোলেই সবার জানা উচিৎ “শহীদের” সংগা। চেনা উচিৎ আমারে দেশের সত্যিকার শহীদদের।
অরণ্য জুয়েল
আপনাদের ব্লগে এটাই আমার প্রথম পোস্ট।
ব্লগার সজীব
এরা দেশের গাদ্দার। এদের কবরে গাদ্দার লেখাই উচিৎ।
অরণ্য জুয়েল
ব্লগার সজিব, আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যে সহমত
মোঃ মজিবর রহমান
আমাদের সুযোগ্য সরকারের নজর পড়ে কিনা দেখার বিষয়।
সাধারন জনগন প্রতিবাদ করলে সরকারের পেটুয়া বাহিনী এবার পিটাতে পারে।
জনগন সাবধান।