আমাদের কনভেনশন শেষে আমরা হলরুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে যার যার রুমে ফিরে গেলাম, দুজনেই এতক্ষণ হাসফাস করছিলাম সিগারেট খাওয়ার জন্য, দুজনে আয়েশ করে সিগারেট ধরালাম, কাপড় ছেড়ে কিছুক্ষণ রেস্ট করে ড্রেস চেইঞ্জ করে নিলাম, সন্ধ্যা সাতটার সময় নিচে চলে এলাম, আজ আমাদের অফিসিয়াল ডিনার হবে একি হলরুমে, সবাই একে একে হলরুমে প্রবেশ করলাম, পুরা হলরুমের চেহেরা বদলে গেছে, পুরা হল জুরে বড় বড় গোলাকার টেবিল বসানো হয়েছে, প্রত্যেক টেবিলে গতবারের মত করে ডিলারদের নামে টেবিল কার্ড রাখা আছে, আমাদের সাথে পড়েছে হংকং, আলজেরিয়া, শ্রিলংকা, পাকিস্থানের ডিলারগণ।
অন্যান্য টেবিলে আছে অন্যান্য দেশের ডিলাররা, প্রত্যেক টেবিলেই ডংফেং এর এড়িয়া ইনচার্জরা বসেছেন, সবাই এসে বসতেই হোটেল সার্ভিসের স্টাফরা খাবার এনে এনে টেবিলে রাখা শুরু করেছে, একে একে আসা শুরু করেছে, কাঁচা স্যামন (স্যালমন) মাছ, টফু কারী, নুডলস, ডাম্পলিং, পিকিং ডাক (হাঁস), সেদ্ধ মাছ, ভেজিটেবেল বেম্বু সুট দিয়ে ভাজা, চিকেন স্টক স্যুপ, ফ্রাইড রাইস, সিম সেদ্ধ, মাছ রান্না স্যুপের মতো করে, সাথে রেড ওয়াইন ভরা গ্লাস সবার সামনে।
সবার সামনে প্লেটের বদলে একটা করে বাটি, কাটা চামচের পরিবর্তে বাশেরঁ স্টিক দেওয়া, আমি তো মনে মনে হো হো হো করে দম ফাটা হাসি হাসতেছি কারণ আমার সিইও আজ বিপদে পড়েছে, যা দিয়েছে তার বেশির ভাগ সে খেতে পারবেনা অভ্যাস না থাকার কারণে, আবার ওদিকে স্টিক দিয়ে সে জীবনেও খায়নি। 😂
ডংফেং শোকনের চেয়ারম্যান মি. শোকন কিছুক্ষণের মধ্যে ডায়াসে উঠে এলেন, হাতে রেড ওয়াইনের গ্লাস, উনি মাইকের সামনে এসে সবাইকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন, সাথে ডিনার স্টার্ট করার জন্য রেড ওয়াইনের গ্লাস হাতে তুলে ধরে ফুল টোস্ট (পুরা গ্লাস পান করে শেষ করে ফেলা) করলেন, সাথে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে উঠে উনার সাথে ফুল টোস্ট করে পুরা গ্লাসের ওয়াইন গলায় চালান করে দিলাম।
খাওয়া শুরুতে আমরা সবাই স্যামন মাছের টুকরা স্টিক দিয়ে তুলে নিয়ে ওয়েস্টার সস এবং শুকনা মরিচের গুড়ায় মাখিয়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম, সিইও দেখি নাক মুখ খিঁচে আছেন, উনাকে বললাম “ভাই খেতে বেশ টেস্ট, আপনিও খান”।
উনি জানালেন উনার দ্বারা সম্ভব নয়, উনি হাত বাড়িয়ে স্যুপ নিতে গেলে আমি না করলাম, জানালাম ওরা সবার শেষে স্যুপ খাবে, এতে উনার মুখ প্যাঁচার মতো মুখ করে বাটিতে পিকিং ডাক নিয়ে স্টিক নিয়ে অহেতুক খাওয়ার চেষ্টা করতে কসরত শুরু করলেন। 😜
এইদিকে আমাদের খাওয়া চলছে, সার্ভিস পার্সোনালরা এসে বারবার আমাদের গ্লাস ওয়াইন দিয়ে পূর্ণ করে যাচ্ছে।
