৫ বছরের রিলেশনটা বুঝি আর টিকবে না। এতোদিন, মাস, বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পর্কটার শেষ রক্ষা বুঝি আর হবে না! গায়ে সেন্টু গেঞ্জী আর লুঙ্গি পড়ে বালিশে হেলান দিয়ে ভাবছে শুভ।
নুপুর তার গার্লফ্রেন্ড। ও আদর করে নুপু বলে ডাকে। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে তার সাথে দেখা হয়েছিলো শুভর। শুভ তখন কলেজে পড়ে। চারদিকে বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ডের সংখ্যা দেখে খুব হতাশায় জীবন যাপন করছিলো। একদিন এক বন্ধুর ডেটিং পাহারা দিতে গিয়ে পরিচয় হয়ে যায় নুপুরের সাথে।
সেই থেকে ধীরে ধীরে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। একটা সময় দুইজনের মনে হতো যে তারা একে অপরকে ছাড়া বাঁচবে না। অথচ আজ পাঁচদিন হলো নুপুরের কোন খবর নেই। যে মেয়েটা রোজ কমপক্ষে তিনবেলা খবর নিতো সে এখন খবর ই নেয় না।
শুভ ভাবে মানুষ কিভাবে এতটা বদলে যায়। শুভর পড়াশোনা এখন শেষ। কিন্তু নুপুর এখন তার থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে চলে। শুভ শতচেষ্টা করেও এর কারন বের করতে পারে নি। গোপন সূত্রে জানতে পেরেছে নুপুরকে নাকি কোন বিদেশ ফেরত ছেলে দেখতে এসেছে। ছয় বছর বিদেশ করেছে। অনেক টাকা পয়সার মালিক। তবে মাথায় কোন চুল নেই।
নুপুর একদিন বলেছিলো ওর কাজী নজরুলের মতো বাবরী চুল পছন্দ। নুপুরের পছন্দ বজায় রাখার জন্য শুভও ঘাড় সমান চুল রেখেছিলো! কিন্তু সেই নুপুর আজ কোন টাক লোককে বিয়ে করবে! ভাবতেই অবাক লাগে শুভর। দুনিয়াতে কি টাকা পয়সাই সব কিছু!!
হটাৎ ফোনের রিংটোনে চৈতন্য ফিরলো শুভর। নুপুর ফোন করেছে।
– এই শুভ তুমি কি আমাকে আর ভালোবাসো না?
– কি বলো এসব! আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত তোমাকেই ভালোবাসবো।
– এত ঢং কইরো না। পাঁচ দিনে একটা বার খবর নিছো?
– বারে! তুমিতো বলছো খবর না নিতে!
– আমি যা বলবো তুমি তাই করবে নাকি!?
– হুম, যা বলবে তাই করবো।
– আমাকে নিয়া পালাতে হবে? পারবে?
– উমম…
– কোন উমম টুমম নাই। আমি চিরকাল তোমারই থাকতে চাই। তোমার ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হয়ে থাকতে চাই।
– কিন্তু তুমি এতোদিন এমন অদ্ভুত বিহেভ করেছিলে কেন?
– আমি স্যরি। আমি আসলে এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নেয়ার জন্য খুবই টেনশনে ছিলাম। নাওয়া খাওয়াও বন্ধ ছিলো।
– কি বলো। খাও নাই কেন!
– আরে বাদ দাও এসব। কাল আমরা পালাচ্ছি। ভোর পাঁচটায় আমার বাসার পিছনে দাঁড়াবা। আমরা পালাবো তারপর কাজী অফিস থেকে বিয়ে করে দূরে কোথাও চলে যাবো।
– কিন্তু ……. আমার কাছে যে এখন কোন টাকা নেই।
– জানতাম থাকবে না। আমার কাছে আছে সমস্যা নেই। ঠিক সময়ে চলে এসো কিন্তু। এখন রাখি….
শুভর মনে হলো সে স্বপ্ন দেখছে। ক্ষনিকেই বদলে গেল তার মনের অবস্থা। ফোন চেক করলো আবার। না নুপু সত্যিই ফোন দিয়েছিলো।
সকাল সকাল শুভ নুপুরের বাড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলো। নুপুর একটা কালো বোরকা পড়ে এসছে। সাথে একটা ট্রাভেলিং ব্যাগ। তারা দ্রুত হেঁটে একটা সিএনজিতে গিয়ে উঠে কাজী অফিসের সামনে যেয়ে থামে। তারপর বিয়ের কাজ শেষ করে কক্সবাজারের উদ্দশ্যে রওনা দেয়।
নুপুর শুভর কাঁদে মাথা রেখে বসে আছে। শুভ ও নুপুর একটা ঘোরের মধ্যে আছে যেন! কি ঘটতে কি ঘটে গেল কিছুই যেন বুঝে না শুভ। নুপুর বললো ….
