আইফোনের প্রতি গভীর ভালবাসা….

আলমগীর হোসাইন ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, বৃহস্পতিবার, ০৫:৫৬:৫৩অপরাহ্ন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ২ মন্তব্য

 

আইফোনের প্রতি গভীর ভালবাসা….

(আমার এ লিখাটি দুই পর্বের ; প্রথম পর্ব এক বন্ধু অন্য পর্বে স্টিভ জবস )

ম্যানচেস্টার আমার যত ঘনিষ্ট বন্ধু আছেন ” রনি ” তাদের মধ্যে একজন ! অনেক স্মার্ট -সুদর্সন- শিক্ষিত -আধুনিক রুচিশীল বিলেতে বড় হয়ে উঠা ঐ বন্ধুটি ১০০ ভাগ প্রগতিশীল !!আমার মত ব্রান্ডের কাপড় চোপড়ের প্রতি তারও অনেক দুর্বলতা !!

যাই হোক এখন, ফোনের ব্যাপারে আসি ; সে ও আমি দীর্ঘ দিন থেকে আইফোন ব্যবহার করছিলাম !! হঠাত গত বছর সে সিধান্ত নিল; সে আর আপেলের ফ্যান থাকবে না !! আমি অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলাম !! আইফোন তো শুধু ফোন নয় ; পৃথিবীর সেরা প্রযুক্তি !! আমার লেখা -লেখি !! গান /ভিডিও এডিটিং সব আইফোন দিয়ে !! ব্যস্ত জীবনে ল্যাপটপ নিয়ে বসার সময় কই !! ঘুম থেকে উঠেই জীবনের ধান্দায় ব্যস্ত আমরা সবাই !! বেছে থাকার বাহানায় প্রতিনিয়তই ব্যস্ত !!প্রতিদিন যেমন খাবার -দাবার জরুরি , ঠিক তেমনি চলমান বিশ্বে এখন অনলাইন টাও সেভাবে জরুরি হয়ে পড়েছে !! আর নিজেকে অনলাইনে সহজে সম্পৃক্ত রাখে স্মার্ট ফোন !!

আইফোন নিয়ে আমার নিজেস্ব কিছু সুবিধার অসুবিধার কথা উল্লেখই করি !! আমরা যারা অনলাইনে কাজ করি ; তারা অনেকেই জানি ; আপেলের নিজেস্ব অপারেটিং সিস্টেম আছে ; যা অনন্য কোন কোম্পানি শেয়ার করতে পারেন না !!যাকে বলা হয় “iOS” !!

শুধু মাত্র এই অপারেটিং সিস্টেমের কারণে আপেলের কোন পন্যে ভাইরাস আক্রমন করতে পারে না ; তাছাড়া নিয়মিত আপডেড যারা অনুসরণ করেন তাদের আইফোন অনেক দ্রুত গতির ইন্টারনেট থাকবে !! টাচ স্ক্রিন অন্য যেকোন ফোনের চেয়ে কার্যকর !!

পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে আইফোন টু আইফোন ফ্রি কথা বলা ও দেখা যায় ( তবে ইন্টারনেট থাকতে হবে )!! আবারও বলছি আইফোন নিয়মিত আপডেট (iso) করে রাখা উত্তম !! যারা অনলাইনে বাংলা লিখতে চান ; তাদের জন্য আইফোন খুবই উত্তম বলে ; আমি মনে করি !! শুধু তাই নয় ; আমি সুদুর ম্যানচেস্টার বসে দেশের প্রায় সব চ্যানেলের খবর আমার আইফোন থেকে দেখি !!

অনেকের ধারণা ফ্ল্যাশ প্লেয়ার লাগবে লাইভ খেলা দেখতে হলে ; না কিছুই লাগবে না ; শুধু £২ পাউন্ড দিয়ে “puffin” আপস টা কিনে ফেলে সব সময় যে কোন টিভি /ভিডিও এখান থেকে ক্লিয়ারলি দেখতে ও শুনতে পারবেন !!

আমি আমার খুব ঘনিষ্ট তিন বন্ধুকে তিনটা আইফোন গিফট করেছিলাম ; এর পিছনেও একটা কারণ ছিল ; ঐ তিন জনের সাথে প্রায় প্রতি দিন আমাকে কথা বলতে হয় ; আমার ইতালি প্রবাসী কৃপণ বন্ধু মোনায়েম , দেশের বন্ধু জয় ও বীরমুক্তি যুদ্ধা আব্দুল হাই ভাইকে !!

আইফোন যেহেতু খুবই ব্য্বহুল তাই অনেক ইচ্ছা থাকার পরেও আরও কিছু বন্ধুদের দিতে পারি নাই ; দিলে হয়ত তাদের অনলাইনে অংশগ্রহন আরও বেশে হত ; এটা আমি ফিল করি !!

