
গত ১৬ ডিসেম্বর কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ আল-আহমাদ আল-জাবের আল-সাবাহর মারা গেছেন। ছবিতে থাকা কবরটি কুয়েতের প্রয়াত আমির শেখ নাওয়াফের। কুয়েতের মত উন্নত এবং প্রভাবশালী দেশের আমিরের কবরস্থানের ছবিটা দেখে কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে যাই। এত বড় ধনি একটি রাষ্ট্রের আমিরের কবরস্থান অন্যসব সাধারণ কবরের মতই। প্রথমে কেউ সাইনবোর্ড না দেখে চিনতেই পারবেনা এটি কুয়েতের আমিরের কবর। কোনো সাজসজ্জা নেই, ইট কিংবা পাথর দিয়ে ঢালাই করা কিংবা বালু কংক্রিট দিয়ে বিল্ডিং করা নেই। অথচ আমাদের দেশে কবরস্থান দেখেই বলে দিতে পারবেন ;কোনটি গরীব মানুষের কবর কোনটি বড়লোক টাকাওয়ালা ধনি ব্যক্তির কবর।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে মৃত্যুর পরও মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরী করা হয়। যাদের টাকা পয়সা বেশি তাদের আত্মীয়স্বজনরা তাদের কবরস্থান ইট দিয়ে পিলার করে চিহ্নিত করে রাখে। যাতে দেখলেই বুঝা যায় এটা বড় কোনো ধনি ব্যক্তির কবর। অপরদিকে যারা গরীব সন্তানদের আত্মীয়স্বজনদের সহায়সম্বল নেই তাদের কবরের উপর থেকে মাটি সরেও গেলেও, এক কোদাল মাটি দেয়ার মত লোক নেই। গাছের পাতা এবং ঘাস উঠে কবর একদম মাটির সাথে মিশে যায়।
ভোর ৫ টায় কুয়েতের আমিরের কবরস্থানের ছবিটা দেখছি আর মনে মনে ভাবছি আমাদের সাথে এদের মানসিকতার পার্থক্য কতখানি। যদি আমাদের দেশের একজন এমপি মারা যান উনার কবরে ফুল দিতে দিতে ফুলের বাগান বানিয়ে দেয়া হয়। কি করলে কবর সুন্দর আর চাকচিক্যময় দেখা যাবে তার জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করা হয়। অথচ উনি কুয়েতের মত একটি রাষ্ট্রের আমির কিন্তু কবর দেখে মনে হচ্ছে কোনো এক সাধারণ পাবলিক। এমপি মন্ত্রীর কথা বাদই দিলাম, আমার দেশে পীর সাহেবের একটা মুরিদও যদি মারা যায় তার কবরকেও ইট বালু দিয়ে বিল্ডিং বানিয়ে দেয়া হয়। অথচ আরব দেশগুলোতে কবরস্থানে গেলে, বুঝার উপায় নেই কোনটা কার করব। চিনতেই পারবেন নাহ কে আমির, কে বা দেশের সাধারণ নাগরিক।
পরিশেষে একটা কথাই বলবো। মৃত্যুর পর আমল নামার হিসাব নেয়া হবে। কার কবরে কয়টা ইট লাগানো হইছে, কাকে কবর দেয়ার সময় কত কেজি ফুল ছিঁটানো হইছে এগুলার হিসাব ফেরেস্তাগণ নিবেনা। আপনি যত বড় ধনি লোকই হোন, কিংবা কবর যত সুন্দরই হোক এসব দিয়ে সৃষ্টিকর্তা আপনার আমল বিচার করবেন না। সারা জীবন পাপ করে মানুষকে কষ্ট দিয়ে ঠকিয়ে মরার পর কবরকে দুইতলা বিল্ডিং বানিয়ে দিলেও ফেরেস্তাদের হাত থেকে ছাড় পাওয়া যাবেনা। অতএব, কবর সুন্দর কিংবা কবরের উপর বিল্ডিং না বানিয়ে নিজের আমল-নামা ঠিক করা উচিৎ।
৩টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
শুধু এটাই বলার। দুনিয়া যাওয়া আসার মাঝেই শেষ। কবর অনন্তকাল।
মাছুম হাবিবী
একদম
স্বপ্ন নীলা
অসাধারণ একটা লেখা পড়লাম। আমাদের দেশে ধনীরা মারা গেলে বেশির ভাগই কারুকাজ করে কবরের চারপাশে প্রাচীর দিয়ে দেয়। এটা আসলে শরীয়ত সম্মত কোন বৈধতা নেই। তারপরও মানুষ দেয় ।
নিজের আমল আগে ঠিক করতে হবে। তা না হলে কবরে কঠিণ আযাব ভোগ করতে হবে।