প্রবাসে যাযাবর

নার্গিস রশিদ ১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ০১:৩৯:৩৪অপরাহ্ন অন্যান্য ১ মন্তব্য
মাইগ্রেসান তাকেই বলে যখন  কেউ নিজ দেশ ত্যাগ করে আর এক দেশে আসে বাস করার জন্য ।
মাইগ্রেসান ব্যাপারটা অনেক পুরানো । খাদ্যের সন্ধানে সেই আদি কাল থেকেই মানুষ দেশ ত্যাগ করতো বা যাযাবরের মতো চলাচল করতো।
সেই আদিকালে দেশ বলে কিছু ছিল না। যেখানে খাদ্য সেখানেই গমন ।
পাসপোর্ট  লাগত   না  ভিসা লাগত না । যে যেখানে ইচ্ছা চলে গিয়ে বসত করতো ।
এই ব্রিটেনে ব্রিটিশ কে ? তা খুঁজতে গেলে দেখা যায় তারা ব্রিটিশ বলে কোনো একটা জাত নয়  । তারা অ্যাঙ্গলো স্যাক্সন জার্মান থেকে এসে বসবাস করা মানুষ আর ফ্রান্স এর উত্তর থেকে আগত নরম্যান্ডি   যারা নরওয়ে থেকে আসা ভাইকিং তাদের মিলিত ধারা ।  এরাই এখন ব্রিটিশ বলে পরিচিত ।
এর মধ্যে কিছু রোমান দের শাসন আমলের থেকে যাওয়া মানুষও আছে।
ব্রিটেনে নানান দেশ থেকে মানুষ এসে বসবাস করছে । ইউরোপ ,আফ্রিকা, এশিয়া থেকে আগত প্রায় সব দেশের  মানুষ  আছে এখানে।
লন্ডন শহরে বাস করা মোট জনসংখ্যার   ৫০% বিদেশ থেকে  আসা ।
নানান ভাষা ভাষী ,কালচার আর ধর্মের মানুষ এখানে হারমনির সাথেই বসবাস করে।
বাংলাদেশ থেকে মানুষ এখানে প্রায় পাঁচ/ ছয়  জেনারেশন ধরে আছে। প্রথমে আসে শুধুমাত্র পুরুষ । পরিবার নিয়ে আসে নাই। তাদের ইচ্ছা ছিল কিছু টাকাপয়সা জমিয়ে দেশে ফেরত যাবে।
 কিন্তু সেই যাওয়া আর হয় না। দেশে বাড়ি ঘর বানালেও তা পড়ে  থাকে । কারন যখন ঘোষণা আসে পরিবার না আনলে পরে তারাকে আর নিয়ে আসা যাবে না। তখন দলে দলে সবাই  দেশ থেকে স্ত্রী পুত্র কন্যা  নিয়ে আসে। যার  ফলে বাংলাদেশী কমুইনিটির বসবাস এখানে অনেক পুরানো ।
প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশী মানুষ এখানে আছে।
বর্তমানে অনেকে ছাত্র হিসেবে এসে বা এ়সাইলাম সিকার হিসেবে এসে  এখানে থেকে গেছে ।
পেছনে কারন দারিদ্র বা দেশে কাজের অভাব।
ইমিগ্রান্ট বা বাইরের দেশ থেকে এসে বসবাস করাটা অত  সহজ নয়।
প্রতিনিয়ত নিজেকে স্যাটেল করার জন্য  যুদ্ধ করে যেতে হয় ।
অপরিচিত মানুষ ,সমাজ, কালচার, ভাষা ,নিয়ম নীতি, সিস্টেম ,আবহাওয়া ,রাস্তা ঘাট এগুলোর সাথে খাপ খাওয়ার জন্য নিজেকে নুতুন করে রেডি করতে হয়।
আগের সব কিছু বাদ দিয়ে নিজেকে গড়তে হয়।
তার সাথে যুদ্ধ কি ভাবে একটা কাজ পাওয়া যায় তার  জন্য। বাঁচতে   তো হবে।
ইমিগ্রান্ট হওয়ার পর অনেক মানুষ মানসিক রোগে ভুগে। ডিপ্রেসান, এংজাইটি  এবং হোমসিক  দেখা দায় তাদের মধ্যে। প্রধান কারন একলা হয়ে পড়া ।
মাইগ্রেসান ব্যাপারটি একটা মানুষের জীবনে কঠিন পদক্ষেপ । তা যদি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয় তবে তা আরও কঠিন হয়ে যায়।
মানুষের কনফিডেন্স একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। আগের পড়াশুনা তেমন কাজে লাগে না। মানুষ ভেঙ্গে পড়ে । তার উপরে যদি দেশের রেখে আসা মানুষ ক্রমাগত ভাবে অর্থনৈতিক ভাবে চাপ দিতে  থাকে বা দেশে গেলে রেখে আসা পরিবার ওয়েলকাম না করে বা তাদের কষ্ট বুঝতে না চায় বা যে আকুলতা নিয়ে যায় তা উপেক্ষা করে সেই কষ্ট তারাকে মানষিক ভাবে এতো বেশি আঘাত দায় যা তারা নিতে পারে না।
তারা নিজ দেশে যেমন আন ওয়েলকাম আবার মাইগ্রেন্ট করা দেশ টিতেও বিলংস মনে করে না। এই টানা  পুরন তারাকে অসহায় করে তুলে এবং মানসিক কষ্টে ভুগায় ।
তাদের ফিলিংস বুঝতে পারে না ফেলে রাখা আসা আপন  আত্মীয় স্বজন । এ এক নিদারুণ বেদনা।
যা তারা নিয়ে বেড়ায় বাকি জীবন ধরে।
ক্রমাগত ভাবে নিজ পরিবারের সাথে গ্যাপ বাড়তে  থাকে।
অনেক প্রবাসী র শেষ বয়েসে মনে হয় প্রবাসে আর কিছু না পাই এই মানুষ গুলো থেকে দূরে আছি তাই ভালো ।
এর  পেছনে বেশির ভাগ কারন প্রবাসী কে বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয় ।
 অথবা নিজের কষ্টার্জিত  টাকা দিয়ে কেনা সম্পত্তি  দখল করে নেয়।
ব্রিটেনে এসে বসবাস রত মানুষ গুলোর ভুগান্তি নিয়ে কিছু গল্প একে একে সেয়ার করছি।
মানুষ নিজের ইচ্ছায় দেশ ত্যাগ করেনা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ দেশ থেকে বের হয়।
অনেক দেশে যুদ্ধ লেগে থাকলে বাস করা সম্ভব নয়। বেকারত্ব আর একটা কারন।
তা যাই হোক মানুষ বেরিয়ে পড়ে । কিন্তু মনে থাকে জন্ম ভূমী সবসময়। স্বপনে শয়নে চলতে ফিরতে দেশ থাকে মনে। দেহ থাকে পর  দেশে ।
প্রবাসে বিলাস জীবন প্রথমে কারর থাকে না। সেই সংগ্রাম দেশের মানুষ দেখেনা।
গ্যাপ হয়ে যায় দেশের মানুষের সঙ্গে।
আগের ঘটনা গুলো তুলে ধরলাম ।
যা কিনা প্রবাসী রা ফেস করে। কেউ বলে কেউ বলতে পারে না।
“তোমার দোয়ায় ভালো আছি মা” নাটকের বুলি বলে। হয়তো মনে অনেক কষ্ট ,পরিশ্রম করে শরীর ক্লান্ত । তা চেপে রাখে মনে ।
২১জন ২১জন

একটি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