৪
এমনি আর এক রাতেও ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে ছিল কমলেশের, গভীর রাত ছিল, কাকগুলি কর্কশ রবে ডাক ছিল! অজানা আশঙ্কায় মন কেমন ব্যথিত হয়ে গিয়ে ছিল–কে জানে আগামী ভোর কি দুঃসংবাদ নিয়ে আসবে! কমলেশের চাকরির দশ বছর হয়ে গেছে, তিনি বিয়ে করেছেন। এক মেয়ে তাঁর। মেয়ের বয়স তিন হবে।
ওই সময় কমলেশের স্ত্রী তাঁর সঙ্গে ছিলেন না, মাস খানেক আগে বড় মেয়েকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে ছিলেন। আসন্ন সন্তান সম্ভবা ছিলেন তাঁর স্ত্রী।
সকালে প্রজেক্টের একজিকিউটিব ইঞ্জিনিয়ার মিস্টার চট্টরাজ সাহেব জিপ নিয়ে তাঁর কুয়াটারে এলেন। তিনি জানালেন তাঁকে ইমিডিয়েট হেড কুয়াটার মালকানগিরী যেতে হবে। কমলেশের শ্বশুর মশাই অসুস্থ–সিরিয়াস–কোন এক্সিডেন্ট হয়েছে তাঁর।
কমলেশের শ্বশুর মশাই প্রজেক্ট হেড কুয়াটার মালকানগীরীতে চাকরি করতেন–পরিবার অন্য জাগায় রেখে তিনি চাকরির স্থলে একা থাকতেন। কমলেশের মনে হল তাঁর শ্বশুর মশাই হয়তো বেঁচে নেই! তিনি মি.চট্টরাজকে জিজ্ঞাসা করলেন, সার, দুঃসংবাদ আছে! উনি বেঁচে আছেন তো?
–হ্যাঁ, সে সব পরে শুনো, কাম হেস্ট এজ সুন এজ পসিবল, বলে কমলেশকে নিয়ে জিপে তুলে রওনা হয়ে গেলেন মালকানগীরী। এক ঘণ্টার মধ্যে জীপটা মালকানগীরীর প্রজেক্ট হসপিটালের সামনে এসে থামল। কমলেশের মানসিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিলা না, মুখ মলিন, চোখের কোনে জলের আভাস, তাঁকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে একজন ধরে নিয়ে গেলেন ইমার্জেন্সী ওয়ার্ডে–যেখানে কমলেশের শ্বশুর মশাইকে রাখা হয়ে ছিল। তিনি এক্সিডেন্টে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে আছেন হসপিটালের বেডে। স্যালাইন, অক্সিজেন, জীবন রক্ষক যাবতীয় সরঞ্জামের উপস্থিতিতে ঘেরা মানুষটা অন্তিম শ্বাসের অপেক্ষায় মুহূর্ত গুন ছিলেন।
দুর্ঘটনা খুব ভোরে ঘটে, সেই থেকে দিন ভর জ্ঞান ফিরল না। ডাক্তার রেফার করলেন কটক হাসপাতালের জন্যে। সেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে তিনি মারা যান। তাঁর মৃতদেহ ফিরিয়ে আনা হয়ে ছিল মালকানগীরীতে।
পিতৃতুল্য শ্বশুরের মৃত্যুতে কমলেশের ভিতর থেকে কান্না ঠেলে এসে ছিল, অনেক কেঁদে ছিলেন তিনি।
পর দিন শাশুড়ি ও এক শালি পৌঁছালেন মালকানগীরীতে, কান্নাকাটির ভেতর দিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়ে গেলো সেখানেই। ঘটনাটা কমলেশের স্ত্রীর থেকে চেপে রাখা হোয়ে ছিল, মারা যাবার এক দিন পরে জানতে পেরে ছিল মধুমতী, কমলেশের স্ত্রী।
ইতিমধ্যে একটা ঘটনা ঘটল। কমলেশের শ্বশুর মশাই যে দিন শেষরাতে মারা গেলেন ঠিক ওই সময় শেষ রাতে তাঁর স্ত্রী মধুমতী স্বপ্ন দেখলেন, তার বাবা দরজার বাইরে থেকে ডাকছেন–মধু মা, এস আমি এসেছি–তোমার সঙ্গে কথা আছে…স্বপ্ন নয়, এ যেন স্পষ্ট দেখা! মধুমতী বাইরে গেলেন, দেখলেন সত্যি দরজার সামনে তাঁর বাবা দাঁড়িয়ে মৃদু মৃদু হাসছেন!
–এস বাবা, ভেতরে এস, মধুমতী ব্যগ্র হয়ে বললেন।
–না রে, বসবো না, বসার সময় নেই, টেনে টেনে কথাগুলি বললেন তাঁর বাবা, আমায় যেতে হবে মা!
সবাইকে দেখো, আর মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেলেন তিনি!
মধুমতী ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠল। একি স্বপ্ন দেখলেন তিনি! তখনও কমলেশের মা বাবা মধুমতীর বাবার মৃত্যুর সংবাদ জানতেন না, মধুমতী তাঁর স্বপ্নের কথা বললেন ঘরের লোকদের। শাশুড়ি বললেন, জান ত বৌমা! উনি খুব অসুস্থ তো তাই, তুমি অমন স্বপ্ন দেখলে, মনের চিন্তা স্বপ্নে উঠে এসেছে।
ওই দিন সন্ধ্যের পর মধুমতী জানতে পারলো তাঁর বাবা আর নেই, তিনি গত দিন রাতেই মারা গেছেন!
মধুমতীর বাবা সত্যি কি এসেছিলেন তার কাছে! অনেক রহস্যঘন ঘটনার খেই কখনও কখনও মানুষ খুঁজে পায় না।
সমাপ্ত
৬টি মন্তব্য
শাহানা আফরিন স্বর্ণা
পুরো গল্পে কিছু মনে হয়নি। শেষ লাইনে গাঁ কাটা দিয়ে উঠল। 🙁
তাপসকিরণ রায়
শেষ লাইনই গল্পের সার্থক বানিয়েছে বলতে হয়–ধন্যবাদ।
স্বপ্ন নীলা
ভাল লাগলো তবে নীচের লাইনে ভয় পেয়েছি একটু বেশি
তাপসকিরণ রায়
কিছু ভৌতিক ও কিছু ছিল স্মৃতিগাঁথা।গল্প পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
সব গুলো পর্বই পড়লাম দাদা।
কিছু রহস্য কখনোই উদঘাটিত হয়না,রহস্যই থেকে যায়।
তাপসকিরণ রায়
তা ঠিক–তবে ভৌতিক ব্যাপারকে অস্বীকার করতে পারি কৈ ? নিয়মিত আমার লেখা পড়ছেন দেখে খুশি লাগলো।