জানা অজানা বিলাতের গল্পঃ অদ্ভুত এক “ক্লাস সিস্টেম” , ভিক্টোরিয়ান ব্রিটেন
অদ্ভুত এই ব্রিটেনের ক্লাস সিস্টেম। ধন দৌলত দিয়ে মানুষে মানুষে বিভক্ত একটা সমাজ।
“আমার সব চেয়ে বেশি সম্পদ আছে” আমি ‘আপার ক্লাস’
“আমার আপার ক্লাসের চেয়ে কম সম্পদ কিন্তু দরিদ্র দের চেয়ে বেশি ,আমি মিডিল ক্লাস “
“আর আমার সব চেয়ে কম সম্পদ আমি দরিদ্র”
এর মাঝেও আরও ভাগা ভাগি আছে। যেমন অ্যারোস্টক্র্যাট, উচ্চ মধ্যবিত্ত, নিন্ম মধ্য বিত্ত ,অতি দরিদ্র ইত্যাদি ।
ভিক্টোরিয়ান এরা
অ্যারোস্টক্র্যাট দের অঢেল ধন সম্পদ । তার সাথে রাজা রানীদের দেয়া ‘পদবি’ যেমন ‘লর্ড’ । তারা কেউ আবার লর্ড সভার সৌখিন মেম্বার ।
ইনাদের আবার অদ্ভুত আচার আচরণ মেনে চলতে হয়। যেমন কাঁটা চামুচ কি ভাবে ধরতে হবে, চা শব্দ করে খাওয়া যাবে না।
আরও আছে, এদের শখ কুকুর দৌড় ,ঘোড়ার দৌড় দেখা আর ফক্স হান্টিং ।
ভিক্টোরিয়ান এরায় এদের বেগম বা মিসেসরা দামি দামি ড্রেস পরে মাথায় নানান কিসিমের হ্যাট লাগিয়ে ঘোড়া টানা গাড়ি থেকে নেমে এই খেলা দেখতে আসতো।
এই নারীরা বাইরেই শুধু সাজানো মিসেস। ভিতরে তাদের কোন ক্ষমতা নাই।
আরও আছে, সমাজের উঁচু শ্রেণীর নারী আবার ফ্যেন্সি লম্বা গাউন পরে বল ড্যান্সে যেতো এটা তাদের আবার একটা বিনোদনের অংশ ছিল তার সাথে ফিউচার স্বামী খোঁজ করতো । এই ছিল উচ্চ বিত্ত দের জীবন ধারা।
কাজ? না তারা কোনও কাজ করতো না।
একটা কাজ ছিল হেরিটেন্স সূত্রে পাওয়া সম্পদ দিয়ে যাওয়া ।
প্রশ্ন আসতেই পারে এতো সম্পদ তারা বানায় কি করে? এরা কেউ বড় বড় মার্চেন্ট । দুনিয়া জুড়ে ছিল কলোনি । সেই কলোনি থেকে স্থানীয় লেবার বা স্লেভ লাগিয়ে কাঁচামাল উৎপাদন করে তা সস্তায় কিনে নিয়ে আসতো নিজ দেশে ।নিজ দেশের দরিদ্র মানুষকে কারখানায় সপ্তাহে ৫০ / ৬০ ঘণ্টা খাটতে হতো । সব ভাবেই শ্রম চুরি ন্যায্য মূল্য দেয়া থেকে বঞ্চিত করে। যার লাভ দিয়ে এই উচ্চবিত্ত রা ধনসম্পদের মালিক। সোজা কথায় শ্রম চুরি ।
অট্টালিকার পাশ দিয়ে হাঁটার সময় চোখের সামনে ভেসে উঠে ভিক্টোরিয়ান আমলের আপারক্লাস মানুষ গুলোর কথা । সামনে দিয়ে ঘোড়া টানা গাড়ি লম্বা গাউন পরা মেমসাহেব,হাতে সৌখিন ছাতা । পুরুষদের কালো কালো লম্বা কোট গায়ে, মাথায় কালো হ্যাট ,কালো চামড়ার পালিশ করা জুতো , হাতে ছড়ি । এরা এখানে এক সময় বাস করতো । তাদের কথা বার্তায় ছিল অন্যরকম।।
এদের ছেলেরা নামি দামী বোর্ডিং স্কুলে পড়ত, মেয়েরা বাড়িতে গভর্নেস এর কাছে নানান ভাষা শিখত । বাচ্চা রাকে প্রামে করে বাইরে নিয়ে বেড়াতে যেতো ন্যানি । বাটলার ,ড্রাইভার, ন্যানি, কুক,গ্রিহকর্মি সব কাজ করে দিতো ।
