পৃথিবীর পথে পথেঃ স্পেন এবং জিব্রালটার ,বেড়ানোর সময় ২০২২  (১ম পর্ব )

 

 

“Like Spain I am bound to the past”

 

হারিয়ে যাওয়া ইসলামি সভ্যতার দেশ  স্পেন।

লন্ডন থেকে জিব্রালটার ফ্লাইটে ২.৫০ ঘণ্টা লাগে। জিব্রালটার স্পেনের সাথে লাগানো ছোটো একটা স্থান। যেখানে বেশির ভাগ স্থান জুড়ে আছে একটা উঁচু রক । কিন্তু এটা ব্রিটেনের অংশ ভুক্ত।

স্পেন বারে বারে  নিতে চাইলেও পারছেনা । কারন এখান থেকে আফ্রিকার দূরত্ব মাত্র নয় মাইল। তাই  কে ছাড়ে । যুদ্ধও হয়েছে একসময়। পারেনাই স্পেন।আফ্রিকার সাথে ব্যাবসা বাণিজ্যের জন্য এটা একটা পোর্ট সিটি ।

স্পেনে আসার জন্য এই পোর্টে নামলাম ।তাই যেমন জিব্রালটার দেখলাম তার সাথে স্পেন দেখলাম এবং একদিনের জন্য এই জিব্রালটার প্রণালী পার হয়ে মরক্কোও ঘুরে এসেছিলাম ।

 

 

স্পেনে যাওয়ার প্রধান কারন ছিল প্রায় সাড়ে সাতশত বছরের ইসলামি রাজত্বের চিহ্ন দেখা ।

স্পেন ইউরোপিয়ান একটি দেশ কিন্তু আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। মেডিটেরিয়ান ওয়েদার যাকে বলা হয়। ভূমির গঠন অনেকটা মরুভূমির মতো। গাছপালা মরক্কোর সাথে মিল। এখানেও মরক্কোর মতো প্রচুর কমলালেবু আর অলিভ জন্মায়। নর্থ আফ্রিকা থেকে মাত্র একটা প্রণালীর ব্যাবধান।

‘Algeceros’ যা জিব্রালটার পোর্ট থেকে বেশ কাছে সেখানে সুন্দর একটা এপার্টমেন্ট আমরা ভাড়া করেছিলা ৬দিনের জন্য। সুন্দর সাজানো গোছানো কিচেন, সহ সব কিছু দিয়ে ফুলি ফার্নিস । সবচেয়ে সুন্দর ছিল এর ঝুলন্ত বারান্দা যেখান দিয়ে ‘জিব্রালটার রক’ এবং ‘পোর্ট আলজিয়ারস’ দুইটাই দেখা যায় ।

ফুলগাছের সাথে আমাদের দেশের বেশ মিল আছে। যেমন কলাবতী, কলা,পেপে, করবি, জবা আর হাসনাহেনা গাছ বেশ চোখে পড়লো।

রাস্তা ঘাট যাতায়াত ব্যাবস্থা খুব উন্নত। মানুষজনের আর্থিক অবস্থাও ভালো।মানুষ জন ইংলিশ জানেনা বা জানলেও বলতে চায়না ।ভালো ওয়েদারের জন্য এখানে অনেক ভিজিটর আসে প্রতিবছর । ইসলামি শাসন আমলের পুরাতন ইতিহাস আর সোনালী ঐতিহ্য দেখার জন্য আসে অনেক টুরিস্ট।

স্পেন কে ইসলামি রাজত্বের সময় বলা হতো ‘আল-আন্দালুস’ ।

 

 

 

৭৫০- ১৪৬২ ADপর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাতশত বছর এখানে ইসলামি রাজত্ব ছিল। শুধু রাজত্বই যে ছিল তাই নয় ছিল অনেক উন্নত এবং জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রসর ।

 

 

আমরা দেখতে গেলাম ‘আলহাম্বারা দুর্গ আর প্যালেস’ । আমাদের এপার্টমেন্ট থেকে ব্রেকফাস্টের পর সকালের বাসে রওনা দিলাম সেই দুর্গ প্যালেসটি দেখতে। দুই ঘণ্টার মত সময় লাগলো । লাক্সারি বাসের জানালা দিয়ে স্পেন দেখতে দেখতে চললাম। দুই ধারে মানুষ জন বা বাড়ি ঘর খুব কম। হিলি এরিয়া । তেমন চাষ বাস নেই । মাঝে মাঝে বাড়িঘর আছে যা খুব সুন্দর।

বাস এসে থামলো একটা শহরে। শহরটা আধুনিক। লোকাল বাস নিয়ে একটু পরেই দুর্গ চলে আসলো ।

রাস্তা পার হলেই বিরাট বাগান । তার পেছনে দেখা যাচ্ছে দুর্গের উঁচু প্রাচীর। আমরা উঠতে লাগলাম ‘সাকিবা হিল’ এর হিলি রাস্তা দিয়ে প্রধান গেটের দিকে। পাহাড়ের উপর করার উদ্দেশ্য দূর থেকে সমুদ্র যোগে কোনো শত্রু জাহাজ আসছে কিনা তা নজরে রাখা। কারন কাছেই সমুদ্র । প্রধান গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম।চারদিকে উঁচু পাঁচিলে কামান ফিট করার ব্যাবস্থা দেখলাম। চারদিকে বিরাট বাগান সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এক সময় ।  ১২৩৮ সালে মুহাম্মাদ ইবনাল আহমারের নির্দেশে এর কাজ আরম্ভ হয়। এটি ‘আলান্দালুস রাজ্যের’ সর্বশেষ স্থাপনা । ইসলামি রাজ্যের একটি চমৎকার আর্কিটেক্টের উদাহরণ।

‘স্যামুইল ইবনে নাগাহিরিল্লাহ’ প্যালেস ছিল এটি।ইউসুফ ১, মুহাম্মদ ৫ এখান থেকে শাসন কার্জ পরিচালনা এবং বসবাস করেছেন ।  ৬টি প্যালেসের সমন্বয়এটি গঠিত । তার সাথে রাস্তা,  মসজিদ,হাম্মান (পাবলিক বাথ), আর্টিস্ট  দের বাড়ি ঘর এবং ওয়ার্কশপ তার সাথে চমৎকার ওয়াটার সাপলায়ের ব্যাবস্থা যা কিনা সেই মেডিভ্যাল পিরিয়ডের সময়ে অ্যাডভান্স ছিল।

“Tales of the Alhambra” ১৮৩২ সালে Washington Irving লেখা বই টি প্রকাশের পর আলহাম্বারা দুর্গ আর প্যালেস  সম্বন্ধে ইন্টারন্যাসানাল ইন্টারেস্ট বেড়ে যায় পৃথিবী ব্যাপী ।

বর্তমানে এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অন্তর্ভুক্ত ।

সব কিছু দেখার পর ফিরে আসলাম আমাদের এপার্টমেন্টে । পরের দিন যাবো জিব্রালটার ভিজিট করতে।

লেখকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস, লন্ডন

 

২৩১জন ২২৬জন
0 Shares

২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