পৃথিবীর পথে পথেঃ মিশর (আবু সিম্বেল) সময় কাল ২০০৬, ৫ম পর্ব 

 

“Egypt is a place where every step feels like a journey through time”

 

‘আবু সিম্বেল’ র‍্যামেসেস ২ এর আমলে নির্মাণ নিউবিয়ার দিকে মুখ করা একটি বিরাট মন্দির ।

আমাদের খুব সকালে বের হতে হল এই মন্দির দেখার জন্য। ১৯০ মাইল দূরেত্ব এই মন্দির টি লাক্সর থেকে। আমাদের জীপ হোটেলের সামনে রেডি ছিল। তখনো আঁধার আঁধার ছিল চারদিক ।একটু একটু করে ভোরের আলো আরম্ভ হতে লাগলো ।  লাক্সর শহর শেষ হতেই চোখে পড়লো দৃশ্য পট। বাড়িঘর আর নেই। শুধু বালু আর বালু। মাঝে মাঝে আগুনে পোড়া রং এর মতো ছোটো ছোটো বালুর ঢিবি । মনে হচ্ছে মঙ্গল গ্রহে চলা ফেরা করছি।

‘আবু সিম্বেল’ নিউবিয়ান সীমানায়। কাছেই আসোয়ান লেক  । আমাদের গাইড এবার একজন নিউবিয়ান । এই দিকের মানুষ জন নিউবিয়ান হওয়ায় তাদের চেহারা ,গায়ের রং মিশরীয় দের মতো নয়। মানুষ জন খুব সাধাসিধে এবং অমায়িক । গাইড টুরিস্ট দের বুঝিয়ে দিচ্ছে এর ইতিহাস।

গাড়ি থেকে নেমে কিছুদূর হাঁটার পড় একটু মোড় ঘুরতেই এক ১৮৫ ফুট উঁচু স্যান্ড স্টোন পাহাড়ের কাছে আসলাম। সামনে নদীর দিকে মুখ করে বসে  আছে চার টি  ২০ ফুট উঁচু বিরাট  স্ট্যাচু।   মন্দিরের গেটে এই চারটি স্ট্যাচু র‍্যামেসেস ২ এর। পায়ের কাছে তার মা ‘মাট- টুয়ে’ এবং তার প্রধান রানী ‘নেফারতারি’ ।

পুরো পাহাড়টির ভিতর  কেটে ভিতরে মন্দির করা হয়েছে । এটাও একটি প্রাচীন মিশরীয় দের আর্ট ।

মন্দিরের মধ্যে তিনটি হল। অনেক স্থম্ভ কিন্তু এগুলো সব সারি সারি র‍্যামেসেস ২ এর স্ট্যাচু। দেয়ালে আঁকা ‘ব্যাটেল অব কাদেস’ যুদ্ধ জয়ের ছবি। যা পাহাড়ের গা কেটে কেটে করা। মন্দির টি দেবতা ‘আমন রা’ এবং ‘Re-Hovakhte’  উৎসর্গ করা। গেট থেকে সরাসরি ছোটো একটি কুঠুরি তে  বসা আছে এই দুই  দেবতার সঙ্গে র‍্যামেসেস ২, যা কিনা সূর্যের কিরণ সরাসরি এখানে এসে তাদের গায়ে পড়ে।

পাশে আর  একটা ছোটো মন্দির, যেটা তার প্রধান স্ত্রী নেফারতারির জন্য। মেইন গেটে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে র‍্যামেসেস ২, এবং তার রানী নেফারতারি এবং তাদের ছেলে মেয়ে । এই মন্দির টি উৎসর্গ করা হয়েছে দেবতা ‘হ্যাদর’ কে ।

১২৬৪ বিসি তে এর কাজ আরম্ভ হয় শেষ হয় ১২৪৪ বিসি ।

এই মন্দির টি মানুষের কাছে অজানা ছিল। প্রায় পুরো মন্দির বালু দিয়ে ডুবে ছিল। কেউ জানতো না এখানে কি আছে ১৮১৩ সালের আগ পর্যন্ত । তারপর সেই বছরে একজন সুইস স্কলার এবং গবেষক Johann Ludwig Burekhardt এর নজরে আসে। ১৮১৭ সালে Giovanni Battista Belzoni নামে একজন ইতালিয়ান ইজিপ্টলোজিসস্ট  দুই জন  মিলে লেবার  লাগিয়ে সমস্ত বালু সরিয়ে মন্দিরটি উদ্ধার করেন।

র‍্যামেসেস ২ এর মন্দির টি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের  আওতায় আসে।

মন্দির দেখে আমরা চললাম আসয়ান বাধ দেখতে। বাধ দেয়ার ফলে এখানে একটি লেকের সৃষ্টি হয়। যত কুমীর বাধের ওপারে থেকে গেছে। কাছেই একটা নেক্রপলিস পাওয়া গেছে ।এখান পাওয়া মমি এবং টুম্ব গুলো নোবেল দের জন্য। এখানে এখনো আরকেওলজিক্যাল কাজ চলছে ।

পরের দিন আমরা একটি নিউবিয়ান পরিবারের সাথে দুপুরের খাবার খেলাম ।লম্বা একটি পাটি বিছিয়ে দিয়ে আমাদের খাবার পরিবেশন করলো বাড়ির ছেলের বৌরা । এই ভিজিটের  মধ্যে দিয়ে  আমরা  হিউম্যান জিওগ্রাফী সম্বন্ধে জানলাম।  আমাদেরকে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। দেখলাম তাদের পরিবারের গঠন, খাবার, কালচার, বাড়ি ঘরের গঠন আর  তার সাথে তাদের আচার  আচরণ এবং জীবন জীবিকা জানলাম । পরিবারটি একটি নিউবিয়ান ফ্যামিলি,  জয়েন্ট পরিবার।  ভালো লাগলো তাদের সাথে মিশতে পেরে। সহজ সরল মিশুক একটি মুসলিম পরিবার।

তারপর হোটেলে  ফেরা। পরের দিন কায়রো ফিরে আসলাম। হাতে ছিল একদিন । আমরা কিছু কেনাকাটা আর একটা মসজিদ দেখে এবং ঘোড়ায় টানা গাড়ীতে কায়রো শহর দেখে পরের দিন লন্ডনে ফিরে আসলাম প্রাচীন মিশরের সভ্যতা স্মৃতি তে নিয়ে।

 

 

 

২১৩জন ২১২জন
0 Shares

একটি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