এই ছিল প্রাত্যাহিক জীবনের রুটিন আপার ক্লাস মানুষের । প্রত্যেকের আবার কান্ট্রি সাইডে ছিল বিরাট
বিরাট বাড়ি প্রচুর ল্যান্ড সহ।
আপার ক্লাস হতে হলে থাকতে হবে উপাধি । লর্ড, নাইট এই সব ,তার সাথে লোকাল রাজনীতির সাথে সম্পর্ক এবং কেউ কেউ হাউস অব লর্ড এর সদস্য।
তা ছাড়া ১০৬৬ সালে Normyan এর আমলে অ্যারস্টক্র্যাট শ্রেণীর সৃষ্টি হয়। কিছু মানুষকে অনেক অনেক জমি দিয়ে দেয়া হয় সে সময় । এই জমি থেকে রেন্টেড ইনকাম , আর শহরে থাকা একাধিক বাড়ির মালিক ছিল তারা এবং তা থেকে ভাড়া পাওয়া যেতো এই ভাবেও আপার ক্লাস বা উচ্চবিত্তের সৃষ্টি।
ক্লাস সিস্টেম নির্ভর করে ইনকাম ,পেশা, শিক্ষা, জেন্ডার আর রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা ইত্যাদির উপর।
অনেক ইন্ডাস্ট্রি হওয়ার ফলে চাকুরীর সৃষ্টি হয় ।
শিক্ষা এবং তার সাথে ভালো ইনকাম থাকলে সে হয় মধ্য বিত্ত।
আবার একজন buildar প্রচুর ইনকাম করে কিন্তু তার শিক্ষা না থাকার ফলে সে মধ্যবিত্ত হতে পারবেনা। সে সময় ১৫% -২৫% মধ্যবিত্ত ছিল। ৬০% ৭০% ছিল ওয়ার্কিং ক্লাস এবং ৩০% ছিল অতি দরিদ্র ।
চাল চলন, কথার উচ্চারণ, শব্দের ব্যাবহার , রুচি, পোশাক এই সব দিয়েও এদের মধ্যে পার্থক্য দেখা যেতো।
তবে কালের পরিবর্তনে অনেক কিছু চেঞ্জ হয়ে যায়। এখন আর কলোনি নাই। ইন্ডাস্ট্রি নাই ।
ফ্রান্সের রেভুলেসানের পর সবার টনক নড়ে। যে কোন সময়ে শ্রমিক বিদ্রোহ এখানেও হতে পারে। ফ্রান্সের রাজা সহ অনেক নোবেল কে হত্যা করা হয় ।
ব্রিটেন এবং ফ্রান্সে বিখ্যাত কিছু চিন্তাবিদের উদ্ভব হয়। তাদের চিন্তাধারা হল সরকারের কাজ শুধু দেশ রক্ষা আর দেশ দখল নয়। সাধারণ প্রজাদের সুযোগ দিতে হবে। তাদের জীবনমান উন্নত করতে সংস্কার করতে হবে আইন দিয়ে রীতিনীতি চেঞ্জ করে।
লেবার পার্টি আর লিবারাল পার্টির জন্ম হয়। রাজার ক্ষমতা খর্ব হয় । গণতন্ত্রের জন্ম হয়।
মন্তেস্কু বলেছিলেন “জন্মের সময় সব মানুষ এক থাকে ,কিন্তু ক্রমাগত ভাবে হাতে পায়ে শেকল পড়তে থাকে সমাজের অনেক বাধা দিয়ে। আর শেকল খুলতে আইন দরকার” ।
বর্তমান সেঞ্চুরিঃ
সুযোগ পাওয়াতে দরিদ্র শ্রেণী উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তার সাথে প্রফেশনাল জব। দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে মধ্যবিত্ত শ্রেণী । যে কোন সেবা পেতে বা চিকিৎসা পেতে সবার সমান অধিকার । জেন্ডার ইকুলিটি আইন পাশ হয়। নারী তার অধিকার পায়।