দয়া করে আমার লেখাটি কেউ হালকা ভাবে নিয়ে রসাত্মক মন্তব্য করবেন না। আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্য যে কাউকে সংশোধন হবার সুযোগ করে দিতে পারে। আমরা দাম্পত্য জীবন শুরু করার পরই সন্তানের আশা করি। নিজের স্ত্রীর কোলে সন্তান আসার পর নিজেদের বাবা-মা হওয়ার পরিপূর্ণ স্বাদ গ্রহন করি। আমাদের আদরের সন্তানের লালন-পালন থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত যত্নেই রাখি। নিজেদের আরাম-আয়েশকে বিসর্জন দিয়ে সন্তানের মঙ্গল কামনায় সর্বদা ব্যাস্ত থাকি। ব্যবসা-বানিজ্য বা চাকুরী যাই করিনা কেন সব কিছুই নিজের সন্তানের ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য।
আর ইহাই চিরন্তন সত্য।
কোন কোন পরিবারে বাবা-মা দুজনই চাকুরী করেন। দেখা যায় বাবার তত্ত্বাবধানে বা মা’র তত্ত্বাবধানে সন্তানদের থাকতে হয়। এমনও দেখা যায় বাবার কর্মস্থল এক জায়গায় আবার মা’র কর্মস্থল অন্য জায়গায়। অনেক বাবা বা মা’র ঢাকায় কর্মস্থল হওয়ায় নিজ সন্তানদের ঢাকায় রেখে পড়াশুনা করাতে চান। অথচ মা’র কর্মস্থল অন্যত্র হওয়ায় সন্তানদের বাবাকেই দেখভাল করতে হয়। অথবা বাবার কর্মস্থল অন্যত্র হওয়ায় মা’র উপরই সব বর্তায়। এমন পরিস্থিতিতে যারা আছেন তাদের কষ্ট ও যন্ত্রনা অন্যরা বুঝবেন না। একদিকে চাকুরী অন্যদিকে সন্তানের ভবিষ্যত।
আমরা যারা সন্তানের অভিভাবক তাদের করনীয় অনেক। মা অথবা বাবার অনুস্থপতিতে সন্তানের সঙ্গে আমাদের আচরন ও ব্যবহার কেমন হবে তা নির্ভর করবে আমাদের শিক্ষা ও মেধার উপর। সন্তানরা ছোট বলে তাদের উপর কিছু চাপিয়ে দেয়া সমুচিত নয়। তাদের লেখা-পড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা অন্যায়। আমাদের মনে রাখা উচিত প্রতিটি শিশু প্রতিভা নিয়ে জন্ম নেয়। অভিভাবকদের দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানের প্রতিভা কোথায় সেটা খুঁজে বের করা। তিনিই সঠিক পিতা বা মাতা যিনি সন্তানের প্রতিভাকে বিকশিত করার জন্য সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। পরিবার থেকে সন্তানের প্রতিভাকে ঘষা-মাজা করতে পারলে সেই সন্তানের প্রতিভা বিকশিত হবেই।
কোন পরিবারে বাবাই সন্তানদের আগলে রাখেন। মা’কে কর্মস্থলে রুটি রুজির জন্য থাকতে হয়। সপ্তাহে একদিন বা পনেরো দিনপর মা ছুটে আসেন সন্তানদের মুখ দেখার জন্য। সন্তানরাও অধীর আগ্রহে থাকে তাদের মা’ কখন আসবে তার পথ চেয়ে। কোন বাবাই সন্তানদের মা’য়ের অভাব শতভাগ পূরন করতে পারেন না। তেমন কোন মা’ও বাবার অভাব পূরন করতে পারেন না। কিন্তু সন্তানরা মা’র প্রতি ও মায়ের ভালোবাসার প্রতি সবচেয়ে বেশী দূর্বল থাকে। এমতোবস্থায় আমরা যারা অভিভাবক তাদের উচিত হবে মা বা বাবার অনুপস্থিতিতে সন্তানের সঙ্গে ভালো ব্যবহার ও আচরন করা। সন্তানকে শারিরিক আঘাত করা মোটেই উচিত নয়। আর সন্তান যদি হয় টিন-এজার তবে তার সঙ্গে খুব হিসাব কষে চলতে হয়। লেখা পড়ার জন্য বা স্কুলের পরীক্ষার ফলাফলের জন্য সন্তানকে বকা-ঝকা বা শারিরিক আঘাত করা মানেই মানসিক ভাবে দূর্বল করা।
