গল্পটির বিষয়বস্তু এই রকমঃ
প্রথমে যা পাওয়া যায় তা চিঠি থেকে। তার বিষয়টি নিচের মতো—
তাদের বাড়ি বেড়াতে আসে তার কাজিন এলিজা। এলিজা স্বল্পবয়সী একজন বিধবা। তার আগের স্বামী ছিলেন একজন নোবেল, এবং তার শিরচ্ছেদ হয় ফরাসি বিপ্লবে। এই দৃশ্য এলিজা নিজ চোখে দেখে এবং তার বর্ণনা জেইনকে বলে। এই বীভৎস বর্ণনা তাকে মানসিকভাবে আক্রান্ত করে। এলিজা দ্বিতীয় স্বামী খুঁজতে আসে তাদের বাড়িতে।
হঠাৎ করে স্বামীহারা মানে অসহায় হয়ে পড়া, আশ্রয়হীন হয়ে পড়া। তার থাকার স্থান নেই, অর্থ নেই। সে সময় মেয়েরা কাজও করত না। বিধবা এই মেয়েটির সেই একই অবস্থা।
এই গল্পে জেইন ফুটিয়ে তুলেছেন অল্প বয়সে বিধবা হওয়া নারীর অসহায়ত্ব সেই সময়ের সমাজে। কারণ, মেয়েরা বাবার সম্পত্তির ভাগ পেত না, আর সে সময় মেয়েরা চাকরিও করত না। ফলে এই অবস্থায় একজন নারীকে পুনরায় বিয়ের দ্বারস্থ হতে হয় তার ভরণপোষণ চালানোর জন্য। মাথার উপর ছাদ আর প্লেটে খাবারের ব্যবস্থা করতে নারী আবার ‘ডেসপারেট’ হয়ে পড়ে একজন সঙ্গীর জন্য।
সে ছিল আকর্ষণীয়, সুন্দরী, মিষ্টি ভাষী। যে কেউ তাকে পছন্দ করতে পারে অল্প মেলা-মেশার পরেই। কারণ, তার ছিল মানুষকে আপন করে নেওয়ার গুণ।
জেইনের দুই ভাই একই সঙ্গে তার প্রেমে পড়ে—জেমস এবং হেনরি।
আর গল্পটি হল—
একজন বিধবা, যার আছে প্রচণ্ডভাবে মানুষকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা। তার উদ্দেশ্য একটি নতুন স্বামী খোঁজা। সে ছিল সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী। সে জানত, যা সে চায় তা কেমন করে পেতে হয়।
তার একটি ষোল বছর বয়সী মেয়ে আছে। তার উদ্দেশ্য—যেমন করেই হোক মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়া, তারপর সে নিজেও বিয়ে করতে পারবে।
কিন্তু মেয়েটি বিয়েতে রাজি নয়। তার উক্তি—”বিয়েই একটা মেয়ের জীবনের সব কিছু নয়।” তার আরও এগিয়ে যেতে হবে।
এই গল্পে জেইন সেই সময়ের অর্থাৎ জর্জিয়ান সমাজে নারী নিয়ে মানুষের চিন্তাধারা তুলে ধরেছেন, এবং তার মনের ইচ্ছা সেই মেয়েটির উক্তি দিয়ে প্রকাশ করেছেন।
একটা মেয়ে কী চায়, কী চায় না—তার কোনও মূল্য নেই। মেয়েটিকে যেমন করেই হোক পার করে দেওয়াই পরিবারের কর্তব্য পালন বলে মনে করা হতো।
মেয়েটি স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু সেই দিকে মায়ের কোনও নজর নেই। সেই চিরাচরিত গৎবাঁধা একই নিয়মে মায়েরা চালিয়ে যেতে থাকে।
গল্পের মূল বক্তব্য—একজন মেয়ের ক্যারিয়ার বলে কি কিছু থাকতে পারে না? নিজের জীবন চালাতে সেই পুরনো নিয়ম—‘ঝুলে পড়ো কারও সঙ্গে’, বিয়ের মাধ্যমে।
গল্পের কনক্লুশন খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলা হয়। মেয়েটার শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল তা সে (জেইন) দিতে পারেনি।
“লেডি সুজান” ফিল্মের একটি দৃশ্য
এদিকে ফ্রান্স আর ব্রিটেনের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায়। তার তিন ভাই—হেনরি যোগ দেয় আর্মিতে, ফ্র্যাঙ্ক এবং চার্লস নেভিতে।
ভাইরা নিয়মিত চিঠি লিখত পরিবারের কাছে, মেরিন লাইফের বিবরণ দিয়ে।
জেইন অস্টিনের মনের জানালা খুলে যায় পৃথিবীকে জানতে। বিভিন্ন দেশের কোথায় কী হচ্ছে, দেশগুলো কেমন—তা জানার দ্বার খুলে যায়।
যেহেতু সে একজন বুদ্ধিমতী মেয়ে, তাই এগুলো সে গোগ্রাসে গিলতে থাকত। ভাইদের কাছ থেকে চিঠিতে জানতে চাইত অনেক কিছু—যা কিনা তার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করত। জ্ঞান অর্জনের পিপাসা ছিল তার অপরিসীম।
আর সেই জ্ঞান তার গল্পে প্রতিফলিত হতো।
জেইনের বাবার বুঝতে বাকি রইল না—মেয়ে তার অন্যরকম। তার আছে প্রতিভা। তার লেখালেখি ভিন্নধর্মী। সে অন্যরকমভাবে পৃথিবীকে দেখে।
গল্পে শুধু রোমান্স ফুটিয়ে তোলা নয়, আছে একটা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও।
সমাজটিকে পরিবর্তন করার ভাবনাও আছে তাতে। সে বুঝে নিয়েছিল—মেয়ে তার একজন বুদ্ধিমতী।
চলবে…
একটি মন্তব্য
নিতাই বাবু
খুব সুন্দরভাবে জেইন অস্টিনের লেখার পেছনের সামাজিক প্রেক্ষাপট ও নারীর অবস্থান তুলে ধরেছেন! সাবলীল ভাষায় গল্প আর ইতিহাসের মেলবন্ধন পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে। পড়ে সত্যিই ভালো লাগলো! আপনার জন্য নিরন্তর শ্রদ্ধা ও শুভকামনা থাকলো, দিদি।