
একটা বিশাল বিলবোর্ডে আপনার চোখ আটকে গেলো। আপনি বুঝতে পারছেন না,,, ওখানে চোখ আটকে যাবার মত এমন কি আছে বিলবোর্ডটাতে! তবু আপনি চেয়েই আছেন বিলবোর্ডেের দিকে,,, আমি আপনার পাশ অতিক্রম করার কালে,,,,ট্যারা চোখে,বাঁকা ঠোটে মনে মনে একটা বিশেষণের সদ্যজাত নাম আপনার উদ্দেশ্যে উগড়ে দিয়ে, আপনার পাশ থেকে হেঁটে দূরে সরে গেলাম। কিছুদূর গিয়ে আমি ঠিকই আপনাকে নিয়ে ই ভাবতে সময় ব্যায় করছি। আপনার দিকে ছুঁড়ে দেয়া বিশেষণটা নিয়েও আমি ভাবছি নতুন করে। আমি কেন আপনাকে পাগল বলে বিশেষায়িত করলাম?
চলতি পথে আপনি এই হাজারো মানুষের চলার পথে, একদম একলা একা বিশাল বিলবোর্ডের নীচে দাঁড়িয়ে খুঁজতে চেষ্টা করছেন, অপব্যায়িত সময়ের গতির তারতম্য, অথবা বোর্ড জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিজ্ঞাপনের চিত্র আপনাকে ভাবাচ্ছে অন্যকিছু! তাহলে পথচলতি আমি আপনাকে পাগল বলে বিশেষণ দিলাম কোন জ্ঞানের, বুদ্ধির জোড়ে? মনে মনে দেয়া বিশেষণ এখন মনে মনে ফিরিয়ে নিলেও কী আমি ক্ষমা পাবো মনের কাছে?
– আমি লজ্জিত। আমায় ক্ষমা করুন!
– আচ্ছা
– আর কিছু বলবেন না?
-নাহ্
– আপনি জানতেও চাইবেন না? আমি কেন আপনার কাছে ক্ষমা চাইলাম!
আপনি আমার দিকে সেই চোখ দিয়ে তাকালেন, যে চোখ এতক্ষণ ধরে বিলবোর্ডে আটকে ছিলো।আমার মনে হলো আমার বক্ষ ভেদ করে চোখ চলে গেছে আমার মস্তিষ্ক পর্যন্ত। আপনি পড়ে নিচ্ছেন আমার মন থেকে মগজের সবটুকু পৃষ্ঠায় লেখা শব্দাবলী…..আমি ভয়ার্ত চোখে আপনার মুখের পেশি গুলোর অকম্পিত অবস্থান দেখছি শুধু। আরো দেখছি আপনার আমার মাঝখানের দূরত্বটুকু। আপনার ঠোঁট সামান্য একটু বিস্তৃত হলো মাত্র। অবজ্ঞা, করুনা,উপহাস, নাকি আরো অন্যকিছু,,,,? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। অসহায়ের মত আমার পা টের পাচ্ছে দেবে যাচ্ছে চোরাবালির ভেতর। আমি সরে যেতে পারছিনা আপনার সামনে থেকে। যেন আপনি এখন আমার কৌতুহলের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়ে পড়েছেন। অথচ আপনাকে আমি চিনিইনা। দেখিনি আগে কোথাও কোনোখানে। আপনাকে মনে মনে পাগল বলা থেকে অপরাধ বোধ! আর ক্ষমা পাওয়ার প্রতীক্ষা, আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে স্বাভাবিকত্ব।
– এই এত এত মানুষের মধ্যে তুমি আমার কাছে এসে ক্ষমা চাইলে,,, আমি কি তোমাকে সাজা দিতে পারি? তুমি কী জানো কেউ আসলে ক্ষমাটাও ভালো করে চাইতে জানে না?,,, যারা ক্ষমা না চেয়ে বরং সাজা চায়! তারা বড্ড ভয়ংকর! তুমি ক্ষমা চাইতে শিখেছো বলে পরেরবার হয়ত শিখে যাবে এই ভুলটা আর করা যাবে না।
আমি আপনার কথা কিছু বুঝতে পারছি আবার বাকিটা ততধিক কৌতুহলে ডুবে যাচ্ছি চোরাবালির ভেতর। আমি পরের প্রশ্ন কি করব তাও বুঝতে পারছি না।
– তুমি আমাকে মনে মনে পাগল বলে আত্মদহনে ভুগছো। যাও…. ওটা স্বাভাবিক। কেউ কেউ আমার কান পর্যন্ত এসে বলে গেছে। আমি তাঁদের দিকে তাকিয়েও দেখিনি তারা কারা ছিলো? তুমি ক্ষমা চেয়ে কাছে এসে দাঁড়ালে,,,তাই তোমাকে দেখলাম। এখন তুমি বলোত! তুমি কি আমায় চেনো? না আমি তোমায় চিনি? উত্তরটা তুমিও জানো আমিও জানি…..
আমরা কেউ কাউকে চিনি না, তবুও ক্ষমা বা সাজা পাওয়া না পাওয়ার একটা সুযোগ ঠিকই সৃষ্টি হলো কোন কারনে? কি উদ্দেশ্যে…. আমিও জানি না….. অচেনা আপনি আপনার গতিপথে হেঁটে চলে গেছেন আপনার মত। আমার মস্তিষ্কে গেঁথে রইলো এই অলৌকিকের মত কথোপকথন…….
ছবিঃ নিজ
৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
হুম আবার পরে বুঝতে হইব। আসব আবার ।
বন্যা লিপি
বার বার পড়েন দাদা,,,খুব স্পষ্ট মূল বক্তব্য। এবং শিরোনামটাই একটা ক্লু।
মোঃ মজিবর রহমান
নিজের অজান্তেই নিজের মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে। কোথায় আমি আর যাবোই বা কোথায় এই অপ্রার্থিব থেকে।
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর লেখেছেন লিপি আপু ভাল থাথবেন——
সাবিনা ইয়াসমিন
মস্তিষ্ককে সব সময় নিজের নিয়ন্ত্রণে চালানো যায় না। অজানা অচেনা কেউ/কিছু কখন তার নিয়ন্ত্রণে এসে যায় বলা মুসকিল। লেখাটি বুঝতে পেরেছি, কিন্তু যা বুঝেছি বোঝাতে পারছি না।
❝ যারা ক্ষমা না চেয়ে বরং সাজা চায়! তারা বড্ড ভয়ংকর!❞
এখানে সম্মতি দিতে পারছি না। তারা ভয়ংকর হবে কেন? আমার যেটা মনে হয়, মানুষ যখন নিজেই বুঝতে পারে সে ক্ষমার অযোগ্য, তখনই হয়তো ক্ষমার বদলে সাজা চায়।
বন্যা লিপি
আমিও বোঝাতে পারব না…. ক্ষমার বিনিময়ে সাজা চায় যারা তারা *বড্ড ভয়ংকর* কেন বলেছি। অভিজ্ঞতা বলে অন্যকিছু। যে ভুলের ক্ষমা কিংবা সাজা ও কম পরে যায়! সে ক্ষেত্রে…… এসব প্রাণী*র(?) বেঁচে থাকাটাও আমার কাছে ভয়ানক।