জানা অজানা বিলাতের গল্পঃ “নারী পুরুষের চেয়ে ইনফেরিওর” এই অসত্য unfair বিশ্বাস টিকে যিনি ভেঙ্গে দিতে পেরেছিলেন, তিনিই রানী প্রথম এলিজাবেথ
সে সময় মানুষের মন ছিল অযৌক্তিক চিন্তা চেতনা দ্বারা চালিত এবং সমাজ ছিল পুরুষ শাসিত ।
নারীকে সুযোগ দিলে সেও অনেক কিছু করতে পারে। এই বিশ্বাস পুরুষের ছিল না। সেই সময়ে রানী এলিজাবেথ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে দেশ পরিচালনায় শুধু করেন নাই দেশকে নিয়ে গিয়েছিলেন অনেক উচ্চতায় ।
তার পিতা রাজা অষ্টম হেনরি একটি পুত্র সন্তান
চেয়েছিলেন উত্তরাধিকারী হিসেবে। একটি পুত্রের জন্য তিনি অনেক বিয়ে করেছিলেন কিন্তু কন্যা সন্তান হলেও পুত্র হচ্ছিল না। তারপরে একটি পুত্রের জন্ম হয় এডও য়ার্ড ছয় । তার বয়স যখন ১৮ অজানা রোগে মারা গেলে তার সৎ বোন মেরী এক ক্ষমতায় আসে । মাত্র চার বছর শাসন করার পর তিনি মারা গেলে এলিজাবেথ এক পঁচিশ বছর বয়েসে (১৫৫৮ ) রানী হন ।
এলিজাবেথ প্রথম এর ছেলেবেলাঃ
তার মা ‘ অ্যান বলেয়া’র (Anne Boleya) গর্ভে সাতই সেপ্টেম্বের ১৫৩৩ তার জন্ম হয়। তার দুই বছর বয়সে মার মৃত্যু হলে তাকে দেখাশুনার জন্য গভর্নেস এবং লেখাপড়ার জন্য গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করা হয়।দ্বিতীয় গভর্নেসের কাছে তিনি ফ্রেঞ্চ ,ইতালিয়ান,এবং স্প্যানিশ ভাষা শিখেন । ১৫৪৪ সালে William Grindal নামক এক গৃহ শিক্ষক তাকে ইংরেজি,গ্রিক,ফ্রেঞ্চ ,ইতালি ভাষা লিখা এবং পড়ায় এতো পারদর্শী করে গড়ে তুলেন যে তিনি সেই সব ভাষার অনেক বই যেমন ProMarcello,Cicero এই গ্রীক বই গুলি অনুবাদ করেন এবং ইংরেজি ভাষার বই “prayers or meditations” গ্রীস ভাষায় অনুবাদ করেন এবং বাবাকে গিফট করেন ।
তিনি ছিলেন সেই সময়ের সবচেয়ে বেশি একজন শিক্ষিত নারী । ১৫৫০ সালে তার শিক্ষা জীবন শেষ হয় ।
এলিজাবেথ প্রথম এর দক্ষতার গুণাবলীঃ
কুইন এলিজাবেথ প্রথম ছিলেন বিচক্ষণ,জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমতী শাসক ।
সেগুলো হলঃ
১) তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মন্ত্রী পরিষদের মন্ত্রী নির্বাচন করতেন ভালো ভাবে দেশ পরিচালনার জন্য।
২) তার মুখের এক্সপ্রেসান, দাঁড়াবার ভঙ্গি এবং বাচনভঙ্গি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো । যা ছিল স্মার্ট এবং আত্মবিশ্বাস পুর্ন।
৩) যেটা করতে চেতেন সেটা তিনি করে ছাড়তেন এবং বিজয়ী হতেন।
৪) যে কোন ধরনের সমস্যা তিনি অতিক্রম করতে পারতেন ।
৫) সমস্যা সমাধানের গুণাবলী ছিল পাওয়ারফুল, প্রতিভাপুর্ন এবং গড গিভটেড । তার ন্যাচারাল এবিলিটি যা ছিল তা প্রকৃতিগত ভাবে পাওয়া।
৬) তিনি প্রত্যেকটি প্রশ্নের ধারালো উত্তর দিতে পারতেন।
৭) এমন ভাবে যুক্তি দিতেন যা মানতে সবায় বাধ্য হতেন। তার দেয়া যুক্তির কাছে কেউ পেরে উঠতো না ।
৮) তিনি সহজেই কাউকে বা কারর বক্তব্য বিশ্বাস করতেন না। ক্রমাগত ভাবে চিন্তা করতেন এবং ভেবে দেখতেন তা ঠিক না বেঠিক ।
৯) তিনি সব কিছু নীরব থেকে অবজার্ভ করতেন “I see and keep silent” .