অনেক অভিভাবক সামান্য ব্যাপার নিয়ে সন্তানের সাথে দূর্ব্যবহার করেন। শারিরিক আঘাত করে কোন অঙ্গও ভেঙ্গে দেন। যিনি এমন কাজটি করেন তিনি বুঝে করেন নাকি রাগের বশে করেন তা তিনি নিজেই জানেন না। আজ যে সন্তানের উপর অমানবিক আচরন করছেন সেই সন্তান আমাদের পরিবারে থেকেই বড় হচ্ছে। একদিন এমন সময় আসবে সেই সন্তান ঘর থেকে বের হয়ে যাবে। বেপরোয়া জীবন যাপন করবে। মাদকাসক্ত হবে। পরিবার থেকে পাওয়া কষ্টগুলি প্রশমিত করার জন্য সে একটা চক্র গড়ে তুলবে। ধীরে ধীরে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হবে। তাতে অভিভাবকদের দুঃখ কষ্ট আরো বাড়বে। যত সময় যাবে ততোই অভিভাবকরা মানসিক যন্ত্রনায় ভুগবে। আজ যে সন্তানকে আমরা মানসিক যন্ত্রনা দিচ্ছি সেই যন্ত্রনা একদিন আমার জীবনেও আসবে। এটাও চিরন্তন সত্য।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকরা বার্ধক্যে যাবে। তখন তাদের আয়ের পথও সংকোচিত হবে। এক সময় সন্তানদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। তখন সন্তানরা অতীত ঘটনাকে সামনে এনে সেই অভিভাবকদের এড়িয়ে চলবে। একবার ভাবুনতো এমনটি যদি কারো জীবনে আসে তখন তার অবস্থান কোথায় দাঁড়াবে?
আমার এক পর্যবেক্ষণ থেকে জানা, যে সকল বয়স্ক মানুষ আজ বৃদ্ধাশ্রমে আছেন, সন্তানের প্রতি তাদের অতীত কর্মকান্ড সুখকর ছিলো না। অতীতকে স্মরন করে সন্তানরা বাধ্য হয়েছে বাবা বা মা’কে বৃদ্ধাশ্রমে রাখতে। অথচ আমরা ছেলের বউকে বা পরের মেয়েকে অযথাই দোষারূপ করি।
অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে,“Today it’s me, tomorrow you”
সময় থাকতে অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে তোলা। সন্তানরা যেন উপলব্ধি করতে পারে এই পৃথিবীতে বাবা-মা’ই হচ্ছে তাদের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। শারিরিক আঘাতে নয় বা দূব্যবহারেও নয় বন্ধু সূলভ আচরণ করুন। তাদের মনে বিশ্বাস আনুন. বাবা-মা’ই হচ্ছে তাদের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল ও পরম বন্ধু। ছোটখাটো ঘটনাকে এড়িয়ে চলুন। সন্তানরা ভুল করলে তাদের বুঝাতে হবে এমন কাজে তার ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। মনে রাখতে হবে সবার সন্তানই ডাক্তার বা প্রকৌশলী হবে না। যার যার প্রতিভাকে ঘষে মেজে বিকশিত করার জন্য সন্তানদের সহায়তা করুন।
তবেই আমরা একজন বন্ধুপ্রতীম অভিভাবক হতে পারবো। আর হিসাবের অংকটাও সহজ হবে। নইলে আমাদের ভুলের মাশুল আমাদেরই গুনতে হবে।
অভিভাবক হওয়া বড়ই কঠিন যা সবাই বুঝেনা, সন্তান জন্মদান যেমন মায়ের জন্য অতিব কষ্টের, তদরূপ সন্তানকে মানুষ করা, সঠিক শিক্ষা দান করা, যথার্থ মানুষ করাও বেশ সময়সাপেক্ষ এবং কঠিন অধ্যবসায়ের দরকার হয়, নতুবা সন্তানের পদস্খলন হতে পারে।
এ জন্যই সকল পিতা মাতাকে সন্তান নেওয়ার পূর্বে নিজেদেরকে ঠিক করা উচিত বলেই আমি মনে করি।
