– আমার কি হয়েছে ডাক্তার আন্টি?
-সিরিয়াসলি! আমাকে আন্টির মতো লাগে!
– সরি, সুন্দরী ডাক্তার।
– রসিকতা করবেন না। আমি ডাক্তার। কমেডি শো’র জাজ না।
– জ্বী আচ্ছা।
– আপনার শ্বাসে সমস্যা। সারাদিন বাসায় বসে থাকার কারনে এমন সমস্যা হচ্ছে। মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিবেন। সবুজ গাছপালার আশেপাশে থাকবেন। পার্কে অনেকটা সময় কাটাবেন।
– গাছপালা তো সবুজই হয়।
– -_- আপনি একটু বাচাল ও বটে। এ সিরাপটা চারচামচ করে খাবেন।
– আমার তো মাত্র দুইটা চামচ আছে।
– উফ! আপনি এখন আসুন।
সুন্দরী মহিলাদের রাগিয়ে দিতে একপ্রকার মজা পায় হিমেল। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। ডাক্তারনীকে রাগিয়ে দিয়ে সে বেশ মজা পেল। এখন তাকে যেতে হবে। পেট ভরে কিছু হাওয়া খেতে হবে। সবুজ হাওয়া। কি অদ্ভুত রোগ! আর কি অদ্ভুত চিকিৎসা!
হিমেল পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে।আর হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তার সামনে ধীরে গতিতে বয়ে চলছে স্বচ্ছ পানি। সে পানির উপর নীল রংয়ের একটা বোট দুলে দুলে চলছে। বোটের উপর একটা মেয়ে বসে আছে। মেয়েটাও নীল রংয়ের ড্রেস পড়ে আছে। মাথায় হেজাব পরা। কপালে নীল টিপ। নীল একটা চমৎকার রং। অনেকে একটাকে দুঃখের রং বলেন। কিন্তু এ মেয়েকে দেখে কিছুতেই বলা যায় না নীল দুঃখের রং। বরং এটা সুখের রং। মেয়েটার পাশে তার সখা বসে আছে। সখাকে এখন আদর করে বয়ফ্রেন্ড ডাকা হয়, অনেকে বাবু ডাকে, আবার অনেকে ডাকে জান। তাদের সুখের বোট ভ্রমনে ঝামেলা করলো একটা দুস্টু কাক। উড়ে যাওয়ার সময় তার সখার মাথায় প্রকৃতির জিনিস বিলিয়ে দিলো।
দুর্গন্ধে নীল বালিকা বালককে বোট তীরে ফিরাবার জন্য তাড়া দিতে থাকলো। বোট তীরে গেল। বালক আজ্ঞাবহ জীনের মতো বালিকার হুকুমে বাসায় গোসল করতে চলে গেল।
হিমেল একটু হাসলো। সে কখনো জয় বাংলা না বললেও জয় কাকার জয় বলিলো। মেয়েটা হিমেলের পাশে এসে দাঁড়াল। হিমেল তখনো হাওয়া খাচ্ছিলো।
– আপনার মুখে কি ঘা হয়েছে?
– না। আমি হাওয়া বাবা।
– মানে!
– সিম্পল। হাওয়া খেয়ে বাঁচে যে সে হাওয়া বাবা।
– আপনি হাওয়া খান!
– তবে কি আপনার ধারনা আমি হা করে আপনাকে দেখছিলাম?
– তাই তো মনে হচ্ছে।
– অদ্ভুত! আপনাকে হা করে দেখার কিছু নাই। হা করে খাওয়া হয়, আর চোখ দিয়ে দেখা হয়। ক্লিয়ার?
– হুম। আপনি কতবছর ধরে হাওয়া খাচ্ছেন?
– আজকে থেকে। ডাক্তার বললো হাওয়া খান। প্রকৃতির হাওয়ার মধ্যেই সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান।
– স্ট্রেঞ্জ!
– আপনি ট্রাই করবেন?
– মাথা খারাপ!
– তাহলে বসুন।
– আপনি দেইখেন হা করে আবার উপরের দিকে তাকাইয়েন না। কাক কিন্তু যখন তখন….
– কাক মানুষ চিনে। আমার সাথে বেত্তমিজি করতে পারবে না।
তখনই দুষ্টু কাক হিমেলের কাঁধে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিলো। আর নীল বালিকা হাসতে হাসতে হাঁস হয়ে গেল।
– আহারে বেত্তমিজ কাক বাবা চিনলো না!!
– কাকটা নাস্তিক। বাবা টাবায় বিশ্বাস নেই।
তারা দুজনেই হা হা করে হেসে উঠলো। হিমেল মেয়েটার হাসিতে মুগ্ধ হলো। কিন্তু তার সখা আছে। কি করে কি করবে তা বুঝতে পারলো না।তার মাথায় ভাবনা আসতে লাগলো – মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড দেখতে কালো। গাঁজাখোর টাইপ। তাদের জুটি মিলে নাই। এটা ভেঙ্গে দেয়া উচিৎ।
– তা আপনার নাম কি?
– দিলরুবা। আপনার?
– হিমেল। নীল রং আপনার প্রিয় নাকি?
– হুম। অনেক। আপনি কি করেন?
– আমি হাত দেখি। জ্যোতিষ।
– তাই! আমার হাতটা দেখুন তো।
হিমেল এটাই চাচ্ছিলো। তার বয়ফ্রেন্ড আসতেছিলো। একটা ভুল বুঝাবুঝির সুবর্ন সুযোগ হিমেল কাজে লাগিয়ে ফেললো।
– বাহ্। আপনার হাত তো অনেক সুন্দর।
– থ্যাংক্স। এবার বলুন আপনার জ্যোতিষ চোখ কি দেখতেছে?
– আপনার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। খুব ভালো ঘরে বিয়ে হবে। বর্তমান প্রেম টিকবে না। ছেলে ভালো না।
– এসব কি বলছেন!
– হাতের রেখা তো তাই বলছে!!
বালিকার বয়ফ্রেন্ড এসে তার পিছনে দাঁড়ালো। ঠান্ডা গলায় বললো –
– ছিঃ! দিলু ছিঃ! তুমি এমন করবে আমি ভাবতেও পারি নি।
– আরে! তুমি! এত জলদি কি করে এলে?
– জলদি না? আরেকটু দেরি করলে তো কি না কি করে ফেলতা!
– একদম ভুল বুঝবা না। তুমি যা দেখছো তা কিন্তু তা না।
– নিজের চোখকে তো আর অবিশ্বাস করতে পারি না। খারাপ মেয়ে। চরিত্রহীন কোথাকার। ……
৩টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
নাহ ভালো লাগলো না।
অলিভার
হাওয়া বাবার চরিত্রটা অনেকটা হিমুর বৈশিষ্ট হতে ধার নেয়া মনে হচ্ছে। আর মেয়েটার ব্যবহার কিছুটা ‘ইজি গোয়িং’ টাইপ দেখানো হলো না?
যাই হোক, চারিত্রিক ভিন্নতা আর ঘটনার বৈশিষ্টে আরও কিছু বাস্তবতার ছোয়া থাকলে সম্ভবত “হাওয়া বাবা” চরিত্রটা আরও শক্তিশালী হবে 🙂
তবে প্রথম অংশটা পড়ার সময় কিছুটা মজা পেয়েছি 😃
মৌনতা রিতু
মাথার উপর দিয়ে গেলো। কাক এটা কোনো কাজ করল! মেয়েদের এতো সহজ করে কোন দিল লেখক।