যা ছিল তার বাবা এবং বোনের চেয়ে শাসক হিসেবে রিজনেবেল বা মডারেট । মাঝামাঝি অবস্থানে থাকতেন চরমপন্থি না হয়ে ।
১০) তিনি অবস্থা মোতাবেক নিজেকে উপাস্থাপন করতেন যেখানে যেমন সেখানে নিজেকে পরিবর্তন করতেন । যেমন মন্ত্রী পরিষদে কেউ তার কথা না শুনলে বা মেয়ে বলে নিচু করলে , তিনি স্টরং হয়ে বলতেন ‘আমি প্রিন্স বা রাজার মেয়ে আমি যা বলবো তা শুনতে হবে’।
আবার নিজেদের মধ্যে সভায় মায়ের মত মমতাময়ী হয়ে বলতেন ‘আমি কেয়ারিং ,জাতির দেখভাল আমার উপরে, তাদের দেখভাল করতে হবে’ ইত্যাদি ।
এলিজাবেথ প্রথম যা যা দেশের জন্য করেছেনঃ
) ব্যাবসায়ি দের জন্য নুতুন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ।
বিলাসজাত দ্রব্য আমদানি যেমন কাপড় ,মসলা ,চিনি আনার জন্য উৎসাহ দেয়া এবং সাহায্য প্রদান । ব্যাবসার নুতুন রুট বের করা এবং সেই রুটে ইন্ডিয়া আর মিডিলইস্টের সাথে ব্যাবসা বৃদ্ধি ।
) তার সময় ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ গঠন করা হয় ।
) সিপিং,ব্যাবসা,শিল্প,মুদ্রানীতি,রাস্তা নির্মাণ,দরিদ্র দের জন্য রিলিফ প্রদান আর কৃষিতে ভর্তুকি এসবের উন্নতির জন্য আইনকানুন তৈরি করেন।
) সাহিত্য, মিউজিক, আর্ট এর ব্যাপক উন্নয়ন এবং সেক্সপিয়ারের আবির্ভাব এই সময় হয়।
) অভারসিজ এক্সপেরিয়েন্স এই সময় বিস্তার হয়। Sir francisDrake এবং Sir watter Raleigh বিভিন্ন জায়গায় সাহসী ভয়েজ চালিয়ে দেশ আবিষ্কার করেন।
) নুতুন ধরনের ধর্মের প্রচলন যা কিনা অনেক আধুনিক এবং যুক্তিপূর্ণ ।
) জলপথে স্পেনের নেভিকে হারিয়ে দেয়া।
) Economic Stability থাকার জন্য ব্যাবসায়িদের নুতুন সুযোগ আসে।
অবিবাহিত রানী এলিজাবেথ প্রথম
দেশ শাসনে কৃতকার্য হওয়ার পেছনে কারন ছিল তিনি অবিবাহিত ।
মাথার উপর স্বামী নামক পুরুষ থাকলে ইন্টারফেয়ার করবে বা একক ডিসিসান নিতে বাধাপ্রাপ্ত হবেন এটা তিনি চান নাই।
তিনি বলতেন দেশের নাগরিক আমার সন্তান। দেশের মানুষের কাছে “ইনফেরিয়র” যেন না হতে হয় তার জন্য তিনি ছিলেন দৃহ প্রতিজ্ঞ ।
তিনি হাজবেন্ড নামক গাইড রাখা পছন্দ করন নি । তিনি বলতেন “I will have but one mistress here and no master”
মানুষের উল্লাসঃ
যেদিন এলিজাবেথ প্রথম কে রানী হিসেবে ঘোষণা করা হয় সেদিন চারদিকে আনন্দের ঢেউ উঠে । দলে দলে মানুষ একত্রিত হয়ে ফায়ার ওয়ার্ক শুরু করে।
মানুষের ধারনাকে পরিবর্তনঃ
শতাব্দী কাল ধরে মানুষ ধারনা করতেন মেয়ে মানুষ পুরুষ মানুষ থেকে ইনফেরিয়র । তাই নারী রাজ্য শাসন করতে পারেনা। তাই নারী শাসকের অস্তিত্ব ছিলনা।
পুরুষ মানুষের ধারনা ছিল এই পৃথিবীতে চলার মত নারী বুদ্ধিমতিও নয় এবং তার শারীরিক শক্তিও নাই।
এমন কি এলিজাবেথের একজন ঘনিস্ট ‘এডভাইজার’ William Cecil প্যারিসের এম্ব্যাস্যাডারের সাথে এক আলোচনায় উল্লেখ করেন “It is too much for a womean’s knowledge” .
এলিজাবেথ প্রথম এর বিরাট অবদানঃ
মেয়ে হয়েও একটি পুরুষ শাসিত সমাজে তিনি যা করে গেছেন এটাই তার বড় বিজয় ।
তিনি পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষ মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গি ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন এটাই তার বিরাট লেগেসি ।
হুসনুন নাহার নার্গিস,লন্ডন
তথ্য সূত্রঃ
MC Laren,A.N. (1999): Political Culture in the Reign of Elizabeth 1 Queen And Commom wealth
(1558-1585)
House of Tudor History Monarchs and Facts , Archived
Book of translations reveals intellectualism of England’s Powerful Queen Elizabeth 1 ,sandrrs seth
Works by Elizabeth 1 ,Project Gutenberg
Elizabeth 1 “I was Likely Anything But a virgin Queen” Archived