ছ্যাঁকা খাওয়ার ফাইনাল স্টেপ ।

হিমু ভাই ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মঙ্গলবার, ০২:১৬:২৬অপরাহ্ন রম্য ১২ মন্তব্য

একবার একটা রঙ নাম্বার থেকে কল আসলো । রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা পিচ্চিমতো বাচ্চা বললো:
– ‘আব্বু, আ আ আ আব্বু….’

বুঝতে পারলাম পিচ্চিটা ভূল করে নাম্বার ডায়াল করে ফেলেছে বোধহয় । আমিও বললাম:
– ‘ওলে আমাল আব্বুতা, কি কলো তুমি? আব্বু তুমি খাইচো? তোমাল আম্মু কুতায়?’

পিচ্চিটা বোধহয় সদ্য কথা বলা শিখেছে । অন্য কিছু বলতে পারে না, শুধু এটাই বলে:
– আব্বু, আ আ আ আব্বু…..

একটু পরেই পিচ্চিটার আম্মু আসলো । নরম করে গরম স্বরে ফোনটা হাতে নিয়ে কথা বললো:
– হ্যালো, কে?

– রঙ নাম্বার বোধহয়, আপনার বাচ্চা ভূল করে নাম্বার টুকে ফেলেছিল ।

– ও আচ্ছা, ঠিক আছে কিছু মনে করবেন না । ওর আব্বু দেশের বাইরে থাকে । এজন্য সারাদিন’ই আব্বু আব্বু করে শুধু ।

– না না, মনে করার কি আছে । ছোট মানুষ ভূল করে ফেলেছে । এর জন্য মনে করার কিছু নেই ।

– ঠিক আছে, ভালো থাকবেন তাহলে । রাখি, বাই ।

বলেই ফোনটা কেটে দিলেন ওনি । ওনি বললেন ভালো থাকার কথা । কিন্তু ভালো কি এত সহজে থাকা যায় রে পাগলি । আপনার বাবু আমাকে আব্বু ডেকেছে । আর আম্মু কত মিষ্টি স্বরে কথা বলেছে । কিছুক্ষনের জন্য মনে হলো বাবুটার আব্বু হয়ে যাই । আমিও কম কি! মাগনা পেলে বাঙালী আলকাতরাও খায় । আর ওনার তো মাত্র একটা বাচ্চা হয়েছে, ব্যাপার না । শুরু করে দিলাম পটানোর কাজ ।

রাত বিরাতে মেসেজ করতাম । ওনিও মেসেজের রিপ্লে দিতেন । ওনার নাম ছিল ‘বিচিত্রা’ । নামটা একটু ক্ষ্যাঁত টাইপের । ব্যাপার না, নামে কি আসে যায় । আমি আদর করে ‘চিত্রা’ নামে ডাকা শুরু করলাম । একসময় ওনার ফেসবুকে এড হলাম, তারপর শুরু হলো মেসেঞ্জারে পটানোর কাজ । মাঝরাত অব্দি টেক্সট করতাম:

– হ্যালো চিত্রা ম্যাডাম, কি করেন?

– এইতো বাবুকে খাওয়াচ্ছিলাম । আচ্ছা, তুমি আমাকে ম্যাডাম ডাকো কেনো?

– এম্নিই ইচ্ছে করে ডাকতে । সবাই তো বিচিত্রা’ই ডাকে । আমি নাহয় একটু ভালবাসা মিশিয়ে স্পেশাল ভাবে ডাকলাম, হাহা ।

– ওরে পিচ্চি রে, এত ভালবাসা আসে কোথা থেকে তোমার?

– আসে আসে, বুঝবেন না । কিন্তু আপনি আমাকে পিচ্চি ডাকেন কেনো? আপনি জানেন এই পিচ্চি কি কি করতে পারে?

– কি করতে পারে শুনি পিচ্চি?