– শুভ আমাদের জীবনটা নিশ্চয়ই খুবই সুখকর হবে।
– হুম…
– তুমি চিরকাল আমাকে এইভাবে ভালোবাসবে তো?
– হুম
– আমাকে কখনো কষ্ট দিবা না তো?
– হুম ..
– হুমম মানে?
– হুমম মানে কি বলছিলা? আমার না ঘুম পাচ্ছে, একটু ঘুমাই?
– এত ঘুম কেন তোমার??
– জানি না……
হটাৎ ই একটা বিকট শব্দে বাস ব্রেক করলো। নুপুর সজোরে মাথায় আঘাত খেল। ওর মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছে। শুভ আতংকিত হয়ে গেল। বাসের মধ্যে একটা চিৎকার পড়ে গেল। আবার জোরে একটা ধাক্কা লাগলো। একটা কাঁচের টুকরো শুভর চোখের ভিতর ঢুকে গেছে। শুভর মনে হলো কেউ জোর করে তার একটা চোখ গেল দিচ্ছে। নুপুর ঘোংগাচ্ছে। তৃতীয়বারের মতো একটা ধাক্কা লাগলো। এই ধাক্কায় শুভর মাথায় ও আঘাত এলো। শুভ জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।
শুভ যখন চোখ খুললো তখন সে হাসপাতালে। তার একটা চোখ অকেজো। এক্সিডেন্টের নাকি পাঁচ দিন হয়ে গেছে। নুপুর জন্য সে চিৎকার করে উঠলো। পরে জানতে পারে ঐ এক্সিডেন্টে নাকি ২০ জন মারা যায়। আর ওদের মধ্যে নুপুর ও ছিলো।
শুভর চোখ বেয়ে জল পড়ছে। এক চোখের জল যেন বৃষ্টির ফোটার মতোই অঝোর ধারায় ঝরছে।
কিছু ভালোবাসা পুর্ণতা পেতে পেতে ও অপূর্ণ থেকে যায়। কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েও ঝরে যায় অকালে। তবে ভালোবাসা থাকে চিরকাল। স্বর্গ থেকে আসে আবার স্বর্গেই ফিরে যায় ভালোবাসা।
১১টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
শেষটা পড়ে মনই খারাপ হয়ে গেলো
এভাবে কেন হয় কিছু কিছু ভালোবাসার ক্ষেত্রে?
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
কেন হয় তা তো জানি না।
কিছু কিছু গল্পে বেদনা থাকা ভালো। 🙂
জিসান শা ইকরাম
অবশ্য বেদনার কথা বেশি দিন মনে থাকে।
মৌনতা রিতু
নাহ! ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে না পেতেই এমন করুণ পরিনতি ভালো লাগলো না। সকালেই বুকটা ভারি হল।
তবে সুন্দর গল্প।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
গল্প হৃদয়কে ছুঁতে পেরেছে এটাই বা কম কিসের।
সুন্দর পরিণতি কি আর সবার ভাগ্যে জোটে!
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যর জন্য।
ব্লগার সজীব
লেখার সমাপ্তিটা খুবই ভালো লেগেছে ভাইয়া_________ কিছু ভালোবাসা পুর্ণতা পেতে পেতে ও অপূর্ণ থেকে যায়। কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েও ঝরে যায় অকালে। তবে ভালোবাসা থাকে চিরকাল। স্বর্গ থেকে আসে আবার স্বর্গেই ফিরে যায় ভালোবাসা।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
🙂 🙂
ভালালাগা জানানোর ধন্যবাদ।
খসড়া
দূর এইটা কিছু হইল। আমন আঘাত পেলাম শেষ পর্যন্ত। ধ্যাৎ মেনে নিতে পারছি না। এই ছেলে ভাল গল্প লেখ, জীবনের গল্প আশার গল্প। আমরা আশা চাই, ভালবাসা চাই, আনন্দ চাই, হাসি চাই।
সত্যিই বড় আঘাত পেলাম।
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
আঘাত দেয়ার জন্য দুঃখিত আপু।
তবে আশার গল্প লিখবো ……লিখি।
এটা কেন যেন হ্যাপি এন্ডিং দেয়ার ইচ্ছা হয় নাই।
সবার ভাগ্যে হয়তো খুব ভালো পরিণতি ঘটে না।
নীলাঞ্জনা নীলা
কষ্ট 🙁
মুহাম্মদ আরিফ হোসেইন
হুম।
কিছু ঘটনা কষ্টেরইই। ;(