ব্রিটেনে মেডিভ্যাল বা মধ্য যুগে টয়লেট ব্যাবস্থানা খুব বেসিক ছিল। যেমনটা সব দেশেই হয়ে থাকে ।
জঙ্গলে মাঠে বা নদীর পাশে হয় ঝোপ ঝাড়ের আড়ালে বা কোন মতে বেড়া দেয়া ঘেরা , মাঝে গর্ত এবং সেখানে তারা টয়লেট সারতো ।নদীর পাশে হওয়াতে তা পানিতে মিশে যেতো আবার সেই পানি পান করায় ডায়েরিয়া ছড়াতো ।
এটা যে একটা গুরুত্ব পুর্ন জিনিস বা এখান থেকে জীবাণু ছড়িয়ে মৃত্যু হতে পারে, কলেরার মহামারী হতে পারে তা তারা জানতো না। ভালো টয়লেটের আধুনিক ব্যাবস্থাপনা আবিষ্কার সে সময় হয়নি ।
রোমান আমলঃ
ব্রিটেন যখন রোমের দখলে ছিল তখন রোমবাসী তাদের করা দুর্গ, ভিলা,আর টাউেন সমূহে টয়লেটের ব্যাবস্থা করে ছিল । রোমানরা পানি নিয়ে আসতো টানেল দিয়ে না হয় কুয়ো খুঁড়ে । স্বাস্থ্য সচেতনতা রোমানদের উন্নত ছিল ব্রিটিশ দের থেকে ।
ক্রমাগত ভাবে টয়লেটের বিবর্তনঃ
আর্লি মেডিভ্যালঃ
বাড়ির পেছনে গর্ত করে কুয়ো পায়খানা বানাত যাকে তারা বলতো “Cesspits” । সেটা ভরে গেলে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতো । তারপরে আর একটা গর্ত করে কুয়ো বানাত।
ভিক্টোরিয়ান আমলে বাড়ির পেছনে যে টয়লেট থাকতো তা পরিষ্কার করার লোক থাকতো ,যারা রাতের বেলায় এসে কাঁধে করে নিয়ে শহরের সীমানার বাইরে ফেলে আসতো ।
১৫০০ -১৭০০ সালের মধ্যে আধুনিক টয়লেট ব্যাবস্থাপনায় ফ্লাস সিস্টেম আবিষ্কার হয় । সেটা হল ফ্লাস সিস্টেম । একটা দ্রুত গতির পানি এসে মলমূত্র সরিয়ে ফেলা যার কাজ ।
আধুনিক টেকনোলোজির ব্যাবহার আরম্ভ হয় রেনেসাঁর যুগে । Sir john harrington প্রথম ফ্লাশ সিস্টেম টয়লেট আবিষ্কার করেন ১৫৯৬ সালে । রানী প্রথম এলিজাবেথের জন্য এই টয়লেট বানান। কিন্তু তিনি এটা ব্যাবহার করতে পারেন নাই । অতিরিক্ত শব্দ এবং বেশি পানি দরকার হতো এই সিস্টেমে।
আমরা সবায় ফ্লাশ টয়লেট ব্যাবহার করি কিন্তু জানিনা কে কে এর আবিষ্কারক ?
JF Brondel ১৭৩৮ এই ব্যাবস্থার কিছুটা উন্নতি করেন।
Alexander Cumming ১৭৭৫ সালে টয়লেটের বাউলের নিচে যে “s” আকারের একটা বাঁকা পাইপ থাকে যাকে বলা হয় “ট্র্যাপ” তা লাগানোর ব্যাবস্থা আবিষ্কার করলেন । এই ট্র্যাপ থাকার ফলে আবর্জনা চলে গেলেও অনেক পানি বাউলে থেকে যায়।
Samuel Prosser 1777 সালে যা আবিষ্কার করলেন তা হল “Plunge closet” । Plunger ময়লাকে চলে যেতে সাহায্য করে।
Joseph Bramah ১৭৭৮ সালে “Hinged Valve” “Crank Valve” আবিষ্কার করেন।
১৮৫২ সালে Josiah Geoge Jennings , ওয়াশ আউট ডিজাইন, অর্থাৎ পাবলিক এলাকায় এক সঙ্গে সারি বদ্ধ অনেক গুলো টয়লেট বানানর প্ল্যান । এই প্ল্যান আবিষ্কারেরে জন্য তিনি গোল্ড মেডেল পান।
১৯ শতকে ফ্লাস সিস্টেমের টয়লেটের ব্যাপক প্রসার হয়। সমস্ত ইউরোপ,সাউথ আফ্রিকা,আমেরিকা, সাউথ ইষ্ট এশিয়া সব জায়গায় দ্রুত চলে যায় এবং টয়লেটের জগতে সাড়া ফেলে দায়।
শিল্প বিপ্লবের ফলে শহর অঞ্চলে ঘনবসতিড় জন্য অনেক পাবলিক টয়লেটের দরকার হতে থাকে। পার্ক,বাস স্টপ ,স্টেশন কাজের জায়গা অফিস আদালত ,বন্দর আর শহরে কিছুদূর পর পরে সাধারণ মানুষের অনেক টয়লেট এক সাথে বসানো হতে থাকে ।
কৃষ্টাল প্যালেস (Crystal Palace) হল সবচেয়ে প্রথম স্থান যেখানে পাবলিক টয়লেট চালু হয়।
পাবলিক হেলথ উন্নয়নে আইন পাস
১৯ শতকে পাবলিক হেলথ আইন পাস হয়। ১৮৭২-১৮৭৫ সালে বাড়ি বাড়ি পানি সরবরাহ ,ড্রেন, লোকাল সরকারের দায়িত্বে ছিল । একজন করে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়।
২০ শতকে হাত ধোয়ার গুরুত্ব শুরু হয়। টয়লেট থেকে এসে, বাইরে থেকে এসে এবং খাবার আগে হাত ধোয়ার ট্রেনিং চারদিকে ব্যাপক প্রচার চলতে থাকে।
টয়লেট এখন শুধু একটা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাকা ব্যাপার নয়। টয়লেটের সংখ্যা, পরিছন্ন জীবাণু মুক্ত টয়লেট প্রমাণ করে পরিবার ,সমাজ এবং দেশ কোন শ্রেণীর এবং দেশ টি কতখানি সভ্যতার বাহক ।
টয়লেটের উপরে গবেষণা থেমে নাই। অল্প পানি ব্যাবহার করে ফ্লাস করা , মলমূত্র কে সারে পরিণত করা এবং রিমোট কন্ট্রোল টয়লেট ,যেখানে অটোমেটিক ভাবে বাটন প্রেস করলেই শৌচ কাজ সাধন হবে । কেউ ফ্লাস না করে বের হলে ঘণ্টা বেজে যাবে এবং তখন জরিমানা গুনতে হবে।
এখন আবিষ্কারের পথে অনেক কিছু ।
দেখা যাক কি আসছে ভবিষ্যৎে ।
তথ্য সূত্রঃ
The History of toilet: A Brief Run Down Flush Smart
A brief History of toylet : Sir John Harrington 1596