চৈত্রের খাঁ খাঁ দুপুর, বাড়িটার সামনে এসে আমি
একটু দাঁড়ালাম,
দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও চিন্তা করলাম ভিতরে ঢুকবো কিনা।
হাতে আমার সে মানুষটার জন্য কেনা ছোট্ট
একটা উপহার ।
আজ তার জন্মদিন, অনেক ভেবেই আজ
আসলাম, যা বোঝাপরা আজকেই করতে হবে।
– বেল বাজিয়ে দরজায় অপেক্ষা করতে লাগলাম।
একটু পরে তাদের কাজের লোক এসে দরজাটা
খুলে বললো কাকে চাই?
– আমি বললাম নয়নকে একটু ডেকে দেওয়া যাবে
– লোকটা বললো ভাইয়া তো বাসায় নাই, আচ্ছা একটু দাঁড়ান, এই বলে সে ভিতরে চলে গেলো ।
একটু পর দেখি নয়নের বড়ভাই আসলো, আমার কাছে জানতে চাইলো আমি কে?
তিনি বললেন তুমি নয়নের সাথে পড়ো, এসো ভিতরে এসো।
– আমি গেলাম জানতে চাইলাম ওর খবর কি
তার সাথে আজ ছয়মাস কোন যোগাযোগ নেই ,
সে ফোন করেনা, আমি করলেও দেখি মোবাইল বন্ধ দেখায়
ভাইয়া খুব শান্তস্বরে বললেন, সে ভালো আছে ,
প্রতিদিন ভার্সিটি যায়, ক্লাস করে ।
আর তোমাদের এখন যে বয়স নিজেদের ভালো মন্দ
বোঝার যথেস্ট সময় হয়েছে, পড়াশুনা করো।
আমি তাকে উপহারগুলো এগিয়ে দিয়ে বললাম
আজ ওর জন্মদিন তাই এগুলো এনেছিলাম,
ওকে একটু বলবেন আমি এসেছিলাম।এরপর আর একটুও অপেক্ষা না করে বেরিয়ে গেলাম।
আড়চোখে খেয়াল করে দেখলাম তাদের
বিত্ত-বৈভব্য, সামাজিক অবস্থান, তাহলে এতোদিন ধরে
কানে যা আসতো তা সব সত্যি ছিলো ,
সে যখন বুঝতে পেরেছিলো আমি খুব সাধারণ একটা ঘরের মেয়ে তাই হয়তো তার মন আর এগোতে সায় দেয়নি, সে
নতুন মানুষে ডুবে আছে এখন ।
এবার আমার কথা বলি,
আমি নীলা, খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে,
বাবা সব ভাই-বোনের পড়াশুনার খরচ সামলাতে
হিমশিম খায়, তাই কিছু টিউশনি করি নিজের পড়াশুনার জন্য ।
প্রতিদিন টিউশনিতে
যাওয়ার সময় একটা দোকানে নীল রংয়ের একটা
জামা পছন্দ হয়েছিলো
কিন্তু আমি কিনিনি,
ভেবেছিলাম ওর জন্মদিনের গিফট কিনে নেই তারপর নয়তো কিনে নিবো নিজের জন্য ।
যাক, এইসব ভেবে আর কাজ নেই, বুঝেই তো
গেলাম সব শেষ ।
আমিও মুক্ত হলাম, যা কিছু পিছুটান আমার তোমার প্রতি ছিলো তা ছুড়ে দিয়ে এলাম তোমাদের অর্থ-বিত্তের কাছে ।
ঠিক সাত বছর পরের ঘটনা,
নিউইয়র্ক সিটির ঝকঝকে রাস্তা ধরে একটি
মেয়ে হাঁটছিলো, দুচোখ ভরে সে দেখছিলো আর ভাবছিলো এই শহরটা এতো সুন্দর কেনো ।
মাত্র মাসখানেক হলো নীলা এই শহরে এসেছে
ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সের স্কলারশীপ নিয়ে ।
স্টারবার্কের কফিশপে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে
কাপুচিনো কফিটা সে নিলো, আর চুমুক দিয়েই বুঝতে
পারলো কেন এই কফিটা এতো বিখ্যাত ।
দেশের বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ, আড্ডা সব চলে ফেইসবুকে।
বিকেলে ক্লাস শেষ করে সন্ধ্যার নিভুনিভু আলোয়
সে মোবাইলটা হাতে তুলে নেয়,
দেখে তাকে বন্ধু হওয়ার রিকোয়েস্ট করেছে নয়ন,
বহুদিন পর স্মৃতির পাতাটা ভারী ঠেকে তার কাছে ।
টুপ করে সে ডুবে যায় স্মৃতির অতল সমুদ্রে ,
সেদিন নয়নের বাসা থেকে বেরিয়ে চোখের পানি
মুছে সে প্রতিজ্ঞা করেছিলো আর নিজেকেই বলেছিলো
তোমার জন্য এই আমার শেষ কান্না ।
এরপর আমি আর কখনোই কাঁদবোনা।
আমি কেনো কাঁদবো, এই সম্পর্ক গড়া এবং
ভাঙায় আমার তো কোন দায় নেই ।
কিন্তু এইটুকু তেই তা কি শেষ হয়েছিলো
– উম্ হু, তা হয়নি
আমি চলে আসার এক-বছর পরে তুমি আবার
আমাকে ফোন দিলে, বললে যা করেছো
ভুল করেছো আবার ফিরে আসতে চাও তুমি
– আমার উত্তরটা খুব সাধারণ ছিলো না, কখনোই না
ততোদিনে নিজেকে খুব শক্তকরে গড়ে নিয়েছি
আমি, সে অস্থায়ী সম্পর্কে নিজেকে জড়িয়ে আর কষ্ট পেতে চাইনা আমি ।
কতোকিছু মনে পড়ে গেলো আমার, এই সাত বছরে
অনেক বদলে গিয়েছি আমি,
মন ভাঙা আর গড়ার খেলা এসব এখন আর আমাকে
ভাবায় না, শক্ত হাতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের
বাটনে গিয়ে ডিলিট বাটনটা চাপি।
আমার নৈঃশব্দ্যের প্রহরগুলোয় যখন তোমায় কাছে পাইনি তাই আর দরকারও নেই কোন কিছুতে তোমায়,
তুমি ওই দূরের ল্যাম্পপোস্টের ছায়াটার মতো,
আমার জীবনজুড়ে সেই ছায়ার প্রভাব যেনো কখনোই
আর না পরে।
ভুল তো মানুষ একবারই করে বারবার তো আর
নয়।
~ রিফাত নওরিন,
ডালাস ( যুক্তরাষ্ট্র )
২টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
জীবন পোস্টের ল্যাম্পোস্ট। লেখাটা আমাকে খুব মুগ্ধ করেছে আপু। ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা রইল।
রিফাত নওরিন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, ভালো থাকুন ।