মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়ার সব থেকে বড় কষ্ট হল তাকে সারাক্ষণ ধর্ষণের ভয় নিয়ে বড় হতে হয়। এই ভয়ংকর ব্যাপারটি তাকে খুব ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন ইশারায় বোঝানো হয়। একসময় কোলে নিয়ে পিঠে হাত বোলানোর ভেতরেও সে অন্য কিছু টের পায়। এই ব্যাপারটা মা কে বলতে গিয়েও সে বলতে পারে না। উল্টো বকা খাবার ভয়ে সে কাউকে বলবে না। কাউকে না।
কার্টুন দেখার বয়সেই তাকে বোঝানো হয় একা ছাদে যাবে না। একা ছাদ ভাল না। যে বয়সে এরা হাড়িপাতিল নিয়ে নকল নকল রান্না খেলা শিখে সেই বয়সেই এরা একদিন মাকে গিয়ে ফিসফিস করে – এই শিক্ষকের কাছে আমি পড়ব না।
মেয়েদের শৈশব বলে আসলে কিছু নেই। রোজ সন্ধ্যায় বর্ণমালা শেখানোর পাশাপাশি এদের অনেক নীতিমালা শেখানো হয়। পশুদের হাত থেকে বাঁচার নীতিমালা জেনে এরা সাত বছর বয়সেই একুশ বছরের তরুণী হয়ে যায়।
আচ্ছা একুশ বছরের তরুণী কী খুব নিরাপদ? খুব ভাল এক বন্ধু বাসায় যেতে বলল। ধরুন মুভি দেখার জন্যই আসতে বলেছে। তারপরেও তরুণী মনে সবার প্রথমে প্রশ্ন জাগবে –বাসায় কেন? বাসা কী খালি? কোন প্রোগ্রামে গেছে। ফিরতে রাত এগারোটা বাজবে।আমি দেখেছি অনেকের মা এসে উপস্থিত হয়। কিসের ভয় এদের? ছিনতাই? ডাকাতের? পুলিশের না…?? মেয়েদের সারাক্ষণ একটাই ভয়। যে ভয়টা শুধু তার মেয়ে বেলাকেই নষ্ট করেনি; নষ্ট করবে তার পুরো জীবন। তারা কেন পারবে না তাদের জীবনটা উপভোগ করতে???
আমাদের পুরুষ দের জন্য?? আমরা কেমন মানুষ যারা নিজেদের বোনদের নিরাপত্তা দিতে পারি না?
চলুন,সবাই নারীদের সম্মান দিতে শিখি।
১৬টি মন্তব্য
কৃন্তনিকা
একদম সত্যি
সাজ্জাদুর রাহমান সাজিব
হুম।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
বাহ। ধন্যবাদ।
এই একটা ছোট্ট অথচ অতিশয় বড় ব্যাপারটিকেও কোন কোন পুরুষ মনে করে পুরুষতান্ত্রিকতার মুল পুরুধা নারী। কারন নারীই জন্মের শুরু থেকে আরেক নারী(মা) দ্বারা বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয়।
একজনের একটা মন্তব্য হুবহু তুলে দিলাম- “আসলে এই সাব কন্টিনেন্টে নারী নির্যাতনের সুতিকাগার হচ্ছে পরিবার । পরিবারে মহা ক্ষমতাধর হচ্ছেন মা বা শাশুড়ি রূপি একজন নারী । সেই নারীই পরিবারে জন্মনেয়া মেয়েশিশুটির প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দিয়ে (শিশু নির্যাতন) শুরু করেন । এটা করে থাকেন পরিবারের পুরুষ সদস্যের অলক্ষ্যে বা পূরুষ সদস্যের উপর অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে । শুরু হলো সেই মেয়েশিশুর উপর বিভিন্ন রকম বিধিনিষেধের বেড়াজাল । তাকে সকল মন্দকিছু মেনে নিতে অভ্যস্হ করে বেড়ে উঠতে দেয়া হয় । এভাবে একটি নারীশিশু আস্তে আস্তে নির্যাতন সহনশীল হয়ে উঠে আর ক্রমশঃ ঐ নারী ভিতরে ভিতরে একজন নির্যাতক হিসাবে বড় হয়ে উঠেন।”
দিলাম এজন্য যে কেনো একটি মা তাঁর মেয়ের সাথে বিরুপ আচরণ করেন? তার কারন একটাই সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের প্রতিফলন, যার পুরুধা নারী না হলেও নারীকেই ভুমিকায় থাকতে হয়।
অরণ্য
আপনার শেয়ার করা মন্তব্য (কোটেড) আমার ভাল লেগেছে। উনি যথার্থই বলেছেন। আপনি যেভাবে মন্তব্যটিকে দেখছেন আমি অবশ্য একটু আলাদাভাবে দেখলাম। আমাদের মা’দের আরো শিক্ষা দরকার। বলছি মেয়ের বাবা হিসাবেই। মাঝে মাঝে আমিও ভাবি আমার মেয়েটিকে নিয়ে। তার মাও ভাবছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ওর মা’র কিছু কড়া ইম্পোজিশন আছে; আমি সেগুলো নিয়ে চিন্তাও করি বটে। মা’কে শিক্ষিত করা বা ডেভেলপ করা খুবই জরুরী।