#### আইফোনের সব চেয়ে বড় অসুবিধা টা হচ্ছে !! আইফোনটা এমন তৈরী করা .. নতুন ফোন যখন বাজারে আসবে তখন পুরানো গুলো স্লো হয়ে যাবে ;অতিরিক্ত ব্যানিজিক ভাবে তৈরী আইফোনের এটা সবচেয়ে অসুবিধা !! অর্থাৎ আপনি যদি আপেলের ফ্যান হোন, ভাল সার্ভিস পেতে চান , তবে সব সময় নতুন আইফোন কিনতে হবে !! যা অনেক ক্ষেত্রে খুবই ব্যয় বহুল !!

লম্বা কিচ্ছা বলে ফেলাম, দুঃখিত !! আবার আসি রনির গল্পে, জি রনি আপেল ছেড়ে সামসংএর একটা দামী ফোন কিনলো !! আমি থাকে অনেক বার নিষেধ করেছিলাম !! সে শুনে নাই !!! তার পর লক্ষ্য করলাম !! সে তার ফেইস বুকে আর বাংলা কোন লিখা লেখে না !! আমি তার বেমারটা বুঝতে পেরে কিছু বলছিলাম না : সে দিন তার বাসায় যখন আড্ডা দিছিলাম তখন বলল বন্ধু আপেল ছাড়ার পর আর লম্বা কোন লিখাই লিখতে পরতেছি না !! সে এখন সিধান্ত নিল আগামী বছর আবার আপেলের ফ্যান হবে !! আমি শুনে অনেক খুশি হলাম !! আবার তার সুন্দর গান / কবিতা নিয়মিত দেখতে পাব !! ব্লা ব্লা …….

বন্ধুরা যেহেতু এই আপেলের মেইন ব্যক্তিটি ছিলেন “স্টিভ জবস” !! কাজেই বিভিন্ন সংগ্রহ থেকে তার সম্পর্কে সর্ব উচ্চ তথ্য নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি লেখার চেষ্টা করছি মাত্র !! তার ভালবাসা থেকেই আইফোনের জন্ম !!

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিল অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহন করেন প্রযুক্তি জগতের এই বিস্ময় ব্যক্তিত্ব। অ্যাপলসহ আরও কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছিল তারই হাত ধরে।

প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব স্টিভ জবসের সংক্ষিপ্ত জীবনকাহিনী !!!
ব্যক্তিগত তথ্য:

জন্ম: ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৫

মৃত্যু: ৫ই অক্টোবর, ২০১১

জন্মস্থান: সান ফ্রান্সিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া

আসল নাম: স্টিভেন পল জবস

বাবা: পল জবস, একজন যন্ত্রনির্মাতা ছিলেন !!

মা: ক্লারা জবস, অ্যাকাউন্টেন্ট ছিলেন তিনি
বিয়ে: লরেন (পাওয়েল) জবস (মার্চ ১৮, ১৯৯১)
সন্তান-সন্ততি: রিড জবস, এরিন জবস, ইভ জবস, লিসা ব্রেন্নান জবস !!

শিক্ষা: পোর্টল্যান্ডের রিড কলেজে পড়েছিলেন জবস, ১৯৭২ সাল পর্যন্ত
ধর্ম: বৌদ্ধ

অন্যান্য তথ্য:

১২ বছর বয়সে জবস এইচপি’র একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা উইলিয়াম হিউলেটের কাছে কিছু যন্ত্রপাতি চেয়েছিলেন স্কুল প্রোজেক্ট সম্পন্ন করতে। হিউলেট তাকে তার কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপের অফার করেন।

১৩ বছর বয়সে জবসের সাথে দেখা হয় অ্যাপলের অপর প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ওজনিয়াকের। ওজনিয়াকের বয়স তখন ১৮।

এক সেমিস্টারের মাথায় রিড কলেজ থেকে ড্রপড আউট হয়ে যান জবস।
১৯৯৭ সালে অ্যাপলে পুনরায় যোগ দেন জবস। সেসময় তার বাৎসরিক বেতন ছিল মাত্র ১ ডলার।

জবস খুঁজে পেলেন তার আসল বাবা-মা’কে। তার আসল বাবা আব্দুল ফাত্তাহ জান্দালি এবং মা জোয়ান স্কিবল। তিনি বিস্মিত হন যখন জানতে পারেন তার বোন বিখ্যাত নভেলিস্ট মোনা সিম্পসন।

টাইমলাইন:

১৯৭২: হাইস্কুলের পাঠ শেষ করে ভর্তি হন রিড কলেজে। কিন্তু এক সেমিস্টারের বেশি সেখানে পড়তে পারেননি।

১৯৭৪: আটারিতে ভিডিও গেম ডিজাইনের চাকরি নেন। একই বছর ভারত ভ্রমণের জন্য চাকরি ছেড়ে দেন তিনি।

