তিনজন দুর্ধর্ষ অপরাধী

অভি ২৬ আগস্ট ২০১৪, মঙ্গলবার, ০৮:০২:১৭পূর্বাহ্ন গল্প, ভ্রমণ, রম্য ১১ মন্তব্য

নিসানের স্পোর্টস মডেলের গাড়ি নিয়ে তিনজন দুর্ধর্ষ অপরাধী দ্রুত গতিতে অস্ট্রেলিয়ার কান্ট্রি সাইডের রাস্তায় ১০০ স্পিড লিমিটে ২০০ এর কাছাকাছি গতি তুলে আলোর বেগে ছুটে যাচ্ছে। অনেক দুরে পুলিশের লাল নিল আলোর ঝলকানি দেখা যাচ্ছে। পুলিশের গাড়ি এড়াতে ছোট একটা টার্ন নিয়ে রেইন ফরেস্টের মাঝের এক রাস্তায় উঠে গেল দুর্ধর্ষ অপরাধীরা। গাড়ি ব্যবহারের অনুপযোগী এই রাস্তাগুলোকে আনসিল্ড ট্রাক বলে! ফোর হুইল ছাড়া এই রাস্তা ব্যবহার করা চরম বোকামি। তারপরও গতি না কমিয়ে দ্রুত গতিতে পাহাড়ি রাস্তায় একের পর এক বাঁক নিয়ে পুলিশকে ধোকা দেবার চেষ্টা। পাথুড়ে এলোমেলো রাস্তায় গাড়ি ক্রমাগত স্কিড্ করে যাচ্ছে। ড্রাইভার রাস্তা থেকে এক মুহূর্ত চোখ সরাচ্ছে না, যেকোনো সময় রাস্তা ছেড়ে ২০০ ফিট নিচে পরে যাবার ভয়ে! অন্য দুজন টানটান হয়ে শক্ত হাতে সিট ধরে বসে আছে, কখনো ডানে হেলে যাচ্ছে, কখনো বায়ে। হঠাত পাহাড়ের মাঝে পুলিশের সাইরেনের প্রতিধ্বনি। পিছন থেকে প্রচন্ড উত্তেজনায়, “জোরে চালা হারামজাদা, বলছিলাম এক্সিডেন্ট করছিস, ফেলে আসলেই হতো, ট্রান্কে তুলতে কে বলছিল!”

হঠাত দূর থেকে হেলিকপ্টারের আওয়াজ, দ্রুত গতিতে সামনের বাঁকটা ঘুরতেই পুলিশের গাড়ি চোখে পরলো। দুটো পুলিশের গাড়ি রোডব্লক করে রীতিমত পিস্তল নিয়ে এইম করে দাড়িয়ে আছে! গতি কমাতেই পিছন থেকে আরো দুটো পুলিশের গাড়ি ঘিরে ধরল, আকাশে হেলিকপ্টারও মাথার উপর টহল দেয়া শুরু করলো। তিন জন কে হাত তুলে গাড়ি হতে বের হতে বলা হলো! পিঠমোড়া করে বেধে পুলিশের গাড়িতে তুলে নেয়া হলো! “ইউ গাইস আর ইন ট্রাবল!”

গাড়ির ট্রান্ক খুলে মৃত ক্যাঙ্গারুকে বের করে আনা হলো! ক্যাঙ্গারুতে ছোট একটা জিপিএস ট্র্যাকিং ডিভাইস ছিল, তাই পুলিশের কোনো সমস্যাই হয় নি দুর্ধর্ষ অপরাধীদের খুঁজে বের করতে। গ্রাম্পিইনস পর্বতমালায় বেড়াতে এসে ফিরতি পথে এক্সিডেন্ট, বেটা ক্যাঙ্গারুর মৃত্যু, ড্রাইভার ভাবলো বেটা যখন মরছেই বাসায় নিয়া ভুরি ভোজ দেয়া যাবে। তারপরই পুলিশের ধাওয়া।
.
.
.
.
.
.
আচ্ছা, ওই গাড়িতে আমি ছিলাম, এই গল্প এক বাঙালি পার্টিতে একজন খুব রসিয়ে বললো। আমি খ্রাপ, কিন্তু অতটা খ্রাপ না, এমন জমজমাট গল্পে আমি কেমনে বাধা দেই! আসলে আমাদের গাড়িটা নিসান ছিল ঠিক আছে, মোটেই স্পোর্টস মডেলের না, ভাঙ্গাচুরা পুরান একটা গাড়ি, তার উপর ক্যাঙ্গারুর গোত্তা খাইয়া মোটা মুটি তক্তা অবস্থা, ১০০০ ডলারের মামলা (ইন্সুরেন্সও ছিল থার্ড পার্টি, এইজিনিস দিয়া অন্যের গাড়ি ঠিক করা যায়, নিজেরটা না! গরিব ছাত্রদের এইসব সস্তা জিনিস ভরসা ছিল)! ক্যাঙ্গারুও মরছিল ঠিক আছে, কিন্তু আমরা এতো বড় খাদক না যে ওই মরা ক্যাঙ্গারু বাসায় নিয়া কাটাছিরা কইরা খাইবাম। তার উপর আমরা মহা অলস, চামড়াসহ মুরগির ঠ্যাং প্রতি কিলো ২ ডলার সস্তা হইলেও চামড়া ছাড়াটাই কিনতাম। না ভাই ক্যাঙ্গারুতে জিপিএস বসানোর মত পাগল অস্ট্রলিয়ানরা না, এই জিনিসের ওগো অভাব নাই! পুলিশ ক্যাঙ্গারুর জন্য দৌড়ানোটা বিশ্বাসযোগ্য, আমার ধারণা স্পিডিং ফাইন আর আজিরা কাম ছাড়া এরা কামের কিছু করে না! কিন্তু না ভাই পুলিশে দৌড়ানি দেয় নাই, আমরা ওই ক্যাঙ্গারু বাবাজিরে রাস্তার পাসে ফেলাইয়া শান্ত সুবোধ বালকের মত বাসায় ফিরছিলাম। V চিন্হ দিয়া কয়েকটা ফটোও তুলছিলাম কাঙ্গারুর লগে! তারপর খুইজা সস্তা এক মেকানিকরে ৮০০ ডলার দিয়া গাড়ি মেরামত করছিলাম। ৮০০ ডলার কোনো ব্যাপার না, কিন্তু এই গপ্পর দাম প্রাইসলেস!

৬৯৫জন ৬৯৭জন
0 Shares

১১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