কোম্পানি চেয়ারম্যানকে দেখলাম প্রতিটি টেবিলে নিজের লোকজন নিয়ে হাজির হচ্ছেন, পার্সোনালি পরিচিত হচ্ছেন, সবার সাথে টোস্ট করছেন, এক সময় উনারা আমাদের টেবিলে এসে হাজির হলেন, ইস্টেফেন এগিয়ে এসে আমাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে উনি আমাদের সবার উন্নত ব্যবসায়িক ভবিষ্যত, সবার সুস্থতা কামনা করে টোস্ট করলেন, আমরাও চিয়ার্স বলে টোস্ট করলাম, আমার সিইও পান করার ভাণ করলেন।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই সবার সাথে পরিচয়, ছবি তুলা, উইশ করে পান করা এইসব চলতে লাগলো, জেনি এলো জিএম সাহেবকে নিয়ে, আমরা এক সাথে ছবি তুললাম, গল্প সল্প করলাম, এক সময় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুমে ফিরে গেলাম, ইস্টেফেন আগেই বলে রেখেছিলো সে রাতে আসবে, কথা আছে।
সিইও সাহেব আমাকে বললেন, ভাই আমার খিদা লেগেছে, কিছুই খেতে পারিনি, কিছু খাবারের অর্ডার দিন, আমি উনার জন্য বিফ স্টেইকের অর্ডার দিয়ে দ্রুত কাপড় চেইঞ্জ করে নিলাম।
সিইও সাহেবের খাওয়া চলে এলে উনাকে খেতে দিয়ে নিজে একটা ড্রিনক্স নিয়ে বসলাম, উনি ফের খোঁচা দিয়ে বললেন, “ভাই বেশ খেতে পারেন আপনি”?
আমি তখন উনাকে বললাম, দেখুন এইসব হলো কার্টেসি, দেখলেননা চেয়ারম্যান এসে টোস্ট করলো, আপনারও উনাদের সম্মানে এক আধটু খাওয়া উচিত, আপনার জেনে রাখা ভালো ওয়াইন, শ্যাম্পেন এইসবে নেশা হয়না।
একটু পর ইস্টেফেন এলো জানাবার জন্য, আগামীকাল সকাল দশটা চেয়ারম্যানের সাথে সেকেন্ড ফ্লোরের রুফ গার্ডেনে মিটিং হবে, সেখানেই আমাদেরকে আগামী বছরের টার্গেট দেওয়া হবে, এরপর সন্ধ্যা ছয়টায় বীচের পাশের স্পেসে হবে ফাইনাল পার্টি, পরদিন সবাই সকাল থেকে রওনা হওয়া শুরু করবে, আমরা বিকেল চারটায় রওনা হবো গুয়াঞ্জুর উদ্দেশ্যে, আমাদেরকে হোটেল থেকে এয়ারপোর্ট ড্রপ করবে হোটেলের গাড়ী, কারণ ওরা সকাকেই চলে যাবে চংকিং।
…… চলবে।
ছবিঃ নিজ।
১৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
খাবারের ছবিতে খাইতে ইচ্ছা করে। ভাল লাগলো।
ইঞ্জা
ভাই, খেতে চাইলেও আপনি সব ধরণের খাবার দিলেও খেতে পারবেননা, আপনার যদি বিভিন্ন খাবার খেতে কেমন তা বুঝার জন্য প্রতিটি চেঁকে দেখার স্পৃহা থাকে তাহলে কোন বিজাতীয় খাবার খেতে আপনার সমস্যা হবেনা।
ধন্যবাদ ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
না ভাই, বিজাতীয় খাবারে রাজি না। ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
এইটা আমরা যারা ভ্রমণ করি তাদের জন্য মারাত্বক, এতে না খেয়ে মরার সামিল হয়।
জিসান শা ইকরাম
চরম খাওয়া দাওয়া করেছেন ভাই,