১৯৭৬: বাসার গ্যারেজে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাপল। তার সাথে সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্টিভ ওজনিয়াক। একই বছর বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দেন অ্যাপল ওয়ান কম্পিউটারের সাথে।

১৯৭৭: অ্যাপল এ বছর নিয়ে আসে অ্যাপল টু কম্পিউটার।

১৯৮০: বাজারে আসে অ্যাপল থ্রি।

১৯৮৪: এ বছর অ্যাপল তৈরি করে বিখ্যাত ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার।

১৯৮৫: ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে অ্যাপল ত্যাগ করেন জবস। একই বছর নেক্সট নামক একটি কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নেক্সট।

১৯৮৬: জর্জ লুকাসের কাছ থেকে কিনে নেন অ্যানিমেশন স্টুডিও পিক্সার।

১৯৯৬: অ্যাপলের কাছে পিক্সার বিক্রি করে দেন জবস। অ্যাপলে পরামর্শক হিসেবে যোগ দেন।

১৯৯৭: অ্যাপলের অন্তর্বর্তীকালীন সিইও হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৮: অ্যাপল বাজারে আনে আইম্যাক।
২০০০: অ্যাপলের স্থায়ী সিইও হিসেবে নিয়োগ পান জবস।

২০০১: অ্যাপলের সাড়া জাগানো পণ্য আইপড এ বছর বাজারে আসে।

এপ্রিল ২৮, ২০০৩: অ্যাপল চালু করে আইটিউন্স স্টোর।

জুলাই ২০০৩: আইটিউন্সে অ্যাপল লোগোর ব্যবহার নিয়ে বিটলসের মালিকানায় থাকা অ্যাপল কর্পোরেশন স্টিভ জবসের অ্যাপলের বিরুদ্ধে মামলা করে। ২০০৭ সালে এ মামলার নিষ্পত্তি হয়।

২০০৩: জবসের শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে।
জুলাই ৩১, ২০০৪: টিউমার অপসারণের জন্য ডাক্তারের ছুরির নিচে যান তিনি।

২০০৪, ২০০৫, ২০০৭, ২০০৮, ২০১০: টাইম ম্যাগাজিনের তৈরি বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালি ব্যক্তির তালিকায় তার নাম আসে।

২০০৬: ওয়াল্ট ডিজনির সাথে একীভূত হয়ে যায় পিক্সার। ডিজনির বোর্ড অফ ডিরেক্টরে জোগ দেন জবস।

এপ্রিল ১, ২০০৬: ৩০ বছর পূর্ণ করে অ্যাপল।
২০০৮: বাজারে আসে ম্যাকবুক এয়ার।

জানুয়ারি ৫, ২০০৯: নিজের স্বাস্থ্যের কথা জানিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে এক খোলা চিঠি লিখেন জবস। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়গুলোতে তার স্বাস্থ্যহানী হয়েছে হরমোন সমস্যার কারণে।

জানুয়ারি ১৪, ২০০৯: জুন ২০০৯ পর্যন্ত মেডিকেল ট্রিটমেন্ট নেওয়ার জন্য ছুটির আবেদন করেন জবস। কিন্তু এতদিনে তার ধারণার চেয়েও খারাপ অবস্থায় চলে যায় তার শরীর।

জুন ২০, ২০০৯: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, এপ্রিলে জবসের যকৃত প্রতিস্থাপন করা হয়।

জুন ২৯, ২০০৯: স্টিভ জবস আবার কাজে ফিরেছেন বলে জানান অ্যাপলের একজন মুখপাত্র।

জানুয়ারি ২৭, ২০১০: জবস বিশ্ববাসীকে পরিচয় করিয়ে দেন আইপ্যাডের সাথে। যা পরবর্তীতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

জুন ৬, ২০১১: অ্যাপলের ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার কনফারেন্সে জবস আইক্লাউড চালুর ঘোষণা দেন।

আগস্ট ২০১১: যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দামি কোম্পানির স্বীকৃতি পায় অ্যাপল এবং এক্সন মবিল। এ সময় অ্যাপলের মূলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৪৫ থেকে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে।

আগস্ট ২৪, ২০১১: অ্যাপল সিইও’র পদ থেকে পদত্যাগ করেন জবস। টিম কুককে পদোন্নতি দিয়ে এই পদে নিয়োগ করা হয়।

অক্টোবর ৪, ২০১১: অ্যাপল তাদের নতুন স্মার্টফন আইফোন ৪এস’র ঘোষণা দেয়।
অক্টোবর ৫, ২০১১: মাত্র ৫৬ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন স্টিভ জবস।

যাই হোক – বিদায় নিচ্ছি আপেলের প্রতি আবারও আমার গভীর ভালবাসা !! যবনিকা ..

ধন্যবাদ —
আলমগীর হোসাইন
ম্যানচেস্টার ,ইংল্যান্ড !!

 

৭০২জন ৭০২জন
0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