জানা অজানা বিলাতের গল্পঃ বিয়ে করতে অনীহা, বিয়েতে ভাঙ্গন, ” বিয়ে” নিয়ে  কি ভাবছে ব্রিটেনের বর্তমান প্রজন্ম ? 
সমাজের পরিবর্তনঃ 
বিবাহিত জীবন আরম্ভ করার পর যখন নানা কারনে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠে তখন একটা মেয়ে তা থেকে বেরিয়ে আসার শক্তি অর্জন করেছে।
এটা তারা  করতে পেরেছে তার কারন তাদের আগের জেনারেশনের জীবনের কষ্টের অভিজ্ঞতা তারা  দেখেছে ।
আগের জেনারেশন যা করেছে তা এখন কার মেয়েরা নিজেদের জীবনে পুনরাবৃত্তি করতে চায়না।
তা ছাড়া আজকালের মেয়েরা “মুখ বুজে সব সহ্য করতে হবে”  এটা যে অন্যায় এবং যুক্তিহীন তা তারা বুঝেছে এবং তার প্রতিবাদ করতে সাহস পেয়েছে । সাহস পেয়েছে যে কারনে তা হল তাদের পড়াশুনা এবং অর্থনৈতিক শক্তি থাকা ।
আগের জেনারেশন যে ভাবে নীরবে সব সহ্য করে জীবন পাড়ি দিয়েছে আজকালের মেয়েরা কেন সব সহ্য করে জীবন পার করবে ?
কারন আজকালের মেয়েরাকে তাদের বাবামা এমন ভাবে বড় করে যেন তারা স্বাধীন ভাবে নিজের মত প্রকাশ করতে পারে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে ।তারপরে তারা নিজেই সিদ্ধান্ত নিবে তারা কি করবে।
তাছাড়া স্কুল থেকে তারা শিখতে শিখতে বড় হয়  জেন্ডার ইকুইলিটি বা নারী পুরুষে সমতা। নারী পুরুষে সম অধিকার এবং সমান সুযোগ ইত্যাদি ।
তাছাড়া আছে আইন । তাই যে কোনো নারী বান্ধব দেশে একজন পুরুষ আগের মত তার ইগো দেখাতে পারবে না বা পুরুষ বলে বাবামাও তাদের পুত্র সন্তান টিকে মূল্য বেশি দিবে  বা মেয়েটির চেয়ে ছেলেটিকে বেশি ফেবার করবে সেই  দিন শেষ।
তাই এই পরিবেশে একটি মেয়ে যখন বড় হয় তখন তার সাথে আগের মেয়েদের সাথে যা করা হয়েছিল তা করা সম্ভব নয়।
আরও অনেক কারন আছে তা হল, “I love you” দিনে কয়েকবার বললেই সেটা  দিয়ে আজকালের মেয়েরাকে খাওয়ানো যাবেনা ।
কারন ভালবাসা ‘কাজ’ দিয়ে দেখাতে হবে । এক্সট্রা রেসপনসিবিলিটি   বা পরিবারের অনেক দায়িত্ব দুই পার্টির উপরে পড়ে। যা দুইজনকেই কাঁধে নিতে হবে।
 যেহেতু মেয়েরা আজকাল উপার্জন করে তা পরিবারেরে দায় এবং অর্থ দেয়া টি পুরুষ মানুষটি আশাও করে। এখন মেয়েটি আর্থিক ভাবে হেল্প করবে আবার ঘরের সব কাজ করবে তা  হলে তার উপরে প্রেসার পড়ে  যা পুরুষটিকে ভাবতে হবে।
দুইজনের মধ্যে একজন যখন সে দায়িত্ব না নায় তখন জীবন দুর্বিসহ হয়।
বিয়ে দেরিতে করা বা নিজের ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দেয়া বা একলা থাকা এখন একটা নরমাল ব্যাপার । এগুলো নিয়ে সমাজ মাথা ঘামায় না ।
বিয়ে কি পপুলার?
“বিয়ে” ব্যাপার টি তেমন আর পপুলার নয়। ৩০% মানুষ পরিবার গঠন করতে চায় না । নানা কারনে মেয়েরা বিয়ের প্রতি অনাগ্রহ । ১) ক্যারিয়ার ২) স্বাধীন ভাবে থাকা ৩) বাবামার সাথে থাকা বেশি নিরাপদ ভাবে। ৪) ডিভোর্সের ভয়। বর্তমানে ডিভোর্সের  হার খুব বেশি । বিয়ে করে যদি তা ডিভোর্সে গড়ায় তহলে বিয়ে করে কি লাভ । ৫) পুরুষকে নিরাপদ ভাবে না।
“ম্যারেজ” কেন কাজ করে নাঃ
মেয়েরা নানা রকম ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জন করছে। বিয়ের পরে  সেই কষ্ট করে গড়ে তোলা ক্যারিয়ারে বাধা আসে । কারন সন্তান জন্ম দান। সন্তান গর্ভে ধারণ, জন্ম দান এবং তা লালন পালন করা বিরাট দায়িত্ব । বাচ্চা এবং  সংসারের ব্যয় বহন করতে গিয়ে তাকে  কাজে নামতে হয় কিন্তু চাইল্ড কেয়ার খরচ ব্যয় বহুল । যা সে ইনকাম করে তার সব চলে যায় চাইল্ড কেয়ারের পেছনে। আবার যখন কাজ থাকেনা স্বামীর কাছে গুরুত্ব হীন হয়ে পড়ে। সংসার চালাতে হিমসিম পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। এই সব ঝামেলা নিতে অনেক মানুষ বিয়ের ভাবনা থেকে সরে আসে।
