আর্টিস্ট-১

নীহার ২ মে ২০১৬, সোমবার, ১১:৪৬:৫৩অপরাহ্ন গল্প, সাহিত্য ১২ মন্তব্য

মধ্যরাত পেরোনো শহুরে একটা জানালা…..টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে বাইরে….হলুদ ল্যাম্প পোস্ট এর নিয়ন ঘেরা অন্ধকার আর জানালায় পড়া স্টুডিও লাইটের ‘আবছায়া’দের শেড দেখা যাচ্ছে কাঁচে… স্থির ক্যানভাস-জল রঙা মেঘের ছিটে লেগে ‘গতিময়তা’র রূপক হয়ে উঠছে প্রতি মুহূর্তে…

জানালার এপাশে,গম্ভীর একটা ঘর-শৈল্পিক ভাবালুতা লেগে আছে যার সেখানে এখানে… মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা ফুলস্কেপ বা এ ফোর সাইজের বেশ কয়েকটি কাগজ কিংবা দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা ক্যানভাসগুলোই বুঝিয়ে দেয় বাসিন্দার পরিচয়। টেবিলের ওপরের ক্লান্ত পেন্সিল, বিশ্রামে ব্যস্ত তুলি,চারকোল কেবল ‘সিরিয়াস প্যাশনের’ গভীরতা জানান দিতে অভ্যস্ত।।

চারকোণা টেবিলের সাথে কৌণিক সমঝোতা করে বসানো কাগজের ওপর ঝুঁকে থাকা অবয়ব একবার জানালার দিকে তাকিয়ে আবার পুরনো কাজে মন দেয়…কমারশিয়াল একটা স্কেচের শেষ টানগুলো দিচ্ছিল আলভী…

“অমন একটা জানালা আঁকতে……”-নিজের মনেই পেপার ইফেক্ট আর প্রেজেন্টেশনটা সাজিয়ে ফেলতে ফেলতে একটু আধটু কথা বিড়বিড় করে নেয় সে… অনেকটা যেন কাগজ আর পেন্সিল-তুলি ভরা কেজটাকে পূর্বপ্রস্তুতি নিতে বলার মতন।

আলভী একজন আর্টিস্ট-শখের।।

রাজকীয়তার আমেজ মাখানো শখ-‘ততটুকু রং,যতটা হাতে’,নিজের তৈরি রঙে পার্থিবতা,চাইলে  একদিন অনুভূতিদের রঙও বের করে আনতে পারে সে।।

চশমা খুলে এবার জানালার সামনে চলে আসে আলভী… দু’স্তর কাঁচের পেছনের ঝাপসা পৃথিবী তাকে কমই টেনেছে… না,সে ঘরকুনো নয়, কিন্তু ঘরপ্রেমিক…

জানালা খুলে দেয় সে এবার… জল জল গন্ধ মাখা বাতাস এসে তার চুল এলোমেলো করে দেয়… মোবাইলের স্ক্রিনে সময় দেখতে গিয়ে চোখে পড়ে তার,স্কেচ করা মেয়েটার ছবিটা তখনও মুঠোফোনের পর্দায় হাসছে…

“সুন্দর…কিন্তু নাহ,তার মত নয়……’’- কপাল হালকা কুঁচকে ভাবে তরুণ আর্টিস্ট।।

‘তার মত’ বলতে তার প্রেমিকা নয়… আবার প্রেমিকাও… ভালোবাসে সে মেয়েটাকে??

জানে না……সামনাসামনি দেখাও হয়নি কোনোদিন…

তবে?

মেয়েটা আলভীর কল্পনা…মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করলে সে টের পায়-একটা মেয়ের ছবি আঁকছে সে… পদ্মরঙে ধোয়া ফর্সা আকাশের মত একটা ক্যানভাস… সে আঁকছে-মেয়েটার টলমল করা ভরাট  চোখ,কপালের সমতট,পরিমিত টোলে জেগে থাকা গাল,তেমন দুটো ঠোঁট, সূর্যের আলো লুকোনো চুল..

হ্যাঁ,দেখতে পায় সে…কিন্তু পুরো চেহারা নিয়ে মেয়েটা কখনই আসে না তার সামনে,সাত রঙের মিশেলে একটা অন্যরকম “এবস্ট্রাক্ট” হয়ে থাকে…

জানে সে, ছবিটা দেখতে হবে ‘নিখুঁতের’ মত…ছবি দেখলেই শোনা যাবে ‘বালিকা’র নূপুর আর বাতাসের তরঙ্গায়িত ঝগড়া..চোখ ফেরানো যাবে না যা থেকে… মনে হবে,একটু চোখ ফেরালেই  বুঝি পালিয়ে যাবে মেয়েটা….খালি পড়ে থাকবে ‘শূন্যস্থান’ মাখা ক্যানভাস……

’নেই’ বোধের পরিপূর্ণতার ভয় থাকবে তার রঙে…অসহ্যতার স্থৈর্য থাকবে তার প্রতিটি স্ট্রোকে…

এমন একটা ছবি… কিন্তু সেই মেয়েটাকে কোনোদিন চোখে দেখা হয়নি তার… আদৌ হবে কি?

আচ্ছা এমন মেয়ের অমন একটা পোট্রেইট আঁকতে পারবে তো সে?

কেন পারবে না,নিশ্চই পারবে… পারবে সে…

জানে…

কিন্তু মেয়েটাকে পাওয়া যাবে কোথায়? পাওয়াটা কি খুব জরুরি?

নাহ,আলভী ভাবে,না দেখলেও ভেতরের চোখ দিয়ে সে ঠিক আঁকতে পারবে……

পুরো চেহারাটা সে ঠিক পেয়ে যাবে একদিন……

ওর হার্ট বিট বেড়ে যায় একটু…সায় দিচ্ছে যেন নিজের সাথে…

সকাল হচ্ছে তখন… ভোর হতে থাকা আকাশে সাত রঙের ঝিলিক দেখা গেল কি?

আর্টিস্ট ছেলেটা অতশত দেখছে না এখন… ইচ্ছের চোখ দিয়ে সে একটা মাস্টারপিস এঁকে চলছে…

রংধনুর মত?

নাহ,হয়তো আরও অদ্ভুত সুন্দর-জীবন যেরকম…

একপাত্র রংধনু মাখা একটুকরো স্বর্ণ যেরকম…

৪৪৩জন ৪৪৩জন

১২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