সাজ্জাদুর রাহমান সাজিব
সত্যি বলতে আমাদের সবাই কে একটু সচেতন হতে হবে
তাইলেই মনে হয় মুক্তি আসবে।
আমার নিজের একটা সামাজিক সংস্থা আছে।
ঐ খান এ আমমি এইটা নিয়ে জরিপ চালিয়েছি।
তাই লেখাটা।
খেয়ালী মেয়ে
নারী তুমি বুঝি কোথাও নিরাপদ নও 🙁
সাজ্জাদুর রাহমান সাজিব
নিরাপত্তার ভার সবার উপর।
আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
অনিকেত নন্দিনী
“আমাদের পুরুষদের জন্য???” -পুরুষ নয়, পরিণতবয়স্ক পুরুষ বলুন। একটা বয়ঃসীমা পর্যন্ত ছেলেরাও নিরাপদ নয়। মেয়ে শিশুদের পাশাপাশি প্রচুর সংখ্যক ছেলে শিশুও পাশবিকতার শিকার হয় রোজ।
হ্যাঁ, নারীদের ভোগান্তি বেশি তা হোক সে শিশু বা পরিণতবয়স্ক।
একজন নারী আজীবন তার মনের মাঝে যৌন নিপীড়নের ভয় নিয়ে বেঁচে থাকেন আবার তার মৃত্যুর পরেও কিন্তু রেহাই নাই। কিছু পিশাচ মর্গ, মরচুয়ারি বা কবরস্থানের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় মৃতদেহের সাথে নোংরামি করার জন্য।
জীবিত বা মৃত কোনো অবস্থাতেই নারী নিরাপদ নয়। 🙁
সাজ্জাদুর রাহমান সাজিব
হ্যা ঠিক বলেছেন আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
নারী হলো সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্য। এমন অনেক আছে নারীদের পক্ষে লিখবে, আবার সে-ই ব্যবহার করবে। আমার জানামতে এমন অনেক ছিলো, যাদের মুখোশ খুলে দিয়েছিলাম।
যাক ওসব কথা। নারীর সম্মান আসলে নারীর দিতে জানতে হবে প্রথমে, তারপর ঘরের ছেলেকে শেখাতে হবে নারী শুধুই কাম বা ভোগের বস্তু নয়। তাহলেই একদিন নারীদের আর এতো ভয়ের মধ্যে জীবন কাটাতে হবেনা।
ভালো লিখেছেন অনেক ভালো।
সাজ্জাদুর রাহমান সাজিব
আমি কিছু সামাজিক সংস্থার সাথে জড়িত।
আমি নারি শিশু নিয়ে গুটিকয়েক কাজ করেছি।
সত্যি বলতে কেউ নিরাপদ না।
অরণ্য
ভাল লিখেছেন।
তবে আমার মনে হয় মানুষের আচারনগত পরিবর্তন আনার জন্য কোন ‘না’ কে বার বার বলে সেই ‘না’ কে না বলতে বলার চেয়ে কোন এক ‘হ্যাঁ’, যা আসলে আমি বলতে চাই; তাই সরাসরি নানা দিক থেকে বলে ফেলা ভাল।
শুভ কামনা।
সাজ্জাদুর রাহমান সাজিব
ধন্যবাদ।
দোয়া করবেন।
শুধু লেখা না,মানুষের জন্য কিছু করার প্রয়াস আছে।
দোয়া করবেন।
তানজির খান
আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা এটাই প্রমাণ করে। ভাল লিখেছেন। আমার একটা লেখা ছিল পত্রিকায়,সেখানে কিছু রিকমেন্ডসন দিয়েছিলাম এই ব্যাপারে। আসলে পরিবারের পাশাপাশি পাঠ্য সূচিতেও নারীকে সন্মান করার বিষয়টি শেখাতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনে্র পাশাপাশি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক হতে হবে। পারলে পি এস সি এর মত করা যেতে পারে।
সাজ্জাদুর রাহমান সাজিব
হ্যা।
ঠিক বলছেন ভাইয়া।
এই চ
ব্যাপারে সুশিক্ষাটাই বড় সহায়ক হবে আশা করি।
শুন্য শুন্যালয়
বলেছিলাম কোথাও এমন কোন মেয়ে নেই যে বলতে পারবে সে শিশু বয়স থেকেই কোন না কোনভাবে এরকম অভিজ্ঞতার স্বীকার হয়েছে। অনিকেত আপুর সাথে একমত। ছেলে শিশুরাও কিন্তু এই লাঞ্ছনার বাইরে নয়। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনা কোন ধরনের শিক্ষা এই বিকৃতমনাদের মস্তিষ্ক উন্নত করবে। সমাধান একটাই। যখন এ ধরনের খবর জানতে পারবো, তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করবো।
লেখাটি ভালো লেগেছে। আপনি যেহেতু শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন আরো অনেক অভিজ্ঞতাই শেয়ার করবেন আশা করছি।