পৃথিবীর পথে পথেঃ চীন, সময় ২০০৫

ভ্রমণ কাহিনী

“A journey of a thousand miles begins with a single step”

“জ্ঞান অর্জন করার জন্য সুদূর চীনেও  যাও”

সময় টা  হল ডিসেম্বর, ২০০৫ , আমাদের টিম আমার দুই মেয়ে আর আমরা নিজেরা দুইজন হিথরো এয়ার পোর্টের “চাইনা এয়ারলাইন্স” এর  সন্ধ্যার  প্লেনে চেপে বসলাম । সারা রাত ঘুমের মধ্যে কাটিয়ে  দিয়ে  সকালে যখন উঠলাম তখন চীনের মাটিতে। নন স্টপ ছিল জার্নি। বেজিং এয়ারপোর্টে সাজানো ছিল বিশাল ‘চীনের প্রাচীর” এর ছবি দিয়ে, আর বরফে ঢাকা মাউন্টেন ।  যা দেখলেই মন কাড়ে।আমরা চীনে গিয়েছিলাম ‘ইন্তারপিড ‘ এর মাধ্যমে। একদিন বেজিং এ থেকে পরের দিন আর একটা ছোটো প্লেন নিয়ে যেতে হবে উনান প্রদেশের রাজধানী কুন্মিং এ।সেখানে মিলিত হতে হবে আমাদের গ্রুপের সাথে। প্রথম দিন টা আমরা নিজেদের মতো ঘুরতে বের হলাম। আর প্রথম যাওয়ার স্থান ছিল ‘চীনের প্রাচীর’ ।

গাছপালা দিয়ে ঢাকা একেকটা পাহাড় আর পাহাড়ের চুড়া  দিয়ে চলে গেছে সাপের মতো এঁকে বেঁকে চীনের প্রাচীর। আমরা একটা ক্যাবেল কার দিয়ে চলে গেলাম প্রাচীরের কাছে। সেখানে নেমে হাটা শুরু করলাম প্রাচীরের উপরের রাস্তা দিয়ে। একবার উপরে উঠা আবার একবার নিচে নামা। ।এভাবেই চলে গেছে লম্বা প্রাচীর আর তার উপরের রাস্তা। মাঝে মাঝে দুর্গোর মতো ঘর যেখানে পাহারাদার থাকতো কামান নিয়ে শত্রু মুকাবেলা করার জন্য ।অর্থাৎ সীমানা কন্ট্রোল ।

৭ম সেঞ্চুরি BC প্রথম কাজ আরম্ভ হয়। পরে Qin Shi Huang ২২০ -206 BC ,চীনের প্রথম এমপরার এর সময় এবং পরে বিভিন্ন ডাইনেস্টির হাত ধরে এর আরও শাখা প্রশাখার বিস্তার হয়। মিং ডাইনেস্টি র সময় (১৩৬৮-১৬৪৪) সবচেয়ে ভালো নিরাপত্তা সহ কাজ হয়।

চীনের প্রাচীরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গল দের আক্রমণ প্রতিহত করা ।তাছাড়া সিল্ক রুট অর্থাৎ ব্যাবসা বাণিজ্যের প্রসারের জন্য একটা নিরাপদ ব্যাবস্থা করা।

চীনের প্রাচীরের সাইজ লম্বায় ১৩,১৭০.৭০ মাইল। বর্তমানে এটি একটি বিখ্যাত টুরিস্ট  স্পট  এবং Unesco World Heritage  সাইটের অন্তরভুক্ত ।

পরের দিন আমরা একটি লোকাল প্লেনে বেজিং থেকে উনানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যেহেতু প্লেন খুব উপর দিয়ে যায়নি কারন ইন্টারনাল  ফ্ল্যাইট নিচ দিয়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল ‘Three Gorges Dam”।  জানালা দিয়ে দেখতে দেখতে গেলাম ।

অল্প সময়ের মধ্যে আমরা উনানের রাজধানী কুনমিং এ এসে নামলাম ।সেখানে হোটেলে আমরা মিট করলাম “ইনটারপিড ” ট্র্যাভেল অর্গানাইজার এর   দল লিডার ( তিনি একজন অস্ট্রেলিয়ান)  যিনি  এই কাজের জন্য চীনেই বসবাস করেন।  সেখানে অপেক্ষা করছিল  গ্রুপের বাকি সদস্যরা ।বেশির ভাগ টুরিস্ট কানাডা,ইউরোপ আর আমেরিকান । কুনমিং এর স্টোন ফরেস্ট দেখলাম আর সিটি টা ঘুরলাম ট্রামে। একেক টা প্রাদেশিক রাজধানী যেন একেকটা উন্নতদেশের রাজধানীর মতো ।