– আপনার বাবুর আব্বু হওয়ার ক্ষমতা রাখি, হাহাহা ।

– তুমি যথেষ্ট ফাজিল আছো পিচ্চি ।

– হ্যাঁ, সময়ে সময়ে কিছুটা ফাজলামো না করলে আলাপ জমে না ।

– হুম্ম, বুঝতে পেরেছি কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছো । আচ্ছা এখন ঘুমাও পিচ্চি । গুড নাইট!

গুড নাইট বলে বিদায় জানালাম । কিন্তু ঘুম তো আসেনা চিত্রা । চোখে শুধু ভাসে কবে পটানোর ফাইনাল স্টেপে যাবো, কবে কি করবো । আহা, ভাবতেই লজ্জায় কাথা দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে গেলাম । এভাবে অনেকদিন কেটে গেলো । পাম পট্রি মেরে পটানোর ফাইনাম স্টেপে আসলাম একসময় । ওনি আমাকে দেখা করতে বললেন, একটা পার্কে ।

যেদিন দেখা করার ডেট, সেদিন সকাল ৭ টায় গিয়ে বসে থাকলাম পার্কে । শরীরের চিপায় চাপায় ফগ বডি স্প্রে মেরে নিজেকে সুগন্ধময় করে নিলাম । জরিয়ে ধরলে যদি গা থেকে ঘামের দূর্গন্ধ বেরুয়, তাহলে ব্যাপার খারাপ দেখা যায় । স্যুট বুট পড়ে, চুলগুলো স্পাইক করে বসে থাকলাম পার্কের বেঞ্চে ! মেসেজ করলাম:

– চিত্রা কোথায় আপনি?

– এইতো চলে এসেছি, তোমার পিছনে তাকাও ।

পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার দুই জাওরা বন্ধু ! দুনিয়ার জাওরা, টপ লেভেলের জাওরা । ফাইজলামীর জন্য কোনো পুরষ্কার দেয়ার ব্যবস্তা থাকতে এরা দুজনেই ফার্স্ট পুরষ্কার নিয়ে টানা হেঁচরা লেগে যাবে । আমাকে এই অবস্থায় দেখে তারা হাসাহাসি শুরু করলো । একজন বললো:

– আব্বু, আ আ আ আব্বু…

আমি জিজ্ঞেস করলাম:
– কিরে, তোরা এখানে কেনো?

– তুই যে বিদেশি জামাই ওয়ালা বউয়ের সাথে দেখা করতে আসছস, আমরাই সেই দাবা বোর্ড । তোরে বোর্ডের মধ্যে গুটি হিসেবে ইউজ করলাম, হা হা হা ।

– হোয়াদ্দা ফুঁসকা ম্যান! আমি ক্যান?

– তুই তো অলওয়েজ বলতি, তোরে ফেইক আইডি দিয়ে পটানো সম্ভব না । চ্যালেঞ্জটা একসেপ্ট করলাম আরকি । ফার্স্টে আমার পিচ্চি ভাগ্নেকে দিয়ে শুরু করলাম । এরপর, মোবাইলের ভয়েজ চেঞ্জ করার এপ দিয়ে মেয়ের ভয়েজ বানিয়ে কথা বললাম ।

এগুলো শোনাত পর, ফগ বডি স্প্রে’র গন্ধটাকে মনে হলো ডাস্টবিনের ময়লার স্তুপের গন্ধ । মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো । চোখেমুখে অন্ধকার দেখা শুরু করলাম । হায়রে কি করলাম এটা আমি! এখন তো এরা আমাকে সারাজীবন খোটা দেবে । ভাবতে ভাবতেই ঠাস করে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে গেলাম ।

একসময় শুনলাম মোবাইলে রিং হচ্ছে । কোনো এক মহিলা আমাকে ধমকের স্বরে ডাকছে । কোনোমতে চোখ খুললাম । দেখি, আম্মা পাশে দাঁড়িয়ে ডাকছে, কলেজ যাওয়ার জন্য ।
এতক্ষন স্বপ্নের ঘোরে ছিলাম তাহলে? উফফ, বাঁচা গেলো!

৮০৩জন ৬৯২জন
0 Shares

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