দেশের মানুষ অনেকেই ড্রিংক্স বলতে বুঝে মদ খেয়ে মাতাল হওয়া, নেশা ছাড়াও যে ড্রিংক্স আছে তা অনেকেই জানে না।
ভাল লাগছে পড়তে,
অপেক্ষা পরের পর্বের জন্য।
ইঞ্জা
ভাইজান, আগেও বলেছি চায়নিজরা তাদের অতিথিদের জন্য প্রচুর আয়োজন করে, এটাই তাদের ট্রেডিশন।
হাস্যকর বিষয় হলো আমাদের দেশে উইস্কিকেই ওয়াইন বলে আর আমি ওয়াইনকে বলি ফ্রুট জুস, আবার এটাও বলে রাখি আমি ডিইংক্স করি তাও দেশের বাইরে, দেশে এমনও সময় গেছে দুই চার বছরে ড্রিংক্সই আমি করিনি, কিন্তু অন্য কেউ শুনলে আমাকে মাতালই মনে করবে। :প
ধন্যবাদ ভাইজান
তৌহিদ ইসলাম
আপনার লেখা ভ্রমন কাহিনী আমার খুব ভালো লাগে দাদা। প্রত্যেকটি পর্বই অসাধারন লেগেছে।
ইঞ্জা
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া আপনার সিইওর অবস্থা দেখি একেবারে আমার মতো! জাপানে থাকাকালীন আমি কিন্তু পানীয় বলতে জল ছাড়া আর কিছুই পান করতাম না। আর খাদ্য? স্যামন মাছ তো বিস্বাদ লাগতো! সুসি, সাসিমি আরোও ভয়ঙ্কর। রামেন স্যুপ, Yakitori, Tempura(মাছ, সবজি), বাঁচাতো। চপস্টিক(জাপানিজে বলা হয় হাশি) দিয়ে খাওয়া শিখতে কয়েকমাস সময় লেগেছে। সঠিকভাবে চপস্টিক ধরাটা কঠিন বেশ।
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি দিয়ে ফেলুন তো!
ইঞ্জা
আপু আমিও চপস্টিক দিয়ে খেতে পারতামনা, নিজ বাসায় ব্যবহার করে করে শিখেছি। 😀
আপু মজার ব্যাপার হলো আমি খুব অল্প বয়স থেকেই বিদেশ ভ্রমণ শুরু করেছি এবং আমি প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত বিদেশে বিজাতীয় খাবারের প্রতি ইন্টারেস্ট নিয়েছি, এমন খাবার খুব কম আছে যা আমি টেস্ট করতে চাইবোনা। 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া আমার আবার খাওয়া নিয়ে অনেক ঝামেলা। সে দেশের খাবার হলেও। এই যেমন আমি খাসী/ভেড়ার মাংস খাইনা। মাছের তেল ভাঁজার ঘ্রাণ নিতেই কষ্ট হয়। শুঁটকি একেবারেই ছুঁয়ে দেখিনা। সব্জীর ভেতর বেগুণ, কচু পোষায় না। বিদেশের খাবারের কথা কী আর বলবো!
ইঞ্জা
মাথা ঠুকার ইমো নেই এই দুঃখে দিতে পারলামনা আপু,, বিদেশ বিভুঁইয়ে খাশি তো নেই, আছে ভেড়া তাও সুস্বা, এইটা খাননা তাহলে খাবেন কি?
শুটকি আমার কাছে লোভনী, কচু আমার খুব পছন্দের। ;(
আপু অনেক কিছুই আপনি মিস করছেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া মাথা ঠোকার ইমো নেই, চুল ছেঁড়ার ইমো আছে তো! ^:^ 😀
আমি এখন যা খাই, তা আপনি খেতে পারবেন কিনা, সেটাতেও আমার সন্দেহ আছে। 😀
তা পরের পর্ব কোথায়? তাড়াতাড়ি দিন।
রেজওয়ান
আমি ভাই সব ধরণের খাবার ই খাই😂লজ্জাও কম খাওয়ার ব্যাপারে😜ভাল লাগছে পড়ে তাই সব পর্বগুলো এক এক করে পড়ছি!😎
ভাই সিগারেট টা কম নিয়েন প্লিজ🙊