চারদিকে শুধু উন্নয়ন আর উন্নয়ন। চোখ ধাঁদানো সব কারবার আর যোগাযোগ ব্যাবস্থা। উনানের রাজধানী কুনমিং থেকে একটা কোষ্টারে  আমাদের গ্রুপ রওনা দিলো ‘ডালির’ উদ্দেশ্যে । সেখানে একরাত থেকে  পরের দিন আরও উত্তরে লিজ্যাং গেলাম।

লিজ্যাং তিব্বত লাগানো একটা পর্বত আর পাহাড় বেষ্টিত সিটি । এখানে বাস করে পাহাড়ি ট্রাইব। প্রতিদিন বিকালে সব ট্রাইব এখানে একত্রিত হয়ে বিরাট একটা বৃত্তাকার হয়ে   গান করে আর নাচে।  নিজেদের চিত্ত বিনোদনের মাধ্যম  ।  আশপাশের রিসোর্ট এর মানুষ বারান্দায় বসে তাদের নাচ দ্যাখে  বা তাদের নাচে যোগ দিয়ে তারাও নাচে।পরনে সবার ট্র্যাডিশনাল পোশাক আর গলায় সিলভারের জুয়েলারি ।  এ এক অভুতপূর্ব দৃশ্য। যেন মনে হচ্ছে তাদের কোনো কষ্ট নাই । যা আছে তা নিয়েই  তারা হ্যাপি ।

Shangri-La বা স্যাংরি -লা

খুব সকালে ব্রেকফাস্টের পর আর একটা কোষ্টারে করে আমরা রওনা দিলাম আরও উত্তরে । গাড়ী পর্বত আর পাহাড়ি পথ ধরে উপরে  উঠতেই আছে। উঠছে তো উঠছেই। খাড়া পাহাড় আর পাহাড়ের মাঝ দিয়ে রাস্তা । লিজাং সিটি থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার  দূরত্বে  প্রায় ১৭৫  কিলোমিটার  পাড়ি দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম  সাং -রি-লার উদ্দেশ্যে  ।   পাহাড় থেকে পাথর ল্যান্ড স্লাইড হয়ে নিচে যাতে গড়িয়ে না পরে তাই দুই পাশ মোটা তারের নেট  দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে। দুই ধারে মানুষের বাড়ি ঘর তেমন নাই ।কোথাও থাকলেও কোনো মানুষ বের হতে বা প্রবেশ করতে  দেখা যাচ্ছেনা। সুং সাং নীরবতা। নারী পুরুষ মনে হয় ক্ষেতের কাজে  চলে গেছে। মাইল এর পর মাইল শেষ করে আমরা এসে পড়লাম ‘সাং রে লা’। অর্থাৎ ‘মর্ত্যের স্বর্গ’ । যা কিনা কুনলুন মাউন্টেনের দক্ষিণে ।সাং রে লা একটা mystical, hamonious স্থান । সমস্ত পৃথিবী থেকে পৃথক একটা আর্থলি প্যারাডাইস । যেখানে তিনটি বৃহৎ নদী  ইয়ানচি,মেকং আর স্যালুইন নদী প্যারালাল ভাবে হিমালয় থেকে বের হয়ে বাঁক নিয়ে দক্ষিণে নেমে গেছে। পেছনের কারন জিওগ্রাফিক্যাল আর জিওলজিক্যাল গঠন। স্যাং  -রি-লা  ৩,৪৫০ মিটার উঁচুতে। ২০০১ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক জেমস হিলটন তার বিখ্যাত বই “Lost Horizon” বর্ণনা করেন একটি প্যারাডাইস যার পাহাড়ের ধারে জঙ্গলে ফুটে আছে ” রটে ডান  ডান” ,  ম্যাগ্নেলিয়া  আর ক্যামেলিয়া । তার উল্লেখিত নাম সাং- রি -লা ব্যাবহার করে এই স্থান টিকে সাং -রি-লা বলে ডাকা হয় যা এখন একটি বিখ্যাত টুরিস্ট ডেসটিনেসান । এর নীরব শান্ত, সবুজ ঘাস আর ঘন জঙ্গল বেষ্টিত পাহাড়, নদী,  ঝরনা, লেক আর রেইনবোর সমাহার দেখে তিনি বলেছিলেন “পৃথিবীর স্বর্গ” ।আর আমারাও তাই দেখতে দেখতে আর ক্যামেলিয়া ফুল গাছের পাশে বুনো ছাগলের পাহাড় বেয়ে উঠা নামা করে ঘাস খাওয়া দেখতে দেখতে হাঁটে চললাম ।

