দ্যা কিলার
মেয়েটার নগ্ন দেহটা পড়ে আছে । স্তন দুটো থেকে চুয়িয়ে চুয়িয়ে রক্ত পড়ছে । একজোরা নিস্পাপ চোখ এখন ও মায়া ভরা দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে খুনিটার দিকে । বাঁচার জন্য বা অন্য কিছু বলার চেষ্টা করছে মেয়েটা । গলায় নাইফের আরেকটা আঘাতে চিরদিনের জন্য নিথর হয়ে গেল দেহটা । খুনিটা এবার সুনিপন ভাবে চোখ দুটো উঠিয়ে নিল । তারপর রেখে দিল তার ব্যাগে ।
***
ভয়ানক স্বপ্নটা প্রতিদিনের মত আবার ও একবার দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেল আবিরের । সারা শরীর ভিজে গেসে ঘামে । খনিকের মধ্যে চোখ দুটো লাল বর্ণ ধারন করেছে । ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে কিছুটা পান করলো আবির । তারপর রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় গিয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে লম্বা টান দিয়ে আকাশের দিকে একরাশ ধোয়া ছেড়ে হেলানো চেয়ারটাই বসে পড়লো । আবির এখন আর ভাবতে চায় না ভয়ানক স্বপ্নটা নিয়ে ।
***
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভয়ানক স্বপ্নটা বার বার মাথাই চলে আসতেছে । কিছুতেই ভুলা সম্ভব না । যদিও বা অন্য কিছু চিন্তা করে ভুলিয়ে দেয় । পরদিন আবার সেই স্বপ্নটা দেখে । কিছুদিন আগে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে গিয়ে ছিল আবির । কিন্তু কোন লাভ হয়নি । বেচারা সাইকিয়াট্রিস্ট কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেনি । উল্টো যখন বলছিল এসব আবিরের হ্যালুজিনেশন । আবির সে দিন রাতেই সাইকিয়াট্রিস্ট সাহেবকে তার বাসাই গিয়ে হাত পায়ের রগ গুলো কেটে সিলিং ফ্যান এর সাথে টাংঙ্গিয়ে দিয়ে ছিল । সাইকিয়াট্রিস্ট সাহেব মনে হয় ব্যাপারটা হ্যালুজিনেশন মনে করে প্রথমে । তারপর কিছুক্ষণ ছটফট করে চিরদিন এর জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় । পরদিন পুলিশ তার বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করে ।
***
সিগারেট পুড়ে শেষ হওয়ার ফলে আবির হাতে ছ্যাকা অনুভব করে । ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে আবির । আবারও আবির স্বাভাবিক ভাবে সব কিছু ভুলে যাবার চেষ্টা করে । কারন একজন সিরিয়াল কিলার যদি এসব ভাবে তাহলে বেশি দিন তার প্রফেশন টিকে থাকবে না । যদি কোন সিরিয়াল কিলার এসব নিয়ে যত বেশি ভাবে সে তত তারাতারি পাগলে পরিনত হবে । আবির এ সম্পকে ভাল মতই জানে । ক্রিমিনালজম উপর আবির অসামান্য জ্ঞান অর্জন করেছে । তাই প্রত্যেকটা খুনই সূক্ষ্ম ভাবে করতে পারে ।
আবারও ভয়ঙ্কর স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে গেল আবিরের । স্বপ্নটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে পুরনো দিনগুলিতে ফিরে গেল আবির । মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আবির কলেজে পড়ার সময় বাবা – মা একটি অ্যাকসিডেন্ট এ মারা যায় । আবিরের কোন ভাই-বোন ও পিছুটান না থাকাতে রাজধানী ঢাকাতে এসে পড়ে । ঢাকাতে এসে ভার্সিটির দিন গুলো একা আর নিঃসঙ্গতা গ্রাস করেছিল । ঢাকাই আবিরের কোন বন্ধু না থাকাতে সব সময় একা থাকতো । হঠাৎ একটি মেয়ে এসে আবিরের জীবনকে পুরোপুরি পাল্টে দেয় ।
*****
আবির ক্যাম্পাসের এক কোনাই বসে কাগজের মধ্যে বার বার লিখছিল আমি আর কাউকে ভালবাসি না । তারপর কাগজ গুলো ছিড়ে শুন্য আকাশের দিকে ছুড়ে দিচ্ছিল । ঠিক সেই মুহূর্তে একটি মেয়ে এসে আবিরের হাত থেকে কাগজ গুলো কেরে নিল । পরক্ষনে আবির কে এত্তগুলো বকে দিলো । আবির মুগ্ধ নয়নে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিল । এরপর প্রতিদিন মেয়েটি এসে আবিরের ওপর কর্তৃত্ব ফলাতে চেষ্টা করত । ধীরে ধীরে মেয়েটির প্রতি আবির দুর্বলতা অনুভব করে । এক সময় সম্পর্কটা ভালোবাসার রুপ নেয় । এশার ভালোবাসা পেয়ে আবির আর নিজেকে একা অনুভব করতনা ।অনেকটা নিঃসঙ্গতা কমে গিয়েছিলো । শুরু হয় এক সাথে পথচলা ।
****
কিছু দিন যেতে না যেতেই এশা বদলে যায় । আবির কে কেমন যেন দূরে ঠেলে দেয় । ফোন ফেসবুক ভার্সিটিতে শুরু করে সব খানে এশা আবির কে এভয়েড করতো । আবার শুরু হয় আবিরের কষ্টময় একা নিঃসঙ্গ পথচলা ।
মানুষিক দিক দিয়ে আবির পুরোপুরি ভেঙে পড়ে । এশার সৃতি গুলো আবির কে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিত । অনেক বার পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চেষ্টা করে কিন্ত আবির পারেনি । আর এই নিঃসঙ্গতা আর একাকীত্ব এক সময় আক্রোশের জন্ম নেয় । জেদের বশে শেদিন রাতেই নিঃসংশ ভাবে এশা কে খুন করে ফেলে ।
এশাকে খুন করার পর থেকে আবির পুরোপুরি সাইকো হয়ে যায় ।
এরপর থেকে কোন মেয়েকে আবিরের সহ্য হইনা । অহেতুক কারনে আবির মেয়ে দের খুন করে । মাঝে মাঝে বড় ধরনের কন্টাক কিলিং করে ।
তবে ভিক্টিম শুধু মেয়ে ই হতে হবে । বিশেষ করে এশার মত ছলনাময়ী মেয়েদের খুন করে অদ্ভুদ রকমের আনান্দ পায় আবির ।
***
প্রতিদিনের মত আজও আবির ঘুমের মধ্যে সেই ভয়ানক স্বপ্নটা দেখতে ছিলো ।
ঘড়ির অ্যালার্ম এর শব্দে ঘুমটা ভেঙে যায় । সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে ।
আবির এখনো ঘড়ির পাশে সযত্নে রাখা এশার নিষ্পাপ চোখজোরা দেখতে পাচ্ছে ।চোখদুটো অসম্ভব মায়া ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আবিরের দিকে ।
লিখাঃ ছন্নছাড়া বেনজামিন আবির
একটি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
কিলার বেশ ভাল লিখেছেন।
প্রত্যাখ্যানে অনেকেই বেশ পালটে যায়,
তবে এমন খুন করে খুনী স্বাভাবিক থাকে কিভাবে তা ভাবি মাঝে মাঝে আমি।
অন্য ব্লগারের কিছু লেখাও পড়ুন……
শুভ কামনা।