অনেকের মতে বিয়ে করে  dangerous stitution এ পড়তে হয় ,যেখানে মেয়ের প্রতি কোনো সন্মান দেখানো হয় না কিন্তু তার উপার্জন দিতে হবে ।
এসব করেও স্বামী যা বলবে তাই শুনতে হবে ।কিন্তু মেয়েটার প্রয়োজনকে সন্মান দেয়া হবে না।
পুরুষ ভাবে মেয়েটি তার দখলকৃত সম্পত্তি বিয়ে মাধ্যমে এবং সেই এখন তার হর্তা কর্তা ।
স্বামী নামক পুরুষটি মেয়েটির সব অর্থ নিয়ে নায় এবং মেয়েটি কিছুই বলতে পারবে না।
আগের অনেক মানুষ trapped in a unhappy  marriage এবং তার মধ্যেই জীবন কাটায় কারন তারা ডিভোর্সে ভয় পায়।
কিন্তু এখনকার মেয়েদের কাছে “বিয়ে” আর “Final Destination” নয় ।
নারী পুরুষ দুইজনই বের হয়ে যায় যখন আর চলা যায় না ।
Focus on individual happiness: 
প্রত্যেক মানুষের আলাদা আলাদা ভাবে সুখ খুঁজে নেয়ার একটা ব্যাপার থাকে। একেক মানুষের একেক বিষয়ে সুখ খুঁজে ।আধুনিক সমাজে মানুষের  এই নিজস্ব ইচ্ছা অনিচ্ছা গুলো নষ্ট হয়ে যায় বা সংঘর্স বাধে , বিবাহিত জীবনে যখন তা করতে যায়  (emphasizes personal fulfillment and self -actualization) । তখনেই বিয়ে করার ইচ্ছায় ভাটা পড়ে।
অর্থনইতিক টানা পড়নঃ
টাকা পয়সা প্রচুর না থাকলে বিয়ের পর যে খরচের সম্মুখীন হতে হয় তা সামাল দিতে না পারলে কি দরকার হাতে নাতে কষ্ট ডেকে  আনার। এটাই তাদের ভাবনা । যা আগের জেনারেশন ভাবতো না।
বিয়ে করতে ভয়ঃ
১) স্ট্রেস ফুল লাইফ ২) নিজেদের ইগো ৩) বিয়ে ভাঙ্গার ভয় ৪) কম্প্রোমাইজ না থাকা ৫) মেয়েদের নিজস্ব ভালো ক্যারিয়ার এবং বেতন থাকা তাই ছেলে দের উপর নির্ভর করার দরকার হয়না। ৬) স্বাধীনতা নষ্ট হয় তার সাথে স্বামীর মাত্রারিক্ত ডিম্যান্ড , তার সাথে unsupportive সম্পর্ক এগুলোর সম্মুখীন হতে চায় না। ৭) মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পুর্বক সব রকমের কষ্ট করতে গিয়ে  মেয়েদের  মানসিক এবং শারীরিক সাফারিং  দেখার অভিজ্ঞতা  দেখে এসব থেকে বিরত থাকতে চায় ।  ৮) সমাজ থেকে “বিয়ে করতেই হবে” এই চাপ না থাকা
বিয়ে আর গুরুত্বপুর্ন নয়ঃ
বিয়ে করা না করা যার যার ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে । বিয়ে পরবর্তি দায়িত্ব নিতে অনেক মানুষ পছন্দ করেনা। “I am Married” এটা দেখানোর গুরুত্ব এখন আর নাই। “বিয়ে” “সন্তান” “পরিবার” এগুলো এখন যার যার ব্যাপার । পরিবর্তন হয়ে গেছে লাইফ স্টাইল এবং behavioural pattern .
বর্তমান দশকের সামাজবিদ Diana  Sandra বলেনঃ
“Photosynthesis, metabolism cardiac cycle, homeo stasis, and many more natural phenomemons এই প্ল্যানেটে ঘটছে ।কারন এগুলো ন্যাচারাল । এবং intented by nature herself. কিন্তু বিয়ে ব্যাপারটি সম্পুর্ন ভাবে মানব সৃষ্ট । (“Man  made” )
পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ “বিয়ে” সৃষ্টি করেছে একটা মেয়ের  শরীর কন্ট্রোল করার জন্য। তার থেকে বাচ্চা উৎপাদন এবং বংশধর রক্ষা করার জন্য। ” it is as simple as  that” .
আজকের দিনে একটা পুরুষ একজন নারীকে কন্ট্রোল করতে পারে না আগের মত যা করতো তাদের দাদা বাবার  সময়ে । এই জন্যই বিয়ে জিনিসটা আর টিকছে না।
এটা একটা ভালো নারীর জন্য যে নারী আর স্লেভের মত ব্যাবহ্রিত হবে না সমাজে “
হুসনুন নাহার নার্গিস,( নারী ও শিশু অধিকার কর্মী,লন্ডন)
তথ্য সূত্রঃ
Victorian Era ,Women’s Right, VL MC Beath
British women in the nineteenth ,Certury Kathryn Gleadle
Women ,work and sexual politics i Eighteenth Century England Bridget Hill
A History of divorce in Western society, Cambridge Phillips
English Marital Violence in Litigation Literature and the present ,Bailey Joanne
১৪৯জন ৩৯জন
0 Shares

মন্তব্য করুন

মাসের সেরা ব্লগার

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