এই কাহিনীর একটা ঘোরতর সমস্যা আছে, এর একটা সুরাহা হওয়া উচিত। সমাধান না হোক, অন্তত সমস্যাটা শুনতে নিশ্চয়ই আপত্তি নেই!!
আমি আর মারুফ ঘুড়ি উড়াতাম তুরাগ নদীর তীরে। কারণ একটাই,
প্রতিদিন বিকাল পাঁচটায় তুরাগ নদীর তীরে আকাশ থেকে পরী নেমে আসত।
পরীটির নাম পৃথ্বী। ১৪ তলা বিল্ডিং-এর একেবারে চুড়োয় থাকত ওরা। নীল রঙের একটা স্কার্ট, আর সাদা রঙের একটা টপস পড়ত। আর নদীর পাড়ে এসে ধপাং করে বসে পড়ত। পরী কেন বলছি, তা না বোঝার কোনও কারন নেই। পৃথিবীর কোনও মেয়ের সৌন্দর্যের একটা মাত্রা থাকে, কখনও যদি কাউকে দেখে মনে হয়, সে সব মাত্রা অতিক্রম করেছে, তখন তাকে পরী বলি আমরা। তবে এই মেয়েটাকে পরী বলার আরো একটা অবশ্য কারন আছে। এই মেয়েটা হঠাৎ হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যায়।
কিভাবে সেটা হয় আমি জানিনা, আমরা ওকে নদীর পাড়ে আসতে দেখতাম কিন্তু ফিরে যেতে দেখিনি কখনও। আর এই ব্যাপারটা তখন মাথাতেও আসেনি। যখন সেটা মাথায় ঢুকেছে, ততদিনে তার অনেক বড় মূল্য দিতে হয়েছে আমাদের।
যাই হোক, মারুফ, আমি দুজনেই পৃথ্বীকে ভীষণ পছন্দ করি। বড় হলে আমরা দুজনেই যে ওকে বিয়ে করব তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আমরা তিনজন স্বামী-স্ত্রি মিলে মিশে ঘর করব বলে ঠিক করেছি।
একদিন লক্ষ করলাম, পৃথ্বী একটু আগে এখানেই বসে ছিল, এখন নেই। আমি দৌড়ে নদীর পাড়ে গিয়ে এদিক উদিক তাকাচ্ছিলাম। এখনো ওর শরীরের গন্ধ লেগে আছে ওখানে। নদীর পানিতে তাকাতেই আমার সারা গা মোচড় দিয়ে উঠল।
পানিতে ডুবে গেছে পৃথ্বী। পানির নিচ থেকে ওর চোখ দেখা যাচ্ছে। আমার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে আছে। কেউ বলে দেয়নি, কিন্তু ওর ঠাণ্ডা দৃষ্টি বলে ওর শরীরে জীবন নেই, কিন্তু চোখ গুলো জীবন্ত। আমি মারুফের কাছে ফিরে গেলাম। ওর পাশে দাড়িয়ে ঘুড়ি ওড়াচ্ছি। আজ অনেক বাতাস বইছে, আমার ঘুড়ির দড়ি ছিঁড়ে উড়ে গেছে। মারুফের ঘুড়ি আজ কিছুতেই উড়ছেনা. ওর অবচেতন মন কি কিছু আঁচ করতে পারছে? আজ সন্ধ্যা তারা উঠবে নিশ্চিত।
বাড়ি ফেরার পথে আমি মারুফকে সব খুলে বললাম, মারুফ শুধু শুনে গেল, একটা প্রশ্নও করলনা।
পরেরদিন আমরা আবার ঘুড়ি নিয়ে মাঠে উপস্থিত হলাম। ঘুড়ি হাতে দাঁড়িয়ে আছি, ঘুড়ি উরছেনা, যা ধারনা করেছি তাই…
পৃথ্বী এসেছে আজো, ওর মাথার চুল উড়ছে। আমরা হেটে হেটে ওর কাছে যেতেই ও অদৃশ্য হয়ে গেল।
পুনশ্চ :
আমরা দুই মাস মানসিক হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ হয়েছিলাম। আমার মুগ্ধ হবার এবং প্রেমে পড়ার ক্ষমতা চিরতরে নষ্ট হয়ে গেল। আমি ভেবেছিলাম, মারুফ পুরোপুরি ঠিক আছে। কিন্তু যারা মারুফ কে আমার মত অনেক ভালোবাসে, তারা জানে ও পুরোপুরি ঠিক হয়নি। ওর সময় সেই ১৭ বছর বয়সে আটকে গেছে, সেই কারনেই প্রতি বছর বছর এস এস সি পরীক্ষার পর… ও একই স্ট্যাটাস দেয়……
.
.
.
.
.
.
.
” ইয়াহু, আমি গোল্ডেন ফাইভ পাইছি.. বুয়েটে পরমু, নাকি মেডিকেলে বুঝতে পারতেছিনা!! ” :p
( যারা আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড, যারা মারুফকে চেনে, তারা প্রতিবছর দেখে ওর ঐ ফাজলামো মার্কা স্ট্যাটাস 😀 … তাই মারুফ কে ট্রল করে এই কাহিনী লেখা হয়েছে! খালি ও-ই মজা নেবে তাতো হয়না!! তাই না? 😁 )
২টি মন্তব্য
ইঞ্জা
😮 😮
নীলাঞ্জনা নীলা
;? ;?