সানিয়া ভ্রমণ (৫)

ইঞ্জা ১৮ অক্টোবর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ০২:৫৩:২৫অপরাহ্ন ভ্রমণ ১৪ মন্তব্য

 

আমাদের কনভেনশন শেষে আমরা হলরুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে যার ‍যার রুমে ফিরে গেলাম, দুজনেই এতক্ষণ হাসফাস করছিলাম সিগারেট খাওয়ার জন্য, দুজনে আয়েশ করে সিগারেট ধরালাম, কাপড় ছেড়ে কিছুক্ষণ রেস্ট করে ড্রেস চেইঞ্জ করে নিলাম, সন্ধ্যা সাতটার সময় নিচে চলে এলাম, আজ আমাদের অফিসিয়াল ডিনার হবে একি হলরুমে, সবাই একে একে হলরুমে প্রবেশ করলাম, পুরা হলরুমের চেহেরা বদলে গেছে, পুরা হল জুরে বড় বড় গোলাকার টেবিল বসানো হয়েছে, প্রত্যেক টেবিলে গতবারের মত করে ডিলারদের নামে টেবিল কার্ড রাখা আছে, আমাদের সাথে পড়েছে হংকং, আলজেরিয়া, শ্রিলংকা, পাকিস্থানের ডিলারগণ।
অন্যান্য টেবিলে আছে অন্যান্য দেশের ডিলাররা, প্রত্যেক টেবিলেই ডংফেং এর এড়িয়া ইনচার্জরা বসেছেন, সবাই এসে বসতেই হোটেল সার্ভিসের স্টাফরা খাবার এনে এনে টেবিলে রাখা শুরু করেছে, একে একে আসা শুরু করেছে, কাঁচা স্যামন (স্যালমন) মাছ, টফু কারী, নুডলস, ডাম্পলিং, পিকিং ডাক (হাঁস), সেদ্ধ মাছ, ভেজিটেবেল বেম্বু সুট দিয়ে ভাজা, চিকেন স্টক স্যুপ, ফ্রাইড রাইস, সিম সেদ্ধ, মাছ রান্না স্যুপের মতো করে, সাথে রেড ওয়াইন ভরা গ্লাস সবার সামনে।
সবার সামনে প্লেটের বদলে একটা করে বাটি, কাটা চামচের পরিবর্তে বাশেরঁ স্টিক দেওয়া, আমি তো মনে মনে হো হো হো করে দম ফাটা হাসি হাসতেছি কারণ আমার সিইও আজ বিপদে পড়েছে, যা দিয়েছে তার বেশির ভাগ সে খেতে পারবেনা অভ্যাস না থাকার কারণে, আবার ওদিকে স্টিক দিয়ে সে জীবনেও খায়নি। 😂

 

ডংফেং শোকনের চেয়ারম্যান মি. শোকন কিছুক্ষণের মধ্যে ডায়াসে উঠে এলেন, হাতে রেড ওয়াইনের গ্লাস, উনি মাইকের সামনে এসে সবাইকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন, সাথে ডিনার স্টার্ট করার জন্য রেড ওয়াইনের গ্লাস হাতে তুলে ধরে ফুল টোস্ট (পুরা গ্লাস পান করে শেষ করে ফেলা) করলেন, সাথে আমরা সবাই দাঁড়িয়ে উঠে উনার সাথে ফুল টোস্ট করে পুরা গ্লাসের ওয়াইন গলায় চালান করে দিলাম।
খাওয়া শুরুতে আমরা সবাই স্যামন মাছের টুকরা স্টিক দিয়ে তুলে নিয়ে ওয়েস্টার সস এবং শুকনা মরিচের গুড়ায় মাখিয়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম, সিইও দেখি নাক মুখ খিঁচে আছেন, উনাকে বললাম “ভাই খেতে বেশ টেস্ট, আপনিও খান”।
উনি জানালেন উনার দ্বারা সম্ভব নয়, উনি হাত বাড়িয়ে স্যুপ নিতে গেলে আমি না করলাম, জানালাম ওরা সবার শেষে স্যুপ খাবে, এতে উনার মুখ প্যাঁচার মতো মুখ করে বাটিতে পিকিং ডাক নিয়ে স্টিক নিয়ে অহেতুক খাওয়ার চেষ্টা করতে কসরত শুরু করলেন। 😜
এইদিকে আমাদের খাওয়া চলছে, সার্ভিস পার্সোনালরা এসে বারবার আমাদের গ্লাস ওয়াইন দিয়ে পূর্ণ করে যাচ্ছে।
কোম্পানি চেয়ারম্যানকে দেখলাম প্রতিটি টেবিলে নিজের লোকজন নিয়ে হাজির হচ্ছেন, পার্সোনালি পরিচিত হচ্ছেন, সবার সাথে টোস্ট করছেন, এক সময় উনারা আমাদের টেবিলে এসে হাজির হলেন, ইস্টেফেন এগিয়ে এসে আমাদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে উনি আমাদের সবার উন্নত ব্যবসায়িক ভবিষ্যত, সবার সুস্থতা কামনা করে টোস্ট করলেন, আমরাও চিয়ার্স বলে টোস্ট করলাম, আমার সিইও পান করার ভাণ করলেন।

 

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই সবার সাথে পরিচয়, ছবি তুলা, উইশ করে পান করা এইসব চলতে লাগলো, জেনি এলো জিএম সাহেবকে নিয়ে, আমরা এক সাথে ছবি তুললাম, গল্প সল্প করলাম, এক সময় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুমে ফিরে গেলাম, ইস্টেফেন আগেই বলে রেখেছিলো সে রাতে আসবে, কথা আছে।
সিইও সাহেব আমাকে বললেন, ভাই আমার খিদা লেগেছে, কিছুই খেতে পারিনি, কিছু খাবারের অর্ডার দিন, আমি উনার জন্য বিফ স্টেইকের অর্ডার দিয়ে দ্রুত কাপড় চেইঞ্জ করে নিলাম।
সিইও সাহেবের খাওয়া চলে এলে উনাকে খেতে দিয়ে নিজে একটা ড্রিনক্স নিয়ে বসলাম, উনি ফের খোঁচা দিয়ে বললেন, “ভাই বেশ খেতে পারেন আপনি”?
আমি তখন উনাকে বললাম, দেখুন এইসব হলো কার্টেসি, দেখলেননা চেয়ারম্যান এসে টোস্ট করলো, আপনারও উনাদের সম্মানে এক আধটু খাওয়া উচিত, আপনার জেনে রাখা ভালো ওয়াইন, শ্যাম্পেন এইসবে নেশা হয়না।
একটু পর ইস্টেফেন এলো জানাবার জন্য, আগামীকাল সকাল দশটা চেয়ারম্যানের সাথে সেকেন্ড ফ্লোরের রুফ গার্ডেনে মিটিং হবে, সেখানেই আমাদেরকে আগামী বছরের টার্গেট দেওয়া হবে, এরপর সন্ধ্যা ছয়টায় বীচের পাশের স্পেসে হবে ফাইনাল পার্টি, পরদিন সবাই সকাল থেকে রওনা হওয়া শুরু করবে, আমরা বিকেল চারটায় রওনা হবো গুয়াঞ্জুর উদ্দেশ্যে, আমাদেরকে হোটেল থেকে এয়ারপোর্ট ড্রপ করবে হোটেলের গাড়ী, কারণ ওরা সকাকেই চলে যাবে চংকিং।

…… চলবে।
ছবিঃ নিজ।

৭৬৯জন ৭৬৭জন
0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