আজ আমার প্রিয় দুজন মানুষের জন্মবার্ষিকী, যারা আমাকে পথ দেখায় বিপ্লবের, পথ দেখায় মুক্তির। প্রিয় কার্ল মার্কস ও বীরকন্যা প্রীতিলতা।
মার্ক্স দেখেছিল পুঁজিবাদি সমাজে মানুষের করুণ দশা। তিনি যে পুঁজিবাদের শুরুটা দেখে এতো বিচলিত ছিলেন, তার চেয়ে আরো বহুগুণ ভয়াবহ আজকের বিশ্বে প্রচলিত পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাম্রাজ্যবাদের ভয়াবহ নিকোটিন। মার্ক্সের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রই শোষিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তির সোপান। তার জন্মবার্ষিকীতে তাকে জানাই লাল সালাম।
বিপ্লবী প্রীতিলতা, আমার বিপ্লবী চেতনায় এক অম্লান নাম, যিনি প্রথম স্বসস্ত্র যুদ্ধে নেমে দেখিয়ে দিলেন- দেশের স্বাধীনতার জন্যে মেয়েরাও লড়তে জানে, মরতেও জানে।
আত্মাহূতির আগের দিন মাকে প্রীতি লিখেছিল- “…মাগো, তুমি অমন করে কেঁদো না। আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাওনা? কি করবে মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী যে বিদেশীর অত্যাচারে জর্জরিত। দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভারে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা। তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?”
বিপ্লবী সূর্যসেন প্রীতিলতার বীরত্বপূর্ণ আত্মদানের পর শোকার্ত হৃদয়ে লিখেছিলেন, “… পনের দিন আগে যে নিখুঁত পবিত্র সুন্দর প্রতিমাটিকে এক হাতে আয়ুধ, অন্য হাতে অমৃত দিয়ে বিসর্জন দিয়ে এসেছিলাম, তার কথাই আজ সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে। … যাকে নিজ হাতে বীর সাজে সাজিয়ে সমরাঙ্গনে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, নিশ্চিত মৃত্যুর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুমতি দিয়ে এসেছিলাম, … সাজিয়ে দিয়ে যখন করুণভাবে বললাম, ‘তোকে এই শেষ সাজিয়ে দিলাম। তোর দাদা তোকে জীবনে আর কোনদিন সাজাবে না’, তখন প্রতিমা একটু হেসেছিল। কি করুণ সেই হাসিটুকু! কত আনন্দের, কত বিষাদের, কত অভিমানের কথাই তার মধ্যে ছিল। …এত গুণের আধার ছিল বলে তাকে খুবই স্নেহ করতাম- হৃদয়ের সমস্ত উজাড় করে তাকে দিয়েছিলাম- প্রতিদানে অসীম আনন্দই পেয়েছি, এত আনন্দ জীবনে আর পাইনি। … এত আপনার করে নিয়েছিলাম বলেই হয়তো তোকে সামান্য দোষে অথবা বিনা দোষে কত গাল দিয়েছি, হয়ত কোন সময় ভুল বুঝে তোর মনে ব্যথা দিয়েছি, তোকে খুব স্নেহ করতাম বলে তোকে গাল দিতে কোনদিন ইতস্তত করিনি। মনে করতাম তোকে হাজার গাল দিলেও তুই আমার ওপর রাগ করবি না, কোনদিন রাগ করিসও নাই। শেষ মুহুর্তে তোকে ভুল করে আমি একটু গালি দিয়েছিলাম বলে তুই হয়ত অভিমান নিয়ে গেছিস। … শেষ মুহূর্তে তোকে একটু কষ্ট দিয়েছি বলে আমি যে দিনরাত অশান্তির দহনে দগ্ধ হচ্ছি…।”
শুধু আজকের এই দিনেই নয়, বীরকন্যা প্রীতিলতাকে স্মরণ করি প্রতিদিন, তার দেশাত্মবোধের চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত হোক সকল দেশপ্রেমিক মানুষের হৃদয়। তারা দেশকে মানুষকে, দেশকে ভালবাসুক নিজের জীবনের চেয়ে বেশি। যে দেশে প্রীতিলতারা জন্ম নেই, সেই দেশে কোন ক্ষমতালিপ্সু, লুটেরারা টিকে থাকতে পারে না, একদিন প্রীতিলতা-সূর্যসেনের উত্তরসূরীরা এদের হটিয়ে স্বাধীনতার মান রাখবে- এই কামনা করি। লাল সালাম প্রীতিলতাকে।
১৫টি মন্তব্য
লীলাবতী
কার্ল মার্কস ও বীরকন্যা প্রীতিলতার প্রতি বিপ্লবী শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধাঞ্জলি । বিপ্লবী সূর্যসেন এর লেখাটি অন্তর স্পর্শ করে গেলো আপু । ধন্যবাদ এমন পোষ্টের জন্য ।
ফাহিমা কানিজ লাভা
সূর্যসেনের লেখাটা আমাকেও কাঁদিয়েছে অনেক। এক বিপ্লবীর ভালবাসা আরেক বিপ্লবীর জন্যে, কি করুণ সে কান্না!!
