শুক্রবারের পরিবর্তে রবিবার বিকালে কর্মসূচী পালন চলছে উপজেলা সদরে। ইতিমধ্যে প্রতি ইউনিয়নে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি এবং সম্পাদক শুধু বক্তব্য রাখতে পারবেন এবং সেভাবেই এগিয়ে চলছে সমাবেশ সামাদের সঞ্চালনায়।

সভায় ইউএনও, পিআইও এবং ইঞ্জিনিয়ার সাহেবগনকে আহ্বান জানানো হয়, প্রান্তিক মানুষের প্রাপ্য সরকারী বরাদ্দগুলি তাঁরা যাতে হেফাজত করেন সেইসমস্ত মানুষগনের জন্য, যাঁদের অনূকুলে সরকার বরাদ্দগুলি প্রদান করে। সরকারী প্রতিনিধি হিসাবে আপনাদের কাছে এটা আমাদের দাবীও। আপনারা না করলে এই হেফাজত আর কে করবে ? অসহায় মানুষকে হেফাজত করতে আপনারা আসলে নীতিগতভাবেও বাধ্য। বিবেকের কাছে জানতে চাইবেন শুধু, তাহলেই বুঝবেন নীতিগতভাবে আপনারা কিভাবে  বাধ্য । আপনারা নীতিবান মানুষের মত নিয়ম-নীতি মেনে চলবেন এই কামনা করি আমরা।

আপনারা আমাদের এই বিশ্বাসকে সত্য বলে প্রমান করবেন এবং বাস্তবেও রুপদান করবেন।

একইসাথে আপনাদের উপর সম্মান রেখেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, যুগ যুগ ধরে ইতিমধ্যেই কিন্তু অনেক অত্যাচার, শোষন-বঞ্চনা সয়েছে পল্লীর মানুষ। নিশ্চিত ধরে রাখতে পারেন, আর সইবেনা। আপনাদের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নাই, তবে আপনাদের মধ্যে যাঁরা ভালোর পথে বদলাবেননা, পরিশুদ্ধ হবেননা,   স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের সাথে বনবেনা আমাদের ।

সভায় গতবছর হতে কাবিখা-কাবিটা-টিআর ইত্যাদি যতধরনের বরাদ্দ আছে, সেগুলির হিসাব প্রদান করার জোর দাবী জানানো হয়।  চলমান কাজগুলির মান উন্নত করার দাবী জানানো হয়। অন্যথায় প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস (পিআইও) ঘেরাও করার ঘোষনাও আসে।

অবিরতভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অংগীকার করা হয়।

বক্তারা আজিজকে শেষে বলার অনুরোধ করলে বলেন তিনি, স্যার বলেই সনবোধন করলেন তিনি টিএনও সাহেবকে, সরকারের পক্ষে আপনিই এখানে প্রধান ব্যক্তি। আপনারই কাছে আমাদের অভিযোগ প্রথমে, আবার অনুরোধও, ভাল হয়ে যান আপনি স্যার, যদিও আমরা নিশ্চিত নই আপনি ভাল, না-কি তা নন। কারন এখানে আপনার চাকুরীরত অবস্থায়ই সরকারী বরাদ্দ লুটপাট হয়েছে।

তবে আমরা জানি মানুষের মুখে মুখে যাঁর সম্পর্কে এই কথাটি প্রচলিত নয় যে, লোকটি সৎ, তার সততা সন্দেহজনক। মানে সৎ মানুষের সততার কথা মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। যাঁর সততা উচ্চকিত নয়, ধরতে হবে, কিছু-না-কিছু গলদ আছেই তাঁর মধ্যে।

পরম করূণাময় আল্লাহ আপনাকে এতবড় অফিসার বানিয়েছেন । প্রান্তিক মানুষের গম-চালের বরাদ্দপত্র যখন আপনি স্বাক্ষর করেন, আপনার কি মনে হয়না এর মধ্যে কোন অনিয়ম আছে কি-না, তা যাচাই করা আপনার উচিত ? হতে পারে আপনার অন্যধরনের কোন বসের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ চাপে আপনি তা করেছেন, অথবা হয়েছেন লুটপাটের সহযোগী। উত্তাল এই জণতাকে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন আপনি কি করবেন। তবে শান্তির জন্যই আমরা চাই, সম্পূর্ন বদলে যান আপনি এবং আপনারা সবাই। এটা কোন থ্রেট না, শোষিত মানুষের প্রানের আকা্ংখা ।

সম্মানিত জনপ্রতিনিধিগনের সদয় অবগতির জন্য জানাই, মানুষ আপনাদিগকে ভোট দিয়ে সম্মানিত করেছেন। কিন্তু আপনারা জনতাকে সন্তুষ্ট না করে সামান্য কিছু দলীয় লোকজনকে সুযোগ করে দিয়েই যাচ্ছেন আর মেয়াদশেষে ক্ষমতা থেকে বিদায় হচ্ছেন। এর চেয়ে কি এটাই ভাল নয় যে, জণতাকে সন্তুষ্ট করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা। না-কি সম্পদ বাড়েনা যে ক্ষমতায়, তার উপর আকর্ষন কম!