এখানে পাহাড়ের গা ঘেঁষে ঘেঁষে ছোটো ছোটো ভিলেজ যার বাড়ি ঘর কাঠ দিয়ে তৈরি। এখানে ২০ টি ইথিনিক গ্রুপ আছে। স্নো ক্যাপ মাউন্টেন meili আর উবেং ভিলেজ আর হাবা ভিলেজ কাছাকাছি।

টাইগার লিপিং গোর্জ

লিজাং থেকে দেড় ঘণ্টা ড্রাইভ করে ৬০ মাইল উত্তরে  এই “টাইগার লিপিং গোর্জ” ।  লিজাং এর  পশ্চিমে  তিব্বত   আর পুর্বে সিচুয়ান ।

Jinsha রিভার যা কিনা ইয়াঞ্ছি রিভারের একটা প্রায়মারী  উপনদী । এটি একটি প্রটেক্টেড এরিয়া যা প্যারালাল তিন রিভারের এরিয়ার মধ্যে পড়ে । ৩৭৯০ মিটার গভীরে প্রায় ২৫ কিলো মিটার লম্বা এই গোর্জ টি পৃথিবীর একটি অন্যতম বিখ্যাত গোর্জ অতি ন্যারো এবং গিরি খাদের মধ্য দিয়ে যখন এটি দ্রুত প্রবেশ করে প্রবাহিত হয় তখন এর গর্জন ধন্বী,   কাছ দিয়ে প্লেন চলার মতো বিকট শব্দের উৎপত্তি ঘটায় । আমি খুব কাছাকাছি নেমে গিয়েছিলাম ।  হাবা স্নো মাউন্টেন আর ড্রাগন স্নো মাউন্টেন  থেকে এর প্রবাহ নেমে এসেছে। ২০০৩ সালে সাং -রি -লা কে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করা হয়।

 

এখানে আমরা মাউন্টেন ট্রেকিং করে টি হর্স রোড ধরে হাঁটা শুরু করলাম গাইডের পেছন পেছন। পথে তিনটি ঝর্না দেখলাম নিচে নামছে । উঁচু পাথুরে ন্যারো পথ একটু ভুল করলেই পা  সড়কে একে বারে গোর্জর মধ্যে গড়িয়ে গড়িয়ে চলে   যাবো। টি হর্স রোড ধরে সেদিনও যাচ্ছিলো এক দল ঘোড়া আর তাদের পিঠে ব্যাবসার মালামাল । টুং টাং গলায় বাঁধা ঘণ্টা বাজছে আর তারা জানান দিচ্ছে তাদের চলা। আমরা যে গেস্ট হাউসে উঠলাম সেটাও সেই  প্রাচীন কাল থেকে ব্যাবসায়ী দের বিশ্রামের জন্য করা। চার দিকে কাঠের ঘর কাঠের বেড়া আর ছাদ টালির ।

কাছাকাছি একটা বাড়িতে ঢুঁ দিলাম দেখার জন্য কি ভাবে তারা থাকে তা দেখতে। কোনো কিছু মনে না করেই আমরাকে ভিতরে নিয়ে গেলো । একদিকে শূকর থাকার খোঁয়াড়। দুই তিনটা সবার ঘর। একটা রান্না ঘর। রান্না ঘরের  মাঝ খানে  একটা চুলো । ওপেন ফায়ার । খুব বেসিক। সাধারণ জীবন যাত্রা।নিচে গাঁ গাঁ শব্দ করে ছুটে চলেছে সেই ইয়াঞ্ছি রিভারের  উপনদী টি ।

