– মন খারাপ?
– আপনি কে?
– আমি একটা ছেলে।
– সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি। হাবলার মতো কথা বলেন কেন? নাম পরিচয় কি?
– স্ট্রেঞ্জ!
– এখানে স্ট্রেঞ্জের কিছু নাই। নাম, পরিচয় কি?
– আমি নিলয়। ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট।
– ও… আমি নীরা। বসুন কথা বলি।
নিলয় একটু অবাক হলো। রুঢ বিহেভ করার মতো সে কিছু করে নি। মেয়েটা মলিন মুখে বসে ছিলো। আর কিছুক্ষন পর পর চোখ মুছতে ছিলো। সে ভেবেছিলো মেয়েটার মন খারাপ। তাই কথা বলতে আসা। কিন্তু শুরুতে একটা ঝাড়ি খাবে এটা আশা করে নি।
– আপনার মন খারাপ?
– হুম।
– কেন?
– আমার একটা ছেলেকে পছন্দ ছিলো।
– সে কি মরে গেছে?
– -_- বাজে কথা বলছেন কেন!
– সরি। তাহলে মন খারাপের সাথে এর সম্পর্ক?
– আজকে তার সাথে প্রথম দেখা। খাওয়া দাওয়া করে ও বললো ও মানিব্যাগ আনতে ভুলে গেছে।
– ভুল তো হতেই পারে।
– না! এটা ভুল না। আমি দেখেছি ও মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে রিক্সা ভাড়া দিয়েছিলো।
– ও!
– ছোটলোক একটা।
– আসলে এসব প্রেম ট্রেম করার কাজে আত্মা লাগে। যার আত্মা যত বড় তার মানিব্যাগের ওজন তত বেশী।
– স্ট্রেঞ্জ! প্রথম দিন আসলো। আর এইদিনই ভন্ডামি করলো!
– তাহলে?
– তাহলে!
– এখনো পছন্দ করেন?
– আরে ধুর! এরকম ভন্ডকে পছন্দ করার কোন মানেই হয় না।
নিলয় শিখলো ভালোবাসার পূর্বশর্ত মানিব্যাগ সর্বদা পাশে থাকতে হবে। টাকা থাকুক আর না থাকুক সেটা বিষয় না।
– তাহলে মন খারাপ করছেন কেন?
– আমাকে অনেক টাকা বিল দিতে হইছে।
– বাহ্!
-বাহ্!!?
– হুম। ও তো একলা খায় নাই।
– তাতে কি! ওই তো আসতে বলছিলো।
– আচ্ছা, আমি যদি ওর বিলটা দিয়ে দেই, তাহলে কি মন ভালো হয়ে যাবে?
– আপনি কেন দিবেন?
– একটা সুন্দর মেয়ে মন খারাপ করে থাকবে তা আমার ভালো লাগছে না।
– হিহিহিহিহি!
– ঔ!
– কি হলো?
– আপনার হাসি অনেক সুন্দর। একদম দিলের মাঝে গিয়ে নাড়া দিলো।
– ফ্লার্ট করছেন?
– না। কিছু মেয়ে থাকে যারা হাসলে মায়া এসে ভর করে তাদের উপর। আপনি তাদের একজন।
– আচ্ছা, আপনার উদ্দেশ্য কী?
প্রশ্নটা শুনে একটু ভড়কে গেল নিলয়। মেয়েটা অনেক সুন্দর। একটু কিপ্টা আছে সেটা ব্যপার না। হাসলে যেন মুক্তা ঝরে। উদ্দেশ্য কি বলা যায়? ভালো লাগে? হটাৎ ভালোবাসা? এই যুগে হটাৎ ভালোবাসা বলে কিছু নেই। ধীরে ধীরে এগুতো হবে।
– উদ্দেশ্য?
– হুম। উদ্দেশ্যটা কী?
– পৃথিবীর চমৎকার হাসির অধিকারী একটা মায়াবতী মেয়ের বন্ধু হওয়ার বৃথা চেষ্টা।
– এক্সকিউজ মি! অধিকারী না অধিকারিনী হবে। আর বৃথা কেন হবে? আমরা তো প্রায় বন্ধুই হয়ে গেলাম।
– সত্যি?
– হামমমমমম!
– তাহলে চলো সেলিব্রেট করি।
– হি হি হি! এসব সেলিব্রেট করতে হয়?
– কেউ না করুক। আমি করতে চাই। দিনটা স্মরণীয় করে রাখতে চাই।
– দ্যান লেটস গো।
“তারপর? তারপর কি হইছে দাদু?” নিলয়ের দুই নাতি আর এক নাতনী গভীর মনেযোগে এতক্ষন দাদুর প্রেম কাহিনী শুনতেছিলো। হটাৎ থেমে যাওয়ায়। তারা একটু বিরক্তই হলো।
– গলাটা গ্যাড় গ্যাড় করছে। তোদের দাদিকে বল এক কাপ চা দিতে।
– ও দাদিইইই! দাদিইইই! দাদুকে চা দাও।
বলো দাদু তারপর কি হইছে?
– তারপর? তারপর ঐ বন্ধুটা তোদের দাদি হয়ে গেছে।
– এভাবে না। সুন্দর করে বলো।
– দে আমার চুলগুলা টেনে দে। ছোটটা আমার হাতের আঙ্গুলগুলা টান।
– আমার ঘুম পাচ্ছে। আমার ও। আমারও।
নিলয়ের তিন শ্রোতা কাজের ফরমায়েশ পেয়ে বাহানা করে চলে গেছে। আসলে এটা ছিলো ট্রিক। নীরা চা আসলে ভালোবাসার কথা বলবে দুজনে। ভালোবাসা আজকাল অতীত স্মৃতি মন্থন। অতীত স্মৃতি মনে করে একটু হাসাহাসি করা, এইতো বেশ বুড়োবুড়ির প্রেম। বুড়ো হয়েছে তো কি হয়েছে। ভালোবাসা এখনো অটুট আছে।
৪টি মন্তব্য
অলিভার
টোনাটুনির গল্প ভালো ছিল 🙂
শাহানা আক্তার
বাহ! চমৎকার লাগলো।
নীলাঞ্জনা নীলা
প্রথম যা ভেবেছিলাম, শেষে এসে ধাক্কা খেলাম। এ কি হলো! ;? 😮
জিসান শা ইকরাম
কত আকর্ষনিয় ভাবে লেখেন আপনি। লেখায় চুম্বকিয় শক্তি আছে, আপনার লেখা পড়লে আমি লোহা হয়ে যাই, লেখা যে চুম্বক।