
মনে কতটুকু যন্ত্রণা থাকলে, একজন প্রবাসী আত্মহত্যার পথকেই শেষ সমাধান হিসেবে বেঁচে নিতে পারে???
আজকে আমার সাথের বিল্ডিংয়ের একজন ইন্ডিয়ান লোক গলায় দড়ি দিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। তার সাথের লোকদের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম। সে প্রায় ত্রিশ বছর যাবত সৌদি এবং এই জায়গায় সে ব্যাবসা করতো, তার একটা দোকান আছে।
এই ত্রিশ বছরে তো সৌদি থেকে টাকা কড়ি অনেকই কামিয়েছেন। বা দীর্ঘ ত্রিশ বছর সংগ্রামও তো কম নয়। পরিবার পরিজনকে তো অনেক কিছুই উপহার দিয়েছেন। তবে আজকে কেন নিজের জিবনটা শেষ করে দিয়ে তার সংগ্রামী জিবনটার ইতি টানতে হবে???
খোঁজ নিলে হয়ত জানা যাবে সাংসারিক অশান্তি, বৌ কথা শুনেনা, ছেলে মেয়ে অবাধ্য, বাবা মা ভাই বোন অথবা কাছের মানুষের বেইমানির কারনে নিজেকে মুক্তি দিতে বা বাকিদের কে ভালো রাখতে একাই চলে গেল শেষ ঠিকানায়।
বিদেশটা খুব কষ্টের, সকল প্রিয়মুখদের ফেলে একা একটা অপরিচিত সাংস্কৃতি, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন লোকের সাথে চলাফেরা, তাদের সাথে খাফ খাইয়ে চলা,বিভিন্ন নিয়মের মাযে জিবনটাকে পরিচালিত করা খুবই দুর্বিষহ । এতকিছু সহ্য করেও আমরা পরে থাকি আমাদের ছেলে মেয়ে বা পরিবার পরিজন যেন ভালো থাকে। অনেক সময় এতকিছু করার পরও দেখা যায় ঠিকমতো স্যালারী পাওয়া যায়না,এমবাসি থেকে সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়না। আর কোনো কারনে মৃত্যু হলে লাশটা দেশে যাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পরে প্রায় । অনেকের লাশটা তো ফ্যামিলী থেকেই নিতে চায়না দেশে 😥😥😥
কিন্তু আমরা দেশ এবং নিজের পরিবার পরিজনের জন্য এতকিছু করার চেষ্টা করছি। সেই জায়গাটা থেকে দেশ এবং আমাদের পরিবার পরিজন আমাদের জন্য কি করছে???
আমাদের মত প্রবাসীরা দেশ এবং পরিবার পরিজনের কাছ থেকে কিচ্ছুটি আশা করিনা। আমরা চাই আমার ফ্যামিলীটা ভালো থাকুক। দেশটা ভালো চলুক। দেশের উন্নতি হোক, আমাদের মত যেন কামলা হয়ে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মরা বিদেশে না আসতে হয় কাজের জন্য। ওরা যেন দেশেই একটা কিছু করে খেতে পারে।
আমরা যা ভাবছি, দেশ পরিবার পরিজন কি তা ভাবছে???
প্রায় প্রত্যেকটা প্রবাসীর ফ্যামিলীতেই অশান্তি লেগেই আছে। দেশটা থাকে সবসময় উত্তাল মারামারি, কাটাকাটি, অন্যায়,অবিচার, ঘুষ, দুর্নীতি, খুন,ধর্ষণের মত কাজে পৈশাচিক নৃত্যে অলঅয়েজ মেতে আছে দেশটা।
মোটকথা গ্রামের একটা প্রবাদ বাক্য আছে এরকমঃ
“বামুনে মন্ত্র কয়
পাডার চ্যাডে শুনে”
ভাইটার এভাবে চলে যাওয়া ঠিক হয়নি, জিবন যুদ্ধে পলায়ন করে নিজেকে এভাবে সরিয়ে নেওয়া বা চুপিসারে একা একা না ফেরা গন্তব্যে পা বাড়ানো ঠিক হয়নি ।
উনার আরো যুদ্ধ করার প্রয়োজন ছিল, নিজের পরিবার পরিজন সহ দেশকে দেখিয়ে দেওয়ার অনেকগুলো অপশনই ছিল।
উনার পক্ষ থেকে একটা মেসেজঃ
প্রিয় জন্মভূমি দেশ এবং আমার প্রিয় পরিবার পরিজন তোমরা ভালো থেকো। আমার সংগ্রামের শুরু থেকে আজকে পরাজিত সৈনিকের মত পলায়ন অৎপর না ফেরা গন্তব্যস্তল পর্যন্ত তোমরা অনেক কিছুই পাওয়ার ছিলে আমার কাছ থেকে। হয়ত আমি দিতে পারিনি। যদি পারো আমাকে তোমরা ক্ষমা করে দিও।
ইতিঃ তোমাদের অপ্রিয় প্রবাসী কামলাটা😁😁😁
৪টি মন্তব্য
সামশুল মাওলা হৃদয়
আত্মহত্যা কখনো সমাধানের পথ না।মানুষের জীবন টা হল পরীক্ষাময়। এই পরীক্ষা আমাদেরকে ধৈর্য্য দরে পরীক্ষা দিতে হবে।
তৌহিদ
প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত টাকায় নিজের পরিবারকে চালনা করে। আমরা মনে করি বিদেশে থাকলেই অনেক টাকা উপার্জন হয়। এটি ভুল ধারনা। তাদের হতাশার গল্পকথা শুনলে কষ্ট পাই আমি।
ভালো থাকুন আপনিও।
আরজু মুক্তা
ভালো মন্দ সবখানে। এভাবে মেনে চলতে হয়
রোকসানা খন্দকার রুকু
কষ্ট পেলাম। কষ্ট সবখানেই আছে তবুও আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়।
শুভ কামনা রইলো॥