মশাই
কার্ল মার্কস ও বীরকন্যা প্রীতিলতা এই দুজনের জন্মদিনে অন্তরের গভীর থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আপনাকে ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। -{@
ফাহিমা কানিজ লাভা
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে।
খসড়া
দুজন দু মেরুর। একপাল্লায় না মেপে আলাদা মূল্যায়ন প্রযোজ্য। দু জনকেই লাল সালাম।
ফাহিমা কানিজ লাভা
দুজনকে একপাল্লায় কেউ মাপেওনি। দুজনের জন্মদিন একই দিনে হওয়ার আর আমার প্রিয় দুটি মানুষ বলে একই পোস্টে লিখেছি, দুটো পোস্ট দেবার নিয়ম তো নেই একই দিনে। একজন বিপ্লবীদের পথ প্রদর্শক আর একজন বিপ্লবীকে নিয়ে আলাদা পোস্ট দিতে আমার কার্পণ্য হবে না।
আজিম
সালটা ছিল ১৯০৬, স্থান চিটাগাং । আড়াইশ বছর ব্রিটিশ রাজের শেষদিক । সারা ভারতবর্ষ জুড়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন অতোটা না হলেও তুঙ্গে, যার ঢেউ এসে লাগে চিটাগাং-এও । মাষ্টারদা সূর্যসেন ওখানেও তখন হামলা করে ব্রিটিশদের অস্থির ও ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছেন । এরই মাঝে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার নামের এক মেয়ে দেখা করেন একদিন মাষ্টারদার সাথে, বলেন আমিও ব্রিটিশদের উপর হামলা চালাবো, আমাকে দায়িত্ব দিন । অবাক হয়ে যান মাষ্টারদা, বলেন, তুমি পারবেনা, এ বড় কঠিন কাজ প্রীতি । শেষে মেয়েটির জিদের কাছে হার মানতে বাধ্য হন মাষ্টারদা ।
চিটাগাং রেলস্টেশন বিল্ডিংটা ছিল ব্রিটিশদের ইউরোপিয়ান ক্লাব, ভারতীয়দের কুকুরের সাথ তুলনা করে যেখানকার ফটকে লিখা ছিল, ভারতীয় ও কুকুরের প্রবেশ নিষেধ । মাষ্টারদা পরিকল্পনা করেছিলেন, ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলা চালাবেন এবং সেজন্য একজন যোগ্য লোক খুজছিলেন তিনি । এরকম এক সময়ই প্রীতিলতার সাথে তাঁর পরিচয় । প্রীতিলতাও তার বান্ধবী কল্পনা দত্তের কাছ থেকে জেনেছিলেন ইউরোপিয়ান ক্লাবে হামলার কথা এবং এ-ও জেনেছিলেন যে, কল্পনা দত্তই হামলায় নেতৃত্ব দেবেন ।
মাষ্টারদার হামলায় দিশেহারা ব্রিটিশ তখন ব্যপক ধর-পাকড় করছিল এবং কল্পনা দত্ত ধরা পড়েন একসময় । ভাগ্য খুলে যায় প্রীতিলতার, কল্পনার পরিবর্তে নিবেনই তিনি ইউরোপিয়ান ক্লাব হামলার এ-দায়িত্ব । মাষ্টারদা অনেক বুঝান প্রীতিলতাকে । কিন্তু তাঁর সাফ কথা, এ-দায়িত্ব তাকে দিতেই হবে । এতে তার জীবনও যেতে পারে, এটার জবাবে প্রীতি বলেন, জীবনের মায়া তার একেবারেই নেই এবং কাউকে না কাউকে তো জীবনের ঝুঁকি নিতেই হবে । শেষে কোন যুক্তিতেই না পেরে প্রীতিলতাকেই দায়িত্বটা দিতেই হয় মাষ্টারদাকে ।
হামলায় সফল হন প্রীতিলতা । কিন্তু ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে যান তিনি । কিন্তু ধরা না দেয়ার উদ্দেশ্যে সায়ানাইড (তখন বিপ্লবীরা ধরা দেওয়ার চেয়ে সায়ানাইড রাখতেন সাথে, যাতে প্রয়োজনে খেয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন) খেয়ে আত্মহত্যা করেন ।
মহান এই বিপ্লবীর জন্মদিন আজ, ৫-ই মে । জন্মদিনে তাঁকে সশ্রদ্ধ সালাম জানাই ।
অনেক ধন্যবাদ এই পোষ্ট প্রদানকারীকে সুন্দর ও আবেগী একটি পোষ্ট প্রদানের জন্য ।
ফাহিমা কানিজ লাভা
পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।।
শুন্য শুন্যালয়
হাজার হাজার বছর ধরে পালন হবে, বুকে ধারন করবে… সশ্রদ্ধ সালাম এবং শুভ জন্মদিন দুই মহান বীরকে।।
ধন্যবাদ আপনাকে এমন পোস্টের জন্য…
ফাহিমা কানিজ লাভা
স্বাগতম।
ব্লগার সজীব
বিপ্লব একদিন হবেই কমরেড। ধন্যবাদ আপনাকে।
ফাহিমা কানিজ লাভা
বিপ্লব হবে একদিন, সাম্যের সমাজ আসবেই একদিন।
আজিম
কিন্তু কিভাবে ! এবিষয়ক কোন পথ-নির্দেশনা নাই । থাকলে ভাল হোত । যে কেউ এবিষয়ের কোন পথ-নির্দেশনা দিয়ে লিখতে পারেন ।
লেখিকাও দিতে পারেন অথবা এবিষয়ক কোন মন্তব্য করতে পারেন । ধন্যবাদ ।
জিসান শা ইকরাম
শ্রদ্ধা তাদের দুজনের প্রতি।
ফাহিমা কানিজ লাভা
ধন্যবাদ