ছোট মুখে তবুও একই আহ্বান থাকবে আপনাদেরও উপর, মানুষেরই সেবা করুন, দলীয় লোকজনের বদলে। দলীয় লোক আপনার সম্মান বাড়াবেনা, আপনার সম্মান স্থায়ী করতে পারে শুধুই জনতা, শুধুই গণমানুষ। কাতারে আসুন তাঁদের। মীমাংসা আপনাদের করতেই হবে।

এভাবেই আপনাদের উপর চাপ অব্যহত রাখবো আমরা সবসময়।  উপদেশ দেয়ার জন্য দু:খিত। আমাদের উপদেশ যাতে না নিতে হয়, সে-ব্যবস্থা করবেন। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, শান্তি চাই। সঠিকভাবে সরকারী বরাদ্দ বিলিবন্টন করুন, সঠিকমানের কাজ করুন, কোন অসুবিধা হবেনা। তবে অন্যথা হলেই গর্জে উঠবো আমরা, থামবোনা।

দীর্ঘ প্রায় একমাস পর হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলেন আজিজ। এর মধ্যে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা। সেদিনের বিক্ষোভ সমাবেশের পর ভ্যানে করে গ্রামে ফিরছিলেন আজিজসহ অন্যরা। পথে ওঁত পেতে থাকা কিছু দুর্বত্ত তাঁদের উপর হামলা চালায়। আজিজসহ আরো দু’একজন আহত হয়েছিলেন, তবে আজিজের অবস্থা একটু বেশীই খারাপ ছিল। লোহার বাড়ীতে বাঁ হাত ভেংগে গিয়েছিল তাঁর, যা সারতে এই একমাস লেগে গেল।

একইদিকে বাড়ী বলে সাথে সামাদও তার সাথেই যাচ্ছিলেন সেদিন । ঘটনার আকস্মিকতায় সামাদ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন এবং দৌড় দিয়েছিলেন। পরক্ষনেই আবার এসেওছিলেন ফিরে, আজিজ ততক্ষনে পড়ে গিয়েছেন রাস্তায়, পড়ে কাতরাচ্ছেন। সকলে মিলে উঠিয়ে রক্তাক্ত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে তাঁকে দেখতে অনেকেই এসেছিলেন। অন্যতম হচ্ছেন, উপজেলা ম্যাজিষ্ট্রেট। সততার সুনাম আছে লোকটার, সবাই জানে। আরো এসেছিলেন উপ-জেলারই একজন ইঞ্জিনিয়ার আর মিডিয়ার মানুষজনতো অহরহ আসছিলেনই।

এখন কি করবেন ? উচ্চারিত অথবা অনূচ্চারিত এই প্রশ্নটিই ঘুরে-ফিরে আসে। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব বলেন, আমি আপনার আন্দোলনকে সমর্থন করি এবং গোপনে হলেও আমি আপনাকে সহযোগিতা করবো।

ইঞ্জিনিয়ার বলেন, আপনার তদন্তে প্রয়োজন হয়, এরকম ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের কোন হিসাব-নিকাশ লাগলে জানাবেন। সঠিকভাবে বের করে দেব। দরিদ্র মানুষের প্রাপ্য বুঝে নেয়ার যে আন্দোলন করছেন আপনারা, আমি যেভাবেই হোক, সহযোগিতা করবো স্যার।

একদিন দেখা যায়, প্রথমদিনের আক্রমনের হাত থেকে আজিজকে বাঁচানো সেই দুইজন এসেছেন। গোপনেই পরিচয় দেন তারা। আজিজও চিনে ফেলেন তাদের। দ্বিতীয় আক্রমনের সময়ও আমরা ছিলাম স্যার। কিন্তু ভীড়ের কারনে পিছিয়ে পড়েছিলাম কিছুটা। নাহলে এরকম হোতনা। আমরা খুবই দু:খিত স্যার, তবে আমরা কিন্তু সবসময় খবর রাখি, আগামীতেও রাখবো। আমরাও তো আসলে গরীব চাষীরই ছেলে স্যার । আপনার নিরাপত্তায় অনেক আগে থেকেই স্বেচ্ছা-নিয়োজিত আমরা । সেদিন ভীড়ের কারনে যা হয়েছে, আপনার কাছাকাছি থাকা সম্ভব হয়নি । এরকম আর হবেনা ।

সারাদেশব্যপী না হলেও এই আন্দোলনের খবর মিডিয়ার কল্যানে দেশের অনেক জায়গায় পৌঁছে যায় । দুর-দুরান্ত থেকেও অনেকে আসেন, ছাত্রই বেশী । অতি কষ্টে যাতায়াতের টাকা যোগাড় করে হাসপাতালে দেখা করে যান কিছু শিক্ষিত বেকারও ।

নিজ এলাকারও মানুষজনের কেউ কেউ এসেছেন । গরীব মানুষ বলে আসতে পারেননি সকলে তারা । তবে যাঁরাই এসেছেন, আন্দোলন করার অংগীকার ব্যক্ত করে গেছেন সবাই ।

এলাকায় মাটির কাজে সেরকম কাজ-না-হওয়া হয়না আর । যেখানে কাজ হয়, ভালোই হয় । আগের চেয়ে অনেক বেশী কাজ হয় এখন । মানুষের মাঝে শস্য বিতরনেও সঠিক পরিমানেই দেওয়া হয় । চেয়ারম্যানের চ্যালারা তাঁর গোপন নির্দেশে আগে যে কম দিত, এখন আর কম দেয়না । তবে ভূয়া নামসর্বস্ব প্রকল্পগুলির বিষয়ে কিছু হয়নি এখনও । মানুষ মনে করে, তাদের আন্দোলনের ফসল এসব ।

আর এভাবেই এগিয়ে চলে ছোট্ট ইউনিয়ন সাতনলীর সারাদেশময় হয়ে ওঠার গল্প ।

(সমাপ্ত)

 

৫৭০জন ৫৭০জন
0 Shares

৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