চমৎকার পোস্ট দিলেন ভাই, সাধুবাদ জানাই।
অনেক বাবা – মা মনে করেন | তারা সন্তান জন্ম দিয়েছেন তাই সন্তান তাদের সব কথা শুনতে এবং মানতে বাধ্য | সন্তান অবশ্যই বাবা – মার কথা শুনবে | বাবা – মার ও বুঝতে হবে সন্তানের নিজস্ব একটা সত্তা আছে | অধিকাংশ বাবা – মা সন্তানের ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করতে চান না | ফলে সন্তান বিপথে চলে যায় | তখন তারা বলেন সন্তান তাদের কথা শুনে না | অসাধারণ পোস্ট |
চাকরি তো করতেই হবে। শুধু বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক নয় কোয়ালিটি সময় দিতে হবে। সেই সাথে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও শেখাতে হবে। সামাজিক আচরণ এবং অন্যদের সম্মান করাও শিখাতে হবে। ডাক্তার ইন্জিনিয়র নয়। সত্যিকার মানুষ হিসেবে গঠণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথ দেখান।
৯টি মন্তব্য
ইঞ্জা
অভিভাবক হওয়া বড়ই কঠিন যা সবাই বুঝেনা, সন্তান জন্মদান যেমন মায়ের জন্য অতিব কষ্টের, তদরূপ সন্তানকে মানুষ করা, সঠিক শিক্ষা দান করা, যথার্থ মানুষ করাও বেশ সময়সাপেক্ষ এবং কঠিন অধ্যবসায়ের দরকার হয়, নতুবা সন্তানের পদস্খলন হতে পারে।
এ জন্যই সকল পিতা মাতাকে সন্তান নেওয়ার পূর্বে নিজেদেরকে ঠিক করা উচিত বলেই আমি মনে করি।
চমৎকার পোস্ট দিলেন ভাই, সাধুবাদ জানাই।
শামীম চৌধুরী
ভাইজান, এই মন্তব্যটা আমার ফেসবুকের লেখায় করেন। একটা ঘটনার উপর ভিত্তি করে লেখা। ঘটনা সত্য।
ইঞ্জা
তাই, ঠিক আছে।
হালিমা আক্তার
অনেক বাবা – মা মনে করেন | তারা সন্তান জন্ম দিয়েছেন তাই সন্তান তাদের সব কথা শুনতে এবং মানতে বাধ্য | সন্তান অবশ্যই বাবা – মার কথা শুনবে | বাবা – মার ও বুঝতে হবে সন্তানের নিজস্ব একটা সত্তা আছে | অধিকাংশ বাবা – মা সন্তানের ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করতে চান না | ফলে সন্তান বিপথে চলে যায় | তখন তারা বলেন সন্তান তাদের কথা শুনে না | অসাধারণ পোস্ট |
শামীম চৌধুরী
সেটাই। সন্তানদের মন ও স্বভাব বুঝে তাদের সাথে আচরন করাটাই হচ্ছে অভিভাবকদের সঠিক সিদ্ধান্ত। ধন্যবাদ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে আজকের দিন আমার কালকের তোমার কথা অতিব সত্য হলেও আমরা অনেক বাবা মা তা মানি না। খুব সুন্দর পোষ্ট।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
আমরা মানিনা বলেই আমাদের সন্তানরা বিপদগামী হয়। অসংখ্য ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
চাকরি তো করতেই হবে। শুধু বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক নয় কোয়ালিটি সময় দিতে হবে। সেই সাথে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও শেখাতে হবে। সামাজিক আচরণ এবং অন্যদের সম্মান করাও শিখাতে হবে। ডাক্তার ইন্জিনিয়র নয়। সত্যিকার মানুষ হিসেবে গঠণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথ দেখান।
শামীম চৌধুরী
জ্বি আপু। এটা পরিবার থেকেই শিখাতে হবে। অনেক শুভকামনা রইল।