হাবা ভিলেজ

টাইগার লিপিং গোর্জে একদিন একরাত থেকে পরের দিন সকালে আমরা গাইড সহ রওনা দিলাম হাবা ভিলেজের উদ্দেশ্যে । রাস্তা আরও উপরে আরও পাহাড়ি । মোট চার ঘণ্টার পথ । পাহাড়ের গাঁ কেটে ন্যারো রাস্তা,খুব বিপদ সঙ্কুল ।একটু এদিক ওদিক হলেই গাড়ী নিচে খাদে গিয়ে পড়বে। স্নো ক্যাপ  হাবা মাউন্টেনের পাদদেশে এই ইন্টারেস্টিং ছোটো শহরটি । নাক্সি, হুই, এবং ইয়ি ট্রাইবের বসবাস ।হুই মুসলমান ধর্ম অবলম্বী ।কিছু তিব্বেতিয়ানও এখানে বাস  করে।

হাবায় এসে আমরা হাইকিং করতে পাহাড়ের উপরে উঠা  শুরু করলাম। পাহাড়ের গাঁয়ে একটা চীনা ডিজাইনে মসজিদ দেখলাম। পাহাড়ের গা ঘেঁষে  ফসল । যেখানে যেটুকু চাষ উপযোগী জমি আছে  সেখানেই ফসল উৎপাদন হচ্ছে। সেখানে একটা প্রাইমারী স্কুলের পরিচালকের আয়োজনে আমাদের দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। অনেক রকমের সবজি আর ভাত। বিনিময়ে  কিছু  ডোনেসান স্কুলের উন্নয়েনের জন্য। পাহাড় থেকে হাইকিং করে এসে আমাদের খুব ক্ষিদে লেগেছিল তাই সব কিছু মজা করেই খেলাম  ।  গাইড একজন অস্ট্রেলিয়ান কিন্তু ফ্লুয়েনট চাইনিজ ভাষা বলতে পারে । সে না থাকলে এই সব রিমোট  স্থানে একলা আসা বা মানুষের সাথে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়তো ।কারন কেউ ইংলিশ বলতে পারেনা।  অনেক ধন্যবাদ ‘ইন্টারপিড ‘  কে যাদের জন্য এই সুন্দর সাং -রি-লা দেখতে পারলাম ।

খাওয়া শেষে ফেরার পালা ।  আর কোথাও থামা থামি নয় সোজা নিচে নামা ডালি তে এসে এক রাত থাকার পর সোজা প্লেন ধরে কুনমিং আর সেখান থেকে বেজিং । তবে ডালিতে আমরা একটা লোকাল মার্কেটে গিয়েছিলাম। লোকাল মানুষের সাথে মিলে মিশে কিছু কেনা কাটা করলাম । একটা ভালোই অভিজ্ঞতা হল ।ডালি তে  আমরা আমাদের ট্র্যাভেল গ্রুপ টি একটা তিব্বেতিয়ান রেস্টুরেন্টে এক সঙ্গে রাতের ডিনার করলাম। সে একটা এলাহি খানা পিনা।

Forbidden cityঃ

কুনমিং থেকেই আমরা যে যার রাস্তায় চলে গেলাম। আমরা অর্থাৎ আমার পরিবারের চারজন একটা ছোটো প্লেনে বেজিং আসলাম । এটা আমাদের শেষ দিন । এই দিনটায় আমরা সকাল সকাল চলে গেলাম ফরবিডেন সিটি দেখার উদ্দেশ্যে বেজিং এর আন্ডার গ্রাউন্ড ট্রেন ধরে। চীনের চারদিকে শুধু উন্নয়নের ছড়া ছড়ি । চওড়া রাস্তা ,বিরাট বিরাট ঝাঁ চকচকে শত শত হাইরাইজ এপার্টমেন্ট বিল্ডিং আর মানুষের মুখে হাসির  এক্সপ্রেসান।

আন্ডার গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে একেবারে কাছেই ফরবিডেন সিটির বিরাট চত্বর । প্রধান ফটকের উপরে ঝুলছে ‘মাউসেতুং’ এর একটা বিরাট ছবি। হাজার হাজার দর্শকের ভিড় । সে এক দেখার মতো দৃশ্য। দলে দলে ভাগ করা এবং একেক দলের আলাদা পতাকা  নিয়ে গাইড সামনে হাঁটছে আর সেই দলের টুরিস্ট  সেই পতাকা  অনুসরণ করছে। নাহলে হারিয়ে যাবে ভিড়ের মধ্যে। কত কত যে দল । প্রধান গেট খুলে গেলো আর আমরাও ভিতরে ঢুকলাম। একেকটা বিল্ডিং শেষ না হতেই আর একটা চত্বর আরম্ভ আর ওপারে আর একটা বিল্ডিং। মাঝখানে বিরাট ফুটবল খেলার মাঠের সমান চত্বর। একটা করে আমরা পার  হচ্ছি । আর পরবর্তি আর একটা চত্বর আরম্ভ হচ্ছে। এই ভাবে একের পড় এক চত্বর আর চার চালা বেষ্টিত বিরাট বিরাট বাংলো আকারের ঘর। পার  হতে হতে একেবারে শেষের দিকে এম্পারার দের  রেসিডেন্সিয়াল ঘর। সেখানে বাগান আছে আর আছে নিরাপত্তা বেষ্টিত রাজা দের থাকার ঘর।

ঢুকতে ডান দিকে কঙ্কুবায় দের থাকা আর শোবার ঘর। বাঁদিকে বিরাট এলাকা জুড়ে মিউজিয়াম এবং  পাঁচশত বছরের রাজাদের নিজস্ব ধন দৌলত এবং ব্যাবহৃত জিনিস রাখার ঘর। এই বিরাট এলাকা জুড়ে প্যালেসের চারদিকে কিত্রিম   নদী করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য।

১৪২০ সালে মিং ডাইনেস্টিতে  এর বানানোর কাজ শেষ হলে বসবাস আরম্ভ হয় এবং শেষ হয় ১৯২৪ সালে Quing ডাইন্যাসটিতে এবং এমপরার পুইয়ি ( Puyi) হলেন শেষ এমপরার ।

১৪ বছর ধরে এর নির্মান কাজ চলেছিল।১০০,০০০ স্কিল আর্টিস্ট এবং ১ মিলিয়ন লেবার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল কাজ করার জন্য। সবগুলো প্যালেস  মূল্যবান Phoebe Zhennan উড দিয়ে তৈরি যা আনা হয়েছিল চীনের দক্ষিণ পশ্চিম জঙ্গল থেকে । শীতকালে যখন রাস্তা আইস হয়ে যেতো গড়ানোর সুবিধার জন্য তখন তা গড়িয়ে গড়িয়ে আনা হত। প্রত্যেক টি পিলার এই গাছের আস্তো  গুড়ি দিয়ে তৈরি। মোট ৯০ টি প্যালেস, ৯৮০ বিল্ডিং কোয়াটার এবং মোট ঘর  ৮,৭২৮ টি । এখানে মোট ২৪ জন এমপরার থেকেছে। প্রতিরক্ষার জন্য কেউ এম্পরারের অনুমতি ছাড়া ইচ্ছা মতো বাইরে যেতে  পারত না বা বাইরের কোনো লোক ভিতরে ঢুকতে পারত না। কোন গাছ নাই প্যালেস গুলোর চত্বরে ,কারন পরিষ্কার যেন দেখা যায় সব কিছু , গাছের আড়ালে কেউ যেন লুকাতে না পারে। পাখি ছাদে যেন না বসে তাই টাইলস গুলো পিচ্ছিল ভাবে বানানো । প্যালেস গুলো লাল রঙের এর অর্থ “ক্ষমতা,হ্যাপিনেস,সম্পদ এবং সন্মান” ।এই বিল্ডিং গুলো প্রত্যেকটি কাঠের তৈরি এমনকি পেরেকও কাঠের । কোনো মেটাল বা ইটের ব্যাবহার নেই ।

” The last Emperor” ফিল্ম টি এখানে চিত্রায়িত হয়।  ‘ইমপরার থেকে সিটিজেন’  ১৯৬৪ -৬৫ পাবলিশ করার অনুমতি দেয়া হয় ইংরেজিতে ।

বর্তমানে এটি একটি প্রধান টুরিস্ট সাইট। ১৪ মিলিয়ন ভিজিটর এখানে ভিজিট করতে আসে প্রতি বছরে । ১৯৪৭ সালে এই ফরবিডেন সিটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এর অন্তর্ভুক্ত হয়।

সারা দিন লাগলো আমাদের এই ফরবিডেন সিটি সম্পুর্ন ভাবে দেখতে। এর বিরাটত্ব না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা । সন্ধ্যায় ছিল আমাদের ফিরতি ফ্লাইট । মনে মনে ভাবলাম সব কিছুর একদিন শেষ হয় ।

লেখকঃ হুসনুন নাহার নার্গিস, লন্ডন

 

 

 

 

 

 

২৯৬জন ২৮৫জন
0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